সাঁঝক বাতি পার্ট ১৭

0
392

-‘সাঁঝক বাতি-‘
নূরজাহান আক্তার (আলো)
[১৭]

-‘হজম করতে পারবে? ভেবে নিও। বেস্ট অফ লাক।’

দিগন্তের একথায় প্রশান্ত শব্দ করেই হেসে উঠল। যেন হাস্যকর জোক্স শুনেছে। হাসিও থামছে না। হাসতে হাসতে ওর চোখের পানি বেরিয়ে আসার উপক্রম। দিগন্ত ফিরেও তাকাল না। সে ফোনে গেম খেলতে মগ্ন। খেলাতে টানটান উত্তোজনা। অন্যদিকে তাকালে হেরে যাবে।সে হারতে অভ্যস্ত নয়। হার জিনিসটা পছন্দও না। ওর ভাষ্যমতে,
মরে যাওয়া ভালো। তবুও হার মানব না। কারণ
হার স্বীকার মানে ;অন্যের বুড়ো আঙ্গুল দেখা। এটা গ্রহন করা ওর কর্ম নয়। এরচেয়ে মৃত্যু ঢের ভালো। তখন প্রশান্ত ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,

-‘ভাই, জ্বলছে নাকি?’
-‘উহুম না, জ্বলতে নই জ্বালাতে পছন্দ করি।’
-‘বৈধ বউ বলে কথা!’
-‘শুধু বউ না বৈধ শত্রুও।’
-‘কাজ শুরু করি?’
-‘করো তবে পুনরায় ভাবো। পরিণতি ভয়ংকর।’

প্রশান্ত পুনরায় শব্দ করে হাসল। দিগন্তের কথায় না হেসেও পারছে না। দিগন্ত খেলা কমপ্লিট করে ঘুরে বসল। সফল হয়েছে। সে পাস্তা মুখে নিয়ে শিফার দিকে তাকাল। মেয়েটা অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে। যেন ভষ্ম করে দিবে। দিগন্ত এক চামচ পাস্তা তুলে বলল,

-‘খাবে? নয়তো এভাবে তাকিও না আমার ব্রণ উঠতে পারে।’

-‘পিপীলিকার পাখার গজায় মরিবার তরে। তো তোরাও দেখি উড়তে শুরু করেছিস। সময় বুঝি ঘনিয়েই এসেছে।’

দিগন্ত উঠে শিফার পাশের চেয়ারে বসল।আদুরে
স্পর্শে নাকটা টেনে দিলো। ঠোঁটে ফিচেল হাসি।
প্রশান্ত সামনে বসে ভাইয়ের অভিনয় দেখছে।সে পারেও বটে। ভাইও হয়েছে তার মতোই অভিনয়ে
পারদর্শী। তখন দিগন্ত প্রশান্তকে বলল,

-‘আমি তোমাদের খেলার রেফারি। এই খেলার সমাপ্ত আমার সামনেই করিও। আমিও দেখতে চাই; ভাইয়ের দম বেশি নাকি বউয়ের।’

শিফা নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে অমানুষ দেখছে। ওর
অমানুষ দেখার শখ পূরণ হয়েছে। নয়তো এরা এসব বাক্য উচ্চারণ করতেও পারত না। সম্পর্ক কী? সম্পর্কের মানেও তো বুঝে না। অমানুষের জাত! দিগন্ত শিফার দিকে তাকিয়ে হাসল। যেন
বিশ্বজয় করা কাজ করেছে। সচারচর অহেতুক হাসে না সে।মেয়েটাকে দেখতে বেশ লাগছে। ওর আদুরে গালদু’টোতে আদর দিতে ইচ্ছে করছে।
ওর স্পর্শে মেয়েটা আরো সুন্দর হয়ে গেছে। আর সুদর্শন মানুষটা স্পর্শ করেছে। সুন্দর তো হবেই। তেজী শিফাকে দেখে দিগন্তেরও ভালো লাগছে।
বাঘিনীকে বাঘিনী রুপেই মানানসই। আর
বাঙালি মেয়েরা সত্যিই খুব অদ্ভুত।এরা স্বামীকে হয়তো সুপারম্যান ভাবে। যেন সব অন্যয় কাজে স্বামীদের ঢাল হতে হবে। কেন স্বামীদের কি কাজ নেই? ওর তো অনেক কাজ। কাজে চাপেই বউকে ঠিকঠাক প্যারা দিতে পারছে না। বউকে চাপে না রাখলে সে কেমন ধাঁচের স্বামী? এই এখন যেমন
কঠিন গেমটা খুব কষ্ট করে খেলল। জিতলোও। এজন্য ওর কষ্ট করতে হলো। কষ্ট করে খেলছিল বিধায় বউকে তখন সাপোর্ট দিতেও পারল না।
আহারে, বউটা রাগ করেছে। এবার কি করবে?
প্রশান্ত যতটুকু বলার বলেছে, শিফা রেগে এদিকে তাকিয়ে আছে। যেন সব অপরাধ তার। অথচ সে কিচ্ছু করে নি। কিছু করলেও ওর দোষ; না করলেও। দিগন্ত ছোট খাটো কাজ করেও না।
শিফা হাসিবের কল পেয়ে উঠে চলে গেল। কিছু কাজ আছে। অহেতুক বসে থাকারও সময় নেই। শিফা কয়েকপা এগিয়ে আবার ফিরে এসে মৃদু স্বরে বলল,

-‘কুকুররা ভালো খাবার সহজে পায় না। আর পেলেও টানাটানি করা ওদের স্বভাব। তোরা ঠিক ওদেরই মতো।’

প্রশান্ত রেগে তাকাল। শিফার মরার সময় ঘনিয়ে এসেছে। ওকে আর সহ্য হচ্ছে না। একটু বেশিই কথা বলে। দিগন্ত পাস্তা খেতে ব্যস্ত। খুব টেস্টি
পাস্তা! সে শিফার কথাটা যেন শুনেও শুনে নি।
শিফার চোটপাটে অভ্যস্ত। তাই কিছু মনে করল না। পাগলে প্রলাপ বকবেই শোনার কী ওর সময়
আছে? না নেই! ওর সময়ের দাম আছে। দিগন্ত
বরাবর সময়ের মূল্য বুঝে। শিফা ততক্ষণে স্থান ত্যাগ করেছে। অনাকাঙ্খিতভাবেই প্রশান্তের সঙ্গে দেখা হয়ে গেছে। ঘৃণায় মুখ ফিরালে,প্রশান্ত কথা বলতে এসেছিল। এতটাই লাজহীন সে! দিগন্তের উপস্থিতি আশ্চর্যজনক ছিল। সে এখানে কেন?
কাজে এসেছিল নাকি অকাজে? হয়তো দু’জনেই
কাজে এসেছিল। পাবলিক প্লেসে কথা বাড়ানোর প্রয়োজন মনে করে নি শিফা। এজন্য প্রশান্তর নোংরা কথা হজম করল। তবে জবাবটাও তোলা রইল। সুযোগ বুঝে দিবে। গলার জোর দেখিয়েও লাভ নেই। যা করার কাজে করেই দেখাতে হবে।
দিগন্ত পাস্তাটুকু গিলে বলল,

-‘সাফার সঙ্গে আমাকে না জড়ালেও পারতে?’
-‘এত ভালো মানুষ কবে হলি, ভাই?’
-‘যেদিন বেইমান চেনা শিখেছি।’
-‘শিফাকে ভালোবাসিস?’
-‘সেটা আবার কি?’
-‘অনুভূতি।’
-‘না।’

তারপর দু’জনেই উঠে চলে গেল। তমা পেছনের টেবিলে বসা। ওদেরই কথা শুনছিল। বোরকাতে নিজেকে আবৃত করা। এজন্য কেউ খেয়াল করে নি। শিফা ওর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল।তবে পারল না। শিফা ইশারায় ওকে আসতে নিষেধ করেছে। কারণ প্রশান্ত আর দিগন্তও আছে। ওরা দেখলে সন্দেহ করত। আর তমার পেছনে লোক লাগাত। তমাকে আর বিপদে ফেলতে চাচ্ছে না।
তনয়ের কম ক্ষতি ওরা করে নি। তবুও তমা মুখ ফিরিয়ে নেয় নি। অভিযোগও করে নি। বরং সে শিফার পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সাফার মতো বান্ধবী হয়ে।

প্রশান্ত আস্তানায় এসেছে। এখানকার কথা কেউ জানে না। এটা ওর একান্ত আস্তানা। জায়গাটা কেমন জানি। ভুতুরে পরিবেশ। প্রশান্তর পাপকর্ম গুলো এখানেই করা হয়। ওর পাপকর্মের স্বাক্ষীও এই জায়গাটা। প্রশান্ত, শিফার মামার কঙ্কালের দিকে তাকিয়ে বিশ্রী একটা গালি দিলো। তারপর বলল,

-‘তোর ভাগ্নীর শরীরে খুব তেজ। শরীরের ভাঁজে ভাঁজে তেজ জমিয়েছে। ব্যাপার না, আমি পরখ করে নিবো। ওর তেজযুক্ত নগ্ন শরীরে চোখ আর হাত বুলিয়ে দেখব ;ওর তেজের পরিমাণটা ঠিক কতখানি।’

কথাটা বলে প্রশান্ত বিশ্রীভাবে হাসল। শিফার মামাকে সেই মেরেছে। তাও নিজের অাস্তানায়।
তারপর রয়েল হসপিটাল দিগন্তের নামে দলিলও
করিয়েছিল। যাতে কেস খেলে দিগন্ত খায়। কিন্তু দিগন্ত ঢের ধূর্ত। পরে, সব ঝামেলাগুলো মিটিয়ে ফেলেছিল। টাকা আর ওর তীক্ষ্ণ বুদ্ধির জোরে।
আর তখন থেকেই হসপিটাল তার নামেই রয়ে গেছে।

প্রশান্ত ওর সহকারীকে ডেকে কিছু বুঝিয়ে বলল। সে আপাতত হসপিটালে যাচ্ছে। এসে যেন দেখে কাজ হয়ে গেছে। নয়তো সহকারীকে কঙ্কাল করে ঝুলিয়ে রাখবে। আস্তানা ভর্তি কঙ্কাল।চারদিকে
ঝুলিয়েও রাখা। মৃদু বাতাসে নড়ছেও। ভয়ংকর লাগছে দেখতে। যাদেরকে অপছন্দ তাদেরকে সে কঙ্কাল করে। ওদের বেঁচে থাকার অধিকার নেই।
ওরা ঝামেলা। মানুষ মারার চেয়ে সহজ কাজও আর নেই। মারতেও বেশ লাগে। হাত-পা বেঁধে এসিডের কূপে ফেলে দেয়। ব্যস, হয়ে গেল। মৃত
লাশ নিয়ে ঝামেলা নাই। আগে লাশ নিয়ে খুব বেশি ঝামেলা হতো। তাই কোটি টাকা খরচ করে এসিডের কূপ তৈরি করেছে। তবে এসিড দেখতে যতটা সাধারণ কাজটা কিন্তু অসাধারণ। কয়েক সেকেন্ডেই ঝলসে ফেলে। এই কাজটা ওর বাবার থেকে শিখেছে। ওদের বাসার পাতালঘরেও ওর বাবা তাই করতেন। ব্যবসা এমনি এমনি বড় হয় নি। তাও এত অল্প সময়ে। এজন্য অনেক মানুষ মারতে হয়েছে। প্রশান্তের বাবা ভদ্রলোকের বেশে থাকেন। অথচ উনার জন্যও মেয়ে আসে। উনি নিহার সঙ্গেও সঙ্গমে লিপ্ত হয়েছে। নিহাও রাজি ছিল। টাকা পেলে বুড়ো আর যুবক সব সমান।
পুরুষ তো পুরুষই! এমনকি, নিহা সাফার সঙ্গে লিপ্ত হতেও সাহায্য করেছিল। তাও অনেকবার।
প্রশান্তর কাজ সেরে চলে যেতো। তখন ওর বাবা আসতেন। অবচেতন সাফা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকত। এসবের বিনিময়ে নিহা টাকাও পেতো।
আর উনি এই বয়সেও যৌবনপূর্ণ শরীরের মজা লুটতেন। নিহা কিংবা দিগন্তের মা’ও কিছু মনে করতে না। ওই পরিবারে এসব সাধারণ ব্যাপার।
বরং হাসি-ঠাট্টা করে খিলখিল করে হাসতেন আর বলতেন,
-‘দম শেষ? বাপ্রে, তা আর লাগবে?’
-‘রাতে লাগবে ডালিং, তোমরা দু’জনই এসো।’

উনার একথা শুনে নিহা ও দিগন্তের আম্মু হেসে গড়িয়ে পড়তেন। যেন খুবই মজার কথা। মস্তিষ্ক বিকলাঙ্গদের বিবেকবোধ থাকে না। এরাও তাই।

রাত তখন দুইটা সাত। স্বপ্নীলের সামনে দিগন্ত বসে আছে। স্বপ্নীল তিনদিন কিছু খায় নি।তাকে জোর করেও খাওয়ানোও যায় নি। তার একটাই কথা, ছেড়ে দাও নয়তো মেরে দাও। দিগন্ত রেগে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলেটাকে মেরে দিতে মন চাচ্ছে। এরা সবাই প্যারা। মার খেয়েও খেতে রাজি হচ্ছে না। এটাও শিফার মতো ঘাড়ত্যাড়া।
এতদিন স্বপ্নীল দিগন্তের কাছে ছিল। তাও সুখুর বাড়িতে। নির্জন জায়গায়।এজন্য শিফা পুনরায় দিগন্তের পিছনে লোক লাগিয়েছিল। তবুও কিছু জানতে পারে নি। স্বপ্নীল চেয়ারে বাঁধা অবস্থায় কাতরাচ্ছে। সুখু ওকে প্রচন্ড মেরেছে। হকিস্টিক দিয়ে। দিগন্ত সিগারেটে সুখ টান দিয়ে বলল,

-‘ভাই, তোর প্রেমিকা আর ভার্জিন নেই। আমি
এই পূর্ণের কাজটা করে ফেলেছি। এই কিছুক্ষণ আগেও খুব আদর দিয়ে আসলাম। উফ, শরীর তো নয় যেন মাখন। কেঁদে মিনতি করে ছাড়তে বলছিল। ছাড়ি নি। বরং যতটা কষ্ট দেওয়া যায়
দিয়েছি।’

স্বপ্নীল দু’চোখ বন্ধ করে নিলো। শুনতে পারছে না আর! বুকের ভেতরে খুব জ্বালাপোড়া করছে।
অদৃশ্য রক্তক্ষরণ হচ্ছে। ওর শিফা ভালো নেই।
একটুও না, এক কিঞ্চিৎও না। সেও দগ্ধ হচ্ছে।
এসব ভেবে স্বপ্নীলের চোখের কোণা বেয়ে অশ্রু ঝরছে। একই বাক্য, হৃদয় জ্বলছে বিধায় দু’চোখ কাঁদছে। আর স্বপ্নীলের চোখে অশ্রু দেখে দিগন্ত হাসছে।

(বিঃদ্রঃ-আপনাদের রেসপন্স চাই। নয়তো বুঝি না কার কেমন লাগছে।)

To be continue………..!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here