#সুগন্ধি_ফুল_২
#পর্ব_১০
#জান্নাত_সুলতানা
[পর্ব টা একটু রোমান্টিক, পড়তে না চাইলে স্কিপ করুন।]
-“আপনি কে?”
আবরাজের চোখ জোড়া ছোট ছোট হয়ে আসে। এই মেয়ে কী বলছে? জ্বরে কী সত্যি পাগল হয়ে গেলো? আবরাজ ওর ওপর ঝুঁকে এলো। গম্ভীর স্বরে বললো,
-“আবরাজ খান।”
-“বাড়ি কোথায় আপনার? কী হ্যান্ডসাম আপনি! আপনাকে দেখতে কিন্তু একদম ইংলিশ নোবেলের হিরোদের মতো।”
চোখে-মুখে উচ্ছ্বাস নিয়ে বলে উঠলো ফিজা। আবরাজ ঠোঁট কামড়ে ধরে ছোট করে অস্পষ্ট জবাব দিলো,
-“আচ্ছা।”
-“হ্যাঁ।”
-“তুমি জানো ইংলিশ বেশ প্রায় নোবেলে হিরো কেমন হয়?”
আবরাজ ওর দিকে ঝুঁকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো। ফিজা চোখ মুখ বিকৃত করে নিলো।
-“খুব জঘন্য। আবার খুব রোমান্টিক। যা আরও ভালো লাগে না।”
ও সায় দেয়। কথা টা বলতে নিয়ে মুখের ভাবভঙ্গি এমন করে নিলো যেনো, ওর মুখের ভেতর পচাবাসি খাবার টা কেউ জোর করে তুলে দিয়েছে। আর সেটাও বাধ্য হয়ে চিবোচ্ছে।
আবরাজ যেনো বেশ মজা পাচ্ছে বউয়ের কর্মকাণ্ডে। সে আরও একটু বউয়ের পাগলামি দেখতে চাইলো। সে ওঠে বসলো। ফোন বের করে ফোনের ক্যামেরা টা অন করে সেন্টার টেবিলের ওপর রেখে এলো গিয়ে। ফিজা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। আবরাজ ওর চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলো,
-“তোমার কী তাদের জন্য মায়া হয়, যারা ওদের জীবন সঙ্গী হয়?”
-“হাঁ। ইশ।”
-“সুইটহার্ট, তুমি এখন তোমার জন্য মায়া করো। আমার মুড চলে এসছে। কাম বেবি।”
আবরাজ ওয়েস্ট কোট ও খুলে ফেলে। শার্টের বাটন কয়েকটি খুলেই ফিজার ওষ্ঠদ্বয় এর ওপর হামলে পড়ে। ফিজা হাত ছুড়াছুঁড়ি করে। তবে পরক্ষণেই উষ্ণ ছোঁয়া পেয়ে শান্ত হয়ে গেলো। জ্বরে শরীর কাঁপছে। আবরাজ বউ কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কম্ফর্টার দিয়ে ঢেকে ফেললো নিজেদের দেহ। নিস্তব্ধতা চারদিকে শুধু ফিজার নিঃশ্বাসের ভারী শব্দ ভাসে কক্ষ জুড়ে।
——–
-“তুমি অসুস্থ জুনায়েদ। নিজের ডক্টর দেখাও। আর আমার ভাবির দিকে ভুলেও নজর দিতে যেয়ো না। আমি তোমাকে ওয়ার্নিং দিচ্ছে। আবরাজ খান কিন্তু ওয়ার্নি দিবে না।”
জুনায়েদ হুইস্কির বোতল মুখে তুলে চুমুক দেয়। সে মাতাল। গায়ে কোনো পোশাক নেই। শুধুমাত্র একটা প্যান্ট কোমরের শেষ প্রান্তে। দেখেই অনুমান করা যায় নিশ্চয়ই এতো সময় সে কোনো নারী দেহের ভাজের স্বাদে ডুবে ছিলো। আব্রাহাম রাগান্বিত স্বরে কথা গুলো বলে, কিন্তু এতে মনে হয় জুনায়েদের একটু ভাবান্তর হয় নি। সে ঠোঁটের কোণে শয়তানি হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে। যেনো ঠিক কোনো শয়তান হাসছে। আব্রাহাম ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেয়। জুনায়েদ হাসি আরও চওড়া করে বলে,
-“তোমার এই পরাজয়, ইশ ইশ আমার যে কী আনন্দ হচ্ছে আব্রাহাম।”
আব্রাহাম চোখ-মুখ কুঁচকে নেয়। রাগে তার শরীরের রক্ত লাফাতে থাকে। কিন্তু তবুও দাঁতে দাঁত চেপে বসে রইলো। সে আজ সন্ধ্যার ফ্লাইটে নিজের জন্মভূমি ফিরে যাবে। তাই বেশি এখানে অপেক্ষা করতে চাইলো না। সে লেদারের সোফা থেকে ওঠে দাঁড়ালো। সাথে সাথে একজন হোস্টেস এগিয়ে আসতে চায়। কিন্তু আব্রাহাম হাত তুলে ইশারা করে না করে দেয়। মেয়ে টার শরীরে চকচকে পালক বসানো ঝলমলে সিকুইন ড্রেস। আব্রাহামের গা গুলিয়ে আসে। এখানে সে এই নিয়ে দুইবার এসছে। এমন ক্লাবে সে কখনোই আসে না। হ্যাঁ ফ্রেন্ড’দের সাথে মাঝেমধ্যে অ্যালকোহল পান করা হয়। কিংবা বারে যাওয়া হয়। কিন্তু এর বেশি কিছু নয়। জুনায়েদ ওর দিকে চোখ পিটপিট করে তাকাচ্ছে। যেনো আরও বসার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। কিন্তু আব্রাহাম বসলো না। ফ্লোরে থাকা জুনায়েদের স্যুট, শার্ট তুলে নিলো। এরপর সেগুলো নিয়ে একটা ময়লার ঝুরিতে ফেলে দিলো। ঘটনা টা এতো দ্রুত ঘটে গেলো জুনায়েদ কিছু বুঝে ওঠার আগেই আব্রাহাম কাজ টা সম্পূর্ণ করে নিলো। এবং হাত গুলো ঝেড়ে নিয়ে ঠোঁট অদ্ভুত হাসি ঝুলিয়ে বলে উঠলো,
-“তোমার সাথে এরচেয়ে বেশি কিছু করতে চায় না আমার মন।”
অপমান করলে? বিদ্রুপ ছাড়া আর কিছুই না যেনো। জুনায়েদ রেগে গেলো। চিৎকার করে ডাকলো আব্রাহাম কে। গালি দিতে লাগলো। আব্রাহাম শুনলো। তবে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না। মনে হচ্ছে সে কোনো বিষধর সাপ কে মেরে মাটিতে পুঁতে দিয়েছে। এবং তার কাজ শেষ। এরচেয়ে বেশি এটা কে নিয়ে ভাবতে রাজি নয় সে।
——
দিন যাচ্ছে একের পর এক। আব্রাহাম দেশে গিয়েছে আজ চারদিন হয়। ফিজা সুস্থ আছে এখন। যদি এটাকে সুস্থ থাকা বলে না। এই আবরাজ খান তাকে নিস্তার দিচ্ছে না। ফিজা দেশ থেকে নিজের সাথে করে নিয়ে আসা কয়েকটি শাড়ী গুছিয়ে আজ ক্লোজেটে রাখছে। সব গুলো শাড়ী যে কী চমৎকার সে আবরাজ কে এইজন্য হাজার বার ধন্যবাদ দিতে রাজী।
একটা মেরুন রঙের শাড়ী ফিজার খুব মনে ধরলো। সে শাড়ী টা আলাদা করে রাখলো। এবং আজ রাতে এটা পরবে বলে ঠিক করলো।
ফিজা বেশ খুশিমনে গুনগুন করে গান গাইতে লাগলো। সে কখনোই কল্পনা করে নি তার জীবনে আবরাজ খান নামক পুরুষ টার আগমনে এমন চমৎকার সুন্দর হয়ে উঠবে তার জীবন। এমনই তো চাইতো সে। যে তাকে ভালোবাসবে, বিয়ের পর সাদাসিধা একটা সংসার হবে। স্বামী কোনো ছোটখাটো একজন ব্যাবসায়ী হবে, সারাদিন অফিস করে যখন ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরবে সে মানুষ টার সকল ক্লান্তির উপশমের ঔষধ হবে। যদিও তাই হচ্ছে। তবে এখানে আসার পর আবরাজ তাকে নিয়ে ঘুরতে যায় নি। আজ ফিজা এব্যাপারে কথা বলবে।
আবরাজ যখন বাসায় ফিরলো ফিজা গরম গরম এক মগ কফি নিয়ে হাজির হলো কক্ষে। আবরাজ টাই খুলতে খুলতে গম্ভীর চোখে ওকে পর্যবেক্ষণ করে। এখানে আসার পর থেকেই আবরাজ ওকে শতবার নিষেধ করেছে রান্না ঘরে না যাওয়ার জন্য।
সে কফি নিলো। ফিজা মিষ্টি হাসে। আবরাজ কফিতে চুমুক দেওয়ার আগে বউয়ের ঠোঁটে আলতো করে চুমু খায়। বলে,
-“আমি নিষেধ করে ছিলাম।”
-“এভাবে থাকা যায় না-কি। কাজ করলে একটু ভালো লাগে।”
-“কিভাবে?”
আবরাজ কফিতে চুমুক দিয়ে জিজ্ঞেস করে। ফিজা নখ খুঁটতে খুঁটতে জবাব দেয়,
-“একা একা।”
-“বেবি গার্ল, তুমি কী কোনো ভাবে বেবি চাইছো?”
বেবি ডাকছে আবার বেবি নেওয়ার কথা জিজ্ঞেস করছে? যদিও এই কথার কোনো মূলই নেই। কেননা আবরাজ কখনোই এতো দ্রুত বাচ্চা নিতে চাইবে না। এটা সে এতোদিনে ভালোই বুঝতে পেরেছে। প্রসঙ্গ পালটে ফিজা বললো,
-“বোরিং লাগে সারাদিন। আমি বাইরে যেতে চাই।”
-“আচ্ছা কাল নিয়ে যাবো।”
আবরাজ কিছু সময় চুপ করে রইলো। যেনো সে এমন কথা মোটেও আশা করে নি। কিংবা বাইরে না নেওয়ার জন্য বাহানা খুঁজবে। কিন্তু তেমন কিছুই হয় না। সে আশ্বস্ত করে। পরপরই আবার বললো,
-“এখন শাস্তির জন্য রেডি হও, সুইটহার্ট।”
কফি সেন্টার টেবিলের ওপর রেখে দেয়। ফিজা ঠোঁট কামড়ে ধরে। কেমন শাস্তি? আর কিসের জন্য শাস্তি? সে কিছু করেছে বলে তো মনে পরে না। ফিজা ভ্রু কুঁচকে ভীতু স্বরে জানতে চাইলো,
-“কিসের শাস্তি?”
-“আমার নিষেধ অমান্য করার শাস্তি।”
ফিজা এদিক-ওদিক তাকায়। আবরাজ এক পা এক পা করে ধীরে কদমে ফিজার দিকে এগিয়ে আসে। ফিজা পেছনে যেতে চায়। কিন্তু শরীর নড়াতে পারে না। স্ট্যাচুর মতো স্থির ওর অবস্থান। আবরাজ আসার সময় সামন্য ঝুঁকে বিছানা থেকে শাড়ী টা হাতে তুলে নেয়। এবং সেটা ফিজার সামনে উঁচু করে ধরে বললো,
-“এটা পরবে জান, উইথ আউট ব্লাউজ অ্যান্ড ইনার।”
বাক্য টা শেষ হওয়ারই আগেই ফিজা চমকে উঠল। তার দুনিয়ায় যেনো খন্ড খন্ড টুকরো হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পরে। মেরুদণ্ড বেয়ে শীতল স্রোত শরীর জুড়ে ছড়িয়ে পরে। ঠান্ডার মধ্যেও কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বের হয়। শরীর উষ্ণ হয়ে আসে। চোখ বড়ো বড়ো করে আবরাজের দিকে তাকিয়ে অবাক কণ্ঠে শুধালো,
-“দেখুন, এটা বেশি হ,,,”
-“দেখতেই তো চাইছি, সুইটহার্ট। তুমি দেখালেই আমি দেখার জন্য রেডি।”
ছিঃ ছিঃ এতো অশ্লীল কথাবার্তা আবরাজ এর আগে কখনোই হয়তো বলে নি। বললেও ফিজার মনে নেই হয়তো। কিন্তু এখন তার এতো কিছু ভাবতে ইচ্ছে করছে না। এক দৌড়ে এখান থেকে কোথাও ছুটে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু এটা যে অসম্ভব আর সামনের পুরুষের আদেশ পালন করাও সম্ভব নয়।
-“তোমার হাতে পনেরো মিনিট টাইম। তুমি এরমধ্যে যদি আমার আদেশ না মানো, তাহলে আমি তোমার কাজ টা করে দেবো। এখন তুমি বলো, তুমি আমার হাতে শাড়ী পরতে এবং খোলাতে চাও, না-কি শুধু খোলাতে চাও, বউপাখি।”
ফিজা একদম নিশ্চিত। আজ তার রক্ষা নেই। এই পুরুষের মুখ দিয়ে একবার যেহেতু এই বাক্য বেরিয়েছে তারমানে এটা হাসিল না করা পর্যন্ত তাকে নিস্তার পেতে দিবে না। সে দ্বিধায় পরে গেলো। কিন্তু এটা কিভাবে করবে সে! তার যে সাহসে কুলচ্ছে না।
#চলবে….
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]