সবটা অন্যরকম♥ #পর্ব_৩৭

0
695

সবটা অন্যরকম♥
#পর্ব_৩৭
Writer-Afnan Lara
.
দিবা আর কিছুই বললো না।চুপচাপ সব শুনে গেলো
আহনাফ ও বারতি কিছু আর না বলে সেও যেন চুপচাপ হয়ে গেছে
এত বড় জার্নি।প্রায়ই দেড় ঘন্টার পথ ওরা পাড়ি দিয়েছে কোনো কথা না বলেই
আদনানদের বাসার সামনে বাইক থামাতেই ভেতর থেকে কটা ছেলে তাড়াহুড়ো করে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে বললো”আর আসলি কেন?চলে যা”
.
আহনাফ কানে হাত দিয়ে বললো”সরি!”
.
ওরা আহনাফকে নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।দেখে মনে হয় কত চেনে।তবে এরা কারা হতে পারে?
দিবা ভাবতে ভাবতেই একা একা সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো
মিনিকে সবার আগে দেখা জরুরি
বেশ দ্রুত গতিতেই সে আদনানদের বাসা পর্যন্ত এসে দরজা খোলা পেয়েই ভিতরে চলে গেলো মিনিকে খুঁজতে।সোফার রুমে কতজন মুরব্বী বসে আছেন।এদের কাউকেই দিবা চেনে না।তাও সালামটা দিয়ে সে মণিতার রুমের দিকে ছুটলো।মণিতার আম্মু কিসব ডালা সাজাচ্ছেন
দিবাকে দেখে মুচকি হেসে বললেন”এসে গেছো তাহলে”
.
-বাকিরা কোথায় আন্টি?
.
-সবাই ছাদে।মেহেদি অনুষ্ঠান সেখানেই হচ্ছে
.
দিবা কপালের ঘাম মুছে বললো”আমার মিনিকে কোথাও দেখেছেন?”
.
-তোমার সেই বেড়ালটা আমার ছোট ছেলেটাকে জ্বালিয়ে মারলো।গিয়ে দেখো ছাদে দৌড়ানি দিচ্ছে হয়ত
.
দিবা মুচকি হেসে ছুটে গেলো ওদিকে
দরজা দিয়ে বাহিরে বের হতেই আহনাফের সাথে ধাক্কা লাগলো ওর
আহনাফ শান্ত গলায় বললো”এরকম তাড়াহুড়ো করছো কেন?কোথায় যাও আবার?”
.
-ছাদে।সবাই ওখানেই
.
-মিনি কোথায়?ওকে দেখছি না
.
-ও সেখানে।তাই তো ছুটে যাচ্ছি
.
কথাটা বলেই দিবা গেলো সেদিকে।আহনাফ ও সোজা ওদিকেই গেছে
মিনিকে সারাটা দিন আর দেখেনি ওরা দুজন তাই দুজনেরই অনেক চিন্তা হচ্ছে
ছাদে আসতেই দুজন থেমে গেলো।খালামণি,খালু,আরিফ,আদনান,আনাফ,মণিতা তার বন্ধু বান্ধুব যেন এক এলাহি কান্ড এখানে
এত মানুষের ভীড়ে দিবা শুধু মিনিকেই খুঁজছে
পরে ওর নজর গেলো খাবারের ব্যবস্থা করা জায়গায় মিনি বসে বসে চিকেনের পাতিল দেখছে মাথা উঁচু করে
বেচারার নিশ্চয় খিধে পেয়েছে।না জানি কখন থেকে না খেয়ে আছে
দিবা সবার আগে ওর কাছে গেলো।মিনি দিবার কোলে বসে করুণ চোখে তাকিয়ে আছে।দেখেই বুঝা যাচ্ছে ওর খুব খিধে পেয়েছে।দিবা নিজের জন্য প্লেটে পোলাও মাংস নিয়ে সেই মাংসের পিসটা মিনিকে খাইয়ে দিলো।মিনি পেট ভরিয়ে নাচতে নাচতে ছুটে গেলো আনাফকে জ্বালাবে বলে
দিবা প্লেটটা রেখে এবার মণিতার কাছে আসলো।মণিতা রাগী রাগী লুক নিয়ে বললো”এই বুঝি আসার সময় হয়েছে?”
.
-আসলে আহনাফ ভাইয়ার অফিসে কাজ পড়ে যাওয়ায় আমারও দেরি হলো।নাহলে আরও আগেই আসতাম আমরা
.
-যাই হোক।আমার পাশে এসে বসো দেখি
ওরা তোমার হাতেও মেহেদি লাগিয়ে দেবে
.
দিবা মুচকি হেসে মণিতার পাশেই বসে পড়লো।মণিতার চাচাতো বোন একটা দিবার হাত ধরে মেহেদি লাগানো শুরু করে দিয়েছে মণিতার কথায়
আহনাফ এখন আদনানের সাথে কাজে হাত লাগিয়েছে।কাল হলুদের জন্য রঙির কাপড়ের ডেকোরেশন করছে এখন তারা।
মিনি আনাফকে শুধু জ্বালাচ্ছে
আনাফ যেখানেই বসে ও সেখানে গিয়ে বসে থাকে
এতক্ষণ খিধে পেয়েছিলো বলে আনাফকে জ্বালাতে পারেনি।গিয়ে খাবারের টেবিলের নিচে বসে ছিলো এতক্ষণ।এখন পেট ভর্তি।তাই অনায়াসেই আনাফকে জ্বালানো য়ায়
আনাফ ও বলিহারি!এতবড় একটা দামড়া ছেলে হয়ে কিনা ওকে ভয় পাচ্ছে।এরকম ভীতুর ডিমকে জ্বালাতে হেব্বি লাগে,মিনি তাই করছে আপাতত
.
এক হাত ভর্তি মেহেদি লাগিয়ে ছাদের এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে দিবা
বাতাসে তার চুলগুলো ক্ষণে ক্ষণে উড়ছে।দোল খাচ্ছে বাতাসে
মেহেদি বিশ মিনিট হাতে রাখতে বলেছে সবাই।মেহেদি দেওয়া অভ্যাস নাহ।তাই বিরক্তি লাগছে খুব
মিনি আনাফকে জ্বালানো শেষে দিবার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে আবার
আহনাফ কাজের ফাঁকে ফাঁকে মিনিকে আর দিবাকে দেখছে
খালামণি নিজেও মেহেদী লাগাতে ব্যস্ত আছেন
আদনান দিবার পাশে দাঁড়িয়ে বললো”কাজে কাজে হাঁপিয়ে গেলাম আমি”
.
দিবা ওর দিকে ফিরে বললো”শরবত খাবেন?ওখানে শরবত দেখলাম”
.
-এনে দিতে পারো
.
দিবা ওর কথামতন এগিয়ে গেলো সেদিকে
শরবতের গ্লাস হাতে নিতেই দেখলো আহনাফ এসে দাঁড়িয়েছে
তার সাদা পাঞ্জাবিটা ভিজে গেছে ঘামে
দিবা তার দিকে শরবতের গ্লাসটা এগিয়ে ধরে বললো”এটা খান”
.
-তুমি খাও।আমি আরেকটা নিচ্ছি
.
-এটা আদনান ভাইয়ার জন্য নিয়েছিলাম
.
আহনাফ দিবার হাত থেকে ছোঁ মেরে গ্লাসটা নিয়ে ঢকঢক করে পুরোটা খেয়ে বললো”কেউ আমাকে কিছু সাধলে মানা করি না”
.
গ্লাসটা রেখে হাতের ওপিঠ দিয়ে মুখ মুছে আবার চলে গেলো সে কাজে
দিবা বোকার মতন দাঁড়িয়ে আছে।তারপর আদনানের কথা মাথায় আসতেই আরেকটা গ্লাস নিয়ে ওদিকে গেলো সে
আদনানকে গ্লাসটা দিয়ে আহনাফের দিকে পুনরায় তাকালো
আহনাফ ব্রু কুঁচকে লাল- নীল ফিতা লাগাচ্ছে ছাদের কোণায় কোণায়
আরিফ চেয়ার ধরে রেখেছে নিচে দাঁড়িয়ে
দিবা হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো পুরোটা শুকিয়ে গেছে তাই সে ছাদ থেকে নেমে বাসার দিকে গেছে।সাথে সাথে মিনিও চলেছে
দিবা হাত ধুয়ে ওড়না দিয়ে মুছতে মুছতে আবারও ছাদের দিকে যেতে নিতেই দেখলো আহনাফ পেস্ট কালারের ওড়না গলায় পেঁচিয়ে এদিকে আসছে।দিবাকে দেখেও না দেখার ভান করে সে ফুফুর কাছে গিয়ে বললো তার গলার মতন এমন ওড়না যে কয়টা ওয়ারড্রবে আছে ওগুলো দিতে।মণিতার স্টেজে টাঙাবে সবগুলো
ফুফু তাই ওগুলো দিচ্ছে এখন
দিবা ছাদে চলে এসেছে।খালামণি ওর হাতটা ধরে মেহেদি দেখছেন।ওর হাতে করা ডিজাইনটা আর খালামণির হাতে করা ডিজাইনটা একদম সেম
তাই দুজন মিলে হেসে ফেললেন সে কারণে।মিউজিক প্লেয়ারে গান চালালো আরিফ।এক হাতে আরিশার সাথে হ্যালো হ্যালো করছে আর আরেক হাতে মেহেদির গানটা বের করছে ফোন থেকে
আরিশা রেগে আগুন।কারণ আরিফ এখানে কাজে হেল্প করতে আসায় ওকে ভালো মত টাইম দিতে পারেনি যার কারণে ওদের দিনে একবারের বেশি কথাই হয়নি।যা হতো তা দুই মিনিটেই সীমাবদ্ধ ছিল
আরিফ আদনানকে ডেকে বসিয়ে একটু দূরে গিয়ে বেশ কয়েকবার সরি বলা শেষে বললো এখন আর কথা বলা পসিবল না
ঘাঁড়ে আরও কাজ আছে।শেষবার আবারও সরি বলে সে লাইন কেটে দিয়েছে
আরিশাকে কিছু বলার সুযোগই দিল না
আহনাফ ওড়না সব এনে স্টেজের পাশে রেখে দিবাকে ডাক দিলো।কারণ দিবা হুদাই দাঁড়িয়ে ছিলো ওখানে
.
-কি চাই?
.
-আমরা ছেলেরা কাজ করতে করতে শেষ হয়ে যাচ্ছি।তোমার কি দিলে দয়া হয় না যে একটু হেল্প করি ওদের
.
দিবা দুষ্টুমি করে বললো”আদনান ভাইয়া সেই কখন থেকে একটা গান খুঁজে পাচ্ছেন না।তাহলে যাই আমি”
.
-না না।তোমাকে ডেকেছি আমি।সুতরাং আমায় হেল্প করবে এখন
.
-তো বলুন কি করতে পারি?
.
-এই ওড়না গুলো মেলে ধরবা। আমি চেয়ারে উঠে উপরে লাগাবো তার পর ঝুলিয়ে দেবো
.
-ওকে
.
আদনানের ফুফু খালামণির পাশে এসে বললেন”ঐমেয়েটা কে আহনাফের সাথে?”
.
-ও আমার ছোট বোনের মেয়ে।এখানে থেকে পড়াশুনা করে তো তাই সাথে করে নিয়ে এসেছি
.
-কিসে পড়ে?বাসা কোথায়?
.
-খুলনায় থাকে।এবার অনার্সে ভর্তি হয়েছে
.
-ওহ!আমার ছেলেটা তো চাকরি পেয়েছে গতবছর
এখন ভালো দেখে সুন্দর একটা বউয়ের কমতি ওর জন্য তারপর আমার ঘরটা পরিপূর্ণ হয়ে যেতো
তা ওর বাবা কি এখন মেয়ে বিয়ে দেবেন নাকি আরও পড়াবেন?
.
খালামণি মুচকি হেসে বললেন”দিবার এখন বিয়ে করার ইচ্ছে নেই।পড়াশুনা শেষে বিয়ের কথা নিয়ে আমরা সবাই ভাববো”
.
-অনেক ফ্যামিলি তো বিয়ের পরেও পড়ায়।আমরাও নাহয় ছোট বউকে পড়াবো
.
-না সেটা না।দিবা এখনও ছোট।ওর ও তো ইচ্ছার একটা ব্যাপার আছে নাকি?
.
-দেখিয়েন আবার আপনার ছেলে ওর প্রেমে যেন না পড়ে বসে
.
-পড়লে পড়বে।মন্দ কিছু দেখছি না
আমার ছেলেকে যতদূর জানি ছেলে হিসেবে ও অনেক ভালো
দিবা ও ভালো।
এখন তারা যদি একজন আরেকজনকে পছন্দ করে বসে তাহলে আমার কাজ ওদের চারহাত এক করে দেওয়া।এটা তো ভালো কথা বললেন
নিন!সেই খুশিতে মিষ্টি খান
.
খালামণি আদনানের ফুফুর সাথে কথা শেষ করে উঠে চলে গেলেন বাসার দিকে।সেখানে ফুফু একা ডালা সাজাচ্ছেন
আহনাফ সবগুলো ওড়না সাজিয়ে নিচে নামলো সবে
দিবা বললো”এবার আমি যাই?”
.
আহনাফ চেয়ারটা সরাতে সরাতে বললো”কেন?আদনানের আবার কিসের প্রয়োজন হয়েছে?”
.
-কিছুর না।খালামণির কাছে যেতাম।তাদের ও তো কাজে হেল্প লাগতে পারে।মণি আপুর চাচাতো বোনেরা আপুকে নিয়ে রুমে ফেরত গেছে
.
-টিক আছে যাও আর তোমার ঐ আজাইরা বিড়ালটাকেও নিয়ে যাও।ছাদের ঐ কোণাতে রেলিং নেই।পড়ে গেলে ওর একটা পশম ও খুঁজে পাওয়া যাবে না
.
-ওটা বলতে হবে না
ও এমনিতেই আমার সাথে সাথে যাবে
.
দিবা চলে গেলো কথাটা বলেই।আহনাফ খেয়াল করলো মিনি কোথা থেকে ছুটে গেলো দিবার পিছু পিছু
.
-এই আহনাফ এদিকে আয়,ছবি তুলবো আমরা
.
-হুম আসছি
.
দিবা মণিতার কাছে গেছে কারণ খালামণি বললেন ওর জন্য কোনো কাজ নেই আপাতত
মণিতাকে নিয়ে ওর চাচাতো বোনেরা হাসাহাসি করছে।কারণ জন্টু কিছুক্ষন আগে ভয়েস পাঠিয়েছিলো ওকে
দিবা ওদের পাশে এসে বসতেউ ওরা এবার দিবাকে চেপে ধরে বললো আদনানের সাথে ওর কিছু আছে নাকি
এ কথা শুনে দিবা যেন আকাশ থেকে পড়েছে
চমকে উত্তরে সে বললো”আরে না।হঠাৎ এসব কেন বলছো?”
.
রাইসা চোখ মেরে বললো”তখন আদনান ভাইয়া দেখলাম একান্তে ছাদের কিণারায় তোমার সাথে কথা বলতে গেছে।তুমি আবার শরবত এনে দিলে”
.
-আরে ওসব কিছু না।উনি চাইলেন বলেই দিলাম আমি।
.
মণিতা দিবার হাত ধরে বললো”দিবা আমার ভাইয়ের বউ হলে বেশ হতো”
.
খালামণি চায়ের কাপের ট্রে নিয়ে এসে বললেন”হইছে আর না
আমার বোনের মেয়েকে তোমরা কতজনের বউ বানাবা শুনি?
একবার একজন এসে তার বাড়ির বউ করতে চায়”
.
-তো কি করবো বলো মামি।চেহারা খান তো মাশাল্লাহ পাইছে।তোমার ছেলেরা কেন যে এখনও চুপ আছে তাই বুঝলাম না
.
খালামনি ফিক করে হেসে দিয়ে বললেন”আমার ছোট ছেলের তো বুক করা আছে।বড়টার আবার পছন্দের লিস্ট অনেক বড়
সে পছন্দ করে কিনা তা তো জানি না”
.
-একদমই করে না খালামণি
আমাকে নাকি বলদের সাথে বিয়ে দিবেন উনি
.
সবাই হেসে দিয়ে বললো”হায় হায়! এত কাছে থেকেও কিনা প্রেমে পড়ছে না?”
.
-সবাই চুপচাপ চা খাও দেখি
যার বিয়া তার খবর নাই,পাড়াপড়শির ঘুম নাই।
ওরা দুজন দুজনকে দেখতে পারে না আর বাকি সবাই ওদের বিয়ে দিয়ে বাচ্চার নাম নিয়ে গল্প শুরু করেছে
.
আহনাফ কাজ সব শেষ করে ছাদের রেলিং ধরে দূর আকাশের চাঁদটা দেখছে।ভীষণ সুন্দর
একাকিত্ব ভাল্লাগে ঠিক এসময়টাতেই
চাঁদ দেখাকালীন একা থাকাটা অনেক প্রিয় তার।রাতের ঠাণ্ডা আবহাওয়া সাথে একটা রোমান্টিক গান যেটা আদনান চালু করে গেছে বাসার দিকে
আরিফ ফ্রি হয়েছে বলে আরিশাকে ফোন করেছে।সম্ভবত ভিডিও কল।ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে লাল -নীল ঝিলিক বাতি দেখাচ্ছে সে আরিশাকে
চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here