#সুখ
#Part_6
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
নীলিমার সাথে সে রাত আর থাকেনি সাকিব। সিগারেট খেতে খেতে বারান্দায় ঘুমিয়ে গিয়েছে। নীলিমা ও আর টের পায়নি যে সাকিব বাইরে ঘুমিয়েছে। ভোর রাতে নীলিমা ওতাশরুমে যাবে বলে ঘুম থেকে উঠে। সাকিবকে কোথাও না দেখতে পেয়ে নীলিমা বারান্দার দিকে যায়। সাকিব তখন শুয়ে ছিল আর পাশে সিগারেটের ফিল্টারগুলো পরা। নীলিমা সেগুলো দেখে শুধু একটা শুকনো হাসি দিল। সাকিবের হাত ধরে জাগায় নীলিমা। সাকিব উঠে যায় নীলিমার শরীরের তাপে।
-জ্বর কমেনি? (সাকিব)
-জানিনা। আপনি এইখানে কেন? ঘরে ঘুমাবেন আসেন। (সাকিবের হাত ধরে নীলিমা)
-প্লিজ! ধরো না আমায়। (হাত ঝাড়া দিয়ে সাকিব)
-আপনার মত ওত স্ট্যাটাস নেই তো তাই ধরলে হয়ত ফোসকা পরে যেতে পারে। আচ্ছা ধরব না। খাটে ঘুমান যান। আমি গেস্টরুমে চলে যাচ্ছি। (উঠে দাঁড়িয়ে নীলিমা)
-তুমিই থাকো এখানে। আমিই চলে যাই।
এরপর সাকিব উঠে চলে গেলো আর নীলিমা বারান্দায় ধপাস করে বসে পরলো।
-এ কেমন মানুষের সাথে আমায় বেঁধেছো খোদা? যার থেকে আমি না পেলাম স্বামীর সুখ আর না পেলাম কোনো যত্ন। শুধু তিনবেলা খাবার আর জামা কাপড়। এসব দিয়ে কি সুখি হওয়া যায় খোদা? (কাঁদতে কাঁদতে নীলিমা)
দিন দিন নীলিমার শরীর আরো খারাপ হয়ে যাচ্ছে। সাকিব ও এতে কোনো ভ্রুক্ষেপ করেনা। ও নীলিমাকে ডক্টর দেখাতেও নিয়ে যায়না। অতিরিক্ত মানসিক প্রেসার আর দুঃশ্চিন্তার কারনেই এমনটা হচ্ছে নীলিমার। সাকিব দেখছে কিন্তু কিছু বলছেনা। একদিন নীলিমা সিঁড়ি থেকে নামতে গিয়ে পা ফসকে পরে যায়। সাকিব ও তখন অফিস থেকে ঘরে ঢুকে৷ সাকিবের পায়ের কাছে গিয়ে গড়িয়ে পরলো নীলিমা। আর মাথা কেটে গেছে অনেক খানি। নীলিমা সেখানেই অজ্ঞান হয়ে যায়। সাকিব নীলিমাকে কোলে নিয়ে হাসপাতালে এলো। ডাক্তার নীলিমাকে চেকাপ করে বলল
-সাকিব সাহেব আপনি আমার কেবিনে আসুন তো। আর নার্স ওনার মাথা ব্যান্ডেজ করাও। (নার্সের উদ্দেশ্যে ডাক্তার)
-কেন আসতে বললেন ডক্টর? (সাকিব)
-ওনার এই অবস্থা কতদিন থেকে? (ডক্টর)
-কোন অবস্থা ডাক্তার? (অবাক হয়ে সাকিব)
-ডিপ্রেশন? ওনার শরীরের অবস্থা খারাপ হয়েছে একমাত্র ডিপ্রেশনের জন্য। আপনি কি জানেন না যে আপনার স্ত্রী কি নিয়ে এত বিরক্ত?
-না। (জানা সত্ত্বেও মিথ্যে বলল সাকিব)
-ওনাকে ডিপ্রেশনে রাখবেন না। দেখতেই দেখা যায় বয়স অল্প। ডিপ্রেশনে থেকে যা কিছু ঘটিয়ে ফেলতে পারেন উনি। আপনি খেয়াল রাখবেন। আর হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করবেন ওনাকে। (ডক্টর)
-জ্বি স্যার।
সাকিব কেবিন থেকে বের হচ্ছে আর ভাবছে কিভাবে কি করবে? এইদিকে তিশা আর তুলিও মেনে নিতে পারেনি নীলিমাকে। সংসারের জন্য যথেষ্ট করেও নীলিমা স্বামী বা সন্তান কাউকেই পেলো না। আস্তে আস্তে নীলিমা নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। নীলিমা হাসপাতাল থেকে আসার পর পর ই ওর এডমিশন টেস্ট শুরু হয়ে যায়। নীলিমা আর পড়বে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেদিন নীলিমার এডমিশন সেদিন আয়ান রাতে সাকিবের ঘরে এলো। দেখলো নীলিমা শুয়ে আছে আর সাকিব ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে।
-ভাইয়া? (আয়ান)
-হ্যা বল। (ল্যাপটপ অফ করে)
-কালকে আমার DU তে এডমিশন টেস্ট। তুমি যাবে না? আর ভাবিকে নিয়ে যাবেনা? (আয়ান)
-কালকেই? (চিন্তায় পরে গিয়ে সাকিব)
-হ্যা ভাইয়া।
-ফরম কয়টা কিনেছিস?
-আমি দুইটা কিনেছি। ভাবির জন্য আর আমার জন্য।
-নীলিমার টা দিয়ে যা এখনি। আর প্রিপারেশন কেমন?
-ভালই। কালকে সকালে যাবা আমাকে আর ভাবিকে নিয়ে।
-ওকে, এখন তুই ফরম টা নিয়ে আয়।
নীলিমা কোনো কথাই বলেনি কারণ নীলিমা জানে সাকিব ফরম টা ছিঁড়তে চেয়েছে। নীলিমা আবারো সেই রহস্যময়ী হাসি দিল।
-নাও ভাইয়া। (আয়ান সাকিবকে ফরম টা হাতে দিয়ে)
-কালকে তুই আর নীলিমা যাবে এক্সাম দিতে। ওর রেজাল্টের দিনেও আমি কোনো রেসপন্স করিনি। আমি চাইছি কালকে তোদের ট্রিট দেই। (সাকিব)
সাকিবের কথা শুনে নীলিমা বসে পরলো। আর আয়ান ও অনেক অবাক হলো। তবুও আয়ান অনেক খুশি যে সাকিব এভাবে ভাবছে বিষয়গুলো। নীলিমার শরীর আগের থেকে অনেকটা ভালো। নীলিমা সাকিবকে জিজ্ঞেস করলো
-কি করবেন ফরম দিয়ে?
-তুমি কালকে এডমিশন টেস্টে যাচ্ছো। আর এখন বইটা হাতে নিয়ে একটু পড়। (সাকিব)
-পড়াশুনা না করি কারণ আমার টাকা নেই পড়াশুনা চালানোর মত। (অসহায়ের মত নীলিমা)
-আমি কেন আছি? জাস্ট পড়াশুনা টা কর। বাকিটা আমি দেখব। আর হ্যা কোনো সমস্যা হলে দেখাতে পারো আমায়। (ল্যাপটপ অন করে সাকিব)
-এভাবে তো রঙ পালটায় গিরগিটি। আপনি কি রঙ পাল্টিয়েছেন নাকি সত্যিই মনে নতুন কোনো রঙের উদয় হয়েছে? (সাকিবের দিকে তাঁকিয়ে নীলিমা)
সাকিব কোনো জবাব না দিয়েই নীলিমাকে পড়তে বসতে বলে। নীলিমা পড়তে বসার পর সাকিব নীলিমার সামনে বসে। নীলিমা অবাক হয়ে যায় সাকিবকে ওর পাশে দেখে।
চলবে