সভ্যতার সভ্য পর্ব ২

0
988

#সভ্যতার_সভ্য
#দ্বিতীয়াংশ
#NishchupSpriha
==============
সেদিন রাতে ডিনারের সময় প্রথম সভ্যর সঙ্গে আমার দেখা হল। আর এবার আমি হা করে সভ্যর মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।

প্রথমবারের মতো আমি সভ্যকে ভালোভাবে খেয়াল করলাম। তখন সভ্যর মুখে কোন কেক ছিল না। গৌরবর্ণের লম্বাটে মুখ, চোখ জোড়া বড় বড়, ঠোঁট জোড়া টকটকে লাল রংয়ের আর মাথা ভর্তি কালো কুচকুচে ঝাঁকড়া চুল!

এ যে অসম্ভব সুন্দর এক কিশোর! প্রথম দেখায় যেকোন কিশোরীর বুকের ভেতর কেঁপে উঠবে..!

এই যে যেখানে আমার বুকের ভেতর কেঁপে ওঠার মতো অবস্থা! সেখানে অসভ্যটা একবারও আমার দিকে তাকায়নি!

খাওয়ার সময় জানতে পারলাম বিকালে সভ্য ওর বন্ধুদের নিয়ে বাসায় আড্ডা দিচ্ছিলো। ক্যাডেটের পরিক্ষার রেজাল্ট বের হয়েছে। সভ্য ভাইবাতেও টিকে গেছে। কিছুদিনের মধ্যেই ক্যাডেটে চলে যাবে।

এটা শুনেই আমি মনে মনে উড়তে শুরু করলাম। কি মজা ও চলে যাচ্ছে! মন চাচ্ছে হারমোনিয়ামটা বাজিয়ে গাওয়া শুরু করি,
‘‘আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে
শাখে শাখে পাখি ডাকে
কত শোভা চারি পাশে..
আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে… ’’

সভ্যর সিসিআর – এ হয়ে গেলো। সভ্য যেদিন চলে যায় সেদিন প্রথম ও আমার রুমে এসেছিল। আমার হাতে একটা চিরকুট দিয়ে আমি কিছু বলার আগেই ও আমার রুম থেকে চলে যায়। নিচে ওর জন্য গাড়ি অপেক্ষা করছিল। আমি চিরকুট পড়ে ওটা হাতে নিয়েই দৌড়ে নিচে যাই। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। সভ্য চলে গেছে।

–‘‘তুমি আমার জন্য বাড়ি ছেড়েছিলে তাই না? আ’ম স্যরি! দেখো আমি চলে যাচ্ছি প্লিজ তুমি আর কোথাও যেয়ো না। তুমি না থাকলে বড়মা,বড়বাবা অনেক কষ্ট পায়।’’–

চিরকুটে মাত্র কয়েকটা লাইন লেখা। চিরকুট পড়ার পর থেকে আমি জানি না কেনো যেন আমি ভিতরে ভিতরে একটা চাপা কষ্ট অনুভব করছিলাম। বাচ্চা একটা ছেলে আমার জন্য আপনজনদের ছেড়ে দূরে থাকবে !

এরপর ছুটিতে সভ্য বাসায় এলেও তেমন কোন কথা হয়নি। বাসায় ও ওর মতো আর আমি আমার মতো। অথচ আমাদের রুম পাশাপাশি। ওর আর আমার একই বারান্দা !

এভাবে সময় যাচ্ছিলো। কিভাবে যে দুই বছর চলে গেলো বুঝতেই পারলাম না।

এসএসসি পরিক্ষার আগে আমার জীবনে অন্ধকার নেমে এলো। অনিকের কাজিন অনুভব আমার ফ্রেন্ড। ও আমাকে কিছু পিক দিলো যেখানে অনিক একটা মেয়ের সাথে খুব ঘনিষ্ঠভাবে আছে।

অনিক আমার তিন বছরের সিনিয়র। ঢাকায় আমরা একই স্কুলে ছিলাম। আমি যখন ক্লাস এইটে তখন ও কলেজে। অনিক আমার ক্রাশ ছিল। ক্রাশ যখন নিজে থেকে প্রপোজ করে তখন অনুভূতিটা কেমন হয়?

অনিকের সাথে আমার পরিক্ষার মাসখানেক আগে রিলেশন শুরু হয়। রিলেশন শুরু হওয়ার পরে জেএসসি দিয়ে আমি বাসায় চলে আসি। ও থাকতো ঢাকায় আর আমি বাসায়। রিলেশনটা ফোনে কথা বলা আর চ্যাটিং এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

তার উপর এই সব পিক দেখে আমার মাথা নষ্ট হয়ে গেলো। অনিককে বলার পর, ওর সাথে এটা নিয়ে আমার অনেক রাগারাগি হলো।

পরে ও নিজেই স্যরি বলে বললো,
— ‘এগুলো সব মিথ্যা। আমার আর তোমার মাঝে ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি করে, কেউ আমাদের আলাদা করতে চায়।’

আমিও অনিকের কথা বিশ্বাস করলাম। কারণ অনুভব আমাকে পছন্দ করতো। হয়তো ও নিজেই এডিট করে এসব করেছে!

এর কয়েকমাস পরে এসএসসি দিয়ে আমি ঢাকায় গেলাম। আমার প্লান ছিল ঢাকায় কলেজে ভর্তি হব। ঢাকায় আসার মূল কারণ ছিল অনিক। লং ডিসটেন্স রিলেশন অনিক চাচ্ছিলো না। কিন্তু আমি অনিক বলতে পাগল ছিলাম।

ঢাকায় আসার পর আমি অনিকের মধ্যে অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম। হয়তো ও এমনই ছিল! আমিই জানতাম না!

আমাদের দেখা হলেই অনিক আমাকে বিভিন্নভাবে স্পর্শ করতো। আর আমি সেটার জন্য বাধা দিলেই ও খেপে যেত।

আগে তো আমাদের তেমন দেখা হয়নি। দেখা হলেও ও কখনোই আমাকে বাজেভাবে স্পর্শ করেনি। ফোনে বা ম্যাসেজে এডাল্ট কোন কথা বললে আমি ইগনোর করতাম।

অনিকের ফোন বেশিরভাগ সময়ই ওয়েটিং এ পেতাম। কিছু বললেই বলতো ভার্সিটির ফ্রেন্ডরা মিলে গ্রুপে কথা বলে।

একদিন ফোনে কথা বলার সময় অনিক নানা টাল-বাহানা করে বললো,
— ‘সভ্যতা! তুমি আমাকে বিশ্বাস করো?’

আমি অবাক হয়ে বললাম,
— ‘অবশ্যই বিশ্বাস করি। কেনো? হঠাৎ এই প্রশ্ন কেনো?’

অনিক কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
— ‘সভ্য সবারই কিছু ফিজিক্যাল নিড থাকে তুমি তো জানোই তাই না?’

— ‘হ্যাঁ আমি জানি। কিন্তু তুমি এসব কেনো বলছো?’

— ‘কজ আমারো কিছু নিড আছে। আই যাস্ট ওয়ান্ট ইউ।’

অনিকের কথা শুনে আমি হতভম্ব! কি বলে এই ছেলে!

আমি কোন রকমে বললাম,
— ‘কি বলছ এসব তুমি? মাথা ঠিক আছে তোমার?’

— ‘আ’ম টোটালি ফাইন সভ্যতা। এখন তুমি বলো তুমি কি আমাকে বিশ্বাস করো? আমার একটা ফ্রেন্ডের ফ্লাট আছে। তুমি কবে আসবা বলো? কাল পরশুর মধ্যে হলে বেশি ভালো হয়।’

আমি স্তব্ধ! অনিক কি বলছে এসব! ওর কথার বিপরীতে আমি কি বলবো কিছুই খুঁজে পেলাম না! কিছুই বলতে পারলাম না আমি! বলার মতো কোন ভাষা আমার মুখে এলো না।

অনিক নিজেই আবার বললো,
— ‘ইউ নো সভ্যতা তুমি দিন দিন এত হট আর সেক্সি হচ্ছো যে আমি নিজেকে কন্ট্রোলই করতে পারি না। তুমি সামনে আসলেই আমার মাথায় উঠে যায়। তুমি যা ফিগার বানাইছো না ! ওহ ! গড ! আই কান্ট এক্সপ্লেইন ! আমি বহু কষ্টে নিজেকে কন্ট্রোল করি।’

আমার কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বের হচ্ছিলো। অনিক আমাকে এভাবে বলতে পারলো ! অনিকের এত অধঃপতন ! ছিহ্ ! তাহলে অনুভব ঠিক ছিল !

অনুভবের কথাই বারবার মনে হচ্ছিলো,
— ‘দোস্ত! আমি কি তর খারাপ চামু ক? অনিক ভাই মাইয়া খায়া ছাইড়া দেয়। আমিও মাইয়া খাই কিন্তু তরে আমি সত্যি পছন্দ করতাম। এহন আমার হৃদি আছে। আমি অরে জান দিয়া ভালোবাসি। আমি চাই না অনিকের মত *** পোলা তর লগে এমন করুক। তর আরো প্রমাণ লাগলে ক.. আমি আরো প্রমাণ দিমু। তাও বইন আমার ভালো তুই এই *** লগে প্রেম করিস না।’

আমি সাথে সাথে ফোন রেখে দিলাম। অনিক আবার কল করলো। আমি কেটে দিয়ে ফোন বন্ধ করে ফেললাম। অনিকের কথা শুনে মনে হচ্ছিলো কেউ আমার কানে গরম সীসা ঢালছে….

সারা রাত কেঁদে কেটে নাকের পানি চোখের পানি দিয়ে বালিশ ভিজালাম। ভোর রাতে সিদ্ধান্ত নিলাম অনিকের সাথে কথা বলবো।

পরের দিন অনিকের সাথে আমার তুমুলঝগড়া হলো। ও আমাকে যা তা বললো। একপর্যায়ে আমিই সম্পর্ক শেষ করে দিলাম।

অনিকের লাস্ট কথা ছিল,
— ‘শালী স্লাট একটা। নতুন নাগর পাইছোস আমারে আর লাগবো ক্যা? শালার বাল ফালায়া তিনটা বছর তোর পিছনে নষ্ট করলাম।’

আমি আর কিছু শুনিনি। ফোন কেটে ওর নম্বর ব্লাক লিস্টে দিয়েছি।

কতটা জঘন্য হলে মানুষ এমন করতে পারে? সেদিন রাতেই আমি ঢাকা ত্যাগ করলাম। সারাজীবনের জন্য ঢাকা ত্যাগ করলাম…
===============
আগে তো আমি শান্ত ছিলাম। ঢাকা থেকে বাসায় এসে আরো নিরব হয়ে গেলাম। কোন কিছুই ভালো লাগতো না।

আমার কলেজ জীবন শুরু হল চরম বাজেভাবে… যে কলেজে পড়ার ইচ্ছা ছিল, সেখানে চান্স পেয়েও খুশি ছিলাম না। সব সময় মাথায় অনিক ঘুরতো।

মাঝে মাঝে মনে হত আগের মত আবার সবকিছু ঠিক করে ফেলি। কিন্তু অনিকের কথা গুলো মনে হলেই মরে যেতে ইচ্ছা করতো। অনিককে ভুলার জন্য পড়াশোনায় ফোকাস করলাম। নিজেকে ব্যস্ত রাখার জন্য চেষ্টা করলাম। অনিক যেন কখনোই মাথায় না আসে…

কলেজ, কোচিং, প্রাইভেট, বাড়ি আমার রুটিন হয়ে গেলো। এত ব্যস্ততার মাঝেও রাতে যখন ঘুমোতে যেতাম তখন আমার মাথায় শুধু অনিক ঘুরঘুর করতো।

আমি ঘুমোতে পারতাম না। পৃথিবীর সবকিছু আমার কাছে অসহ্য লাগা শুরু হল। কিন্তু অনিকতো আমায় ভালোবাসেনি! ও তো আমার শরীরকে ভালোবাসতো! ছিহ্ ! আমি এতদিন একটা পশুকে ভালোবাসতাম ! আরে পশুও তো ওর থেকে ভালো আছে। ও তো পশুর থেকেও নিকৃষ্ট ! মানুষ এমন কেনো হয়?

এই এত কিছুর পরেও নির্লজ্জের মতো অনিককে ছাড়া আমার দম বন্ধ লাগতো। ওকে ছাড়া আমার বেঁচে থাকা অসম্ভব! মস্তিষ্ক অনিককে খারাপ বললেও মনকে মানাতেই পারছিলাম না!

সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম আমি মরে যাবো। যাকে জান প্রাণ দিয়ে ভালোবাসলাম সে আমার সাথে এমন করলো???? যেখানে আমার জীবনে অনিক নেই, সেখানে আমার বেঁচে থাকার কোন মানেই হয় না!

কিন্তু মরবো কিভাবে? সুইসাইড ! এই কষ্ট থেকে মুক্তির একমাত্র রাস্তা হলো সুইসাইড!

আমি প্যারাসিটামল জমানো শুরু করলাম। বেশী মাত্রায় প্যারাসিটামল খেলে মানুষ বাঁচেনা। এক মাসে আমি মোট সাতাশটার মতো প্যারাসিটামলের পাতা খুঁজে পেলাম। প্যারাসিটামল খেয়েই সুইসাইড করবো।

আমি যেদিন সুইসাইড করার সিদ্ধান্ত নিলাম কাকতালীয় ভাবে সেদিন বিকালে সভ্য বাসায় এসে হাজির! ডিনারের সময় জানতে পারলাম সভ্য দরখাস্ত দিয়ে ছুটি নিয়ে বাসায় এসেছে। কারণ হিসেবে বললো ও কিছুটা অসুস্থ।

আমি কোন রকমে খেয়ে প্লেটে খাবার রেখেই উঠে পড়লাম। বুক ফেটে কান্না আসছিল। বার বার মনে হচ্ছিলো আজকেই সবার সাথে আমার শেষ খাওয়া! আর কখনো সবার সাথে এভাবে বসে খেতে পারবো না!

আচ্ছা আমি না থাকলে কি বাপি-মাম্মাম অনেক কষ্ট পাবে? ছোটবাবা-ছোটমা তারাও কি কষ্ট পাবে? আমাকে নিয়ে কি ছোটমা মাম্মামের সাথে ঝগড়া করবে? আর সভ্য? ও কি কষ্ট পাবে? আরে ও তো আমার সাথে কথাই বলে না…

এক সত্ত্বা বলছে, ‘না, তুই সুইসাইড করবি না।’ অপর সত্ত্বা বলছে, ‘কর তুই সুইসাইড। যে জীবনে অনিক নেই সেই জীবন মূল্যহীন।’

ঘড়িতে এগারোটা বাজার অপেক্ষায় আছি। কারণ রাত এগারোটায় আমাদের বাসার সবাই যে যার যার ঘরে চলে যায়।

সাড়ে এগারোটার দিকে আমি সব ঔষধ গ্লাসের পানিতে গলানো শুরু করলাম। এতগুলো খেলে নিশ্চই বাঁচার কোন চান্স নেই! অবশ্যই আমি মরে যাবো। সবগুলো ঔষধ পানিতে গলানোতে আমার প্রায় বারোটা বেজে গেলো।

আমি যখনই খাবো ঠিক তখনই আমার দরজায় নক হলো। প্রথমে আমি ভুল মনে করলেও পরে বুঝতে পারলাম যে না আসলেই দরজায় নক হচ্ছে। এত রাতে আমার রুমে কে আসবে?

আমি দরজার কাছে যেয়ে বললাম,
— ‘কে?’

ওপাশ থেকে উত্তর এলো,
— ‘আমি।’

আমি আবার বললাম,
— ‘আমিটা কে?’

— ‘আমি সভ্য।’

সভ্য! ওর এত রাতে কি দরকার?

আমি কিছুটা অবাক হয়েই প্রশ্ন করলাম,
— ‘সভ্য! এত রাতে কি চাই তোর?’

— ‘একটু দরকার আছে। দরজা খুলো।’

— ‘এত রাতে কি দরকার তোর?’

— ‘আছে দরকার। দরজাটা খুলো তো।’

— ‘কি দরকার বল?’

— ‘দরজাটা খুলো তারপর বলছি।’

— ‘পারবো না। যা কালকে সকালে আসিস।’

এবার ও কিছুটা তেজি গলায় বললো,
— ‘উফ! এত কথা না বলে দরজা খুলো তো। আমি একটা কথা বলেই চলে যাবো। আমার এখনি দরকার। খুব জরুরি!’

আমি বললাম,
— ‘যা এখন আমি পারবো না। যা দরকার কালকে সকালে বলিস। আমি এখন ঘুমোবো।’

এবার ও অনুগ্রহ করে বললো,
— ‘প্লিজ প্লিজ! মাত্র দুই মিনিট! না যাও মাত্র এক মিনিট। প্লিজ দরজা খুলো।’

আমি কিছুক্ষণ ভাবলাম। ভেবে বললাম,
— ‘আচ্ছা, দাঁড়া একটু।’

ও সাথে সাথে জবাব দিলো,
— ‘থ্যাংকস.. থ্যাংকইউ স্যো মাচ… প্লিজ হারি আপ..’

আমি তাড়াহুড়ো করে গ্লাসটা আমার পড়ার টেবিলের উপর যে ফটো ফ্রেমটা আছে তার পেছনে রাখলাম। আর ঔষধের প্যাকেট গুলো বাস্কেটে ফেললাম। তারপর যেয়ে দরজা খুলে দিলাম। দরজা খোলার সাথে সাথে সভ্য আমার রুমে এসে ভিতর থেকে দরজা লক করে দিল।

ওকে দরজা লক করতে দেখে আমি হতভম্ব হয়ে বললাম,
— ‘কি হলো? তুই এত রাতে আমার রুমে এলি কেন? আবার দরজা লক করলি কেন?’

সভ্য আমার উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করলো,
— ‘কি করছিলে তুমি?’

সভ্যর কথায় আমি একটু ঘাবড়ে গেলাম। তাহলে সভ্য কি সব জেনে গেলো? না, ও কিভাবে জানবে?

আমি নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বললাম,
— ‘আমি আবার কি করবো? এতক্ষণ পড়লাম। এখন ঘুমোবো।’

আমার কথা শুনে সভ্য কিছু না বলে আমার কাছে এসে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। সবকিছু এত তাড়াতাড়ি হলো যে আমি রিয়াকশন দেওয়াই ভুলে গেলাম।

আমি একটু ধাতস্থ হতেই ওকে আমার থেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বললাম,
— ‘সভ্য কি করছিস কি তুই? এটা কোন ধরণের অসভ্যতামি? ছাড় আমাকে। এই তোর জরুরি দরকার?’

কিন্তু ওকে আমি নিজের থেকে একচুলও নড়াতে পারলাম না। বরং আমার মনে হলো ওর হাতের বাঁধন আরো শক্ত হলো। আমার খুব অস্বস্তি লাগা শুরু হলো। তার কিছুক্ষণ পরেই ও নিজে থেকে আমাকে ছেড়ে দিলো।

আমি কিছু বলার আগেই, ও আবার আমাকে প্রশ্ন করলো,
— ‘কি করছিলে তুমি?’

সভ্যর প্রশ্ন শুনে আমি চমকে ওর দিকে তাকালাম। সভ্যর গলার স্বরে কিছু একটা ছিল! আচ্ছা কি ছিল? আমি এভাবে চমকে উঠালাম কেনো?

আচ্ছা সভ্য কি বড় হয়ে গেছে? তাহলে ওর কন্ঠ এমন কেনো শোনাচ্ছে? অনেক দিন পর সরাসরি কথা হচ্ছে এইজন্য কি এমন লাগছে?

আমার থেকে উত্তর না পেয়ে সভ্য আবার প্রশ্ন করলো,
— ‘কি হলো বলো? কি করছিলে তুমি?’

আমি বলার মতো কিছুই খুঁজে পেলাম না। আমার মনে হচ্ছিলো আমি কথা বলা ভুলে গেছি। অনেক কষ্টে আমার শব্দ ভান্ডার থেকে একটা শব্দ খুঁজে পেলাম।

তারপর বললাম,
— ‘প..পড়..পড়ছিলাম।’

সভ্য চোখ ছোট ছোট করে প্রশ্ন করলো,
— ‘সত্যি তো?’

আমি ছোট করে জবাব দিলাম,
— ‘হুঁ!’

আমার কথা শুনে ও বললো,
— ‘কি পড়ছিলে? চল আমাকে দেখাবে।’

আমি চমকে ওর দিকে তাকালাম।

তোতলিয়ে বললাম,
— ‘ম..ম..মানে?’

ও আগের স্বরেই বললো,
— ‘মানে তুমি কি পড়ছিলে তা আমাকে দেখাবে। কি পড়ছিলে?’

— ‘ম্যা..ম্যাথ করছিলাম।’

— ‘তাহলে চলো, তোমার ম্যাথ দেখবো।’

আমি অবাক হয়ে বললাম,
— ‘তুই আমার ম্যাথ বুঝবি?’

— ‘সাইন্সে যেহেতু পড়ি মাথায় একটু হলেও ঘেলু আছে।’

— ‘তাই বলে ইন্টারের ম্যাথ তুই বুঝবি?’

— ‘হ্যাঁ, বুঝবো। চল তো।’

এরপর আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সভ্য আমার পড়ার টেবিলের কাছে চলে গেলো। টেবিলতো ফাঁকা। আমি পড়লে তো বই থাকবে!

টেবিলে কিছু না দেখে সভ্য প্রশ্ন করলো,
— ‘কই? তোমার বই,খাতা,কলম,ক্যালকুলেটর কই?’

আরে আমি তো ম্যাথ করিই নাই। করলে তো এগুলো থাকবে? আমি কিছু না বলে চুপ করে থাকলাম। সভ্য আমার কাছে এসে আমার হাত ধরে নিয়ে আমার বিছানায় বসালো। আর ও আমার পায়ের কাছে বসলো।

আমার হাত দুটো ওর হাতের মুঠোয় নিয়ে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
— ‘তুমি কি জানো আমি ছুটি নিয়ে কেনো বাসায় এসেছি?’

আমি বললাম,
— ‘হুঁ!’

ও আবার বললো,
— ‘কি?’

আমি বললাম,
— ‘জানি।’

— ‘তাহলে বলো তো আমি বাসায় কেনো এসেছি?’

— ‘তুই অসুস্থ তাই।’

আমার কথা শুনে সভ্য হাসলো তারপর বললো,
— ‘উঁহু! হয়নি.. আমি অন্য একটা কারণে বাসায় এসেছি।’

সভ্যর কথা শুনে আমি অবাক হয়ে বললাম,
— ‘মানে?’

— ‘মানে হচ্ছে আমি তোমার জন্য বাসায় এসেছি।’

আমি আরো বেশি অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম,
— ‘মানে? আমার জন্য? কিন্তু কেনো?’

— ‘হুঁ, তোমার জন্য। শুধুই তোমার জন্য। কারণ আমার মনে হচ্ছিলো তুমি ভালো নেই। কিছু দিন ধরে আমি তোমাকে নিয়ে বাজে বাজে স্বপ্ন দেখছিলাম।’

আমি হা করে সভ্যর কথা শুনছিলাম। এটা কি টেলিপ্যাথি?

সভ্য আবার বললো,
— ‘হোয়াই জান? তুমি কি মনে করেছো আমি কিছুই বুঝিনি? আমি জানি এতক্ষণ তুমি কোন ম্যাথ করনি। তুমি যে গ্লাসটা লুকিয়ে রেখেছো আমি সেটা দেখেছি। আর তোমার বাস্কেটে ঔষধের পাতা গুলোও আমি দেখেছি।’

আমি হতভম্ব! সভ্য কি বলছে এসব? তারমানে ও সব জানতো? কিন্তু কিভাবে?

সভ্য একটু থেমে আবার বললো,
— ‘তুমি কি জানো জীবন কত সুন্দর! সৃষ্টিকর্তা তোমাকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে পৃথিবীতে পাঠিয়েছে। উনি চাইলেই কিন্তু তোমাকে গরু, ছাগল, কুকুর, পিঁপড়া ইত্যাদি বানিয়ে পৃথিবীতে পাঠাতে পারতো। কিন্তু না তুমি হচ্ছো সৃষ্টির সেরা জীব। আশরাফুল মাখলূকাত। আর তুমি কি না নরকের একটা কিটের জন্য তোমার জীবন শেষ করে দিবে? আমাদের ভালোবাসা তোমার কাছে মূল্যহীন? এই যে বড়মা, বড়বাবা, পাপা, মামণি তোমাকে এত ভালোবাসে তাদের ভালোবাসার কোন মূল্য নেই তোমার কাছে? তোমার কিছু হয়ে গেলে যে ওরা সবাই পাগল হয়ে যাবে। তুমি কি সেটা জানো না? একটা *** জন্য তুমি মরতে বসেছো? ও জীবনে না থাকলে জীবন মূল্যহীন? ওর ভালোবাসা না পেয়ে মরতে চাচ্ছো? আর এতগুলো বছর ধরে আমরা তোমাকে ভালোবাসি সেটা তোমার কাছে কিছুই না?’

সভ্যর কথা শুনে আমার বুক ফেটে কান্না আসছিল। কি করতে যাচ্ছিলাম আমি? আমি তো আমার আপনজনদের কথা ভাবিনি! আমি প্রাণপণ চেষ্টা করছিলাম যাতে আমার চোখ দিয়ে পানি না আসে।

ও কিছুক্ষণ থামলো তারপর আবার বলা শুরু করলো,
— ‘তুমি কি জানো এই পৃথিবীতে আমি সবচেয়ে বেশি কাকে ভালোবাসি? ডু ইউ হ্যাভ এনি আইডিয়া? ইউ কান্ট ইভেন থিঙ্ক দ্যাট হাউ মাচ আই লাভ ইউ… কজ তুমি তো একটা ঠকবাজের প্রেমে অন্ধ হয়ে আছো। ভালোবাসা কি সেটা বুঝার আগে থেকেই আমি তোমাকে ভালোবেসে আসছি। ছোট থেকে আমার একটাই স্বপ্ন তুমি আমার বউ হবে। আর তুমি কি না…! তুমি কি জানো আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি? না, তুমি জানো না। কারণ তুমি তো ওই *** টাকে ভালোবাসো। তোমার কিছু হলে আমি যে বেঁচে থেকে মরে যাবো সেটা কি জানো?? আমি কিন্তু তোমার মতো সুইসাইড করবো না। তোমার কিছু হলে আমার পুরো পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি ইউ কান্ট ইম্যাজিন! অনেক বেশি ভালোবাসি লক্ষীটি।’

সভ্য থামলো।

আমিও আর আমার কান্না চেপে রাখতে পারলাম না। হুঁ হুঁ করে কেঁদে ফেললাম। আমার পরিবার আমাকে কতটা ভালোবাসে! আর আমি কি না…! আমার কান্না দেখে সভ্য আমার কাছে এসে বসলো। আমার মাথা ওর বুকের সাথে চেপে ধরে রাখলো আর চুলে হাত বুলিয় দিলো। আমি এভাবে কতক্ষণ কান্না করেছি জানি না। আমার কান্না থামার পরেও আমি সভ্যর বুকে মাথা রেখে ওভাবেই বসে ছিলাম। কেনো যেনো ওর বুকে আলাদা শান্তি অনুভব করছিলাম।

আমাকে থামতে দেখে সভ্য বললো,
— ‘আই লাভ ইউ জান। আই লাভ ইউ মোর দেন মাই লাইফ। আই লাভ ইউ সো মাচ। আজকের পর থেকে তুমি শুধু এবং শুধুমাত্র আমাকে ভালোবাসবে। আজকের পর থেকে তোমার হাসি কান্না সবকিছু শুধু আমার জন্য। সব মানে সব। তোমার সব কিছু হবে শুধু আমার জন্য।’

সভ্যর কথা শুনে আমি আবার কেঁদে ফেললাম।

আমার কান্না দেখে সভ্য বললো,
— ‘হুস! ডোন্ট ক্রাই মাই জান। প্লিজ স্টপ ক্রাইং সোনা। প্লিজ স্টপ। বেশি কান্না করলে মাথা ব্যথা করবে জান। তোমার কান্না দেখলে মনে হয় কেউ আমার হৃদয়ে শতবার ছুড়ি দিয়ে আঘাত করেছে। প্লিজ জান ডোন্ট ক্রাই। ঘুমানোর চেষ্টা করো জান।’

রাতে আমি কখন ঘুমিয়েছি জানি না। কিন্তু সকালে উঠে নিজেকে সভ্যর বুকে আবিষ্কার করেছিলাম। ছিহ্! কি লজ্জা! আমি দ্রুত উঠে ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে চলে গেছিলাম। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে সভ্যকে আর আমার রুমে পাইনি।
===============
সেদিনের পর সভ্য যে দুইদিন বাসায় ছিল আমি লজ্জায় ওর সামনে যাইনি। কিন্তু আমি না গেলে কি হবে? ও সুযোগ পেলেই আমার কাছে চলে আসতো। আমার কলেজের বাহিরেও ও আমার জন্য অপেক্ষা করতো। সেদিনের পর থেকে ও আবার আমার উপর ওর অধিকার ফলানো শুরু করলো। কেনো যেন আমি নিজেও ওকে কিছু বলতে পারতাম না। ওর মধ্যে ডমিনেট করার আলাদা একটা ক্ষমতা আছে। আমার মনে হয় ও যখন আমার সামনে থাকে তখন আমি ওর প্রতি সম্মোহিত হয়ে থাকি। ও যা বলে আমি তাই করি, এমনকি করার জন্য এক পায়ে খাড়া! আচ্ছা ও কি সম্মোহন করতে পারে?

দুইদিন ও আমাকে প্রচুর বুঝিয়েছিল। রাতেও আমার একসাথে ছিলাম, আমাদের বারান্দায়।

আমার আর সভ্যর রুম পাশাপাশি। আমাদের দুই রুমের জন্য একটাই বারান্দা, অনেক বড় বারান্দা। বারান্দাটা আমাদের বাসার পিছনের দিকে হওয়ায় রাস্তা থেকে কিছুই দেখা যেত না। আমাদের বারান্দার গ্রিল বিভিন্ন লতা-পাতা দিয়ে প্যাঁচানো। এছাড়াও বিভিন্ন ইনডোর প্লান্ট দিয়ে ভর্তি। কিছু কিছু লতা ছাদ থেকে নেমে এসেছে। আবার কিছু লতা বারান্দা থেকে বেয়ে ছাদে উঠে গেছে।

সভ্য গাছপালা অনেক পছন্দ করে। ওইই বারান্দাটাকে ছোটখাটো একটা জঙ্গল বানায় ফেলছে। আমার পাশের বারান্দায় বেতের দোলনা ঝুলানো। আর সভ্যর পাশের বারান্দায় মেঝেতে চারটা কুশন সহ অনেক সুন্দর বিছানা পাতানো। আর সম্পূর্ণ বারান্দার মেঝেতে সবুজ রংয়ের নরম তুলতুলে কৃত্রিম ঘাস বিছানো।

আমরা দু’জনেই বারান্দায় আমার দোলনায় থাকতাম। সভ্য দোলনায় বসে আমাকে ওর কোলে বসিয়ে গল্প বলতো। ওর সব গল্প ছিল ওর ক্যাডেটকে নিয়ে। ক্যাডেটের সিনিয়র ভাইরা ওদেরকে দিয়ে কিভাবে কাজ করাতো সেসব গল্প। আর এখন ওরা ওদের জুনিয়রদের দিয়ে কাজ করায়। সারা রাত ক্যাডেটের অনেক মজার মজার গল্প শোনাতো। ক্যাডেটে যেমন প্যারা আছে তেমন মজাও আছে… আর সেসব গল্প শুনে আমি হাসতাম। দেখতে দেখতে দুইদিন কিভাবে চলে গেলো আমি বুঝতেই পারিনি। আমি যেন একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম।

সভ্য যাওয়ার আগের দিন রাতে ওর কাছে জানতে পারি অনিক যে ভালো না সভ্য এটা আরো ছয় মাস আগে থেকেই জানতো। ওর কথা শুনে আমি অবাক হয়েছিলাম।

সভ্য যখন জেএসসি দিয়ে ছুটিতে বাসায় এসেছিল তখন রাতে আমার রুম থেকে রাগারাগির আওয়াজ পেতো। ভাগ্য ভালো যে বাপি-মাম্মাম, ছোটবাবা-ছোটমা নিচ তলায় থাকতো। না হলে ওরাও আমার কথা শুনে ফেলতো।

একদিন ভুল করে আমি আমার ফোন বাসায় ফেলে যাই। তখন ও আমার ফোন চেক করে। ফোনে অনিকের সাথে ম্যাসেজিং গুলো দেখে।
তখন আমার সাথে অনিকের একটা মেয়ের ঘনিষ্ঠ ছবি নিয়ে ঝগড়া চলছিল। তখনই ও অনিকের বিষয়ে খোঁজ নেয়।

সভ্যর কথা শুনে আমি থ! এই ছেলে এত চালাক!

আমি রাগ হয়ে বললাম,
— ‘তুই আমার ফোনে হাত দিছিলি?’

আমার প্রশ্নের জবাব ও নির্বিকার ভাবে দিলো।
— ‘হুঁ, দিছি তো?’

— ‘কেন তুই আমার ফোন নাড়বি? তুই জানিস না একটা মেয়ের ফোনে তার অনেক পারসোনাল জিনিস থাকে। তোর উচিত ছিল আমার কাছে পারমিশন নেয়া।’

— ‘পারমিশন চাইলে বুঝি তুমি দিতে পারমিশন? আর ফোন না নাড়লে জানতাম কেমনে যে তুমি একটা *** সাথে তিন বছর ধরে রিলেশনে আছো?’

সভ্য যা বললো তা শতকরা একশত ভাগ সত্য। আমি পারমিশন দিতাম না।

সভ্য আবার বললো,
— ‘কি হলো বলো? দিতে তুমি পারমিশন?’

আমি বললাম,
— ‘উঁহু! কিন্তু তুই আমাকে আগে বলিসনি কেনো যে অনিক খারাপ ছেলে?’

— ‘ইশ্! আমার বয়েই গেছে তোমাকে বলার জন্য! আর আমি বললে বুঝি তুমি বিশ্বাস করতে? তুমি তো এমনিতেই আমাকে পছন্দ করো না। আর আমি চাচ্ছিলাম তুমি একটা ধাক্কা খাও। ধাক্কা না খেলে তুমি আবার ঐ একই ভুল করবে। আর তোমার উপর আমার রাগ উঠে গেছিলো। তুমি কোন সাহসে একটা *** সাথে তিন বছর রিলেশন করলা? আমি যখন সব জানতে পারলাম তখন আমার মন চাচ্ছিলো অনিকরে মাটির নিচে পুতে ফেলি। আর তোমাকে জন্মের শিক্ষা দেই। কিন্তু কি করবো বলো! আমি যে তোমাকে ভালোবাসি! তাই তোমাকে কিছুই বলতে পারিনি।’

সভ্যর কথা শুনে আমি ছোট করে শুধু বললাম,
— ‘হুঁ!’

সভ্য ঠিক বলেছে। আমি ওকে বিশ্বাস করতাম না।

সভ্য আবার বললো,
— ‘তাহলে যে? আর কি পারসোনাল, হ্যাঁ? আমার আর তোমার মধ্যে পারসোনাল বলতে কিছু নাই। আর তোমার পিক তো? গ্যাল্যারিতে যে তোমার অনেক পিক আছে সেটা আমি জানি। সব দেখছি আমি। সবচেয়ে বেশি জোশ কোন পিক গুলো জানো? শাড়ি পড়ে তোমার বেলি বাটনের যে পিক গুলো আছে সেগুলো। ওহ্! জান আ’ম টোটালি—-! কি যে বলবো!’
শেষের কথাটা বলার সময় সভ্য আমাকে আরো শক্ত করে চেপে ধরলো।

সভ্যর কথা শুনে আমি পুরাই ত থ দ ধ! আমি কি বলবো ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। টোটালি স্পিচলেস! ও আমার সব পিক দেখছে! ইন্নাল্লিল্লাহ!!

সভ্য আবার বললো,
— ‘উফ জান তুমি এত **! এন্ড অলসো টু মাচ **!’

এবার আমি রাগ হয়ে ওকে মারা শুরু করলাম।

মারতে মারতে বললাম,
— ‘ছিহ্! বেয়াদপ! তুই এত নির্লজ্জ, এত বেহায়া! তুই এত বাজে বাজে কথা আমাকে বলতে পারলি? আর তুই কেনো আমার পিক দেখবি? তোর নাম সভ্য না রেখে অসভ্য রাখা উচিত ছিল। তুই কিভাবে করতে পারলি এটা?’

— ‘আরে ভাই আজব তো! আমি না দেখলে কে দেখবে? তোমার ওই অনিক? এই তুমি আবার ওকে এই পিক গুলো দিছো নাকি? যদি দিয়ে থাক তাহলে কিন্তু তোমার অবস্থা আমি খারাপ করে দিবো। আর আমি আবার কি করলাম? এখনো তো কিছু করিনি। যা করবো বিয়ে পর করবো।’

— ‘সভ্যর বাচ্চা সভ্য!!! কুত্তা ছাড় আমাকে। আর কখনো তুই আমার সাথে কথা বলবি না।’

— ‘ওহ্ হো জান! ডোন্ট ইউ থিঙ্ক সো তুমি অনেক ভুল কথা বলো? আমার বাচ্চা কই থেকে আসবে শুনি? তুমি ছাড়া কি আমি একায় বাচ্চা পয়দা করতে পারি?’

— ‘ছিহ্ ছিহ্ সভ্য তুই এভাবে বলতে পারলি আমাকে? এই আমি না তোর ব….’

আমি কথা শেষ করার আগেই ও বললো,
— ‘বউ। তুমি আমার বউ হও।’

— ‘অসভ্য একটা।’

— ‘তুমি বার বার আমাকে অসভ্য বলবে না। আমি তোমার সাথে কি অসভ্যতামি করেছি, হ্যাঁ? করে দেখাবো অসভ্যতামি কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি?’

আমি চোখ বড় বড় করে বললাম,
— ‘পিচ্চি একটা ছেলে হয়ে আমাকে ভয় দেখাচ্ছিস?’

— ‘খবরদার জান আমাকে পিচ্চি বলবে না। তোমার থেকে আমি যথেষ্ট ম্যাচিউর্!’

সভ্যর কথা শুনে আমি ভ্যেংচি কেটে বললাম,
— ‘এহ্! আসছে আমার ম্যাচিউর্! হুহ্!’

— ‘মুখ ভ্যেংচাবা না। বিশ্বাস হচ্ছে না তো? চল বিয়ে করে ফেলি! আমাদের ফাস্ট ম্যারেজ অ্যানিভার্সারি আসার আগে তোমার কোলে আমাদের ফাস্ট বেবি থাকবে।’

— ‘ছিহ্ ছি ছিহ্! তুই চরম অসভ্য হয়েছিস সভ্য। ছাড় আমাকে আমি আর তোর সাথে কথা বলবো না। ছাড় বলছি।’

— ‘ডোন্ট ডেয়ার বেবি! ভুলেও এই কাজ করো না। চুপচাপ আমার কোলে বসে থাকো বলছি। আর এই তুই তুই বাদ দেও তো। শুনতে ভালো লাগে না। আমার ফ্রেন্ডরা জানলে আমাকে নিয়ে অনেক হাসাহাসি করবে। এখন থেকে আমাকে তুমি করে বলবে। অনলি তুমি ইজ রিয়াল সুইটহার্ট!’
বলেই চোখ টিপ দিলো।

এভাবেই আমার আর অসভ্যটার প্রেমটা শুরু হয়। কেউ কাউকে কোন প্রপোজ করিনি।

ওকে বললার পর ও বলেছিল,
— ‘আমি যে তোমাকে এত ভালোবাসি সেটা কম পড়ে গেলো? প্রপোজ দিয়ে কি হবে? আমি তো ভালোবাসি নাকি? যাও নেক্সটাইম এসে তোমাকে প্রপোজ করবো।’

যাওয়ার দিন সভ্য সবার আড়ালে আমার রুমে এসেছিল।

আমার কপালে চুমু খেয়ে বলেছিল,
— ‘এবার আমার অনেক কষ্ট হবে জান। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। দয়া করে আর ওই *** টার কথা ভাববে না। আর খবরদার যদি উল্টা-পাল্টা কিছু করেছো তো একদম মেরে ফেলবো।’
এরপর আমাকে শক্ত করে জরায় ধরে চলে গেছিলো।

আমি আহাম্মক হয়ে দাঁড়ায় ছিলাম। কি বলে গেলো এই ছেলে? হঠাৎ আমি একটা বিষয় খেয়াল করলাম তা হলো সভ্য অনেক লম্বা হয়ে গেছে। আমার থেকেও লম্বা হয়ে গেছে। আমার পুতুল বরটা বড় হচ্ছে।
………………………..
(চলব)

[ বিঃদ্রঃ যারা আগে পড়েছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, ‘‘নো স্পয়লার প্লিজ…’’ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here