সুখ পর্ব ১৬

0
379

#সুখ
#Part_16
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona

সাকিব পুরো ফুচকার দোকান নীলিমার জন্য কিনে নিলো। নীলিমা তো রাগ করে ফুচকা খাচ্ছে আর খাচ্ছেই। ওর রাগ হচ্ছে সাকিব ওকে রাক্ষসী বলেছে আর সাথে তুলি সায় দিয়েছে। সাকিব আর তুলি দুইজন দুইজনকে দেখছে। সাকিব অবাকের চরম পর্যায়ে! এত ফুচকা কি করে খায়? প্রায় দেড়ঘন্টা ধরে টানা ফুচকা খাচ্ছে নীলিমা।

-এই পাকনী পেট খারাপ করবে তো। আবার কালকে খেয়ো। (সাকিব)
-না আমি আজই খাবো। (নাক চোখ দিয়ে পানি পরছে নীলিমার ঝালে)
-আমি না করেছি কিন্তু। ভাই আপনার বিলটা রাখেন। বিল কত?
-১১৮০ টাকা।
-কিহহহ?

সাকিব এতটাই অবাক হয়েছে যে বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়। নীলিমার প্লেটে তখনো চারটা ফুচকা আছে। আর ও খেয়েই যাচ্ছে। সাকিব নীলিমার হাত ধরে আর ফুচকাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করে

-ভাই পানি হবে?
-হ্যা সাহেব নেন।

ফুচকাওয়ালা সাকিবের হাতে পানি দেয় আর সাকিব নীলিমার মুখ ধুইয়ে দেয়। নীলিমার চোখ, মুখ, নাক পুরো লাল হয়ে গেছে। ঝালে তো শেষ ও। সাকিব ফুচকাওয়ালা কে পুরো বিলটা সহ কিছু টাকা এক্সট্রা দিয়ে আসে। গাড়ির পাশে এসে সাকিব নীলিমাকে বলে,

-দাঁড়াও আমি আসছি।
-কোথায় যান?
-আসছি। তোমরা গাড়িতে বসো।

সাকিব দোকান থেকে চারটা আইসক্রিম কিনলো। আইস্ক্রিমগুলো দুইটা তিশা আর তুলিকে দিলো আর বাকি দুইটা নীলিমাকে দিল ঝাল কমানোর জন্য। নীলিমা আইস্ক্রিম খায়না কিন্তু তখন বাধ্য হয়েই খেতে হয়েছে। গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে সাকিব নীলিমাকে বলছে

-একসাথে ১১৮০ টাকার ফুচকা মানুষ কিভাবে খায় নীলু?
-কেন আপনার টাকা দিতে হয়েছে তাই? (আইসক্রিম খেতে খেতে নীলিমা)
-অবশ্যই না। টাকার তো কোনো প্রশ্নই উঠছে না এখানে। শুধু বলছি এত ফুচকা কিভাবে খেয়েছো। চেহারার দিকে তাঁকিয়ে দেখেছো একবার?
-দরকার নেই। ফুচকা পেলে আমি সব ভুলে যাই। এর চেয়েও বেশি খেতে পারতাম যদি আপনি না নিয়ে আসতেন। বুঝেছি তো আমার খাওয়া আপনার সহ্য হয়নি তাই নিয়ে এসেছেন।
-চুপ থাকো পাক্নী। বাসায় গিয়ে যদি বলো আমার পেটে ব্যথা তাহলে পেট কেটে ফুচকা বের করব দেখো। ইয়া আল্লাহ! খাদক দেখেছি কিন্তু এমন পঞ্চম স্তরের খাদক দেখি নাই।
-আমি খাদক? (চোখ রাঙিয়ে নীলিমা)
-না বাবা আর তোমাকে খাদক বলা যাবেনা। কানে তো ধরেছিই সাথে হুশ ও হয়েছে।

সাকিব নীলিমা আর ওর মেয়েদের সাথে প্রায় চারঘন্টা বাইরে কাটিয়ে রাত আটটায় বাসায় আসে। বাসায় ঢুকেই নীলিমা অবাক হয়ে যায়। নীলিমা ওর হাঁটার গতি স্লো করে দেয়। সাকিব নীলিমার হাত ধরে সামনে নিয়ে আসে। সাকিব নীলিমার মা বাবাকে সালাম দেয়। যেই সম্পর্ক শেষ করে নীলিমা এই বাড়িতে এসেছিলো আজ সেই সম্পর্কই ওকে টানছে? নীলিমা ওর বাবা মা কে দেখে খুবই অবাক হয়।

-কেমন আছিস মা? (নীলিমার মা)
-ভালো।
-নীলু ঠিক করে কথা বলো। আমার জন্য তুমি ওনাদের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করতে পারো না। আর আমি জানি তোমাদের সম্পর্ক নষ্টের মূল কারণ আমিই।
-আমি পুরোনো কথা শুনতে চাইনা। তোমরা কেন এসেছো এখানে?? (নীলিমা)
-আমরা আসি নি রে। জামাই গাড়ি পাঠিয়েছে আমাদের আনতে। (নীলিমার বাবা)

নীলিমা এইবার রক্তচক্ষু নিয়ে তাঁকায় সাকিবের দিকে।

-আচ্ছা নীলিমা কেন এমন করছো? তুমি দুই বাচ্চার বাবাকে বিয়ে করতে চাও নি এইত? অসুখে থাকবে এই কারণেই তো মা বাবাকে ছেড়েছিলে তাই না? ভেবেছিলে মা বাবা ভুল কাউকে তোমার জন্য সিলেক্ট করেছেন?
-নীলিমা চুপ করে ছিলো হাত বদ্ধ করে।
-কাম অন নীলিমা স্পিক আপ। খুব কষ্টে কি রেখেছি আমি তোমায়? একটুও ভালবাসতে পারিনি? তোমার আশানুরূপভাবে ভালবাসতে পারিনি এইত? (সাকিব)

নীলিমা তখন ও চুপ। সাকিব নীলিমার মা বাবার কাছে গিয়ে ক্ষমা চায় নীলিমার এমন আচরনের জন্য। নিলীমা তখন হুট করেই ওর আম্মুকে বলে

-তোমরা ভালই করেছো। সুখেই আছি। আর সুখে না থাকলেও সমস্যা ছিল না কারণ দোষ আমারই। তোমাদের দোষ নেই কোনো।
-ভালো চেয়েছিলাম তোর আজীবন। আমাদের একমাত্র মেয়ে তুই। কতগুলো মাস হলো বিয়ে হয়েছে। একটাবার যোগাযোগ ও করিসনি আর যাস ও নি। (নীলিমার বাবা)
-যাব পরে। আর আমি স্যরি। মাফ করে দিও আমায়। (আম্মুকে জড়িয়ে ধরে নীলিমা)

সাকিব এইবার সোফায় বসলো। নীলিমার আব্বুকে বলল,

-প্লিজ আব্বু বসেন। সুহানা স্ন্যাকস বানাও।
-যাচ্ছি ভাইয়া।

নীলিমা অনেকক্ষণ কান্নাকাটি করার পর নিজের ঘরে গেলো ফ্রেশ হতে। আজ নীলিমা ওর বাবা মা কে যেতে দেয়নি। চেহারার কি হাল করে ফেলেছে কেঁদে কেঁদে। রাতে ফ্রেশ হয়ে ডিনার বানানোর জন্য নিচে যায় নীলিমা। অনেক রাতও হয়ে গেছে তখন। সুহানা ততক্ষনে ডিনার রেডি করে ফেলেছে। নীলিমা হাফ ছেড়ে বাঁচে তখন। নীলিমা সবাইকে খাবার সার্ভ করে দিয়ে খেতে বসে। সবাই গল্প করতে করতে খাচ্ছিলো। খাওয়া শেষ করতে অনেক রাত হয়ে যায়। তখন সবাই যে যার যার ঘরে ঘুমাতে যায়। গেস্টরুমে বাবা মা কে ঘুমাতে দিয়ে নিজের ঘরে চলে আসে নীলিমা। দরজা লক করে সোজা ওয়াশরুমে যায় ও। চেঞ্জ করে এসে মুখে ক্রিম লাগাচ্ছিলো আর চুল আঁচড়াচ্ছিলো।

-এইটাই ছিল আপনার সারপ্রাইজ? (চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে নীলিমা)
-হুম। তবে আরেকটা আছে। (বই হাত থেকে রেখে সাকিব)
-কি?
-চুল বাঁধো এরপর বলছি।
-হুম।

নীলিমা চুলে উঁচু করে ক্লিপ লাগায়। এরপর সাকিবের পাশে গিয়ে বসে। সাকিব তখন নীলিমার হাত ধরে নীলিমাকে ওর পায়ের উপর বসায়। বালিশের নিচ থেকে জুয়েলারি বক্স নিয়ে একজোড়া নুপুর বের করে সাকিব। একদম ইউনিক ডিজাইন করা নুপুর জোড়াতে। সাকিব নীলিমাকে খাটে বসিয়ে ও নিচে বসে। নীলিমার পা ওর হাঁটুর উপর রেখে ওর পায়ে নুপুর পরিয়ে দেয়। নীলিমা তো অবাক। ওর ছোট থেকেই ইচ্ছা নুপুর পরার। কিন্তু মা বাবা দিত না। আজ সাকিব নুপুর দিচ্ছে!

-আমি নাকি রোমান্টিক না? তোমাকে ভালবাসিনা? (নুপুরের হুক লাগাতে লাগাতে সাকিব)
-এসব কেন করতে গেলেন?
-ইচ্ছা হলো তাই। তুমি তো বাড়ির বউ আবার আমার পিচ্চি বউ। দুইটাই তোমার পরিচয়। তাই দুই সম্পর্কের সাথে মিলিয়েই ঝুনঝুনি ছাড়া নুপুর দিলাম। আওয়াজ ও করবেনা আর তোমার ইচ্ছা ও পুরন হলো। বাট সুন্দর লাগছে কিন্তু তোমার পায়ে নুপুরজোড়া।
-এত ভালবাসেন?
-মাপতে হবে।

সাকিব উঠে যাওয়ার পর নীলিমা সাকিবকে জড়িয়ে ধরে। সাকিব হেসে দেয়।

-এখন কি আবার কাঁদবা?
-না।
-তাহলে বলো সারপ্রাইজ দুইটা কেমন লেগেছে?
-খুব ভালো। আমি কখনই এমনটা ভাবিনি আপনাকে দিয়ে।
-সামনে আরো কিছু হবে।

সাকিব হাসতে হাসতে নীলিমাকে জড়িয়ে ধরে আছে। নীলিমা তখন নিজেকে ছাড়িয়ে ধাক্কা মেরে সাকিবকে বিছানায় ফেলে দেয় আর সাকিবের উপর উঠে বসে। সাকিবের টি শার্টের নেক ধরে নীলিমা বলে

-এত হাসি কই থেকে আসে? বুইড়া একটা।
-চুল পাকেনি তো।
-এত স্টাইল মারলে কিভাবে পাকবে?
-কি ভাষা!
-হুউ।

মারামারি করতে করতেই নীলিমা সাকিবের বুকের উপর ঘুমিয়ে যায়। এখন সাকিব উঠবে নাকি এই পিচ্চিটাকে উঠাবে সেইটাই ভাবছে। এরপর সাকিব নীলিমার পিঠ ধরে আস্তে করে উঠে বসে এরপর নীলিমাকে ওর বালিশে শুইয়ে দেয়। সাকিব নীলিমাকে তিনটা চুমু দেয় ওর ঘুমন্ত মুখে। নীলিমা তখন ঘুমু চোখেই সাকিবের গলা জড়িয়ে ধরে। নীলিমার প্লাজো আবারো হাঁটুর উপরে উঠে এসেছে।

-নিজেকেই সামলাতে শিখলো না এখনো। (নীলিমার প্লাজো টান দিয়ে সাকিব)

নীলিমা ঘুমিয়ে যাওয়ার পর সাকিব বিন ব্যাগের উপর বসে। ঘরে কফি আর ফ্লাস্কে গরম পানি ছিল। সাকিব নিজেই সুগারলেস কফি বানালো আর খাচ্ছিলো। নীলিমার পেছনে জানালা। জানালা খোলা যদিও এসি চলছে। বাতাসে জানালার পর্দাগুলো নড়ছে। আর নীলিমার চুল উড়িয়ে দিচ্ছে। আর নীলিমা নিষ্পাপ শিশুর মতই ঘুমাচ্ছে। সাকিব নীলিমাকে দেখে মনে মনে বলল

-শেলে তাহলে ঠিকই বলেছিলেন – “মধু ভোগে নয়, নজরেই আছে।”

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here