#সুখ
#Part_12
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
নীলিমা সব কাজ শেষ করে চেঞ্জ করে এসে বেডরুমের লাইট নিভিয়ে দিল। সাকিব বলল
-এইটা কি করলা? বই পড়ছি দেখছো না? লাইট অন কর।
-বেড লাইট অন করে পড়েন। আমার ঘুম পেয়েছে ঘুমাবো। আর বাতি জ্বালানো থাকলে আমি ঘুমাতে পারিনা।
-আরে জ্বালাও না। তুমি এসে ঘুমাও অন্যদিকে ঘুরে। গল্পটা অনেক বেশি সুন্দর একটু পড়তে দাও। আর কয়েক পাতা আছে। নীলু লাইট অন কর৷
-ভালো হয়েছে সুন্দর। আমি পারব না লাইট অন করতে। (মুখ বাঁকিয়ে নীলিমা)
-কর না রে ভাই! (রেগে গিয়ে সাকিব)
-পারব না। পারলে নিজে করুন গিয়ে।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
সাকিব বই হাতে নিয়ে ভ্যালকনি তে চলে গেলো। ভ্যালকনির কালারফুল লাইট অন করে দোলনায় বসে বই পড়ছিলো সাকিব আর নীলিমা বিড়বিড় করতে করতে শুয়ে পরে।
মিনিট পনেরো এর পর সাকিব বেডরুমে এলো। সাকিব লাইট অন করে দেখলো নীলিমা উপুড় হয়ে শুয়ে আছে কোণাকুণি করে। আর টি শার্ট পিঠের উপর উঠে আছে আর প্লাজো হাটুর নিচে। সাকিব চশমা খুলে হেসে দিল। চশমাটা ড্রেসিংটেবিল এর উপর রেখে সাকিব নীলিমাকে কোলে নিয়ে সোজা করে শুইয়ে দিল আর ওর জামা পায়জামা ঠিক করে দিল। নীলিমা তো ঘুমে বেহুশ। এরপর সাকিব বাতি নিভিয়ে শুয়ে পরে।
মাঝরাতে……..
সাকিব হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে গেলো। চোখ মেলে তাঁকিয়ে দেখে নীলিমা গড়াতে গড়াতে ওর পেটের উপর মাথা রেখে শুয়ে আছে আর পা অর্ধেক বাইরে। সাকিব নীলিমার মাথায় হাত দিয়ে উঠে বসলো।
-নীলু? এই নীলু? (সাকিব নীলিমাকে ডাকছে)
-উহুম কি? (চোখ খুলতে পারছেনা নীলিমা)
-ঘুমিয়েছো কিভাবে তুমি? এত খারাপ অভ্যাস কেন হ্যা?
-কি করেছি আমি? সকাল সকাল বকছেন কেন? (চোখ ডলতে ডলতে নীলিমা)
-এখন নাকি সকাল!!! এখন তিনটা পাঁচ বাজে, সকাল হয়নি। (ফোনের স্ক্রিন নীলিমাকে দেখিয়ে সাকিব)
-ওহ আচ্ছা। সরুন ঘুমাবো। আমার বালিশ কোথায়?
-এই যে আমার পেট আছে না? ঘুমাও এইখানে! ??
-আরেহ আপনার পেটে কেন ঘুমাতে যাব? আমার বালিশ কোথায়? (চোখ মেলে তাঁকাতে পারছেনা নীলিমা)
-এই নাও এইখানে ঘুমাও। (বালিশ ঠিকমতো দিয়ে সাকিব)
-দাঁড়ান তার আগে ওয়াশরুম থেকে আসি। (চোখ বন্ধ রেখেই উঠে গেল নীলিমা)
-আবার পরে যেয়ো না।
নীলিমা ওয়াশরুম থেকে এসে খাটে উঠতে গিয়ে সাকিবের উপর ধপাশ করে পরে যায়। সাকিব তো শেষ! ওর বুকের হাড় বুঝি সব ই ভেঙে গেল!!
-আল্লাহ! তুমি আমাকে নিয়ে যাও। (প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে সাকিব)
-এমা স্যরি স্যরি আমি ইচ্ছে করে পড়িনি। জুতায় পিছলা খেয়ে পরে গেছি। ব্যথা পেয়েছেন না?? (সাকিবের বুকে হাত দিয়ে নীলিমা)
-আসো তুমি এখন তুমি আমার ব্যথা দূর করবা!! (নীলিমাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে সাকিব)
-আমি ব্যথা দূর করব মানে? (আমতা আমতা করে নীলিমা)
-মানে শিখাচ্ছি!
সাকিব নীলিমাকে ওর বালিশে শোয়ালো আর নীলিমাকে জিজ্ঞেস করলো
-ঘরে যে একটা পুরুষ আছে সেইটা কি জানো? (সাকিব নিজের কথাই বলল)
-হ্যা জানি।
-তাহলে জামা কাপড়ের ঠিক থাকেনা কেন? (নীলিমার ঘাড়ে নিজের নাক ঘষে সাকিব)
-ঠিক রেখে কি করব? সে তো আমার স্বামীই হয়। আর আমি ঘুমালে সব ই এলোমেলো হয়ে যায়। (গলা সরিয়ে নীলিমা)
-এলোমেলো সব কিছুই আমার অনেক পছন্দ।
-কি হবে পছন্দ হয়ে? দেখতেই তো পারেন না আমাকে!
-সেইটাও ঠিক!!
-সরেন ঘুমাবো। শুধু শুধু মাঝরাতে আমাকে জাগালেন।
-নাহ চলো!
-কোথায়?
-ভ্যালকনিতে।
-এত রাতে?
-হ্যা আসো।
সাকিব নীলিমাকে নিয়ে বারান্দায় গেলো আর নীলিমা বলল
-ওয়েট করেন কফি নিয়ে আসি।
-এত রাতে আবার কফি বানাবা?
-তাতে কি? দুই মিনিট লাগবে।
-যাও।
নীলিমা কফি বানিয়ে নিয়ে আসলো। রাত তখন সাড়ে তিনটা। সাকিব নীলিমাকে ওর কোলে বসালো আর নীলিমার এলোমেলো চুল ঠিক করে দিল। এই প্রথম নীলিমা সাকিবের মাহাত্ম্য বুঝতে পেরেছে।
-তোমাকে যেদিন দেখতে গিয়েছিলাম সেদিন নাকে নাকফুল ছিল না। সেদিন একজন সাধারণ মেয়েই লেগেছে তোমায় দেখতে। আজ তুমি কতটা ম্যাচিউরড! নাকফুল পড়া, একটু মোটা ও হয়ে গেছো। মানে লক্ষ্যনীয় পরিবর্তন যাকে বলে।
-কেন? খারাপ লাগছে কি এতে?
-না। আগের থেকে অনেক বেশি পরিপূর্ণ মনে হচ্ছে স্পেশালি নাকফুল টায়। মেয়েদের নাকফুল পরা দেখলে বরাবর ই আমি ক্রাশ খাই তবে তোমার টা ডিফারেন্ট মনে হচ্ছে সবার থেকে।
-কেন সেইটা মনে হচ্ছে?
-সেইটা তো বলতে পারব না। (কফিতে চুমুক দিয়ে সাকিব)
-তানহা আপুকে ভালো লাগত না?
-ও কখনো নাকফুল পরেই নি। ওর কাছে নাকি ওইটা অড লাগত। অনেকবার বলেছিলাম পরতে কিন্তু পরেনি।
-পায়েল আমার অনেক বেশি পছন্দ তবে কখনো পরতে পারিনি।
-কেন?
-বাবা দিত না পরতে। বলত স্বামীর বাসায় গিয়ে স্বামীকে দেখানোর জন্য পরো। এখন পরার দরকার নেই।
-ওহ কেন সেইটা?
-সেইটা বলতে পারিনা।
-এখন তোমার ঘুম পায়না?
-এভাবে প্রতিটা রাত কাটলে না ঘুমিয়েই পার করা যাবে। (সাকিবের দিকে তাঁকিয়ে মুচকি হেসে নীলিমা)
-একটু পর তো নামাজ পড়বা। আমি ও মসজিদে যাব।
-কিহহ? আপনি মসজিদে যাবেন? (অবাক হয়ে নীলিমা)
-হ্যা আল্লাহকে ধন্যবাদ দিতে হবেনা!
-কেন?
-এই যে এই অবলা পিচ্ছিটাকে আল্লাহ আমার বউ করে পাঠিয়েছে।
-এই আমি অবলা? (সাকিবের দিকে ঘুরে নীলিমা)
-আমার তাই মনে হয় মাঝে মাঝে।
সাকিব আর নীলিমা বাকিটা রাত ফাইজলামী করে কাটিয়ে দিল আর মাঝে মাঝে সাকিব নীলিমার পেটে চিমটি মারছিলো আর নীলিমা সাপের মত বাঁকিয়ে যেত যা সাকিবের ভালো লাগত। ফজরের আযানের পরে সাকিব গোসল করে নামাজ পরতে গেল আর নীলিমা ও গোসল করে নামাজে দাঁড়ালো। নামাজ শেষ করে নীলিমা সব জানালা খুলে দিল আর পাখির কিচিরমিচির আওয়াজে নীলিমা খুবই প্রশান্তি অনুভব করলো। নীলিমা জানালা দিয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে সাকিব টুপি হাতে নিয়ে গেইটে ঢুকছে। বিছানা ঝারতে ঝারতে সাকিব ঘরে চলে এলো।
-অফিসে যাবেন না? (নীলিমা)
-নাহ।
-দুইদিন পর পর অফিসে যায় কেউ?
-না বাট আমি যাই।
-প্রবলেম হয়না?
-জ্বি না। আমি একমাস পরে গেলেও কিছু হয়না কজ আমি ঘরে বসেই সব করে দেই। প্রেজেন্ট থাকা তো ফর্মালিটি মাত্র।
-তাহলে আজকে আপনি বাসায়?
-হ্যা।
-বসে বসে তাহলে বই পড়েন নাহলে ঘুমান। আমি ব্রেকফাস্ট বানাতে যাই।
-আমিও যাব তো!
-মানে কি? (চোখ বড় বড় করে নীলিমা)
-আমিও তোমায় হেল্প করছি চলো৷ রান্না শুধু তুমি একা পারো না, আমিও পারি। ???
-রিয়েলি!! Okay Let’s prove.
সাকিবের সাথে নীলিমাও কিচেনে গেলো………..
চলবে
বাকিটা ইতিহাস???