সবটা অন্যরকম♥
পর্ব_১১
Writer-Afnan Lara
.
আহনাফ বেশ ভালো মুডেই আছে,,জিসান আর পিয়াসের সাথে আজকের আড্ডাটা জমেছে,,তাছাড়া পরীক্ষা শেষ হলে সবারই মন এমনিতেই ভালো থাকে
.
এদিকে দিবা ঐ মেয়েটার জ্বালাতনে আপাতত ক্লাস রুমের বাহিরে এসে দাঁড়িয়েছে,,ম্যাম আসছেন না এদিকে এই মেয়েটার জ্বালায় এক দন্ড থাকাও যাচ্ছে না
দিবা এবার করিডোরে হাঁটাহাঁটি করছে,একবার এপার তো আরেকবার ওপার
আহনাফ ক্যানটিনে থেকে ওকে দেখলো এমন পায়চারী করতে,কারণ ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাসটা দোতলায়
কাল তো বই ছিলো না বলে ক্লাসে ঢোকাতে পারিনি ওকে তাহলে আজ বই থাকার পরেও ক্লাসের বাইরে কি করছে??এই মেয়েটার মাথায় মাঝে মাঝে কি চলে বুঝতে পারি না ঠিক
.
কিরে??তোকে তো কোনো মেয়ের দিকে এত সময় ধরে চেয়ে থাকতে দেখিনি,,কি হলো তোর?
.
আহনাফ চোখ সরিয়ে জিসানের দিকে তাকিয়ে বললো”খালাতো বোন তো,,কখন কি করে খবর রাখতে হয়,,তোরা আমার পিছনে পড়ে আছিস ক্যান বলতো??”
.
কি করবো?,,ফ্রেন্ডরা তাদের ফ্রেন্ডের গার্লফ্রেন্ড নিয়ে কত আলোচনা করে,,এখনকার আড্ডার মূল বিষয় থাকে ঐ গার্লফ্রেন্ড নিয়ে,কিন্তু আমাদের পোড়া কপাল,,তোর তো কোনো গার্লফ্রেন্ডই নাই, যাকে নিয়ে আমরা আলোচনা করবো
.
তোদের তো আছে,সেটা নিয়ে শুরু কর
.
কথা শেষ করতে না করতেই কাঁধে কেউ হাত রাখলো আহনাফের
আহনাফ সাইডে তাকিয়ে চোখ কপালে তুলে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়েছে
মিশকা মুচকি হাসি দিয়ে ওকেই দেখে যাচ্ছে
.
দেখেছো??এত এত ছেলের মাঝে তোমাকে আমি ঠিক খুঁজে বের করেছি
.
আহনাফ একটু সরে গিয়ে জিসান আর পিয়াসের দিকে তাকালো ভয় নিয়ে
.
জিসান আর পিয়াস ফিসফিস করে কি যেন আলোচনা করলো তারপর ভ্রু কুঁচকে বললো”তাহলে গার্লফ্রেন্ড জুটিয়ে ফেলেছিস??”
.
মিশকা লজ্জায় লাল হয়ে আহনাফের দিকে একটু এগিয়ে এসে দাঁড়ালো
.
আহনাফ কোথায় পালাবে তাই ভেবে পাচ্ছে না,,শেষে অনেক ভেবে চিন্তে মিশকার চোখে ধুলো দিয়ে গায়েব হয়ে গেলো ক্যামপাস থেকে
একেবারে ভার্সিটির পিছনের রোডটায় এসে লুকালো আহনাফ
.
যতদূর ভাবছি এই মেয়েটার কারণে তো আমার ভার্সিটিতে পড়াটাই মুশকিল হয়ে দাঁড়াবে
আমার খবর পেয়ে কিনা সে আমারই ভার্সিটি তে এসে গেলো
আবার আমাকেও খুঁজে বের করলো,এই মেয়ে তো আমাকে শান্তিতে কোথাও বসতেও দেবে না,কোনোমতে ভেগে চলে তো এসেছি,এখন আবার কলের উপর কল করপ যাচ্ছে,উফ কি ঝামেলা,নতুন সিম নিতে হবে সময় থাকতে
.
দিবা ঐ মেয়েটার নজর এড়িয়ে অন্য বেঞ্চে এসে বসে জানালা দিয়ে দূরের পানে মুখ করে ছিলো,হঠাৎ তার নজরে পড়লো আহনাফ
আহনাফ পেরেশান হয়ে এদিক ওদিক হাঁটছে
.
কি ব্যাপার,ক্লাসের সময় উনি এখানে কি করেন?
.
দিবা বেশ কিছুক্ষন নজর রাখলো,লাভ হলো না,আহনাফ শুধু হাঁটাহাঁটি করছিলো আর কিছুই না
শেষে চলে গেলো সে
দিবার মাথায় কিছুই ঢুকলো না,,
.
আহনাফ ভার্সিটির বাহিরে এসে একটা চায়ের দোকানে গাপটি মেরে বসে আছে,,জিসান আর পিয়াস ট্রিটের আশায় ওকে খুঁজে বের করেছে ঠিক এই চায়ের দোকানটার কাছে
.
ভাই অভিনন্দন,এবার খাওয়া,এতটা বছর পর তুই ভালোবাসার চক্করে পড়েছিস
এটা উপলক্ষে তোর তো গ্র্যান্ড পার্টি দেওয়া উচিত,যাক গে,পরের টা পরে
এখন আপাতত আমাদের ছোট খাটো একটা ট্রিট দিয়ে গলা ভেজা
যা গরম পড়েছে,ইস রে!!
.
জিসান ঠিক বলেছিস,আমি কিন্তু স্পরড খাব,সাথে দুইটা সিঙ্গারা
.
তোরা থামবি?টেনশনে আমার মাথার ঘাম পায়ের কাছে ঘেষে পড়ছে আর উনারা সেট মেনু বানাচ্ছেন
.
ক্যান?প্রেমে পড়লে মানুষ ধরাকেও সরা জ্ঞান করে আর তুই কিনা টেনসনে ঘাম ফেলছিস,কি হলো?
.
আমি মোটেও প্রেম করছি না,ঐ মেয়েটা আমার পিছনে পড়ে আছে,যাকে বলে চুইংগামের মতন
.
ক্যালো করেছে, প্রত্তেকবার তোর সাথে এমন কেন হয় বলতো??মেয়েরা খালি তোর প্রেমে পড়ে,কেন তুই পড়তে পারিস না?
.
ওসব বাদ দিয়ে আমাকে বাঁচা,,
.
আচ্ছা আমাদের উপর ছেড়ে দে,তুই নিশ্চিন্তে ক্লাসে যা
.
এখন যাওয়া ধরলেই সামনে এসে পড়বে
.
মাত্র দেখলাম ফোনে কথা বলতে বলতে ক্লাসের দিকে গেছে
.
তাহলে ঠিক আছে, আমি যাচ্ছি
.
আহনাফ নিশ্চিন্ত হয়ে তার ক্লাসে ফিরে গেছে,,এবার জিসান আর পিয়াস মিলে ভাবছে কি করে আহনাফকে এই টর্নেডো থেকে বাঁচাবে
.
জিসানের জিএফ কলি আসছে এদিকে,,চোখমুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে আজ আবার ব্রেক আপ করবে
কলির এই এক সমস্যা আর সেটা হলো জিসান কোনো মেয়ের দিকে এক নজর তাকালেই তার মনে হয় এই মেয়ের সাথে জিসানের বিয়ে সাদি হয়ে গেছে,কটা বাচ্চাও আছে
যাই হোক,, জিসান কলির এমন অগ্নি রুপ দেখে বুকে হাত দিয়ে পাশে তাকাতেই দেখলো পিয়াস গায়েব
কারণটা হলো পিয়াসের ভাল করে জানা আছে কলি জিসানের সাথে ওকেও ধোবে,তাই সুযোগ বুঝে সে আউট অফ ভার্সিটি
কলি সামনে এসে রাগী লুকে বললো”তুমি নাকি ফার্স্ট ইয়ারের একটা মেয়েকে দেখে ক্রাশ খাইছো?”
.
না কে বললো,এসব কথা কে বলে তোমায়?
.
আমি শুনছি!
.
জিসান ভাবনায় পড়লো,তারপর কি মনে করে ইয়া বড় হা করে লাফ দিয়ে উঠে বললো”ইউরেকা!!পেয়ে গেছি আহনাফকে বাঁচানোর চাবিকাঠি ”
.
মানেহহহ!আমি তোমায় কি বলছি আর তুমি কি বলছো?
.
বেবি আমি তোমায় পরে চাইনিজ ফুড খাওয়াই সবটা বুঝিয়ে দেবো,এখন আমার অত্যন্ত ইম্পরট্যান্ট একটা কাজ পড়ে গেছে,আই হ্যাভ টু গো
.
জিসান ও উধাও
.
কলি মাথায় হাত দিয়ে ঘষতে ঘষতে বললো”অত্যন্ত ইম্পরট্যান্ট আবার কি জিনিস,দুটোর অর্থই তো…. ”
.
এক্সকিউজ মি??আমি কি আপনাকে অত্যন্ত ইম্পরট্যান্ট কথাটার মানে বোঝাতে পারি?
.
কলি মাথা ঘষা অবস্থায় পিছনে ফিরে তাকালো
পড়া নিয়ে দিবার মাথা খাওয়া মেয়েটা এবার কলির সামনে
.
কলি একটু এগিয়ে এসে বললো”হ্যাঁ বুঝাও”
.
তাহলে শুনো,যেমন আমরা কিছু বাঙালী বলি “Suppose ধরো এটা সেটা”তো এখানে সাপোজ মানে মনে করো কিংবা ধরো,,তো সাপোজ বলে আবার ধরো বলা কিন্তু মেলে নাই,তাও কিছু বেকুব সেটা বলে,ঠিক তেমন তোমার বিএফ যেটা বললো সেই ব্যাকরণটা সমাস অনুযায়ী এই বেকুবের লিস্টে পড়ে আই থিংক,তোমার বিএফ একটু বেকুবের ঘরের থেকে ২ইঞ্চি বাহিরে,বুঝছো?আবার বেকুব না কিন্তু,বেকুবের থেকে একটু আলাদা,তবে বেকুবই বটে
.
কলির মাথা ঘুরছে,ধপ করে চায়ের দোকানের টুলে বসে সে বললো”এই মেয়ে কে?কোন গ্রহ থেকে এসেছে,আমার মাথা ঘুরছে ক্যান, ”
.
তোমার মাথা ক্যান ঘুরছে তার সংজ্ঞাও আমি এখন দিতে পারি তো শুনো..
.
চুপ!একদম।চুপ,তুমি নিশ্চয় পাগলা গারদ থেকে ছাড়া পাইছো?
কই আসে পাশে তো পাগলা গারদের ওয়ার্ড বয় দেখছি না
তারা তোমাকে নিশ্চয় খুঁজতেছে??
.
ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন!!! পাগলা গারদে অনলি পাগল থাকে,,আমার মতন উচ্চ শিক্ষিত ভবিষ্যত লেকচারার রা অনলি ভার্সিটিতে থাকে
♣
আহনাফ মুখে হাত দিয়ে মুখটা লুকাতে লুকাতে এদিক ওদিক খেয়াল করে নিজের ক্লাস রুমের দিকে ছুটছে
ছুটতে গিয়ে ধাক্কা খেয়ে গেলো আহনাফ,,টের পেলো ওর কুনুইকে চেপে ধরেছে সামনের মানুষটি
আহনাফ ধরেই নিয়েছে এটা মিশকা,,ভয় দূর করে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে এক ধমক দিয়ে দেখলো দিবা কাঁদো কাঁদো মুখ নিয়ে তাকিয়ে আছে
.
তুমি??
.
তো কে??এরকম করলেন কেন?আপনি ধাক্কা খেয়ে পড়ে যাচ্ছিলেন বলেই তো আমি ধরে ফেললাম,এভাবে ছুঁড়ে মারলেন কেন?
.
আহনাফ মুখটা ছোট করে বললো”সরি,আমি ভাবলাম….”
.
আমাকে দেখলেই আপনার যত রাগ ঝাড়ার সময় হয়,,আপনাকে না ধরাই উচিত চিলো,দুম করে দোতলা থেকে গড়াইয়া নিচে পড়তেন,তখন পাগলার মতন বসে বসে বালু কাদায় একসাথ হয়ে নিজেই নিজেকে ধমক দিতেন
.
আহনাফ দিবার হাত টেনে ধরে বললো”কি সমস্যা কি তোমার?সামান্য একটা ধমক নিয়ে এত সিনক্রিয়েট করার কি আছে?”
.
সামান্য হাত ধরাতে আপনার ধমক দেওয়ার কি হলো সেটা বুঝান তাহলে আমি আমার উত্তরটা দেবো
.
তোমাকে বাসায় গিয়ে বুঝাবো,এখন বাই
.
আহনাফ চলে গেছে,আর দিবা ভাবছে আহনাফ চোরের মতন এভাবে পালিয়ে আসছিলো কেন তার উপর হাত ধরায় কি রেগে গেলো বাপরে
দিবা ভাবতে গিয়ে আবারও ধাক্কা খেলো সেইরকম ভাবে
এবার আহনাফ নয় এবার সয়ং স্যার নিজেই
দিবা মুখে হাত দিয়ে পিছিয়ে গিয়ে বললো”সরি স্যার”
.
ওপারে যিনি দাঁড়িয়ে আছেন তিনি হলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের লেকচারার,,পরনে জাম কালারের শার্ট,চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা,,মুখে এলোপাথাড়ি দাঁড়ি,,কিছু কিছু মানুষের দাঁড়ি দেখে বোঝা যায় আসলে তারা কতটা বিজি থাকে
কারণ সময় পেলেই মানুষ দাঁড়ি ঠিক রাখে,কিন্তু এই স্যার একি হাল করে রেখেছে
বয়স্ক স্যার,তবে বেশি বুড়াও নাহ,ফিটফাট
দিবার সরি শুনে উনি মুচকি হেসে বললেন”ইটস ওকে,,ভার্সিটিতে এরকম ধাক্কা দিনে দশবার হয়েই থাকে,তবে সেটা ইয়াং জেনারেশনের সাথে খাটে,আমার মতন বয়স্ক স্যারদের সাথে একদমই মানায় না”
.
দিবা মাথা চুলকিয়ে কেটে পড়েছে জায়গাটা থেকে,,স্যার অনেক রসিক তা বোঝা যাচ্ছে,তবে চেহারাটা বেশ,,মুখে হাসি রেখে সম্পূর্ন কথাটা বললেন,,একবারের জন্যও মুখ থেকে হাসি সরাননি,এই টাইপের মানুষরা অনেক ভালো হয়
দিবা তাই পিছন ফিরে তাকালো আবার,স্যার ততক্ষণে চলে গেছেন
তার এখন ক্লাস নেওয়ার সময়
ঘুরেফিরে দিবা যখন ক্লাসের কাছাকাছি আসলো দেখলো সেই স্যার বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছেন
.
আসবো স্যার?
.
আরে আসো আসো,এখনও পড়া শুরু করিনি
.
দিবা অন্য যে জায়গায় ব্যাগ রেখেছিলো এসে দেখলো সেই মহাজ্ঞানী প্রশ্নের ভান্ডার মেয়েটা ওর ব্যাগ আবারও আগের সিটে এনে রেখেছে এবং দাঁত কেলিয়ে রেখেছে
.
দিবা উপায় না পেয়ে মেয়েটার পাশেই বসলো চুপচাপ
.
স্যার হাতের বইটা টেবিলের উপর রেখে দিয়ে বললেন”আজ তোমাদের সাথে আমার প্রথম ক্লাস,,আগে পরিচয়টা দিয়ে নিই তারপর নাহয় রাষ্ট্রের সাথে তোমাদের পরিচয় করাবো,,
আমি অন্তিক সাদাত,স্পেশালি রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়াই,,,আমাকে তোমরা অন্তিক স্যার কিংবা সাদাত স্যার ডাকতে পারো,, কোনো সমস্যা নাই”
.
সাদাত নামটা শুনে দিবা থমকে গেছে,,চোখের কোণায় থাকা পানি তাকে জিজ্ঞেস করছে তার বাবা কি এই স্যারের মতনই দেখতে?তার বাবাও কি এরকম চাকরি করে??এরকম হাসি খুশি কথা বলে?এখনও কি বেঁচে আছে?
প্রশ্নের আহাজারি তে দিবা হাত উঠিয়ে সেই চোখের পানি মুছে নিলো,এখন এসব টেনে এনে কষ্ট পাবার সময় না,,এরপরে আরও সময় পাবো
.
সাদাত স্যার এবার বই হাতে নিলেন,,তার পড়ানোতে মুগ্ধ হয়ে গেলো ক্লাসের সবাই,দিবা সবচাইতে বেশি এক্সাইটেড কারণ সাদাত স্যার হেসে খেলে বুঝাচ্ছেন,,এরকম করে বুঝালে পড়াটা সহজেই মাথায় ঢোকে
.
বেশি পড়ানোর সময় পেলেন না স্যার,,প্রিন্সিপালের আদেশে ছুটি হয়ে গেলো,,সাদাত স্যার বই রেখে চলে গেলেন,,,দিবা এক দৃষ্টিতে স্যারের চলে যাওয়া দেখছে
পাশের মেয়েটা একটা খোঁচা দিয়ে বললো”তোমার বাপের বয়সী,এমন করে কি দেখো?দুনিয়ায় ছেলের অভাব পড়ছে??আমাদের মিজান স্যারকে দেখতে পারো,উনি এ মাসে বিয়ের জন্য মেয়ে দেখবেন, আমি খবর পেয়েছি,,তার বাসার বুয়া আমাদের বাসায় ও কাজ করে সেই সূত্রে জেনেছি,,”
.
দিবা মুখ বাঁকিয়ে বললো”স্যারদের প্রেমে পড়লেই কি মুগ্ধতা আসে??তাদের পড়ানোয় আপ্লুত হয়ে কি মুগ্ধতা আসে না?”
.
মেয়েটা গালে হাত দিয়ে বললো”তা ঠিক”
চলবে♥