#সম্পর্কের_প্রণয়
#পর্ব_০৭ (শেষ পাতা)
#নুর_নবী_হাসান_অধির
কথার মধ্যে তনুর ফোনটা বেজে উঠে৷ সকলের দৃষ্টি ফোনের দিকে৷ ফোনের ওয়ালপেপারে বাবা দিয়ে সেভ করা দেখে শুকনো ঢুক গিলে তনু৷ ভয়ে ভয়ে ফোন রিসিভ করে স্পিকারে দিল৷ যেন সবাই শুনতে পারে৷ রিয়াদ হোসেন অপর পাশ থেকে গুরু গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
❝আমার হাত থেকে কোথাও পালাতে পারবে না৷ আমি জানি এখন তুমি ফোন স্পিকারে রেখেছো৷ আসিফ তুই কাজটা ঠিক করলি না৷ তুই আমার সম্পর্কে আমার মেয়েকে সব বলে দিয়েছিস৷ তার শাস্তি তোদের পেতে হবে৷ আমি নিজ হাতে তোদের শাস্তি দিতে আসছি৷ শাস্তি হিসেবে থাকবে মৃত্যু।❞
পর্দার আড়ালে পায়েলকে দেখে বুঝে যায় তারা যেগুলো কথা বলেছে সব শুনে নিয়েছে৷ আসিফ চৌধুরী আর ঋষি দেরি না করে পায়েলকে ধরে ফেলে৷ চেয়ারের সাথে হাত বেঁধে আসিফ চৌধুরী বললেন,
❝তুই আমাদের সাথে এত বড় বেইমানি করতে পারলি৷ তোকে সেই ছোটবেলা থেকে বড় করছি৷❞
পায়েল মুচকি হেসে জবাব দিল,
❝কাউকে সাহায্য করাকে বেইমানি বলে না৷ পারলে নিজেদের বাঁচিয়ে দেখান৷❞
ঋষি উত্তেজিত কন্ঠে বলল,
❝বাবা আমাদের এখানে এক মিনিটও দেরী করা যাবে না৷ তনু আর মাকে নিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে পড়েন৷❞
❝পালাতে পারবেন না৷ আপনাদের মৃত্যু সম্মুখে৷ কিছুতেই পালাতে পারবেন না৷ আর মাত্র কয়েক মুহুর্ত বাকী আছে৷❞
পায়েলের গালে ঋষি কষিয়ে থাপ্পড় বসিয়ে দিল৷ এখানে সময় নষ্ট করা যাবে না৷ ঋষি তনুকে পাঁজা কোলা করে দ্রুত গতিতে বেরিয়ে পড়ে৷ ঋষির মা বাবা বাড়িতে যা টাকা ছিল তাই নিয়ে বেরিয়ে পড়েন৷ কোথাও গা ঢাকা দিতে গেলে টাকা লাগবে৷ খুব দ্রুত গতিতে বেরিয়ে যায় রিয়াদ হোসেনের কবল থেকে৷ ঋষিদের গাড়ি বের হতেই পনেরো মিনিটের মাথায় রিয়াল হোসেন তার দল নিয়ে হাজির হয়৷ রুমে প্রবেশ করে পায়েলকে হাত পা বাঁধা অবস্থায় পায়৷ ড্রাইভার জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে। মূলত ড্রাইভারের ঘাড়ে আঘাত করার ফলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে৷ রিয়াদ হোসেন চেয়ারে লাথি দিয়ে রাগী কন্ঠে বললেন,
❝যেখানেই লুকিয়ে থাকুক না কেন তাদের খুঁজে বের কর। আমি তাদের মৃত নয়তো জীবিত সামনে চাই৷❞
________________________
তন্নতন্ন করে খুঁজেও কারোর সন্ধান পেলেন না রিয়াদ হোসেন। ঢাকার বাহিরে অনেক খুঁজেছে। অবশেষে হাল ছেড়ে দিয়েছে৷ রিয়াদ হোসেনের ধারণা তারা বাংলাদেশ থেকে পালিয়েছে। বাংলাদেশে নেই৷
কোথায় যাবে চিন্তা ভাবনা করে কিছুই পাচ্ছে না? অবশেষে তারা সিলেটে চলে আসে৷ রিয়াদ হোসেন সিলেটে তাদের খুজ করবে না৷ ঋষির ধারণায় ঠিক হলো৷ রিয়াদ হোসেন তাদের খুঁজ করতে সিলেট যাননি৷ এতদূরে তারা যেতে পারে ধারণার বাহিরে৷ আজ তনুর ডেলিভারির ডেট৷ হসপিটালের করিডরে অপেক্ষা করছে তিনটি প্রাণ৷ তিন জোড়া নেত্র নিবদ্ধ অপারেশন থিয়েটারের দিকে৷ মনে মনে আল্লাহকে স্মরণ করে যাচ্ছে৷ ঘন্টা খানেক পরে ডক্টর ফুটফুটে টুইন বেবি নিয়ে বের হোন৷ মেয়েদের দিকে তাকিয়ে বেঁচে থাকার নতুন আশা খুঁজে পান সবাই৷ ঋষি একজনকে কোলে নিয়ে বলল,
❝তনু কেমন আছে ডক্টর? তনু ঠিক আছে তো!❞
নার্স অন্য আর একটা কন্যা শিশুকে গুলবাহারের কোলে দিয়ে বলেন,
❝মা ও সন্তান উভয়ই ভালো আছেন৷ আপনারা চাইলে এক ঘন্টা পর দেখা করতে পারেন৷❞
ঋষির কোলে দুইটি জান্নাত অবস্থান করছে৷ খুশীতে চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল দুই ফোঁটা। ঋষি দুই মেয়েকে একে একে কোলে নিয়ে হসপিটালের করিডরে আল্লাহর নাম নিয়ে আজান দিচ্ছে৷ পৃথিবীর সকল শব্দের থেকে মধুর শব্দের ধ্বনি ভেসে আসছে কানে৷
____________________
কেটে যায় বেশ কিছু দিন৷ তনু এখন পুরোপুরি সুস্থ। ঋষি এবং আসিফ চৌধুরী এখানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জব করেন৷ তাদের সংসার চলছে সুন্দরভাবে৷ চলছে নিজেকে রক্ষা করার আত্মনির্ভরশীলতা৷ রেগুলার দুই জোড়া প্রাণ নিচ্ছে বিভিন্ন রকমের প্রশিক্ষণ। রিয়াদ হোসেনকে পৃথিবীর বুক থেকে সরাতে হবে৷ বাংলাদেশের মানুষের জন্য একটি ভাইরাস৷ কালো টাকা দিয়ে গড়ে তুলছেন অসংখ্য অবৈধ ব্যবসা৷ ঋষি তাদের দুই সন্তানের নাম রেখেছেন৷ একজনের নাম নাম রাহনুমা রাহি৷ অন্যজনের নাম রাহানুর রোদ৷ দুই মেয়েকে নিয়েই চলছে তাদের ছোট সংসার৷ দেখতে দেখতে চলে যায় সাতটি বছর৷ রাহি এবং রোদ এখন স্কুলে যাচ্ছে৷ তনু নিজেকে তৈরি করেছে সব রকম ভাবে৷ দেশের শত্রুেদর সাথে মোকাবেলা করতে হবে৷ রাহি আর রোদকে তার দাদী গুলবাহারের কাছে রেখে বেরিয়ে পড়েন ঢাকার উদ্দেশ্যে৷ ঢাকার উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়েছে মাত্র দুইজন মানুষ৷ তনু আর ঋষি৷ কিছুতেই চারজন মানুষ আসেননি৷ চারজন মানুষ আসা মনেই রাহি রোদের জীবনে অন্ধকার নেমে আসা৷ ঋষি, তনুর কিছু হলে আসিফ আর গুলবাহার যেন তাদের দায়িত্ব নেন৷ গুলবাহার চাতক পাখির ন্যায় অপেক্ষা করছেন ঋষি আর তনুর জন্য৷
ঋষি তাদের চৌধুরী ভিলায় প্রবেশ করে৷ সাজানো গুছানো চৌধুরী ভিলা আজ ধ্বংসের পথে৷ সবকিছু যেন কাটা দিয়ে যাচ্ছে৷ দেয়ালের গায়ে ছোট ছোট গাছের বসবাস৷ বাড়ির সামনের ফাঁকা জায়গায় গড়ে উঠেছে আবর্জনার স্তুপ৷ তবে বেশি নয়৷ আশেপাশের কিছু লোক আলসেমি করে এখানে ফেলে যায় যা দেখে বুঝা যাচ্ছে৷ ঘর তালা বদ্ধ। তালা ভেঙে দু’জনে ঘরে প্রবেশ করল৷ চিরচেনা ঘর থেকে চাপা গন্ধ নাকে নাড়া দিচ্ছে৷ ঋষি আর তনু মুখে মাক্স পড়ে রুম পরিষ্কারের কাছে লেগে পড়ে৷ থাকার জন্য যতটুকু পারে পরিষ্কার করে নিল৷ তবে সবগুলো রুম পরিষ্কার করা সম্ভব নয়। হালকা ভাবে পরিষ্কার করতে করতে দিন পার হয়ে যায়৷ ঘনিয়ে আসে অন্ধকার। ইলেক্ট্রিসিটির লাইন না থাকার জন্য মোমবাতি ব্যবহার করে তারা সকল কাজের পরিকল্পনা করল৷ কিন্তু তাদের পরিকল্পনা মুহুর্তের মধ্যেই ব্যর্থ হলো৷ কপাট ঠেলে প্রবেশ করল রিয়াদ হোসেন৷ সাথে বেশ কিছু মানুষ৷ রিয়াদ হোসেনকে দেখে তনু ঋষির পিছনে লুকিয়ে পড়ে। রিয়াল হোসেন পিশাচের মতো হেঁসে বললেন,
❝মামুনি ভয় পেও না৷ তোমরা এখনও বেঁচে আছো! নিজেকে সুপে দিতেই এখানে চলে আসছো৷❞
তনু ভীতু গলায় বলল,
❝বাবা অনেক হয়েছে তোমার নোংরামি। এবার আমাদের মুক্তি দাও৷ আমরা বাঁচতে চাই নতুন ভাবে৷ আমাদের বিরক্ত করা থেকে দূরে থাকো৷ আমাদের বিরক্ত করলে ফল ভালো হবে না৷❞
❝এইতো আমার মেয়ের মতো কথা৷ বেটা তোমার তেজ দেখে আমি ভীষণ খুশি৷ আসিফ আর গুলবাহার কি স্বর্গে টিকেট কেটেছে৷ তাদের তো দেখছি না৷❞
তনু চোখ রাঙিয়ে বলল,
❝খবরদার তাদের নামে বাজে কথা বলবেন না৷ আমি চাই আল্লাহ তাঁদের ভালো রাখুক৷ তারা যদি কোন পাপ করে থাকে আল্লাহ যেন তাদের ক্ষমা করে জান্নাতুল ফেরদৌসে দান করুক৷❞
তনু কথাগুলো গুগলি আকারে বলল। যেন রিয়াদ হোসেন বুঝতে পারেন তারা মা-রা গেছেন৷ রিয়াদ হোসেন মুচকি হেসে বললেন,
❝কোন লাভ নেই৷ তাদের খুঁজ আমি জেনে গেছি৷ আমি অনেক আগেই তোমাদের খুঁজ পেয়েছি মামুনি৷ আমার মামুনিটা ছোট দু’টো বাচ্চার জন্ম দিয়েছে৷ নাম, রাহি রোদ৷❞
কাউকে উদ্দেশ্যে করে বললেন,
❝তাদের ভিতরে নিয়ে আসো৷❞
হাত পা বাঁধা অবস্থায় আসিফ, গুলবাহার, রাহি রোদকে ভিতরে নিয়ে আসল৷ তাদের দেখে তনু ঋষি দু’জনই দুই কদম পিছিয়ে যায়৷ বন্দুক তাক করে রেখেছে তাদের মাথায়৷ ঋষি চোখের ইশারায় সবাইকে নাক ধরতে বলল৷ চেতনানাশক গ্যাস ছড়িয়ে দিল৷ সমস্ত ঘর ধোঁয়ায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়৷ ঋষি রোদ, রাহিকে নিরাপদ স্থানে রেখে আসে৷ কাজে লেগে পড়ে চারটি প্রাণ৷ হয় বাঁচবে নয়তো মরবে৷ একে একে অনেক মানুষকে আঘাত করে তারা৷
_____________________
ভোরের আলো ফুটতেই রিয়াদ নিজেকে হাত পা বাঁধা অবস্থায় আবিষ্কার করে৷ রিয়াদ ছাড়া সবাইকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন৷ প্রথমে পুলিশ রাজি না হলে পুলিশের সন্তানের মাথা বন্দুক ঠেকিয়ে রাজি করায়৷ রিয়াদ হোসেন চিৎকার করে বলল,
❝আমি তোদের কাউকে ছাড়ব না৷ তোরা আমাকে এখনও চিনতে পারিস নাই৷❞
তনু সামনে এসে বলল,
❝আমরা অনেক আগেই আপনাকে চিনেছি৷ আপনি আমার মা’কে হত্যা করতে দুইবার ভাবেননি৷ আজ আপনাকে দেখাব মৃত্যু যন্ত্রণা কাকে বলে? পুলিশ আপনার সকল বেআইনি কাজ ধরে ফেলেছে৷ তাদের কাছে খবর আছে আপনি ক্রস ফাইয়ারে মা’রা গেছেন৷ তাই কোন কথা নয়৷❞
❝তোদের রক্ত দিয়ে আমি হলি খেলব৷❞
তনু কোন কথা না বলে রিয়াদ হোসেনের হাত থেকে একটা নক তুলে ফেলল৷ চিৎকার করতেই মুখে পলিথিন দিয়ে দেয়৷ চোখে কোন ভয় নেই৷ আছে শুধু প্রতিশোধ। বাবার জন্য বিন্দু মাত্র আফসোস হচ্ছে না৷ রক্তে রঙ্গিন হচ্ছে রুম৷ তনু তিলে তিলে শাস্তি দিচ্ছে রিয়াদ হোসনকে৷ কেউ যেন তনুকে চিনতে পারছে সবার ভয় হচ্ছে তনুর এমন রুপ দেখে৷ তনু বেশি কিছু করে না বলে সেজন্য ঋষি রিয়াদ হোসেনের বুক বরাবর গুলি করে৷ কয়েক মুহুর্ত মৃত্যুর কোলে ঢ’লে পরে৷ তনু চিৎকার করে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে৷ সম্পর্কের প্রণয় তনুকে কোথা থেকে কোথায় এনে দাঁড় করিয়েছে৷
সমাপ্ত….
গল্পটা পোস্ট করার পরই পরীক্ষার রুটিন হাতে পাই৷ সেজন্য গল্প লেখায় মনোযোগ পাইনি৷ ভেবেছিলাম রিমুভ করে দিব৷ কিন্তু আপনাদের ভালোবাসায় পারিনি৷ ছোট করে শেষ করে দিলাম৷