সাঁঝক বাতি পার্ট ১৩

0
417

-‘সাঁঝক বাতি-‘
নূরজাহান আক্তার (আলো)
[১৩]

আজ দুইদিন হলো শিফার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। বাবার বাসাতেও যায় নি। আত্মীয়-স্বজন,
এবং বন্ধুরাও তার খোঁজ জানে না। মেয়েটা হুট করেই উধাও! কোথায় গেল? কেন গেল? শিফার চিন্তায় সবার নাওয়া- খাওয়াও বন্ধ। দিগন্ত দায় এড়াতে শশুড়বাড়িতে খোঁজ নিতে গিয়েছিল।সে খোঁজার চেষ্টা না করলেও; দেখাচ্ছে আর কি।
এমন ভাব যেন শিফাকে না পেয়ে নিরাশ হয়ে ফিরে এসেছে। আজ হসপিটালে দিগন্তের জরুরি কাজ আছে। সে দ্রুত রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ল।
হসপিটালে পৌঁছে ওর কেবিনে চলে গেল। দ্রুত দরজা আটকে গোপন দরজা দিয়ে পাতাল ঘরে
চলে গেল। পাতালঘরে দশজন পেশেন্টের বডি আছে। সাফার মতো এদের পরিবারের থেকেও
সাইন নেওয়া হয়েছিল। এদের শরীরের দরকারী
পার্টস জমা দিতে হবে। না দিলে, আইনী ব্যবস্থা নিবে।পরিবারের লোক ঝামেলা করলে বোঝায়, এগুলো বিনামূল্যে অন্য পেশেন্টদের দিয়ে প্রাণ বাঁচানো হয়। মৃত ব্যাক্তির জিনিসে অন্যরা বেঁচে থাকছে। অর্থাৎ সেই ব্যাক্তিরও সাওয়াব হচ্ছে।

অথচ একথাটা সম্পূর্ন মিথ্যে। চোখ ও কিডনি থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সব পার্টসগুলো চড়া দামে বিক্রয় করা হয়। কয়েক বছর থেকে সে এই কাজগুলোই করে আসছে। এই হসপিটালটা বিলাশবহুল। এখানে ধনীরা বেশি আসে। তারা শিক্ষিত মানুষ। বন্ড পেপার সম্পূর্ণ পড়েই সাইন করে। তাই দিগন্তের ব্যবসা লাটে ওঠার সম্ভবণাও বেশি। এজন্য রয়েল হসপিটালের পাশেই একটা চারতলা বিশিষ্ট হসপিটাল করে দিয়েছে।সেখানে
নিম্নবিত্ত আর মধ্যবিত্তরা আসে। আর এদের বেশিরভাগ মানুষই অশিক্ষিত। নয়তো ইংলিশ বোঝে না। অথচ বন্ড পেপারের এমন শর্তগুলো ইংলিশে লিখা। যদিও এটাও একটা টোপ।যাতে
কার্যসিদ্ধি হয়। মানুষগুলো যখন ইংলিশ বোঝে না, তখন রিসিপশানে থাকা কেউ এগিয়ে যায়।
তারা পুরো পেপারে নাম ঠিকানা লিখে, দেখিয়ে দেয় কোথায় সাইন করতে হবে! বিপদের সময়ে আগে-পিছে না ভেবে পেশেন্টের বাড়ির লোকও সাইন করে দেয়। ওই লোকগুলোকে এই কাজেই রাখা হয়েছে। তাদের এই দায়িত্বেই নিয়োজিত।
পরে, অসহায় মানুষগুলো জানতে পেরে, হাইহাই করে। তখন আর কিছু করারও থাকে না। শুধু আফসোস করা ছাড়া! এই পর্যায়ে এসে, সেখানে আরেকদলকে লোকের আগমন ঘটে। যারা সেই
পেশেন্টের বাড়ির লোকদের বুঝিয়ে ব্রেণ ওয়াশও করে ফেলে। তারা বোঝায়; চোখ ও কিডনি দান করা পূণ্যের কাজ।

সাফার সঙ্গে ঠিক এমনটাই ঘটেছিল। সাফারও কিডনী, লিভার, ফুসফুস, ও চোখ বাধ্য হয়ে’ই দিতে হয়েছিল। সেদিন থেকে শিফার অঘোষিত লড়াইও শুরু হয়েছিল। খোঁজ নিয়ে জেনেছিল, ওর সাজ্জাদ বাবার হসপিটালটা দিগন্ত নিজের করে নিয়েছে। সে হসপিটালের মান খুবই ভালো
দেখায়। আর সবার আড়ালে অসহায় মানুষদের ফাঁসিয়ে দেয়। স্ব-ইচ্ছায় দান করা একথা। আর বাধ্য হয়ে দেওয়া ভিন্ন কথা। বিগত কয়েক বছর
ধরে সে এসব করছে। আর এভাবে কোটি কোটি টাকাও উপার্জন করছে। শিফা চেষ্টা করেছে, এই তথ্যগুলো খোঁজার। কিন্তু সম্ভব হয় নি। বরং সে খুঁজতে খুঁজতে পাতালঘর অবধি পৌঁছেও গেছে। আর সেদিনই দিগন্তের কাছে ধরা খেয়েছে। আর ততদিনে দিগন্তও শিফার কথা জেনে গিয়েছিল। শিফা কে? কেন খোঁজ নিচ্ছে। তার উদ্দেশ্যেই বা কী? সেদিনই সে গুপ্তচরের মাধ্যমে শিফার দূর্বল পয়েন্টের কথাও জেনেছিল। মেয়ে বলে ওয়ানিং দিয়েছিল। শিফা তবুও থামছিল না বরং মরিয়া হয়ে উঠেছিল। পরে দিগন্তই শিফার সঙ্গে দেখা করে বলেছিল,

-‘কি চায়?’
-‘আপনাকে।’
-‘কেন?’
-‘বিয়ে করব।’
-‘ইচ্ছুক নই!’
-‘আমি কোন দিকে থেকে কম?’
-‘উহুম, কম নয়। বরং একটু বেশিই হট।’
-‘তাহলে রাজি?’
-‘না।’
-‘ওকে।’

এরপরেই শিফা দিগন্তকে বিয়ে করার জেদ করে।
লজ্জা ভুলে বাসায় দিগন্তের কথা জানায়। কেউ রাজি না হলে আত্মহত্যার হুমকিও দেয়। শিফার বাবা মেয়ের জেদের কাছে হার মানে। উনি নিজে দিগন্তের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যান। আর
শিফা দিগন্তকে বিরক্ত করতে থাকে। দিগন্ত রেগে ওকে বলেছিল,

-‘যদি পারো, বিয়ে না করে আমার কাজে বাঁধা দিয়ে দেখাও।’

-‘কাপুরুষের মতো ভয় পাচ্ছেন? আহারে, ভীতু ছেলেটা।’

কেউ ইচ্ছে করে মরতে চাইলে সুযোগ দিতে হয়ে।
এটা দিগন্তের উক্তি। তাই সে কিছু না বলে রাজি হয়েছিল। দূর থেকে নজর রেখে শিফারও কাজ হচ্ছিল না। এজন্য বিয়ে নামক বন্ধনে আবদ্ধও হয়েছিল। বিয়ে না করলে বাসায় ঢুকতেও পারবে না। আর তথ্যও সংগ্রহ করতে পারবে না। যেটা ওর জন্য খুব জরুরি। দিগন্তের বাসায় যাওয়ার পর, শিফা তথ্য সংগ্রহের যথেষ্ট চেষ্টাও করেছে।
কিন্তু তেমন কিছু পায় নি। বাড়ির পেছনের রাস্তা দিয়ে চুপিচুপি সে সাজ্জাদ বাবার বাসায় যেতো।
সেই স্থানটা ছিল ওর জন্য নিরাপদ। সাজ্জাদের সহকারী হাসিব বর্তমানে শিফাও সহকারী। আর মাক্স পড়া সেই মেয়েটা ছিল, তমা। তনয়ের মা।
খোঁজ দিয়ে দিগন্ত তমাকেও চিনে ফেলেছিল। সে প্রথমবার ওয়ানিং দিয়েছিল। তমা ওর বারণ না শুনাতে, তনয়কে অপহরণ করেছিল। তিনদিন আটকে রেখেছিল। তারপর তনয়ের হাত কাটার পর, দিগন্ত হসপিটালে দেখতেও এসেছিল। ছোট্ট তনয় দিগন্তের কোলে উঠে কেঁদে বলেছিল,

-‘আঙ্কেল! আঙ্কেল! হাত। আমার হাতটা ঠিক করে দাও। ফুপি পঁচা! প্লিজ হাত ঠিক করে দাও। আমি আর দুষ্টু হবো না, প্রমিস।

তনয়ের কথা শুনে দিগন্ত ওর চোখ মুছিয়ে শিফা আর তমার দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বলেছিল,

-‘বড়দের কর্মফল ছোটদেরকে ভোগ করতে হয়।
যাতে বড়রা আফসোসে পুড়ে মরে। তাছাড়া, কে
বা চায় নিজেকে নিঃশেষ হতে দেখতে!’

ছোট্ট তনয় সেদিন এত কঠিন কথার মানে বুঝে নি। সে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল। বোঝার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিল। তখন শিফা নিজেকে দমিয়ে নেওয়া অভিনয়ও করেছিল। যাতে দিগন্ত বুঝে, শিফা কিছুটা ভয় পেয়েছে। শিফা নিশ্চুপই ছিল কয়েকদিন। তবে খোঁজ চালানো বন্ধ করে নি। হঠাৎ কিছু পেয়েও গিয়েছিল। দিগন্তের বেড রুমের ভেতরে আরেকটা রুম আছে। সেই দরজা দিয়ে ঢুকলে সিঁড়ি বেয়ে নিচে পাতালঘর পাওয়া গেছে। বাসাতেও পাতাল ঘর! সে ভাবতেও নি। তবে পাতালঘরে তালা থাকায় ঢুকতে পারে নি। পরে পাতালঘরের চাবিটাও পেয়েছিল, দিগন্তের এ্যাকুরিয়ামের ভেতরে।আর চাবি ছিল প্লাস্টিকের মাছের মধ্যে। শিফা একদিন ভাবনায় মগ্ন হয়ে এ্যাকুরিয়ামের দিকে তাকিয়ে ছিল। হঠাৎ খেয়াল করে; সব মাছ নড়লেও সাদা মাছটা নড়ছে না।
ওর মনে মনে সন্দেহ হয়। উঠে মাছটা মরা নাকি
দেখতে গিয়ে চাবি পেয়েছিল। আর সুযোগ বুঝে
চাবিটা নিয়ে পাতালঘরেও গিয়েছিল। সেখানে গিয়ে এসিডের গভীর কূপ এবং অসংখ্য কঙ্কাল দেখেছিল। প্রতিটা দেওয়ালে; কঙ্কাল ঝুলিয়ে নিচে নাম ও তারিখ দেওয়াছিল। শিফা সাজ্জাদ হোসাইনের কঙ্কাল পায় নি। সময়ও কম থাকায় খুঁজতেও পারে নি। দুইদিন পর গিয়ে দেখে চাবি কাজ করছে না। অর্থাৎ তালাটা কেউ বদলেছে।
রুমের কোথায় আর নতুন চাবি খুঁজে পায় নি।
খোঁজার মতো কিছু পায়ও নি। কারণ দিগন্তের রুমের প্রতিটা জিনিসে ওর ফিঙ্গার পিন দেওয়া। এমনকি আলমারিতেও।

দিগন্ত পাতালঘরে ডুকে নিজে পরখ করল। গত পরশু ডিল সাইন করেছে। সাত কোটির টাকার!
চোখ ও লিভারের ব্যবস্থা করতে হবে। আপাতত
একসপ্তাহের মধ্যে দশজোড়া চোখ পাঠাতে হবে।
এজন্য ঢোপও ফেলতে হবে। দিগন্ত সুখু নামের ছেলেটাকে বলল,

-‘তোর প্রেমিকার কি খবর?’
-‘হেহে, হের চক্ষূ দুইখান আগেই তুইল্লা নিছি। এহন কেডনীও তুলুম ছ্যার।’

দিগন্ত ফোন থেকে চোখ সরিয়ে বলল,

-‘কষ্ট হচ্ছে না তোর?’
-‘না তো। হেতীর ট্যামক শেষ কইরা দিছি।
-‘তোর ভাবির কি খবর?
-‘ভাবির খুঁজ এহনও পায় নাইক্বা।পাইলে তহনই
জানামু।’

দিগন্ত আর কথা বাড়াল না। ফোনে কথা বলতে বলতে বেরিয়ে গেল।

(বিঃদ্রঃ- আজ সাড়া দিয়ে যান। আমি দেখতে চাই, আমার গল্পের রেসপন্স কেমন। কাদের জন্যই বা এত কষ্ট করে লিখি।)

To be continue……..!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here