#সুখ
#Part_19
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
নীলিমার সারা শরীরে কামড়ের দাগ। কোনো নরপশু ছাড়া এ কাজ কারো পক্ষে করা কিভাবে সম্ভব। সাকিব কি রেখে কি করবে বুঝে উঠতে পারছেনা। নীলিমাও কথা বলছে না। মলম লাগানো শেষে সাকিব নীলিমাকে বলল,
-কি করে এসব হলো নীলু?
-নীলিমা চুপ করে ছিল।
সাকিব ও উঠে গিয়ে ড্রেসিংটেবিল ধরে দাঁড়ায়। নীলিমা ওড়না জরিয়ে উঠে বসে। একদম নির্দ্ধিধায় নীলিমা শান্ত গলায় বলে
-I am a rapist girl.
কথাটা শুনে সাকিব পেছনে তাঁকালো আর এক দৃষ্টিতে তাঁকিয়েই থাকলো নীলিমার দিকে। নীলিমার চোখ বেয়ে পানি পরছে কিন্তু কোনো আওয়াজ ও করছেনা আর কোনো নড়চড় ও করছেনা। ঠিক এই মুহুর্তে সাকিব নীলিমাকে কি বলবে সেইটাই ভাবছে ও। আস্তে করে ব্লেজারটা খুলে ফ্লোরে বসলো সাকিব। এইটা ওর অভ্যাস। সাকিবের মনের উপর দিয়ে কিছু গেলে সেইটা আর কেউ না জানলেও ফ্লোর জানে। নীলিমার পায়ের কাছেই ও বসা আর এক হাত দূরে নীলিমা বসা। সাকিব চুলগুলোতে আঙুল বুলাচ্ছে।
-বাড়ি থেকে বের হয়েছিলো কেন? (হঠাৎ ই সাকিব প্রশ্ন করলো নীলিমাকে)
-নীলিমা চুপ করেই ছিল।
-এত কিছু হয়ে যাওয়ার পর কেন আমায় জানতে হয় ওই কুত্তার** সম্পর্কে?
-এইবারো নীলিমা চুপ।
-যাও ফ্রেশ হয়ে আসো। এইভাবে দেখতে পারছিনা আমি তোমাকে। শরীর জ্বলছে আমার। এক সেকেন্ড দেরি না করে এখনি যাও নীলিমা।
নীলিমা এক আঙুল দিয়ে গাল থেকে পানি সরালো এরপর আলমারি থেকে সবচেয়ে অসুন্দর শাড়িটা নিয়ে বাথরুমে গেলো। আয়ান ও নিজের ঘরে গিয়ে চুপচাপ বসে ছিল। কাউকে কেউই এখনো কিছু বলেনি। নীলিমা ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে তখনো সাকিব ফ্লোরেই বসা। এক পা মেলে দিয়ে আর এক পা উঠিয়ে বসে আছে। সাকিবের সামনে দিয়ে গিয়েই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলের টাওয়েল খুলে ফেলল ও। ঘাড়ের সাইডটা কালচে হয়ে গেছে। সাকিব শুধু নীলিমা কেই দেখছে কিন্তু মুখে কোনো কথা নেই। নীলিমাকে নিজেকে দেখছে আর ঘৃণায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। কিভাবে ও দাঁড়িয়ে আছে এইভাবে সাকিবের সামনে? ওর কি একটুও লজ্জা লাগছেনা? নীলিমা আয়নার সামনে থেকে সরে গিয়ে ধুম করেই সোফার উপর পরে যায়। সোফার উপর বসে খুব জোরে জোরে কাঁদে। সাকিব চোখ বন্ধ করে খাটের উপর মাথা আর শরীর ফ্লোরে দিয়ে শুয়ে আছে আর নীলিমার কান্নার আওয়াজ শুনছে।
-ভাইয়া? ভাবি? দরজা টা খুলো? ভাইয়া? (দরজা টোকা দিয়ে সুহা)
নীলিমা তখন কান্না থামায় আর চোখ মুখ মরিচের মত লাল হয়ে খুবই ভয়ংকর লাগছে ওকে। নীলিমা দরজা খুলে দিয়ে আসে নীলিমাকে দেখে সুহানা জিজ্ঞেস করে
-ভাবি? তোমার কি হয়েছে? এই রকম দেখাচ্ছে কেন তোমাকে?
-নীলিমা কোনো কথা না বলেই খাটের উপর বসে পরে হাঁটু উঁচু করে।
সাকিবকে ওইভাবে থাকতে দেখে সুহানা জিজ্ঞেস করে
– ভাইয়া? ও ভাইয়া? কি হয়েছে তোমার?
-সুহা দরজা লাগিয়ে দিয়ে চলে যা। ডিনার করব না। নীলিমাকে নিয়ে যা। ও কে খাইয়ে নিয়ে আয়। (সাকিব)
-তুমি ডিনার করবেনা কেন? আর ভাবি কি হয়েছিলো তোমার?
-সুহা আমি তোকে যেতে বললাম না? (অনেক জোরে ধমক দিয়ে সাকিব)
সুহা ভয়ে চলে গেলো। যাওয়ার আগে দরজা লাগিয়ে দিয়ে যায়। অফিসের শার্ট আর প্যান্ট কিছুই চেঞ্জ করেনি সাকিব। নীলিমা খাটে বসে বসে কাঁদছে আর সাকিব শুধু তা শুনছে। ঘন্টার পর ঘন্টা পার হয়ে যায় কেউ কোনো কথাই বলেনা। মাঝরাতে হঠাৎ নীলিমা বলে
-আমার এখন মরে যাওয়া উচিৎ তাই না?
-কেন মরে যাবা? (সাকিব চোখ বন্ধ করেই বলল)
-হ্যা যাব। ধর্ষিতা হয়ে এইভাবে বেঁচে থাকবো নাকি? (আরো জোরে কাঁদতে লাগলো নীলিমা)
-নীলু কেঁদো না। ভাগ্যের উপর কারো হাত থাকেনা। যা হওয়ার ছিল হয়েছে। অতীত এখন সেইগুলো। অতীত ভুলে যাওয়াই ভালো।
নীলিমা তখনো কেঁদেই যাচ্ছে। হঠাৎ ই নীলিমা উঠে গিয়ে সাকিবের পায়ের উপর বসে সাকিবকে জড়িয়ে ধরে। সাকিব ও নীলিমাকে শক্ত করেই জড়িয়ে ধরে। নীলিমাকে কয়েকটা চুমু ও দিল সাকিব।
-নীলু হয়েছে তো। আর কেঁদো না। তুমি আমার বউ ছিলা, আছো আর থাকবা। ভেবো না সাকিব তোমায় ধর্ষিতা বলে ডিভোর্স দিয়ে দিবে। বুঝছো?
নীলিমা কিছু বলল না। আরো শক্ত করে সাকিবের গলা জড়িয়ে ধরলো। অনেকক্ষণ সাকিব নীলিমাকে জড়িয়ে রেখেছে। নীলিমার চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে সাকিব বলে
-নীলু ঘুমাবেনা? রাত তিনটা বাজে।
-আমার ঘুম আসছেনা।
-ঘুম পাগলী এই কথা বললে কিভাবে হবে?
-আমার ঘুম আসছেনা।
-আচ্ছা ঘুমাতে হবেনা। উঠো আমি চেঞ্জ করে আসি একটু।
-না।
-আচ্ছা এইভাবেই থাকো তুমি
ভোরের আযান পর্যন্ত সাকিব নীলিমাকে নিজের বুকে জড়িয়ে রেখেছে। নীলিমা কেঁদে কেঁদে শার্ট ভিজিয়ে ফেলেছে। সাকিব থামাতে চেয়েছিলো কিন্তু থামায়নি। কাঁদলে হয়ত ও একটু হালকা হবে। আযান দেওয়ার পর সাকিব নীলিমাকে জিজ্ঞেস করে
-নামাজ পড়বা না?
-আল্লাহ আমার এই অপবিত্র শরীরের নামাজ কবুল করবেন না।
-এই মেয়ে শুনো কেন এইভাবে বলছো? বলেছি না ভাগ্যের উপর কারো হাত থাকেনা। উঠো নামাজ পর। আমিও আজকে তোমার সাথে পরছি।
সাকিব জোর করে নীলিমাকে উঠালো। নীলিমাকে ওয়াশরুমে দিয়ে আসলো ওযূ করার জন্য। নীলিমা অনেক কষ্টে ওযূ করলো। ওযূর পানি আর চোখের পানি মিলেমিশে একাকার। নীলিমা বের হওয়ার পর সাকিব দ্রুত চেঞ্জ করে, ফ্রেশ হয়ে ওযূ করে বেরিয়ে এলো। সাকিব হাত ধরে নীলিমাকে জায়নামাজে দাঁড় করালো। নীলিমার চোখ তখনো ভেজা। সাকিব নীলিমার কপালে চুমু দিয়ে বলল,
-আমি আছি না?
-হুম।
দুইজনে একসাথে নামাজ শেষ করলো। নীলিমা বিছানার উপর বসে পরলো সাকিব গিয়ে নীলিমার পাশে বসলো নীলিমার হাত ধরে।
-তুমি তো এত দূর্বল না নীলু। কেন এইভাবে ভেঙে পরছো? কিচ্ছু হয়নি। তোমার মুখ এইভাবে মানায় না। চঞ্চল মেয়েটাকে এইভাবে মানায় না নীলু। আচ্ছা তুমি আমাকে বলো তো ওই কুত্তার** তোমার সাথে কি কি করেছে?
-আমি বলতে পারবো না।
নীলিমা সেখান থেকে উঠে গিয়ে আবার কাঁদে। সাকিব উঠে গিয়ে নীলিমাকে ওর দিকে ঘুরায়।
-ওর সর্বোচ্চ শাস্তি দিব আমি। তুমি শুধু বলো কি কি হয়েছে?
-ও বাড়ির নিচে দাঁড়িয়ে আমায় হাই দিচ্ছিলো। আমি তখন গোসল করে এসেছিলাম। রাগ হয়েছিলো অনেক। তখন আমি নিচে গিয়ে ওকে একটা থাপ্পর মেরে দেই। ও বলেছিলো ও যা চায় তা জোর করেই নাকি আদায় করে। আমি চলে আসব তখন ও আমার মুখ চেপে ধরে নিয়ে যায়। এরপর ওর বাড়িতে নিয়ে আমার হাত পায়ের বাঁধন খুলে দেয়। টান দিয়ে আমার জামা ছিঁড়ে ফেলে।
এইটুকু বলেই নীলিমা সাকিবকে জড়িয়ে ধরে আবার কাঁদছে।
-তারপর বলো?
-আমি চাইলেও ওকে আটকাতে পারিনি। তখন কার ফোন পেয়ে যেন বাইরে গিয়েছিলো। সন্ধ্যায় বাসায় এসে কুকুরের মতো………
-থাক আর বলতে হবেনা। কেঁদো না তুমি। শাড়িটা পালটে নিচে চলো।
-না আমি নিচে যাব না। কাকে দেখাবো আমি এই মুখ?
-কেন এমন করছো? চলো নীলিমা প্লিজ। দাঁড়াও আমিই শাড়ি পরিয়ে দিচ্ছি।
সাকিব শাড়ি নিয়ে নীলিমার পরনের শাড়িটা খুলে ফেলে। এরপর ওকে ওই শাড়িটা পরিয়ে দেয়। নীলিমা সুন্দর করে ঘাড় ঢাকে শাড়িটা দিয়ে। সাকিব ও হাত ধরে নিয়ে যায় নীলিমাকে। সবাই চিন্তিত হয়ে বসেছিলো ড্রইংরুমে। সুহানা ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছিলো। নীলিমা আর সাকিব এসে ড্রইংরুমে দাঁড়ালো। তখনি আয়ান ও এলো নীলিমার সামনে।
-ঠিক আছো ভাবি?
নীলিমা মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলল। নীলিমার আব্বু আম্মু জিজ্ঞেস করছে
-মা তুই কোথায় গিয়েছিলি? কি হয়েছে কালকে?
-আম্মু আমি বলছি। (সাকিব)
নীলিমা তখন সাকিবের দিকে তাঁকালো। সাকিব নীলিমাকে বসতে বলল। তুলি আর তিশাকে বলল
-আম্মু তোমরা তোমাদের ঘরে যাও।
-জ্বি বাবাই।
তুলি তিশাকে নিয়ে ওর ঘরে চলে গেলো। সুহানা ও রান্নাঘর থেকে ড্রইংরুমে এলো। সাকিবের আম্মু সাকিবকে জিজ্ঞেস করছে
-কি এমন হয়েছে যে দিদিভাইদের পাঠিয়ে দিলি?
-যদি মেয়ে আমায় জিজ্ঞেস করতো রেইপ মানে কি তখন কি জবাব দিতাম? (সাকিব)
-কিহহহ? এই তুই কি বলছিস এসব সাকিব? (সাকিবের মা উত্তেজিত হয়ে)
-আম্মু ভাইয়া কি বলে সেইটাই শুনো। উত্তেজিত হইয়ো না। (আয়ান)
নীলিমার মা বাবা নীলিমার দিকে তাঁকিয়ে আছে।
-আমার একটা রিকুয়েষ্ট সবার কাছে। কেউ কোনোদিন নীলিমাকে কোনোদিন কেউ এই কথা শুনাবা না। যদি আমি এসব ভবিষ্যতে শুনি তাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবেনা। আম্মু মনে রেখো কারো সিচুয়েশন খারাপ গেলে তাকে সঙ্গ দিতে হয় আর সুখের সময় শত্রু হতে হয়। ইচ্ছে করে কিন্তু ও রেইপ হয়নি। কিডনাপ করে ওকে রেইপ করা হয়েছে। আর হ্যা অবশ্যই যাতে ও আগের মতই যত্ন আর ভালবাসা পায় সবার থেকে। ও আমার ওয়াইফ আছে আর থাকবে। সুহানা আর আম্মু তোমরা হয়ত বুঝতে পারছো ওর মনে এখন কি চলছে। কারণ তোমরাও মেয়ে। কালকে আমাকে জিজ্ঞেস করেছে ওর মরে যাওয়া উচিৎ কি না? আমিও খুব বেশি ডিপ্রেজড হয়ে গেছিলাম এইটা শুনার পর। কিন্তু এখন ঠিক আছি।
নীলিমার বাবা মা চুপ করে আছে। সবাই ই চুপ। সুহানা গিয়ে নীলিমার পাশে বসলো।
-আজকে এইসব এখানেই শেষ। কারো কাছে আমি বা নীলু কেউ ই কিছু লুকাইনি। একসাথে থাকি তাই জানিয়েছি। বাইরে থেকে যদি কেউ এসে কিছু বলে তাহলে সেইটা আমাকে জানাবা৷ আর ওই ইশতিয়াক ওর ব্যবস্থা তো আমি করছি। (সাকিব) নীলু আমার জন্য কফি নিয়ে উপরে এসো। (কেউ যাতে আর কিছু বলতে না পারে তাই নীলিমাকে সরিয়ে নিলো)
সাকিব উঠে চলে যেতে নেয়। সাকিবের মা পেছন থেকে প্রশ্ন করে
-কালকে যখন দশ পাঁচটা মানুষ তোর দিকে আঙুল তুলে বলবে ধর্ষিতা মেয়ের জামাই। সেসব তোর সহ্য হবে?
-আমাকে এইভাবে বলার মত কেউ নাই আর যদিও বলে তাহলে ভেবেই জবাব টা দিতে হবে। আর আম্মু আমার কথা ভেবো না তুমি। ওর কথা ভাবো। অনুরোধ তোমার কাছে কোনোদিন এই কথা বলে ওকে কষ্ট দিওনা। যা বলার তুমি আমাকে বলবা বাট ওকে না।
-আমার আরো দুইটা ছেলে মেয়ে আছে সাকিব। ওদের বিয়ে দিতে গেলে এসব উঠে আসবে। তখন তো ওদের বিয়ে হবেনা। (আম্মু)
-কি সব উলটা পালটা কথা বলছো আম্মু? আমার ভাবিকে এইভাবে কথা শুনিয়ে যদি কেউ আমাদের সাথে রিলেশন করতে চায় তাহলে আমরাই ভেঙে দিব ওই রিলেশন। আশা করি তুমি বুঝেছো। (আয়ান)
-আয়ান ঠিক কথাই বলেছে আম্মু। যারা রেপিস্ট হয় তারা ঘরে বাইরে অপমানিত হতেই থাকে। তাদের সাপোর্ট করার মতো কেউ থাকেনা। যেখানে ভাইয়া মেনে নিয়েছে সেখানে আমাদের কষ্ট পাওয়ার কোনো মানেই হয়না।
-তোদের মত করে আমি ভাবতে পারছিনা। স্যরি। (সাকিবের আম্মু সেখান থেকে চলে যায়)
সাকিব রান্নাঘরে গিয়ে দেখে নীলিমা কফি বানাচ্ছে। ঘাড়ের দাগগুলো টকটকে লাল হয়ে গেছে ওর ফর্সা শরীরে। সুহানা গিয়ে বলে
-ভাবি হেল্প করব?
নীলিমা মাথা নাড়িয়ে না করে। সাকিব নিজের ঘরে চলে আসে। নীলিমার মা গিয়ে নীলিমাকে জড়িয়ে ধরে। নীলিমা তখন বলে
-আসলেই যোগ্য ছেলেই বেছেছিলে আমার জন্য। #সুখ বুঝি আজই এলো।
চলবে