#সুখের_কষ্ট
#Part_6
#Writer_Tahsina_Islam_Orsha
ওরা আবার স্বাধীনের সাথে কিছু করলো না তো? স্বাধীনকে খুজঁতে সন্ধ্যা পিছনে ফিরতেই দেখে স্বাধীন সন্ধ্যার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। স্বাধীনের চোখ আজকেও লাল হয়ে আছে।সন্ধ্যার আর বুঝার বাকি রইলো না ওরা আবার স্বাধীনের সাথে কি করেছে।
স্বাধীন কিছু করার আগেই সন্ধ্যা প্রস্তুত হয়ে গেলো সব কিছু সহ্য করার জন্য, কারন যায় হয়ে যাক সন্ধ্যা স্বাধীনকে আর ছেড়ে কোথাও যাচ্ছে না। সন্ধ্যা কান্না করে স্বাধীনকে জড়িয়ে ধরে। এই লোকটা এতো কিছু সহ্য করেছে। যেই মানুষ গুলো তাকে শান্তিতে থাকতে দেই নি। ভালোবাসার মানুষ গুলোর থেকে তাকে দূরে রেখেছে, এতটা বছর ধরে ওকে কষ্ট দিয়েছে তাদের কাউকে আমি ছাড়বো না। আর না অনেক হয়েছে এখন আমি আমার স্বামীকে তার অধিকার ফিরিয়ে দিবো। সাইফা আর মাকে তাদের প্রাপ্য সম্মান দিয়ে এই বাড়িতে নিয়ে আসবো।
স্বাধীন সন্ধ্যাকে ধাক্কা মেরে বেডে ফেলে দেই। সন্ধ্যা উঠে আবার স্বাধীনকে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে। যাতে স্বাধীন নড়াচড়া করতে না পারে।
শক্ত করে ঘাড়ের চুলের মুঠো করে ধরে
–‘ স্বাধীন শান্ত হোন আপনি। আমি আপনাকে রেখে কোথাও যাব না।
স্বাধীন সন্ধ্যার পিঠে নখ দিয়ে খামচে ধরছে বার বার। স্বাধীনের হাতের নখ আজকেই কেটে দিয়েছিলো সন্ধ্যা, কাটার ফলে নখ গুলো আরো ধারালো হয়ে আছে তাই সন্ধ্যার পিঠ থেকে রক্ত বের হচ্ছে স্বাধীনের খামচিতে। সন্ধ্যা স্বাধীনকে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করেই আছে।
স্বাধীন আরো হিংস্র হয়ে উঠছে দেখে সন্ধ্যা কোন উপায় না পেয়ে স্বাধীনের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দেই। ঠোঁট চেপে ধরতেই স্বাধীন একবারে শান্ত হয়ে যায়। সন্ধ্যা আশ্চর্যজনক ভাবে খেয়াল করলো স্বাধীন পুরোপুরি শান্ত হয়ে গেছে। এটা কি ভাবে সম্ভব যাকে কোন ভাবেই আটকানো যায় না তাকে সে এই ভাবে শান্ত করে ফেলেছে। সন্ধ্যা একটু অবাক হলো।
স্বাধীন শান্ত হয়ে যেতেই সন্ধ্যা স্বাধীনকে বেডে শুইয়ে নিজে উঠতে নিলেই স্বাধীন হাত ধরে ফেলে সন্ধ্যার। সন্ধ্যা বুঝতে পারছে স্বাধীন ওকে রেখে না যেতে বলছে। সন্ধ্যা ও স্বাধীনের সাথে শুয়ে পড়ে। সন্ধ্যা শুয়ে পরতে স্বাধীন সন্ধ্যার বুকে এসে মাথা রেখে সন্ধ্যাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে। সন্ধ্যা ও স্বাধীনকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ঘুমিয়ে যায়।
এইদিকে নাফিজা বেগম, আসিফ, অয়ন আর আশা অবাক হচ্ছে কোন ভাংচুরের শব্দ না পেয়ে। স্বাধীন কি কিছু করছে না নাকি!! নাকি ইঞ্জেকশন কাজ করছে না। খুব অবাক হচ্ছে ওরা হলো টা কি!!
আশা বলছে
–‘ মা আমি কি গিয়ে দেখে আসবো??
–‘ না তুমি গেলে সন্দেহ করতে পারে মেয়েটা। হয়তো স্বাধীন এখনো মেয়েটার কাছে যায়নি।
অয়ন বলছে
–‘ ইঞ্জেকশন প্রতিদিন কাজ করে আজকে করবে না কেন সাথে আবার ড্রাগের ইঞ্জেকশন ও দিয়েছি হা হা হা। মেয়েটার উপর তুফান যাবে ? টেনশন নিও না তোমরা।
?????
সকালে চিৎকার চেচামেচিতে সন্ধ্যার ঘুম ভেঙে যায়। স্বাধীন এখনো সন্ধ্যার বুকেই ঘুমিয়ে আছে। স্বাধীনকে বালিশে শুইয়ে কি হয়েছে দেখার জন্য সন্ধ্যা উঠে নিচে যায়। সিড়িতে থাকতেই সন্ধ্যা শুনতে পাচ্ছে আশা সাইফাকে বকা বকি করছে। কালকে কেনো আসেনি ঘরের কাজ কে করবে ফাকি দেই কেনো। সন্ধ্যা অবাক হচ্ছে বাড়ির মেয়েকে বকাবকি করছে অথচ সে এই বাড়ির কেউ না। সন্ধ্যার খুব ইচ্ছে হচ্ছে আশাকে গিয়ে টেনে দুইটা থাপ্পড় মারার জন্য। কিন্তু এখন এই সব করা যাবে না।
এক পর্যায়ে আশা সাইফাকে চড় মারতে গেলে সন্ধ্যা গিয়ে আশার হাত ধরে ফেলে।
–‘ ওকে মারার সাহস কি ভাবে হয় তোমার??
–‘ আপনার এতো সমস্যা কেন ওকে মারলে??
–‘ সাই……
একটু থেমে
–‘ শাপলা এই বাড়িতে কাজ করে সে ও এই বাড়ির ই একজন। ওর সমস্যার জন্য হয়তো ও আসতে পারেনি তাই বলে কি ওকে মারতে হবে?? শাপলার কাজ আমি করে দিচ্ছি।
আশা সন্ধ্যার কথা শুনে রাগে কটমট করতে করতে করতে সেখান থেকে চলে যায়। সন্ধ্যা সাইফাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেই।
–‘ তুমি এই বাড়ির মেয়ে হয়ে ও এতো অপমান সহ্য করে থাকছো। আর আমি কিছুই করতে পারছি না।
–‘ ভাবি আগে ভাইয়া সুস্থ হোক।
সন্ধ্যা চোখ মুছে
–‘ হুম, আমি তোমার ভাইয়াকে সুস্থ করবোই। তুমি বসে থাকো আমি সব কাজ করছি।
–‘ না ভাবি আপনি এমন করলে ওরা সবাই বুঝে ফেলবে। আপনি ও ওদের মতোই আমার সাথে ব্যবহার করবেন। কাজের মেয়ের সাথে যা ব্যবহার করে মানুষ তাই
–‘ না সাইফা আমি তা পারবো না। আমাকে এই সব করতে বলো না।
–‘ ভাবি আমার ভাইয়া এতো দিনে একটা ভালো মানুষ পেয়েছে। একটু সুখের মুখ দেখতে যাচ্ছে। আমি চাইনা ওরা সব জেনে ফেলুক আর আপনার কোন ক্ষতি করুক। আপনার আমার ভাইয়ার সাথে থাকতে হবে।
সন্ধ্যা আর কিছু না বলে চোখের জল নিয়ে রুমে চলে যায়। রুমে গিয়ে দেখে স্বাধীন বেডে নেই, ওয়াশরুমে গেছে। সন্ধ্যা শুয়ে অপর পাশে ফিরে কান্না করছে। ওই সব কি ভাবে করবে সন্ধ্যা!! সাইফা স্বাধীনের বোন এই বাড়ির মেয়ে হয়ে ও কাজ করবে কাজের মেয়ের মতো এই সব কি ভাবে মেনে নিবে সন্ধ্যা। কেন এতো কষ্ট দিচ্ছে আল্লাহ সন্ধ্যাকে। একটা পথ কেন দেখাচ্ছে না সন্ধ্যাকে।
সন্ধ্যা যে আজকে নিরুপায়। এমন অসহায় হয়তো কখনো লাগেনি নিজেকে। সন্ধ্যা কান্না করছে শুয়ে শুয়ে
স্বাধীন পিছন থেকে খেয়াল করছে সন্ধ্যা যে কান্না করছে। চুল গুলো অপর বালিশে পরে আছে। ব্লাউজের উপরে পিঠে যে খামচির দাগ তা ও দেখছে।
স্বাধীন বেডে উঠে সন্ধ্যাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।
–‘ আপনি কান্না করছেন কেন?? আপনার কান্না দেখে আমার ও কান্না পাচ্ছে। আপনার পিঠে কে ব্যাথা দিয়েছে? খুব কষ্ট হচ্ছে আপনার? এই জন্য কান্না করছেন?
সন্ধ্যা স্বাধীনের কথা শুনে চোখ মুছে স্বাধীনের দিকে ফিরে বলে
–‘ না এই জন্য কান্না করছি না। এই কষ্ট যে আমার ‘ সুখের কষ্ট ‘। আপনি আমার বুকে একটু মাথা রাখবেন?? আমার খুব শান্তি লাগে আর মন ভালো হয়ে যায় আপনি আমার বুকে মাথা রাখলে।
স্বাধীন আর কিছু না বলে সন্ধ্যার বুকে মাথা রেখে ওকে জড়িয়ে ধরে।
–‘ আর কান্না করবেন না আমার খুব কষ্ট হয় আপনি কান্না করলে।
–‘ হুম আর কান্না করবো না। এখন থেকে আর কান্না নয়। আমাদের জীবনে এখন সুখ আসার সময় হয়ে গেছে।
.
.
.
সন্ধ্যা স্বাধীনকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে অপর হাতে ফোনটা ওর হাতে নেই সিহাকে একটা কল দেওয়ার জন্য।
সিহা কল ধরেই
–‘ আপু তুই টেনশন করিস না। রিহান ভাইয়া কিছু করতে পারবে না। আমি জানি তুই টেনশন করছিস।
–‘ সিহা কালকে তুই এইখানে তারাতাড়ি আয় তোর সাথে আমার কথা আছে।
–‘ কিন্তু আপু কি হয়েছে……….
.
.
.
চলবে………
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। একটু সমস্যার জন্য আজকের পার্টটা ছোট হয়েছে। আগামী পর্বে গল্প শেষ করে দিবো ইনশাআল্লাহ।