#সুখ
#Part_5
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
নীলিমা ত্যাড়া ত্যাড়া কথাগুলো সাকিবের হজম হলো না। অনেকক্ষণ ধরে সহ্য করছে সাকিব কিন্তু আর পারছেনা। সব কথা সাকিবের মাথায় একত্রিত হওয়ার পর সাকিব ভীষণ রেগে যায়। নীলিমা আসামীর মতো সাকিবের পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
-তুমি এত বেয়াদব কেন? মুখে মুখে তর্ক কেন কর? (দাঁড়িয়ে গিয়ে সাকিব)
-বাবা মা ভদ্রতা শিখায়নি তাই আমি বেয়াদব। (মুচকি হেসে নীলিমা)
-আমার ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিয়ো না তুমি মেয়ে। (কর্কশ গলায় সাকিব)
-For your kind information আমার নাম নীলিমা। মেয়ে তো বটেই তবে নাম ধরে ডাকলে খুশি হব। আর আপনি থেকে সোজা তুমিতে নেমে এসেছেন এত সহজে? (ভ্রু উঁচু করে নীলিমা)
-তুমি আমার অনেক ছোট তাই তুমি বলতেই পারি। U girl just disgusting. আজ পর্যন্ত সাকিব আহম্মেদের মুখের উপর কেউ কথা বলেনি আর তুমি তর্ক করছো? তানহা কোনোদিন আমাকে এইভাবে বলেনি আর তুমি বলছো কোন সাহসে?? (টেবিলে হাত রেখে সাকিব)
-কোন সাহসে বলছি তা তো জানিনা তবে তানহা আপু যেই অধিকারে বলেনি আজ ঠিক আমি সেই অধিকারেই বলছি। (খুব সাবলীলভাবে কথাটা বলে দিল নীলিমা)
সাকিব আর একটা কথা না বলে নীলিমার দিকে আগুন গরম চোখ দিয়ে তাঁকালো। নীলিমা ভয় পেয়ে মাথা নিচু করে চলে গেলো। সাকিব মাথায় হাত দিয়ে চেয়ারে বসে পরলো। এইদিকে নীলিমা রান্নাঘরে গিয়ে হাসতে হাসতে শেষ। নীলিমা পাগলের মত হাসছে। কাজের মেয়েরা বলছে
– বউমনি আপনার কি হয়েছে এভাবে হাসছেন কেন?
-তোমরা বুঝবেনা। (হাসতে হাসতে নীলিমা) গোমড়ামুখো কে আজকে করলার রস খাইয়ে এসেছি। বিয়ে করেছে আমাকে আর আমার নাম ই জানেনা??। কি বর আমার ভাবা যায়? (নীলিমা)
-স্যারকে কি বলেছেন আপনি বউমনি? রেগে গেলে কিন্তু সব তছনছ করে দিবে। (ঢোক গিলে কাজের মেয়ে)
-যা ইচ্ছে করুক গিয়ে৷ আমি ওনাকে ভয় পাই নাকি? তাছাড়া উনি আজকে বলেছেন আমি ওনার থেকে অনেক ছোট তাই আর ভয় নেই। (হাতে ছুরি ঘোরাতে ঘোরাতে নীলিমা)
-একমাত্র আপনিই পারবেন স্যারকে আগের মতো করে দিতে৷ লেগে থাকুন বউমনি হয়ে যাবে। (কাজের মেয়ে)
-এত সোজা নয়। যাই হোক রান্না কর। আমার শরীরটা ভালো লাগছেনা। আমি ঘরে যাচ্ছি।
-বউমনি আবার কি জ্বর আসছে নাকি?
-হ্যা জ্বর জ্বর ই লাগছে। চলে যাচ্ছি আমি।
নীলিমা উপরে ঘরে এসে শুয়ে পরে। সাকিব নীলিমাকে শুতে দেখে জিজ্ঞেস করলো
-সন্ধ্যার সময় এভাবে শোয়ার মানে কি? তাও আমার ঘরে!
-আপনি ভুল করছেন মিস্টার আহম্মেদ। ঘরটা আমার আর আপনার দুইজনের সো আমার না বললেই ভালো হয়। আর কোনো কথা বলবেন না প্লিজ। শরীরটা ভালো নেই। (বালিশ নিয়ে নীলিমা)
-তুমি আমায় নাম ধরে ডাকলে?? (উঠে দাঁড়িয়ে সাকিব)
-মিস্টার আহম্মেদ বলেছি, সাকিব বলিনি। বেয়াদব হলেও স্বামীকে নাম ধরে ডাকার মতো বেয়াদবি করিনা।
-বজ্জাত মেয়ে কোথাকারের! (বিরক্ত হয়ে সাকিব) বিশ্বাস কর তোমার মত কাউকে দেখিনাই। চটাং চটাং কথা আরেকদিন বললে সেইদিন মাড়িতে আর দাঁত থাকবেনা, শুধু লাল মাংস গুলোই থাকবে। আর রাতে আমার ঘর আমাকে দিয়ে এরপর যেখানে ইচ্ছে গিয়ে শুইয়ো আপত্তি নেই।
এই কথাটা বলেই সাকিব বেরিয়ে যায়। আর নীলিমা তখন মনে মনে বলে
-কেউ অধিকার না দিলে আমার সমস্যা নেই কিন্তু অধিকার আমি নিজে খাটিয়ে নিব। অনেক সহ্য করেছি, আর না৷ আজকে আমি এই খাটেই ঘুমাবো আর আপনার সাথেই। দেখি কে আটকায়! নিজেকে বেশি ওভারস্মার্ট ভাবা বের করছি। এতে যদি আমাকে বেহায়া হতে হয় তো বেহায়াই হব।
নীলিমা অসুস্থ শরীর নিয়েই ঘুমিয়ে যায়। রাত দশটা বেজে যায় কিন্তু নীলিমা উঠে না। সুহানা নীলিমাকে ডেকে নিচে নিয়ে যায় ডিনার করানোর জন্য। নীলিমা একদম ই খেতে পারছেনা৷ সুহানা নীলিমাকে স্যুপ বানিয়ে দিলো আর ওষুধ খাইয়ে আবার ঘরে শুইয়ে দিয়ে এলো। তুলি আর তিশাকে সাকিব ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে ঘরে যায়। ঘরে গিয়ে দেখে নীলিমা কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে আছে আর গোঙাচ্ছে। সাকিব দরজা লাগিয়ে দিয়ে নীলিমার কাছে যায়। নীলিমার কপালে হাত দিয়ে দেখে গায়ে প্রচন্ড জ্বর। সাকিব নীলিমাকে জিজ্ঞেস করে
-তোমার মাথায় পানি দিতে হবে? (সাকিব)
-নাহ প্রয়োজন নেই। এমনিতেই সেড়ে যাবে৷ আপনি ঘুমান। আমি সাইড চেপে আছি। ওষুধ খেয়েছি কিছুক্ষণ পরেই কমে যাবে। (ভাঙা কন্ঠে নীলিমা)
-ওকেহ!
সাকিব টি শার্ট খুলে শুয়ে পরে। এইটা ওর অভ্যাস টি শার্ট খুলে ঘুমানো। নীলিমার সামনে যদিও লজ্জা লাগছিলো কিন্তু কিছু করার নেই। এসির পাওয়ার হালকা করে দিল সাকিব যাতে নীলিমার অসুবিধা না হয়। নীলিমা ইচ্ছে করেই সাকিবের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। সাকিবের অস্বস্তি হচ্ছে কিন্তু অসুস্থ মেয়েটাকে কিছু বলতেও পারছেনা। কাছে আসতে আসতে একটা সময় নীলিমার গরম নিঃশ্বাস গিয়ে পড়ে সাকিবের বুকের উপর। সাকিব সাথে সাথে চোখ মেলে তাঁকায় আর দেখে নীলিমা সাকিবের একদম কাছে। সাকিবের আর সরার জায়গাও নেই। কিভাবে সরবে কারণ একটু নড়লেই ফ্লোরে পরে যাবে সাকিব।
-ওইদিকে সরো! এইদিকে আসছো কেন? (ঝারি দিয়ে সাকিব)
-অনেক ঠান্ডা লাগছে। একটু জড়িয়ে ধরুন না৷ (চোখ বন্ধ করেই নীলিমা)
-What?? Are you crazy?? (চিল্লিয়ে সাকিব)
-প্লিজ! (অসহায়ের মত সাকিবের দিকে তাঁকিয়ে নীলিমা সাকিবের হাত ধরলো)
সাকিব নীলিমার হাত সরিয়ে দিলো। কিন্তু নীলিমা কিছুতেই সাকিবকে ছাড়ছেনা। সাকিব এসি অফ করে দিল। আর নীলিমাকে বলল
-শোনো মেয়ে বেয়াদবির একটা লিমিট আছে। দয়া করে থাকতে দিয়েছি তাই বলে অধিকার দেইনি। বয়স হয়েছে তোমার এইসব বোঝার? (ঝারি দিয়ে সাকিব)
-প্লিজ বকবেন না। (নীলিমা কেঁদে দিল)
সাকিব উঠে গিয়ে সোফায় বসে আর একা একা বসে সিগারেট খায়। সিগারেটের ধোঁয়াতে নীলিমা কাশছে শুনে সাকিব বারান্দায় চলে যায়। নীলিমা ও কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে যায়। সাকিব বারান্দাতেই বসে চোখ বুজে ফেলে ওর অজান্তে।
চলবে