#সুখ
#Part_10
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
সাকিব সহ সবাই মিলে সন্ধ্যাবেলা মজা করছিলো আর স্ন্যাকস করছিলো। অনেকদিন পর এই বাড়িতে এত মজা করলো সবাই। আয়ান তিশাকে কোলে নিয়ে খাইয়ে দিচ্ছে আর তুলি নিজ হাতে খাচ্ছে। সবাই খাওয়া শেষ করে পড়তে চলে গেলো। নীলিমাকে নিয়েও সাকিব পড়তে বসালো। নীলিমা পড়তে পড়তে ঘুমে ঝুমে পরে যায় আর তখন সাকিব মাথার মধ্যে টোকা দেয়।
-কি তোমার সমস্যা কি? রাতে কি ঘুমাও না? (সাকিব)
-পড়তে বসলেই ঘুম ধরে?
-চুপচাপ পড়। আরেকবার ঝুমবা তাহলে খবর আছে।
-???।
নীলিমা অনেকক্ষণ পড়ার পর বলে
-আর না! ঘুম পেয়ে গেছে।
-চলো ডিনার করে আসি এরপর ঘুমাও।
-চলুন।
দুইজন মিলে ডায়নিং এ যায়। সাকিব সবাইকে ডেকে নিয়ে আসে আর নীলিমা খাবার সার্ভ করছে। সবাই এসে ডায়নিং এ বসলো। গল্প গুজব করতে করতে খাওয়া শেষ করলো। নীলিমা তিশা আর তুলিকে খাইয়ে দিল। খাওয়া শেষ করে যে যার যার ঘরে চলে গেল ঘুমাতে। আম্মুকে ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে আসলো নীলিমা। এরপর নিজে ঘুমাতে চলে গেলো। সাকিব আগেই ঘরে চলে গেছে। নীলিমা দরজা লক করে ড্রেসিংটেবিল এর সামনে বসলো। বাঁধা চুলগুলো খুলে দিল নীলিমা আর চুলগুলো আঁচড়াচ্ছিলো। সাকিব খাটের সাথে হ্যালান দিয়ে বই পড়ছিলো। চুলগুলো উঁচু করে খোপা করল নীলিমা। এরপর একটা টি শার্ট বের করে ওয়াশরুমে চলে গেলো। শাড়িটা চেঞ্জ করে লাইট অফ করে শুয়ে পরলো। সাকিব বই রেখে শুয়ে পরলো।
-কালকে কি অফিসে যাবেন? (নীলিমা)
-হ্যা যাব। (নীলিমার দিকে তাঁকিয়ে সাকিব)
-আসবেন কখন?
-বিকেলেই চলে আসব।
-আচ্ছা গুড নাইট! (মুচকি হাসি দিয়ে নীলিমা)
নীলিমা অন্যদিক ফিরে শুয়ে পরলো। কিছুক্ষণ পর সাকিব নীলিমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। নীলিমা লাফিয়ে উঠে আর সাথে সাথে পেছনে তাঁকায়।
-হঠাৎ? (নীলিমা সাকিবকে প্রশ্ন করলো)
-মনে চাইলো। (নীলিমাকে ওর দিকে ঘুরিয়ে)
-কেন?
-কি কেন? (নীলিমার বুকের উপর মাথা রেখে সাকিব)
নীলিমা তো কথাই বলতে পারছেনা। আর সাকিব নীলিমার বুকে মাথা দিয়ে নীলিমার হাতের আঙুল নড়াচড়া করছে।
-জানো নীলু তানহার সাথে রাতে আমি এইভাবেই গল্প করতাম। ওর বুকের উপর মাথা দিয়ে প্রতিদিন ই আমি ঘুমিয়ে যেতাম। যখন ও আমাকে সরিয়ে উঠে যেত তখন খুব রাগ করতাম আর ও হাসতো। সেই হাসিটা এখনো আমার চোখের সামনে ভাসে।
-আপু তো অনেক ভাল ছিলেন সুহা আর আয়ানের থেকে যতটুকু শুনেছি। আপুর কথা শুনে আপুকে আমার ও ভাল লেগেছে।
-তানহা যেদিন অসুস্থ থাকতো পেটের ব্যথায় উঠতে পারত না। আর শুধু চিৎকার করত। ওকে দেখে তখন কান্না চলে আসত৷ আল্লাহ সব কষ্ট মেয়েদেরই দিয়েছে তাইনা?
-সেইটা বলতে পারিনা। যার যার কষ্টের পরিমাণ তার তার কাছে। আমার ওইধরনের কোনো সমস্যা নেই।
-ওহ! ঘুমাবেনা?
-না এমনিতেই তো ভাল আছি☺☺
-তাই?
-হুম।
সাকিব নীলিমার হাতে চুমু দেয়। আর এরপর কপালেও চুমু দেয়। নীলিমা তো বেশ অবাক সাকিবের এত পরিবর্তন দেখে।
-তোমার বাবার বড়িতে যাবা না? (সাকিব)
-না।
-কেন?
-এমনি।
-আমার সাথে বিয়ে দিয়েছে এই জন্য রাগ?
-নীলিমা তখন চুপ করে ছিল।
-হ্যা আমি বুঝেছি এই কারনেই তুমি রেগে আছো। কিন্তু নীলু আমি অন্যায় করেছি মানলাম, আঙ্কেল আন্টি কি করেছে? ওনারা তো চেয়েছেই মেয়ে ভাল থাকুক।
-হুম।
নানাবিধ কথা বলার পর রাত দেড়টার সময় সাকিব ঘুমিয়ে যায় আর নীলিমাও সাকিবের বুকের উপর হাত দিয়ে ঘুমিয়ে পরে। পরেরদিন সকালে সাকিব ঘুম থেকে উঠে দেখে নীলিমা ওর বুকের উপরে শুয়ে আছে আর চুলগুলো একদম এলোমেলো। সাকিব নীলিমার চুল সরিয়ে দেয় আর নীলিমাকে ডাকে।
-নীলু? উঠবানা? সাড়ে সাতটা বাজে। (সাকিব)
-কিহ? (লাফ দিয়ে ঘুম থেকে উঠে নীলিমা) আমি ব্রেকফাস্ট রেডি করব কখন? আপনি তারাতারি রেডি হয়ে নিচে আসেন। আমি যাই। (শরীর থেকে কম্বল সরিয়ে নীলিমা উঠে গেল)
-দাঁড়াও! আজকে তোমার কিছু করতে হবেনা। (নীলিমাকে টান দিয়ে সাকিবের উপর ফেলে)
-আপনি কি এখন আমার আরো লেইট করাবেন?
-বললাম তো কিছু করতে হবেনা।
-তুলি, তিশার টিফিন রেডি করিনি তো আমি। ছাড়ুন না!
-ওরা অলরেডি স্কুলে চলে গেছে। সুহা টিফিন রেডি করে দিছে।
-আপনাকে ধরে এখন আমার পেটাতে ইচ্ছে করছে। (রাগে নীলিমা)
-আমি আবার কি করেছি? (সাকিব)
-কালকে আমার লেইট করিয়েছেন।
-এখন থেকে এমন লেইট হবেই। চেইঞ্জ করে নিচে আসো। আমি একটু গার্ডেনে যাই।
-অফিসে যাবেন না?
-হ্যা সাড়ে আটটায় যাব।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
নীলিমা দ্রুত শাড়ি পালটে নিচে গেলো। নীলিমাকে দেখে সুহানা বলল
-গুড মর্নিং ভাবি। ঘুম ভাঙলো?
-আর বল না তোমার ভাই ডাক না দিলে আজকে উঠতেই পারতাম না। তিশা তুলি কি স্কুলে চলে গেছে?
-হ্যা। আমি ওদের টিফিন করে দিয়েছি চিন্তা করনা তুমি।
-থ্যাংক ইউ ভাই। আজকে সব হয়েছে তোমার বদ ভাইটার জন্য। (বিরক্ত হয়ে নীলিমা)
-কেন আমার ভাই কি করেছে?
-কালকে আমাকে ঘুমাতে দেয়নি।
নীলিমার কথা শুনে সুহানা কাশতে শুরু করলো। আয়ান পেছন থেকে জিজ্ঞেস করলো
-ভাইয়া ঘুমাতে দেয়নি কেন ভাবি? ???
-দুনিয়ার যত কথা আছে কালকে সব বলেছে। আর ঘুমাতে ঘুমাতে লেইট! যার ফল এইটা।
-আহারে আমার বেচারা ভাবিটা! ভাবিরে শরবত খাওয়া সুহা???
-মজা করছো না?
-না ভাবি একদম না?? (আয়ান)
-ওই আয়ান থাম। ভাবি তুমি আরামসে ফ্রেশ হয়ে আসো। আমি আর কাজের মেয়ে মিলে ব্রেকফাস্ট বানিয়ে ফেলেছি। (সুহানা)
-কি? (অবাক হয়ে নীলিমা)
-জ্বি। ঘরে মেয়ে থাকতে সব কি বউমা করবে নাকি? যাও তুমি আরেকটু ঘুমিয়ে আসো। (সুহানা)
-সব ননদ যদি তোমার মত হতো তাহলে তো হতই।
-গুড মর্নিং (সাকিব বাইরে থেকে এসে)
-মর্নিং ভাইয়া (আয়ান আর সুহা একসাথে)
-কি ভাইয়া তুমি নাকি ভাবিকে কালকে ঘুমাতে দাওনি ভাবি বিচার দিল তোমার নামে! (আয়ান)
আয়ানের কথা শুনে সাকিব লজ্জা পেয়ে গেল কিন্তু প্রকাশ করলো না।
-ফালতু কথা বাদ দিয়ে পড়তে বস যা! (ধমক দিয়ে সাকিব)
-খেয়ে নেই আগে। (অসহায়ের মত আয়ান)
-খা।
চলবে