সিন্ধু ইগল – (৪)
ইসরাত জাহান দ্যুতি
১০
প্রায় একটা সপ্তাহ ধরে জায়িন প্রচণ্ড ব্যস্ততার মধ্যে সময় কাটাচ্ছে। আরামের ঘুম তো এই পেশাতে ঢোকার পর থেকে তার কবেই উড়ে গিয়েছে। আর এই সাতদিনে তো যেন ঘুমের ধারের কাছে যাবার কথা চিন্তাও করতে পারছে না। স্থিরভাবে একটা ঘণ্টা বসে থাকার মতোই সুযোগ নেই, আর ঘুম তো দূরে পড়ে থাক। কিন্তু শরীরটা তো যান্ত্রিক পদার্থ নয়, যে বিনা বিশ্রামে অনবরত চলতেই থাকবে। সবে মাত্র অফিসে নিজের কেবিনে একটুখানি বিশ্রামের সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু ঘুম চোখে আষ্টেপৃষ্টে ধরার কারণে ছুটতে হলো তাকে ওয়াশরুম। চোখে মুখে পানি দিয়েও ঘুম তাড়াতে পারছে না সে। এর মাঝেই আবার প্রকৃতির ডাক পড়ে গেল তার। ক্লান্ত শরীরটাকে টেনে ওয়াশরুমে যেতেও বড্ড অলসতা কাজ করছে এমন সময়েও। কিন্তু না গিয়েও তো উপায় নেই। ঝিমুনি অবস্থাতেই প্রস্রাব কাজ শেষ করে প্যান্টের জিপার টানতে টানতে আয়নার সামনে এসে দাঁড়াল। নিজের চেহারাটা পর্যন্ত চোখ খুলে ঠিক মতো দেখতে পারছে না ঘুমের চোটে। আর ঠিক সেই সময় সিফাত ভীষণ আবেগি কণ্ঠে তাকে ডাকতে আরম্ভ করল ওয়াশরুমের দরজাতে নক করতে করতে। সেই ডাকেই হতচকিত হয়ে জায়িন নিজের দিকে তাকাল আয়নার মাঝে। কান খাঁড়া করে শুনতে পাচ্ছে সে, সিফাত তাকে ডাকতে ডাকতে জিজ্ঞেস করছে, ‘জায়িন সোনা ভেতরে কী করছে এতক্ষণ যাবৎ?’
প্রশ্নটা শুনেই কেমন গা জ্বালা করে উঠল জায়িনের। তবু বেশ দুর্বল আর শান্ত কণ্ঠে জবাব দিলো, ‘তোমার জায়িন সোনা পেটের পানি কমাচ্ছে সিফাত।’
কথাটা বলতেই দরজার ওপাশ থেকে সিফাতের খিল খিল করে হেসে ওঠা শুনতে পেল জায়িন। কিন্তু তাতে যেন জায়িনের মেজাজ খারাপ আরও বেড়ে গেল। তার কারণটা হলো জিপার টানতে গিয়ে আন্ডারওয়্যারের সাথে কী করে যেন সেটা আটকে গেছে। ওদিকে সিফাত থেমে নেই। সে দরজাতে নক করেই চলেছে। এর মধ্যে আবার জিজ্ঞেস করল, ‘এত সময়ে তো শাওয়ার নেওয়াও কমপ্লিট হয়ে যাওয়ার কথা। আর তুমি এখনো পিয়িং করেই চলেছ?’
-‘উহুঁ, হয়ে গেছে। তুমি বসো, আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।’
-‘কেন? বসতে হবে কেন? আমাকে সাথে নিয়ে কি ফ্রেশ হতে পারবে না? দরজা খোলো, আমি ভেতরে ঢুকব।’
আয়নার দিকে চেয়ে জায়িন চেহারা কুঁচকে ফেলল, সিফাতের কথা শুনে। জিপার টেনে ওঠাতে ওঠাতে তার উদ্দেশ্যে খিস্তি দিয়ে উঠল, ‘খাইশ্টা মেয়েলোক!’ বলেই ওয়াশরুমের দরজাটা খুলে সিফাতকে এক টানে ভেতরে নিয়ে এলো।
১১
ঘুম যেন জাদুর চোখেও হারাম হয়ে গেছে কিছুদিনে। কিছুতেই সে নিজেকে বুঝতে পারছে না। শেখ বাড়ির প্রতি ইদানীং তার ভীষণ আকর্ষণ বেড়েছে। কারণে অকারণে, এ-বেলা ও-বেলা এখন তার শেখ বাড়ি যেতে ইচ্ছা করে। কিন্তু যাবার পর নিজের বাসায় ফিরে আসবার জন্য আবার অস্থির হয়ে পড়ে সে। অন্তত এতটুকু বুঝতে পেরেছে সে, শেখ বাড়ির মূল আকর্ষণ হলো জায়িন। সেদিনের পর জায়িনের সাথে তার এই সাতদিনে আরও কয়েকবার দেখা হয়েছে। আর প্রতিবারই স্রেফ সৌজন্য সাক্ষাৎ ছাড়া তেমন কোনো কথা হয়নি তাদের মধ্যে। মূলতঃ এর থেকে বেশি কথা বলার মতো সুযোগ পায়নি সে জায়িনের থেকে। বসার ঘরে বসে জান্নাতি বেগমের সাথে কথা বলার ফাঁকে হঠাৎ জায়িনের সাথে দেখা হতো। আর সেই সময় শুধু কুশল বিনিময় ছাড়া জায়িন কথা তেমন দীর্ঘ করত না। কিন্তু ওই বাড়ি থেকে ফিরে আসার জন্য তার অস্থিরতা কাজ করত জায়িনের দৃষ্টির জন্য। তার সাথে প্রথম দিনটা ছাড়া জায়িনের সাথে যে ক’বার দেখা হয়েছে, সেই ক’বারই এক গম্ভীর ব্যক্তিত্বের জায়িনকে সে আবিষ্কার করেছে। আর সেই সাথে জায়িনের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তার প্রতি। যেন বহু বছরের রাগ সেই চোখে। জাদু চেয়ে থাকার মতো সাহস পায় না তার ওই দৃষ্টিতে। অথচ এরপরও জায়িনের প্রতি তার আলাদা টান অনুভূত হচ্ছে। যা বাড়তে দেওয়া উচিত নয় বলে তার মনে হচ্ছে। কিন্তু তাও সে নিজের অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।
অস্থিরভাবে পায়চারি করে চলেছে সে ঘরের মধ্যে। মাধু ওদিকে জানালার সামনের সোফাতে বসে ল্যাপটপে ব্যস্ত। কিন্তু তবুও বোনের অস্থিরতা দেখতে পাচ্ছে, বোনের দিকে না তাকিয়েই। কাজ শেষ না করা অবধি সেদিকে নজর দেবে না সে এই মুহূর্তে কোনোভাবেই।
জাদু ঘাড়ে হাত দিয়ে পায়চারি করে চলেছিল। হঠাৎ বোনের সামনে গিয়ে বসে পড়ল সে দুম করে। ভাবল, এভাবে মাধুর মনোযোগ ভাঙা যাবে৷ কিন্তু হলো না তার কিছুই। তাই না পেরে সে বলে উঠল, ‘আমি একটা বিষয় তোর সাথে ডিসকাস করতে চাই, মান।’
-‘অপেক্ষা কর। ডিজাইনটা শেষ করি।’
জাদু ওর কথামতোই বসে অপেক্ষা করতে থাকল। প্রায় পনেরো মিনিট বাদে মাধু চোখের চশমাটা খুলে ল্যাপটপ বন্ধ করল। তারপর বলল, ‘শুরু কর। সোজা মূল বিষয়ে যাবি। রচনা শুনতে চাই না।’
-‘জায়িন মাহতাব। মানে শেখ বাড়ির ছোটো ছেলে। ওর মধ্যে কী যেন আছে। যেটা আমাকে ওকে নিয়ে ভাবতে বাধ্য করছে ভীষণ। একবার মনে হচ্ছে ওকে আমি চিনি। দেখেছি আমি ওকে এর আগেও। তো আবার মনে হচ্ছে, নাহ্ঃ এই প্রথমই তো ওকে দেখলাম।’
-‘কী করে?’
-‘গোয়েন্দা বিভাগে জব করে।’
-‘জব করে? তুই না এর আগে বললি শেখ বাড়ি নবেল ফ্যামিলি। সেই ফ্যামিলির ছেলে সাধারণ জব করে?’
-‘এটা প্রথমে শুনে আমিও অবাক হয়েছিলাম। পরে ওর হিস্ট্রি জেনে যা বুঝলাম তা হলো, ও ওর নিজের খেয়াল খুশিমতো চলাফেরা করতে পছন্দ করে৷ যার কারণে মাহতাব শেখ এই ছেলের ওপর খু্বই নারাজ।’
-‘বুঝলাম। এখন তোর ওকে নিয়ে ভাবার কারণটা কী?’
-‘আমি ওর সামনে গিয়ে দাঁড়াতে ভীষণ ভয় পাই। যেন ওর চোখে আমার প্রতি দারুণ রাগ। কিন্তু আমার সাথে কথা বলে খুব মিষ্টি করে। আমার মনে হচ্ছে আমি ওর প্রতি আগ্রহবোধ করছি।’
-‘এটা সেকেণ্ড টাইম, তাই না?’ মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করল মাধু।
জাদুও মৃদু হেসে বলল, ‘তাই তো মনে হচ্ছে। সেকেণ্ড টাইম আমি আবারও কোনো ছেলেকে নিয়ে ভাবব, এমনটা আমি নিজের কাছে নিজেই প্রত্যাশা করিনি।’
-‘শেখ বাড়ি সম্পর্কে তাহলে আরও গভীরভাবে খোঁজ খবর চালাতে হবে এবার।’
-‘মানে তুই চাইছিস আমার জায়িনের ভাবনাকে প্রশ্রয় দেওয়া উচিত?’
মাধু ল্যাপটপটা চার্জে বসিয়ে চোখের চশমাটা টিস্যুতে মুছতে মুছতে বলল, ‘যেহেতু দ্বিতীয়বার তুই কোনো ছেলের প্রতি ইন্টারেস্ট ফিল করছিস, সেহেতু তোর উচিত এই ভাবনাকে প্রশ্রয় দেওয়া। লাইফটাকে গুছিয়ে নেওয়ার সুযোগ পেলে কেন নিবি না সুযোগ?’
কিছুটা মিইয়ে গেল যেন জাদু। বিষণ্ন গলায় জিজ্ঞেস করল ওকে, ‘আর তুই?’
কিছুক্ষণ চুপ থেকে নির্বিকার সুরে মাধু জবাব দিলো, ‘তোর আমার গল্পটা অনেকটা ধুম থ্রি মুভির গল্পটার মতো, ভেবে দেখেছিস লিয়া?’
জাদু হেসে ফেলল, ‘ইয়াহ, আই অ্যাম আ সিক্রেট মান।’
মাধু মৃদু হেসে বলল, ‘হুঁ, আমির খানের লাইফে ক্যাটরিনা কাইফ এসেছিল৷ তোর লাইফে না হয় জায়িন মাহতাব এক্সিস্ট করবে।’
-‘তাহলে তুই খোঁজ লাগাচ্ছিস?’
-‘আজই শুরু করব।’
-‘ওহ, ভালো কথা শোন। কাল তো ফ্রাইডে। জান্নাতি আন্টি আমাদের দুজনকেই ইনভাইট করেছেন দুপুরে। তুই আসতে পারবি না, এটা বলার পরও উনি ছাড়ছেন না৷ বললেন প্রয়োজনে কাল উনি নিজেই নিতে আসবেন আমাদের।’
-‘মহিলা দেখছি খুব বেশিই খাতিরযত্ন করছেন। বাড়ির বউ বানাতে চাইছেন না কি?’
জাদু হাসতে হাসতে বলল, ‘আমারও তাই মনে হচ্ছে। তিনটা ছেলেই তো আনম্যারিড।’
১২
বাড়ির প্রায় কাছাকাছি এসেই জায়িনের গাড়িটা থেমে গেল। রাত বাজে এখন বারোটার ওপাশে। ঘুমে গাড়ির মাঝে বসে ঢুলে ঢুলে পড়ছে জায়িন। রেজা ড্রাইভিং সিট থেকে নেমে গাড়ির কী সমস্যা তা দেখার জন্য নামতেই মনে হলো ওর পিছু এসে কেউ দাঁড়াল। ফিরে তাকাতেই দেখতে পেল বিশাল সাইজের বিদেশি একটা কুকুর দাঁড়িয়ে আছে। আপাতত সেদিক থেকে মনোযোগ সরিয়ে গাড়ি দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল সে।
গাড়ি থেমে গেছে, তা বুঝতে পেরে চোখ পিট পিট করে তাকাল জায়িন। পাশ ফিরে রেজাকে না দেখে ঘুম জড়ানো গলায় জায়িনে ডেকে উঠল তাকে, ‘তুমি কোথায় রেজা? আছ নাকি আশেপাশে?’
রেজা বাইরে থেকে উত্তর দিলো, ‘গাড়ি খারাপ করেছে স্যার। দেখছি কী সমস্যা?’
হাত দু’দিকে প্রসারিত করে জায়িন আলস্য ছাড়ল। চারপাশে তাকিয়ে দেখল, তাদের বাড়ি যাবার পথে এসেই গাড়ি থেমেছে। এটা দেখে রেজার প্রতি কড়াভাবে রাগ চড়ল তার। বাড়ির কাছে এসে গাড়ি খারাপ করেছে, সেটা সকাল হলেই দেখা যেত। এটুকু পথ তো হেঁটেই চলে যাওয়া যায়। রেজাকে কিছু বলার জন্য গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াতেই কুকুরটাকে দেখতে পেল সে। চোখদু’টো ডলে ভালো করে তাকাল কুকুরের দিকে। এই বিদেশি কুকুরটাকে তার চেনা চেনা লাগছে। কিন্তু ঘুমের রেশ কাটেনি বলে মনে করতে পারল না সে। আসলে কথাটা ঠিক তা নয়, গুরুত্ব সহকারে মনে করতে চাইল না সে।
রেজার কাছে গিয়ে ওর মাথায় একটা গাট্টা মেরে বলল, ‘এই গাড়ি ঠিক না করা অবধি তুমি আজ বাড়ি ঢুকতে পারবে না। আমি গেলাম।’
কথাটা শুনে অসহায় দৃষ্টি মেলে তাকাল রেজা জায়িনের দিকে। তবে জায়িনও জানে, বাড়িতে না গেলেও রেজা গাড়িতে বসেই নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে রাত পার করে দেবে।
জায়িন শুনশান, নিস্তব্ধ রাতের ফাঁকা রাস্তাতে একা একাই হেঁটে চলেছে। গাজীপুরে তাদের বাড়িটা শহর থেকে একটু ভেতরেই। যার জন্য রাত বারোটা এখন এদিকটাতে মধ্য রাতের মতো। এই সময়ে শুধু দু’একজন রিকশাচালক বা অটোচালক ছাড়া কাউকে দেখার মতো না বলেই জানত সে। কিন্তু আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, তার সামনেই হেঁটে চলেছে বেশ লম্বা একটি নারীমূর্তি। গায়ে কালো মতো ওড়না বা চাদর জড়ানো। হাতদু’টো দিয়ে হয়তো নিজের বাহু জড়িয়ে ধরে আছে। চুলগুলো মাথার ওপর একটা ঝুঁটি বাঁধা। আর পরনে তার সেলোয়ার-কামিজ নাকি জিন্স আর কূর্তি ধরনের কিছু, তা ঠিক বুঝতে পারল না জায়িন৷ এমনভাবে হেঁটে চলেছে, এই রাত-বিরেতে বিপদ আপদ বলেও যে কিছু বিষয় আছে তা নিয়ে মেয়েটি যেন একেবারেই চিন্তাশূন্য। জায়িন বুঝতে পারছে না, এগিয়ে গিয়ে কথা বলবে? না কি পাশ কাটিয়ে চলে যাবে? এমন দ্বিধাদ্বন্দে পড়ে মেয়েটির দিকে এগিয়েই গেল সে। সেই সময় মেয়েটি দু’পাশে তাকিয়ে কী যেন খুঁজে তারপর চারপাশে তাকাতে তাকাতে ডাকতে থাকল, ‘বুবন! বুবন হোয়্যার আর ইয়্যু?’
তখনই মুখোমুখি হলো সে জায়িনের৷ তার থেকে প্রায় চার হাত দূরে দাঁড়িয়ে আছে জায়িন। তার দিকে জায়িন এগিয়ে এসে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসু ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষণ। তারপর চেহারাটা মুহূর্তেই গম্ভীর করে তুলে বলে উঠল, ‘মাঝরাতে নিজের বাসার মধ্যে স্বাভাবিক, অস্বাভাবিক কাজকর্ম করেন। ওটা পর্যন্তই ঠিক ছিল। কিন্তু বাইরে এভাবে চলাফেরা করছেন, শুধু একটা কুকুরের ভরসায়। এটাকে পাগলামি আর বোকামি ছাড়া সহজ স্বাভাবিক কাজ বলে মনে করতে পারলাম না।’
কথা বলার মুহূর্তটুকুতে মাধু নির্বাক দৃষ্টিতে জায়িনের মুখটা দেখছিল। কথা শেষ হতেই এর মাঝে কখন জায়িন তার খুব কাছে এসে দাঁড়াল, তা টেরও পেল না সে। জায়িনের চেহারাটা তখনো গম্ভীর। মাধুর দিকে কয়েক সেকেণ্ড নীরবে চেয়ে থেকে হঠাৎ বেশ অধিকারসূচক গলায় বলল, ‘রাত ন’টার পর খুব প্রয়োজন ছাড়া বের হবে না। আর খুব প্রয়োজন থাকলে বাড়ির কেয়ারটেকারকে জানাবেন।’
মাধুর যেন কী হলো সেই মুহূর্তে। জায়িনের কণ্ঠে এমন অধিকারসূচক বাণী শোনা মাত্রই বক্ষঃস্থল কেঁপে উঠল তার। তবে তা ভয়ে নয়। অন্য কোনো এক অনুভূতিতে। যে অনুভূতির সঙ্গে হয়তো পরিচিত সে। কিন্তু সেই অনুভূতির কারণ কী, আর আদৌ তা তার সঙ্গে পরিচিত কি-না তা সে বুঝতে পারল না। আপনা আপনি মাথাটা ঝুঁকিয়ে ফেলল। জায়িনের এই বাক্যদু’টিতে যে শাসন রয়েছে, তা সে বুঝেও চুপ করে রইল। অথচ একজন অপরিচিত মানুষের থেকে এমন কথাগুলো শুনে তার বিপরীতে এতক্ষণে কতরকম জবাব দেওয়ার কথা তার।
জায়িন সেই শাসনের গলায় জিজ্ঞেস করে উঠল, ‘এখনো দাঁড়িয়ে আছেন যে? বাসায় যাচ্ছেন না কেন?’
মাথা নিচু অবস্থাতেই চোখদু’টো বন্ধ করে কপাল কুঁচকে ফেলল মাধু। জায়িন সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে দেখতে থাকল তখন মাধুর মুখটা। স্পষ্ট দেখতে পেল সে, মাধু কিছু বিড়বিড় করছে আর মাথা এ-পাশ ও-পাশ মৃদু গতিতে দুলাচ্ছে।
কিছু একটা মনে করার চেষ্টা করছে মাধু। কিন্তু তা সম্ভব হচ্ছে না। হঠাৎ চোখদু’টো খুলে চেঁচিয়ে শুধু ডেকে উঠল, ‘বুবন?’
আর তখনি একটু দূর থেকে কুকুরটা দৌঁড়ে চলে এলো মাধুর কাছে। জায়িনের দিকে আর না চেয়ে কুকুরটাকে নিয়ে চলে গেল সে। সেদিকে চেয়ে থেকে জায়িন ভ্রু কুঞ্চিত করে কী যেন বিড়বিড় করে বলে উঠল।
________