#সুখ
#Part_3
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
নীলিমাকে নিয়ে ট্যুরে যাওয়ার কথা শুনে সাকিব রেগেই গেলো। এরপর ছাদে চলে যায় সাকিব। একটুপর নীলিমা ঘরে এসেছে। সুহানা আর আয়ানকে কথা বলতে দেখে বলল
-কোনো সমস্যা হয়েছে তোমাদের? কি কথা বলছো এভাবে?
-আরে ভাবি আসো! আমরা ট্যুরে যাচ্ছি সাথে তুমিও। (সুহানা)
-আমি ট্যুরে গিয়ে কি করব? তোমরা যাও। তাছাড়া এডমিশন টেস্ট শুরু হয়ে যাবে। ঝামেলা আছে। (নীলিমা)
-ভাবি এডমিশন টেস্ট কিন্তু আমারো আছে। দুইদিনের জন্য গেলে কিছুই হবেনা। এই প্রথম ভাইয়া নিজ থেকে বলেছে সুযোগটা হাত ছাড়া করি কিভাবে? প্লিজ ভাবি চলো। চাইনা তোমায় এইভাবে রেখে যেতে। (আয়ান)
-আমি যেতে চাইলেও উনি নিবেন না। তাই আমার কথা বাদ দাও। তোমরা যাও। ঘুরে এসো। (আলমারি থেকে কাপড় বের করে নীলিমা)
-ভাবি তোমাকে ছাড়া আমরা যাচ্ছিনা। তুমি না গেলে আমরাও যাওয়া ক্যান্সেল করে দিচ্ছি। (সুহানা)
নীলিমা কোনো উত্তর দেওয়ার আগেই নীলিমার ফোনটা বেজে উঠে। নীলিমা ফোন হাতে নিয়ে দেখে নীলিমার বাবা ফোন দিয়েছে। নীলিমা ফোনটা কেটে দেয়। এরপর আবার ফোন করে ওর বাবা। নীলিমা বাধ্য হয়েই এইবার রিসিভ করে।
-কেন ফোন দিয়েছো? আমি বেঁচে আছি আব্বু, মরিনি এখনো। রঙীন অট্টালিকায় ভালই আছি। বেশ #সুখেই আছি। ব্যাস হয়ে গেছে জানা? এইবার রাখি? (কড়া গলায় কথাগুলো বলল নীলিমা)
-মা শোন! (অসহায়ের মতো হয়ে নীলিমার বাবা)
-না আব্বু আমার কাজ আছে। তুমি ভালো থেকো। আম্মুকে দেখে রেখো। রাখছি।
নীলিমা ফোনটা কেটে দেয়। আর নীরবে দুই ফোটা চোখের পানি ফেলে। আবার সাথে সাথেই চোখের পানি মুছে নেয় আয়ান আর সুহানাকে লুকিয়ে। আয়ান আর সুহানা অবাক হয়ে গেলো। ভাবি তার আব্বুর সাথে এইভাবে কেন কথা বলল?? ওরা এইটাই ভাবছে। নীলিমা ফোনটা হাত থেকে রেখে ওদের দিকে তাঁকিয়ে হেসে চলে গেলো। আয়ান আর সুহানা বেশ অবাক হলো নীলিমার এই ব্যবহার দেখে। আয়ান আর সুহানা ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। তার কিছুক্ষণ পর সাকিব ঘরে ঢুকে। সাকিব দরজা লাগিয়ে এসি অন করে খাটে বসে। শার্টের বোতামগুলো খুলে সাকিব চোখ বন্ধ করে খাটে শুয়ে আছে। সাকিব জানেনা যে নীলিমা ওয়াশরুমে। নীলিমা গোসল করে বেরিয়ে আসে। ব্লাউজের পেছনের দিক পুরোটা খোলা। নীলিমা পেছনে হাত নিতে পারেনা, ব্যথা পায়। তাই ভেবেছে সুহানাকে বলবে লাগিয়ে দিতে হুকগুলো৷ চুল মুছতে মুছতে ড্রেসিংটেবিল এর দিকে যায় আর নীলিমা খাটে খেয়ালই করেনি। সাকিব হঠাৎ উঠতে যাবে তখন সোজা চোখ যায় নীলিমার পিঠের দিকে। আর নীলিমা আয়নায় খেয়াল করে সাকিব পেছনে বসা। নীলিমা সাথে সাথে শাড়ির আচল টান দিয়ে পিঠ ঢেকে ফেলে আর সাকিব রেগে যাবে নাকি কি করবে বুঝছেনা। সাকিব থ মেরে আছে। সাকিব আর কোনো কিছু না বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে যায় আর সুহানাকে পাঠিয়ে দেয়।
-ভাবি তুমি নাকি ডাকছো আমায়? (ঘরে ঢুকে সুহানা)
-কে বলল? (অবাক হয়ে নীলিমা)
-ভাইয়া বলল।
-আসলে হুকগুলো একটু লাগিয়ে দাও না। (শাড়ির আচল সরিয়ে নীলিমা)
-ভাইয়াকে বললেই তো পারতে। (হুকগুলো লাগাতে লাগাতে সুহানা)
-না বোন। উনি ওনার মত থাকুক আর আমি আমার মতো করেই সংসার করি।
-এতটুকু বয়সে এত স্যাক্রিফাইস? কিভাবে পারো তুমি ভাবি?
-মেয়েরা সব ই পারে। বিশেষ করে আমাদের মত মধ্যবিত্তরা সব ই পারে। পারেনা শুধু তোমাদের মত বড়লোকেরাই। (মুচকি হেসে নীলিমা)
-অনেক অভিমান জমে আছে তোমার তাইনা? (নীলিমার কাঁধে হাত রেখে সুহানা)
-বাদ দাও সেসব।
নীলিমা কথাটা কাটিয়ে চলে গেলো। দিনটা ভালো ভাবেই কেটে গেলো সবার। ট্যুরে যাওয়ার প্ল্যান নিয়ে বাড়ি মাতিয়ে রেখেছে আয়ান। সবাই খুব বেশি এক্সাইটেড শুধু নীলিমা বাদে।
রাতেরবেলা…….
নীলিমা তিশা আর তুলিকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে সাকিবের ঘরে এলো। সাকিব তখন কাজ করছিলো। নীলিমা সাকিবের কাজে বিরক্ত না করে কোনো কথা না বলে খাটের এক কোনায় গুটিশুটি মেরে শুয়ে পরলো। সাকিব বলল
-আপনি গেস্টরুমে যান। এইখানে শুধু আমি ঘুমাবো।
-আপনাকে বিরক্ত করব না প্রমিস। বাড়ির লোকে কথা শুনাবে আলাদা ঘুমালে। প্লিজ কোনো রিয়েক্ট করবেন না। বাজে কথা তাহলে আমাকে শুনতে হবে। (অসহায়ের মতো নীলিমা)
সাকিব কিছু বলতে গিয়েও আর কিছু বলল না। নীলিমাও চুপ করে গেছে। সাকিব ওর কাজ শেষ করে বাতি নিভিয়ে শুয়ে পরলো। নীলিমা জানালার পাশে শুয়েছিলো। ভরা জোৎস্নার রাতে নীলিমার এলোমেলো চুলে আর মায়াভরা মুখটাতে চাঁদের আলো এসে পড়েছে। সাকিব পাশ ফিরতে গিয়ে নীলিমাকে এইভাবে দেখে। নীলিমা তো ঘুমে বেহুশ। সাকিব অনেকক্ষণ এক দৃষ্টিতে নীলিমাকে এইভাবে দেখলো। আবার নিজে নিজেই চোখ ফিরিয়ে নিলো। এরপর অন্যদিকে ফিরে ঘুমিয়ে যায়।
তিন/চারদিন ধরে বিয়ে হয়েছে ওদের কিন্তু স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক তো দূর কেউ কারো সাথে কোনো কথাই বলেনি।
পরেরদিন সকালবেলা……..
-শুনছেন? অফিস যাবেন না আপনি? (এক হাত দূরে দাঁড়িয়ে নীলিমা সাকিবকে ডাকছে)
-তানহা প্লিজ! যাব না বলেছি তো! (নীলিমাকে টান দিয়ে নিজের উপর ফেলে)
নীলিমা বাকরুদ্ধ হয়ে যায় সাকিবের এমন আচরণে।
-আজকে অফিসে যাব না। আজকে সারাদিন আমি আমার বউয়ের সাথে রোম্যান্স করব। (নীলিমাকে জড়িয়ে ধরে সাকিব)
-কি করছেন কি আপনি? (সাকিবকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে নীলিমা)
-উহু এমন কেন করছো তুমি তানহু?
-আরেহ কি অবস্থা। আমি নীলিমা, তানহা আপু নই। (চিল্লিয়ে নীলিমা)
নীলিমার চিল্লানোর আওয়াজ শুনার পর সাকিবের ঘোর কাটলো। নীলিমাকে ওর উপর দেখে সাকিব নীলিমাকে ধাক্কা দিয়ে খাটে ফেলে দিল। নীলিমা শুধু মুচকি হাসলো।
চলবে