সিন্ধু ইগল – (১)
ইসরাত জাহান দ্যুতি
১
দীর্ঘ দেড় মাস পেরিয়ে মৌপ্রিয়া অতি ভালোবাসার স্বামী মানুষটিকে আজ চোখের সামনে দেখছে। বিয়ের ন’মাসে হাতে গুনে বলা যাবে এই মানুষটি কতবার তার কাছে থেকেছে। যার সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে কথা বলারও সুযোগ হয়নি। তবুও খুব বেশিই ভালোবাসে তার স্বামীকে। কেন বাসে? তা সে বলতে পারবে না। হয়তোবা তার স্বামীর মাঝে অতি সুদর্শনতা গুণটি থাকার ফলে। মানুষটি সব সময় চেহারার মাঝে সব থেকে প্রশংসনীয় মুচকি হাসি ধরে রাখে, হয়তোবা এ কারণেও। কিংবা কথা বলতে পারে ভীষণ দারুণ করে, এ কারণেও। শুধু এটুকুই জানে মৌপ্রিয়া, ভালোবাসে সে তার স্বামীকে। এবং খুব ভালোবাসে। শুধু তার চোখের দিকেই চেয়ে থাকতে পারে না সে। এমনকি কথা বলতেও ভয় পায়। কেমন অদ্ভুত ভয়ঙ্কর যেন তার চোখের চাউনি। বোঝায় যায় না, সেই চোখে মৌপ্রিয়ার জন্য ভালোবাসা আছে কি নেই। তবে যতটুকু সময় তার সঙ্গে থাকে মানুষটি, ততটুকু সময় ভীষণ সুন্দর করে কথা বলে। আর কথার সময় সুন্দর মুচকি হাসিটা স্থায়ী।
মৌপ্রিয়ার শ্বশুরবাড়ি বনিয়াদি পরিবার। সে এ বাড়ির সব থেকে ছোটো ছেলের বউ। কিন্তু আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, বড়ো দুই পুত্রের বিয়ের উপযোগী বয়স থাকার পরও তারা এখন অবধি বিয়ে করেনি। মৌপ্রিয়ার শ্বশুর মাহতাব শেখ ইসলাম ভীরু মানুষ৷ বাড়িতে মৌপ্রিয়া, তার শাশুরি, আর কাজের মেয়েদু’টো ছাড়া আর কোনো নারী নেই। মৌপ্রিয়া আর তার শাশুরি সব সময় পর্দা মেনে চলে। এ বাড়ির প্রত্যেকে মাহতাব শেখকে ভীষণ মান্যি করে চলে, এমনকি ভয়ও পায় খু্ব। তার আদেশ নিষেধের বাইরে একটি মানুষেরও চলার সাহস নেই। শুধু সাহস দেখিয়েছে এ বাড়ির ছোটো ছেলে জায়িন মাহতাব। তার জীবনযাপনের ধরন মাহতাব শেখ প্রচণ্ড অপছন্দ করেন। যার জন্য বাড়ির বড়ো দু’জন ছেলের পূর্বেই নিজের পছন্দ মতো মেয়ের সঙ্গে তার বিয়ে করিয়ে দেন। জায়িন বাবার সব কথার অমান্য হয়ে চলে বলেই বাবা তাকে একদমই পছন্দ করেন না। খাবার টেবিলে পর্যন্ত ছেলের পাশে বসে খেতে চান না তিনি। হঠাৎ একদিন মাহতাব শেখ ছেলেকে বললেন তার জন্য একটি মেয়ে পছন্দ করা হয়েছে। তার মত থাকলে অতি শীঘ্রই বিবাহ সম্পন্ন করা হবে। সেদিন জায়িন তার প্রশংসিত মুচকি হাসিটি ঠোঁটে জড়িয়ে রেখে বিয়েতে মত দিয়ে দিয়েছিল বাড়তি কথা ছাড়াই। যা ছিল সকলের কাছে অবিশ্বাস্য আর অসম্ভব বিস্ময়ের বিষয়বস্তু। মেয়েটিকে দেখার প্রয়োজনবোধ পর্যন্ত করেনি সে। শুধু শর্ত ছিল, এই বিয়ের কথা বাড়ির সদস্য ব্যতিত আর কেউ জানতে পারবে না। কেবল জায়িনের গুটি কয়েক বন্ধু ছাড়া। মাহতাব শেখ তাতেই রাজি হয়েছিলেন। ভেবেছিলেন ছেলেকে এবার বাড়িতে এবং পারিবারিক ব্যবসায়ে বসাতে পারবেন। কারণ, জায়িনের পেশাও তার একদমই পছন্দ নয়। বাইরে থেকে পড়াশোনা শেষ করে এসে গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তা হয়ে নিযুক্ত হয় সে। আর এই পেশার ফলে বেশিরভাগ সময়ই সে পড়ে থাকে বাড়ির বাইরে। তবে মাহতাব শেখ ছেলের অগোচরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, অধিকাংশ সময় তার ছেলে কক্সবাজার আর চট্টগ্রাম পড়ে থাকে। সমুদ্রের প্রতি ছেলের অনেক বেশি দুর্বলতা মনে করেন তিনি। আর সেই সাথে নারীদের প্রতিও। ঠিক এই কারণেই মাহতাব শেখ বড়ো দুই ছেলেকে ফেলে তার বিয়েটাই আগে সম্পন্ন করেছেন।
২
বাড়ির বাউন্ডারি পেরিয়েই প্রতিবেশী ইকরাম হোসেনের বাংলো বাড়ি। বাড়িটা তৈরির পরই হঠাৎ স্ট্রোক করে ইকরাম হোসেন ইন্তেকাল করেন। ইকরাম হোসেনের একটি মাত্র মেয়ে। বিয়ের পর জামাইয়ের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া থাকে সে। বাবার মৃত্যুর পর দেশে এসে বাবার বাড়ির জায়গা, জমি, সব বিক্রি করে দেয়। শুধু পড়ে ছিল এই বাংলো বাড়িটাই। জায়িনের ঘরের বড়ো জানালা থেকে বাউন্ডারির ওপাশের বাংলোটাকে স্পষ্ট দেখা যায়৷ এমনকি তার জানালা থেকে ওই বাড়ির বেডরুমের জানালাটাও বেশ চোখে পড়ে। সেটা আজ বুঝতে পারল জায়িন। কফির মগে চুমুক দিতে দিতে তার ভয়াবহ বাজপাখির মতো শিকারী দৃষ্টি খ্যাত চোখদু’টো দিয়ে দারুণভাবে আবিষ্কার করে ফেলেছে স্লিভলেস কালো টপস পরা আকর্ষণীয় দৈহিক গড়নের এক নারীকে। যার ফর্সা পিঠ আর ঘাড় অবধি পড়ে থাকা কালো চুলগুলো ছাড়া মুখটি দেখার সুযোগ হয়নি। পাশেই জায়িনের বিশ্বস্ত অ্যাসিসট্যান্ট রেজাউল হক ল্যাপটপ সামনে ধরে বসে কাজে মনোনিবেশের চেষ্টায় নিয়োজিত। জায়িন তাকে জিজ্ঞেস করল, ‘রেজা? গত সপ্তাহে তুমি এখানে এসেছিলে না?’
রেজা ডাক শোনার সঙ্গে সঙ্গে মাথা উঁচু করে চশমার ফাঁক থেকে নজর উঠিয়ে তাকাল জায়িনের দিকে। ছোটো করে উত্তর দিলো, ‘জি স্যার।’
জায়িন বাংলোর দিকে আঙুলের ইশারা করে বলল, ‘তাহলে এই খবরটা আমাকে কেন দাওনি?’
রেজা চট করেই বুঝতে পারল, জায়িন সামনের বাংলোতে থাকা প্রতিবেশীর কথা ইঙ্গিত করছে। এই খবরটা সে অবশ্যই তার স্যারকে জানাত। কিন্তু সে এ বাড়িতে এলেই মৌপ্রিয়া মেয়েটা লুকিয়ে এসে তার কাছে জানতে চায় জায়িনের কথা। বোঝা যায়, মেয়েটা খুব ভালোবাসে তার স্যারকে। মেয়েটার জন্য ভীষণ মায়াও হয় তার। সে চায়, স্যার এই মেয়েনেশা ছেড়ে তার বউকে আপন করে নিক। আর তাই তো সে জানায়নি, সামনের বাংলোর প্রতিবেশীর কথা। আমতা আমতা করে সে উত্তর দিলো, ‘কী বলব স্যার, আসলে ভুলে গিয়েছিলাম।’
কথাটা শুনেই জায়িন মৃদু হাসল। একটু সময় চুপ থেকে বলল, ‘অন্তত এটা বোলো না, কিছুই জানো না এ বিষয়ে।’
রেজা হঠাৎ তড়িঘড়ি করে গরম কফি এক চুমুকে শেষ করে জায়িনের পাশে এসে দাঁড়াল, ‘স্যার যতটুকু জানি ঠিক ততটুকুই বলি?’
জায়িন আবারও মৃদু হাসল, বলল, ‘আমার বউকে নিয়ে আজ-কাল খুব বেশিই ভাবো তুমি। কীভাবে দেখলে তার মুখ?’
এ পর্যায়ে রেজার শরীর থেকে ঘাম ঝরতে আরম্ভ করল। সেই চেহারাটার দিকে জায়িন সরাসরি না তাকিয়েও বেশ উপভোগ করছে রেজার ভয়ার্ত চেহারাটা। জায়িন সব থেকে বেশি পছন্দ করে, মানুষের চোখে তার জন্য ভীতি। যা তার স্বয়ং জন্মদাতার চোখেও দেখতে পায়। সেটা কেবল সে-ই আবিষ্কার করতে পেরেছে। রেজাকে বলল, ‘আমি রাগ করিনি রেজা। আমার মাথাব্যথা মৌপ্রিয়া নয়। তুমি নির্ভয়ে আমার মাথা ব্যথার কারণটার তথ্য জানাও।’
রেজা এবার মাথা নত অবস্থাতেই বলতে শুরু করল, ‘এক মাস হলো ইকরাম হোসেনের বাংলো বাড়িটা বিক্রি হয়েছে। ছাব্বিশ বছর বয়সী দু’টো মেয়ে থাকছে। তারা টুইন সিস্টার। একজন মাধু, আরেকজন জাদু৷ এক বোন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে এই যে এই সপ্তাহ থেকে লেকচারার হিসেবে কাজ আরম্ভ করেছে। আরেক বোন কিছুই করে না। সব সময় বাড়িতেই থাকে। এখন অবধি এটুকুই জানি। কিন্তু এই তথ্য আমি সংগ্রহ করিনি।’
-‘তাহলে?’
-‘জাদু মেয়েটি এ বাড়িতে প্রায়-ই আসে স্যার। আপনার মায়ের সঙ্গে বেশ ভালো সম্পর্ক।’
হাসিটা জায়িনের চওড়া হলো। জিজ্ঞেস করল, ‘মায়ের সঙ্গে কী করে আলাপ হলো?’
-‘মূলতঃ আলাপ মাধুর সঙ্গে হয়েছিল আন্টির। সামনের আমগাছটার ডাল বাউন্ডারির ওপাশে অনেকটা ঝুঁকে গেছে। সেই ডালে রিং ঝুলানোর জন্য অনুমতি চাইতে এসেছিল। সেদিন আন্টির ভীষণ ভালো লেগেছিল মাধুকে। পরদিন আন্টি নিজেই গিয়েছিল ওদের সঙ্গে দেখা করতে। যাওয়ার পর জাদুর সঙ্গে আলাপ হয়। মাধু খুব একটা বাড়িতে থাকে না বলে জাদুর সঙ্গেই খাতির জমে গেছে আন্টির। সেই থেকেই জাদুর আসা যাওয়া।’
জায়িন কফির মগটা সেন্টারটেবিলে রেখে ক্লজেটের ড্রয়ার থেকে ক্যামেরা দূরবিনটা নিয়ে আবার জানালার সামনে এলো। বাংলোর জানালার দিকে দূরবিন তাক করে দেখতে দেখতে রেজাকে বলল, ‘মাধুর যাবতীয় ইনফরমেশন কালেক্ট করো আজ। এই মুহূর্তে বাসায় জাদু না মাধু সেটাও জানাও আমাকে।’
-‘আমার যতটুকু ধারণা এখন বাসায় জাদুই। মাধুকে অধিকাংশ সময় বাড়ির বাইরে থাকতেই শুনেছি। এমনকি বাসাতেও মাঝে মাঝে থাকে না।’
জায়িন কোনো উত্তর দিলো না। হঠাৎ করেই দেখতে পেল বই পড়তে পড়তে চশমা চোখে একটি মেয়ে জানালার ধারে এসে দাঁড়াল। গায়ে এখন তার কালো টপসটার ওপর সাদা শার্ট। আর চুলগুলো মাথার ওপর ঝুঁটি করে বাঁধা। খট খট করে দূরবিনের ক্যামেরাতে মেয়েটির ছবি তুলে নিলো সে কতগুলো। ছবি তোলার মাঝে জায়িন মুচকি হাসতে হাসতে হঠাৎ অভাবনীয় একটি প্রশ্ন করে বসল চিন্তিত মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকা রেজাকে, ‘প্রেমে পড়েছ, রেজা? মৌপ্রিয়ার?’
প্রশ্নটায় যতটা চমকে উঠল রেজা, ততটাই মৃত্যৃভয় হতে শুরু করল তার মুহূর্তেই।
৩
রাত এগারোটার সময় মৌপ্রিয়া ঘরে আসতে পারল। এত সময় জায়িনের সঙ্গে রেজা ঘরে ছিল বলে সে আসতে পারেনি। রেজা চলে গেছে রাত ন’টায়৷ সে অপেক্ষাতে ছিল, জায়িন কখন তাকে ঘরে ডাকবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত জায়িন তাকে ডেকে কথা বলে না। এই বিষয়টি তার আগে খারাপ লাগলেও এখন কিছুই মনে হয় না। ধরে নিয়েছে, তার স্বামী মানুষটি হয়তো গম্ভীর প্রকৃতির। গত সপ্তাহে সে বিশ বছরে পা দিয়েছে। তা জানার পর থেকে শাশুড়ি তাকে বাচ্চা নেওয়ার জন্য তাগিদ দিচ্ছেন। বলেছেন, ‘এবার জায়িন বাড়ি এলেই যেন সুখবর পাই।’ মৌপ্রিয়া নিজেও সিদ্ধান্ত নিয়েছে, জায়িনকে বাড়িতে ধরে রাখতে হলে একটা বাচ্চা নিতে হবে তাকে।
গুটিগুটি পায়ে হেঁটে এসে জায়িনের পায়ের কাছে বসল সে। জায়িন তখন কোলের ওপর ল্যাপটপ নিয়ে কী কাজে যেন ব্যস্ত। মৌপ্রিয়া বসতেই জায়িন প্রশ্ন করল, ‘কিছু বলতে চাও, মৌপ্রিয়া?’
-‘আপনি এবার কতদিনের জন্য এসেছেন?’
জায়িন মুহূর্তে মুচকি হেসে জবাব দিলো, ‘যতদিন মন পড়ে থাকে এখানে৷’
-‘মানে এবার অনেকদিন থাকছেন?’ আনন্দ ঝরে পড়ল যেন মৌপ্রিয়ার কণ্ঠে।
সেই কণ্ঠ শুনে জায়িন তার দিকে না চেয়েও বুঝতে পারল, মৌপ্রিয়ার চেহারাটা খুশিতে ঝলমলিয়ে উঠেছে। জায়িন তার প্রশ্ন এড়িয়ে প্রশ্ন করল, ‘কেন? তুমি চাও না?’
-‘চাইব না কেন? আগে তো যতবার এসেছেন ততবারই একদিন কি দু’দিন থেকে না বলেই চলে গেছেন।’
-‘তোমার মন খারাপ হয় ভীষণ?’
-‘তা তো হয়-ই। ওভাবে কেন চলে যেতেন?’
-‘মন থাকতে চাইত না তো।’
কথাটা শুনে মৌপ্রিয়ার মনটা খারাপ হয়ে গেল। জিজ্ঞেস করল, ‘তাহলে এবার কেন থাকবেন?’
-‘এবার মন ধরে রাখার জাদু পেয়েছি যে!’
বলেই মিটমিট করে হেসে তাকাল মৌপ্রিয়ার দিকে। মৌপ্রিয়া এ কথার অর্থ নিজের মতো করে বুঝে নিলো। লজ্জা লজ্জা চেহারাটা ঝুঁকিয়ে বলল জায়িনকে, ‘আম্মা আপনাকে কিছু বলেছেন?’
জায়িন আবার ল্যাপটপে দৃষ্টি রাখল। জিজ্ঞেস করল, ‘আম্মা কী বলবেন আমাকে?’
প্রশ্নটার উত্তর মৌপ্রিয়ার গলায় আটকে আসছে। লজ্জাতে মুখেই আনতে পারছে না সে। কিছুক্ষণ ধরে লজ্জাটা কাটিয়ে উঠে বলেই ফেলল সে, ‘আমাদের বাচ্চার ব্যাপারে।’
কথাটায় জায়িনের মধ্যে তেমন ভাবান্তর দেখা গেল না। সে তার স্বভাবসুলভ হাসিটা হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি বাচ্চা চাও?’
-‘চাই তো। আপনি বাবা হতে চান না?’
-‘কেন চাইব না? এই পৃথিবীতে আমার সর্বোচ্চ ভালোবাসার মানুষ হবে আমার প্রিয় বিবি আর আমার সন্তান।’
খুব খুশি হলো মৌপ্রিয়া, জায়িনের এ উত্তরে। তবু জিজ্ঞেস করল, ‘হবে কেন? এখনো হইনি বুঝি আপনার ভালোবাসার মানুষ?’
প্রশ্নটা শুনে জায়িন কতক্ষণ বাঁকা হাসতে থাকল ল্যাপটপের দিকে চেয়ে। মৌপ্রিয়া চেয়ে আছে তার মুখের দিকে, উত্তরের আশায়। ল্যাপটপটা সরিয়ে হঠাৎ জায়িন মৌপ্রিয়াকে সজোরে টেনে বুকের ওপর এনে ফেলল। তার গলাতে মুখ ডুবিয়ে মৃদুস্বরে বলল, ‘তুমি বড্ড বোকা, মৌপ্রিয়া।’
_________