#সন্ধি_হৃদয়ে_হৃদয়ে
#লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা
#পর্ব___৩৭
সেই ছোট্ট বেলা থেকেই শ্রেয়া এক নীরব কন্যা। নিশ্চুপ,চাপা স্বভাবের অধিকারীণি। মূলত বাবার প্রতি ভীতি টাই ওকে এমন করে তুলেছে। বিশেষ করে শৈশব কালে যখন খেলার সঙ্গীদের কাছ থেকে অবহেলিত হয়ে ফিরে আসত ওর ভিতরটা ঠান্ডা, শীতল হয়ে যেত। সেটা প্রস্ফুটিত হতো বাহ্যিক অংশেও। বাবার গর্জন শুনলে ও মাঝে মাঝে মা’য়ের পেটে মুখ গুঁজে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকত। একটা শব্দও উচ্চারণ করতো না,শুধুই ভিজিয়ে দিত মায়ের আটপৌরে সুতি কাপড়টা। বিষাদে,অবহেলায়, হারানোর বেদনায়, তিক্ত মুহুর্ত, স্মৃতিতে ওর মন ধীরে ধীরে আরও ঠান্ডা হয়ে যায়। কখনও মায়ের মৃ-ত্যুর পর আপনজনের ছোঁয়া পায় নি সে। খোলামেলা,প্রাণবন্ত হয়ে মেশা হয় নি কারো সঙ্গে।
মা ব্যতীত অন্য কোনো আপন মানুষের স্পর্শ কেমন হয় সেটা আগে জানত না শ্রেয়া। কপাল গুণে রক্তের নাহলেও আপন হতে পেরেছে প্রিয়ুর। তবুও জড়তার রেশ রয়ে যায় অল্পস্বল্প, ঈষৎ। এখন অনেক আপনজন ওর। বাবা,আম্মা, দেবর,বেস্ট ফ্রেন্ড,ননদ,দাদি, রহিমা খালা সবাই আছেন৷ প্রাণের চেয়েও প্রিয় হয়ে ওঠেছে একটা মানুষ,যে সম্পর্কে ওর স্বামী। এত এত আপনজনের ভিড়ে ওর নিজেকে আর অসহায়, এতিম মনে হয় না। যারা যারা ওকে অপছন্দ করে,একদিন ওদের মনে ওর জন্য একটা সুন্দর জায়গা তৈরি হবে এটা ওর দৃঢ় বিশ্বাস।
‘ আমার বউ আমার সাথে এত মিষ্টি করে কথা বলে না কেন?মাঝে মাঝে বললেই পারে আপনি আমার স্বামী। দূরে দূরে কেন থাকেন?আদর করতে পারেন না?’
পিছন থেকে ফিচেল,রসাত্মক কন্ঠস্বর তীক্ষ্ণ ভাবে বিঁধে শ্রেয়ার শ্রবণনালিতে। হাতের মোবাইল টা রেখে তড়িঘড়ি করে, ব্যতিব্যস্ত হয়ে ঘুরে দাঁড়ালো ও। তৎক্ষনাৎ চক্ষু ক্যানভাসে আঁকে সুন্দর একটা দৃশ্য। তূর্যর হাতে বকুল ফুলের মালা। এটা কই থেকে আসলো?কি মন মাতানো সুঘ্রাণ!বড্ড মাতোয়ারা হয়ে ওঠেছে নিস্তব্ধ কক্ষ টা। এই ঘ্রাণ টার সঙ্গে আধা ঘন্টা পূর্বেই তো ওর আর প্রিয়ুর সাক্ষাৎ হয়েছিল। ওরা যেই জায়গায় দাঁড়িয়ে গ্রোগাসে ভর্তা খেয়ে যাচ্ছিল সেখানেই অবস্থান বকুল ফুলের গাছ টা। কত অবলীলায় মধুর সৌরভ বিলিয়ে দিচ্ছিল সবাইকে। ও ভেবেই নিয়েছে চাচার ভর্তা বেশি বিক্রি হয় এই গাছের কারণেই। সুবাস লুফে নিতেই হয়ত মানুষ ভর্তার অজুহাতে মিনিটের পর মিনিট দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু তূর্যর হাতে বকুল ফুলের মালা এলো কোত্থেকে? লজ্জায় প্রশ্ন করতে পারছে না সে। কিসব বললো সামনে দাঁড়ানো ব্যক্তি। ওর কিছু বলার অপেক্ষাও করলো না তূর্য। কোমল হাত টা টেনে নিজের কাছে নিল। বকুল ফুলের মালা টা কব্জিতে জড়িয়ে দিতে মগ্ন হয়ে পড়লো। খুব যত্নের সাথে পড়িয়ে দিচ্ছে।
শ্রেয়া ফ্যালফ্যাল নয়নে চেয়ে রইল। ছোট্ট করে প্রশ্ন করে ব্যাঘাত ঘটালো তূর্যর কাজে।
‘ এটা কখন আনলেন?’
তূর্য বেজায় বিরক্ত হলো। গম্ভীর কন্ঠে বললো,
‘ প্রশ্ন টা পরে করা যেত না?’
শ্রেয়া ভাবভঙ্গি আঁচ করে ধীমে স্বরে প্রতুত্তর করলো,
‘ এখনই জানতে ইচ্ছে হলো তাই। আপনি কি বিরক্ত হয়েছেন?’
‘ খুব। তোমাকে মা’রতে মন চাইছে। আমার রোমান্সের শ’ত্রু তুমি। কত যত্ন করে পড়াচ্ছিলাম,এখন বিঘ্ন ঘটিয়ে যত্নে ত্রুটি রেখে দিলে। ‘
অধরে হাসি ফুটে উঠলো শ্রেয়ার। ছোট ছোট বিষয়ে কত যত্ন মানুষ টার। ভিতরে প্রচন্ড ভালো লাগার পবন বইছে। একটা সময় ছিল চাইলেও কিছু পেত না,আর এখন না চাইতেই কত কিছু,কত সুখ পেয়ে যাচ্ছে। তূর্য মালাটা পড়িয়ে মাথা তুলে সোজা হয়ে দাঁড়ালো।
যেন অসাধ্য কাজ সাধন করেছে সে। ঠোঁটে প্রফুল্ল হাসি। নিঃশব্দ তা। হাত টা এখনও ধরে রেখেছে। বললো,
‘ এটা আসার সময় এনেছি। ‘
শ্রেয়া থ হয়ে গেল। অনতিবিলম্বে জিজ্ঞেস করলো,
‘ কই আমি দেখি নি যে?’
‘ তোমার সব কেন দেখতে হবে?আমাকে দেখো। কাজল চোখে আমাকে দেখে চোখ দুটোকে ধন্য করো। ‘
দেখি তো আপনাকে। লুকিয়ে অনেক দেখি। আমার দেখা সুদর্শন পুরুষ আপনি।– কথাগুলো কন্ঠনালি মাধ্যমে বাহিরে এলো না। মনে পিঞ্জিরাবদ্ধ হয়ে থেকে গেল। তূর্য হাত টা ছেড়ে দিতে নিয়ে আবারও আঁকড়ে ধরলো। দুই ওষ্ঠের সন্নিকটে নিয়ে আসে বকুলে সজ্জিত হাত খানা। শ্রেয়ার অন্তঃস্থল থেকে থেকে তিরতির করে কাঁপছে। তূর্য নরম ত্বকে ঠোঁট ডুবিয়ে দিল। চোখের পলকে শিরশির করে উঠলো শ্রেয়ার সমস্ত অঙ্গ। সর্বাঙ্গে নিদারুণ কম্পন, আন্দোলন। দেহের তাপমাত্রা উষ্ণ।
তূর্য বকুল ফুলের ঘ্রাণ নাসারন্ধ্রে টেনে নিয়ে ভ্রুঁ উঁচিয়ে বলে উঠলো,
‘ জ্বর আসছে নাকি?দেহের তাপ বেড়ে গেল হঠাৎ?’
শ্রেয়ার সমস্ত বদন রক্তাভ। লালের প্রলাপ পড়েছে। মিহি কন্ঠে উচ্চারণ করে- ‘ তেমন কিছু না। ‘
কিঞ্চিৎ তফাত বোধহয় আর সইতে পারলো না তূর্য। শ্রেয়ার হাত টা নিজের বুকের বা পাশে রাখে। কোমর জড়িয়ে দেহ টা আঁকড়ে ধরে বুকের ভেতর। শ্রেয়া থমকে গেল। স্তব্ধ হয়ে পড়লো। অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়লো হৃদস্পন্দন। তূর্যের বুকে অবস্থিত হাত টা বারংবার নড়চড় হচ্ছে। কাঁপছে।
তূর্য হালকা ঝুঁকে আসলো। খোঁচা খোঁচা দাঁড়ির স্পর্শ মাখলো শ্রেয়ার মসৃণ, কোমল গালে। সঙ্গে সঙ্গে শ্রেয়ার হাত টা তূর্যর গেঞ্জি খামচে ধরে। তূর্য মৃদু হাসলো। কোমরের বাঁধন কঠিন হতে কঠিনতর করে মিশিয়ে নিল চিকন দেহখানি। বললো,
‘ আমার সামান্য চুমুতে তোমার দেহের এত উত্তাপ। আগে জানতাম চুমুতে জ্বর ভালো হয়,আজ জানলাম চুমুতে জ্বর হয়। এটা অবশ্য নিব্বা নিব্বিদের জানা উচিত। নয়ত আজীবন ভাববে চুমুতেই বুঝি জ্বরের ওষুধ। ‘
শ্রেয়া ঠোঁট টিপে হাসে। তবে সেটা অগোচরে। তূর্য ওকে আঁকড়ে ধরে রেখেই কর্ণ পাতায় ঠোঁট ছুঁইয়ে বললো,
‘ আমার পছন্দ টা পাল্টে গেল। তোমার পছন্দগুলো আমার চাওয়া হয়ে উঠলো। তোমাকে স্ট্রং করতে যেয়ে আমি দুর্বল হয়ে পড়লাম তোমার প্রতি। কিভাবে হলো এসব শ্রেয়সী?’
অন্তঃপুরে ঝড়ের শুরু। সেই ঝড়ের প্রচন্ড বেগ। সবকিছু নাড়িয়ে তুলছে। শ্রেয়ার দু ঠোঁট নড়ে উঠলো ,
‘ আমি,,।’
একটা বাক্যের শুরু হয়েছিল সবে। পুরোটা বলার আগেই তূর্য শান্ত,নরম কন্ঠে পুনর্বার বলে,
‘ আমি তোমাকে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরি?’
নিরুত্তর, হতবাক শ্রেয়া। ওর শরীর বলিষ্ঠ বাহুবন্ধনে আবদ্ধ। আর কতটুকু শক্তি প্রয়োগ করলে একদম ঢুকে যাবে ও তূর্যর বুকে?বুকের কাছ থেকে হাত সরিয়ে দু হাত আস্তেধীরে,মনে মনে দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়ে ও তূর্যর পিঠে রাখলো। এতেই যেন সম্মতি লুকিয়ে আছে। নিমেষে আলিঙ্গন অত্যধিক গাঢ় হয়। সাহস সঞ্চয় করে একটা প্রশ্ন করলো শ্রেয়া,
‘ আমাকে স্ট্রং দেখার জন্যই সেদিন ফুলশয্যার রাতে ভালোবাসেন না বলেছেন তাই না?’
‘ এখনও কি বলেছি ভালোবাসি?’
তূর্যর নিরলস জবাব শুনে শ্রেয়া প্রতিবাদী কন্ঠে বললো,
‘ আমি বুঝে নিয়েছি। আমার হৃদয় থমকেছে। সেদিন রাস্তায় বলা কথাগুলোর মানে বুঝতে আজ আর ভাবতে হয় না আমার। ‘
তূর্য মুখ সরিয়ে এনে শ্রেয়ার মুখের দিকে তাকালো। ততক্ষণে মাথা নুইয়ে ফেলেছে শ্রেয়া। নিজের কথায় নিজেই আহাম্মক বনে গেল ও। তুখোড়,অনিমেষ নেত্রের চাহনি ও সহ্য করতে পারবে না। আই কন্টাক্ট সম্ভব নয় ওর পক্ষে। এই চাহনিতে ও হাজার বার লজ্জাবতী হবে। তবুও পারবে না চোখে চোখ রাখতে। মুহুর্তেই তূর্য তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,
‘ অবশেষে বুঝলে। নয়ত ভেবেছিলাম বউ আমার সারাজীবন গাধী থাকবে। স্ট্রং না বানাতে পারি,গাধী শব্দটার ইতি তো টানতে পারবো। ‘
আনমনে কপাল কুঁচকে এলো শ্রেয়ার। প্রশ্ন করলো,
‘ স্ট্রং?’
তূর্য চিকন দেহ খানি বন্ধন মুক্ত করে দেয়। শ্রেয়ার হাত টা ধরে শোবার ঘরের সাথে লাগোয়া বারান্দায় নিয়ে আসলো। ওকে একটা টুলে বসিয়ে দিল সে। নিজে বসলো ওর সামনে হাঁটু গেড়ে। বললো,
‘ কোনো একদিন চৌধুরী বাড়ির বারান্দায় বসে বলেছিলাম আমি তোমাকে চাই না। সত্যিই সেদিন আমি কোনো দুর্বল শ্রেয়সী চাই নি। বউ হিসেবে তোমাকে আমার জীবনে ফিরিয়ে আনলেও,তুমি এসেছিলে আমার হৃদয়হরণকারী হয়ে। তোমার ছোট বেলার ছবি দেখেই প্রথম এক অসহনীয় অনুভূতি জাগে আমার মাঝে। অনুভূতির প্রখরত্ব এতটাই বেশি আমি সেদিনের পর তোমাকে চেয়েও ঘৃ-ণা করতে পারি নি। শুধু মনে হয়েছিল আমার তোমাকে চাই, জীবনে রেখে দেই তোমাকে। আর যেদিন জানলাম তুমিই আমার বউ তখন শুধু মাথায় আসে এত নরম চরিত্রের মেয়েটা কেন আমার হলো?ও যখন অন্যের কথায়,আচরণে কষ্ট পাবে আমি কিভাবে সহ্য করবো?অন্যকে জবাব দেওয়া শিখাতে হবে ওকে। জীবনটাকে আরো কঠিন পরিস্থিতিতে নিয়ে যেতে হবে যেন ও উপলব্ধি করে স্ট্রং হওয়া ছাড়া জীবনে টিকে থাকা দুর্বিষহ হয়ে যায়। যেমন আমার মা ওর ফিরে আসার পরও সরলতার সুযোগ নিয়ে, অসহায় ভেবে তাড়িয়ে দিল ওকে। তাহলে জীবনে ও সবসময় এভাবেই নিজেকে গুটিয়ে নিবে?অনেক চিন্তায় পড়ে যাই। ‘
তূর্য থেমে যাওয়াতে অশান্ত হয়ে পড়ে শ্রেয়া। লম্বা,লম্বা আঙুলের ফাঁকে নিজের ছোট ছোট আঙুল গলিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল,
‘ থামলেন কেন?’
‘ তুমি দুর্বলচিত্তের মেয়ে শ্রেয়সী। নিজের অধিকার ছি’নিয়ে নিতে জানো না তুমি। নয়ত কেমন করে পারতা অহমিকা ও আমার বিয়ে সহ্য করতে?একটা বার কাউকে বলেছো?বলো নি। প্রথম যেদিন জানলে আমিই তোমার স্বামী প্রিয়ুদের বাড়ি থেকে পালিয়ে চলে আসলে চট্টগ্রাম। তারপর আমার আর অহমিকার বিয়েটা মেনেই নিচ্ছিলে। এটা কি তুমি ড্রামা পেয়েছিলে?এটা তোমার বাস্তব জীবন শ্রেয়সী। ল’ড়াই করে বাঁচতে হয় এখানে। তাহলে তুমি তা না করে সবকিছু থেকে গুটিয়ে কেন নিচ্ছিলে নিজেকে?এমনকি তোমার ভিতরের প্রতিবাদী রূপ টা জাগানোর জন্য আমি নিজেকে ক্ষ’ত বিক্ষ’ত করেছি। সেই রাতে তুমি কষ্ট পেয়েছো কতটুকু? তার থেকে বেশি আমি পেয়েছি। কারণ তোমার দুঃখগুলো আমারই। বিনিময়ে শুধু একটু স্ট্রং শ্রেয়সী চেয়েছিলাম। যে আমি না থাকলেও কখনও ভেঙে পড়বে না। ওই রাতে এতকিছু বলার একটাই মানে ছিল তুমি আমাকে যোগ্য জবাব দিবে। তোমার মা’য়ের উদাহরণ দিয়েছিলাম কারণ তুমি যেন ওনার মতোই মনের দিক থেকে শক্ত থাকতে পারো। আড়ালে ভালোবাসার যন্ত্রণা টা খুবই ভয়ং’কর। তাও সহ্য করেছি কেবল বলবে বলে আমাকে বউয়ের অধিকার দিন। কিন্তু তুমি নিজের অবলা রূপটা তেই সীমাবদ্ধ থাকলে। তুমিই জিতে গেলে৷ হে’রে গেলাম আমি। যদি পারতাম তবে নিউজপেপারে ছাপাতাম বউকে স্ট্রং করতে গিয়ে স্বামী নিজেই দুর্বল হয়ে গেল। একেই বলে সঙ্গ দো’ষে স্বভাব নষ্ট। ‘
শ্রেয়া স্তব্ধ, নির্বাক। তূর্য এত ভেবেছে ওর জন্য? আসলেই কেন পারে না ও নিজের অধিকার নিতে?এভাবে কি জীবন চলে?তূর্য যদি স্টেপ না নিত তাহলে আজ সে না, অহমিকাই তার জীবনে অর্ধাঙ্গিনী হয়ে থাকত। তূর্যর এত এত হেয়ালিপনাতে ভালোবাসা ছিল,ফুলশয্যার রাতে বলা একেকটা বাক্যতে ছিল ওকে স্ট্রং দেখার চাওয়া,প্রবণতা। তাহলে ইঁদুরের কামড়?শ্রেয়ার মন বললো,সেটা একটা চরম মিথ্যে ছিল লেকচারার সাহেবই দিয়েছিলেন। লজ্জায় তূর্যর বুকে ঢলে পড়লো ও। তূর্য পড়তে গিয়েও নিজেকে সামলে নিল। শ্রেয়া চুপটি করে বুকে মুখ গুঁজে রাখে। একমাত্র ওর ভিতরকার সত্তা জানে এ বুকে মুখ লুকাতে কতটা লজ্জা বিসর্জন দিয়েছে ও,এতে যদি ভালোবাসার মানুষ টা অল্পপরিমাণ শান্তি পায়।
তূর্যর অধর কোণে সুপ্ত হাসি। কন্ঠে ফিচলেমি,
‘ এখন কেন অধিকার খাটাচ্ছো?’
শ্রেয়ার নিঃসংকোচ উত্তর অত্যন্ত মৃদুস্বরে- ‘ কারণ স্যার আমাকে অধিকার খাটানো শিখিয়েছেন। ‘
তূর্যর গলায় রাগের আভাস। কিছুটা রেগেমেগেই আওড়ায়,
‘ ছাত্রীকে বুকে নেই না আমি। বউকে নেই। সরো আমার বুক থেকে।’
শ্রেয়া সরলো না,নড়লো না সামান্য পরিমাণ। চন্দ্র রোশনাই বিলীন করছে। অমানিশায় ডুবে থাকা বারান্দায় আসছে একটু আধটু আলো। কানে আসছে তূর্যর শা’সন মিশ্রিত কন্ঠস্বর,
‘ স্যার ডাকবে না আর। ‘
আয়ুশ ও প্রিয়ু বারান্দায় এসেছিল রাতের বাতাস উপভোগ করতে। কিন্তু চাঁদের আলোতে তূর্য শ্রেয়াকে দেখে ঝটপট রুমে ফিরে আসলো। প্রিয়ু অবশ্য উঁকি ঝুঁকি দিয়ে নিজেদের বারান্দা থেকে চুপি চুপি দেখতে চেয়েছিল কিন্তু আয়ুশের জন্য সকল চেষ্টা বিফলে। যতবার দরজার কাছে গিয়েছে আয়ুশ টেনে হিঁচড়ে ফিরিয়ে এনেছে। এখন এক আকাশ সমান আফসোস হচ্ছে প্রিয়ুর, মানুষ নাকি বারান্দা থেকে কত কপোত-কপোতীর রোমান্স দেখে অথচ ও আয়ুশের জন্য দেখতে পারলো না। লোকটা নিজে নিরামিষ, ওকেও বানাচ্ছে এমন। ক্ষেপে গিয়ে আয়ুশের বুকেই গুটিসুটি মে’রে রইল। মনে মনে বেশ তৃপ্তি পাচ্ছে ও। এটাও জানে,আয়ুশও পাচ্ছে। ভালোবাসা শেষ হলেও কখনও কখনও সম্মান রয়ে যায় এবং সেই সম্মান থেকে সৃষ্ট হয় মানুষ টার ভালো চাওয়া।
#সন্ধি_হৃদয়ে_হৃদয়ে
#লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা
#পর্ব___৩৮
রাত্রির মধ্যভাগে শহরতলী তে নিঝুম নেমে এসেছে। হাওয়াও বয়ে চলেছে শব্দহীন। দিনের সবটা সময় ক্লান্তিতে কাটিয়ে সহস্র পরিশ্রমী মানুষ প্রিয়র তালিকায় যোগ করেছে এই নিসাড়া নিশীথিনী কে। চোখের পাতায় আঁধার নেমে এলে কায়ার অবসাদের পরিসমাপ্তি হয়ত ঘটে। শ্রেয়া তূর্যর বুক থেকে সরে আসার জন্য নড়চড় শুরু করলো। বক্ষস্থল হতে কোমল দেহ আলগা হচ্ছে ধীরে ধীরে তা মস্তিষ্ক ধারণ করতেই তূর্য পিঠের উপর চাপ ঈষৎ কঠিন করে। শ্রেয়ার কেশগুচ্ছের মধ্যবর্তী স্থানে ওষ্ঠাধর ডুবিয়ে রাখে কিয়ৎপরিমাণ সময়। হয়ত সেকেন্ড পেরিয়ে মিনিটের কোঠায় আঁটকে যায় সময়টা। দুই অধর কিঞ্চিৎ ফাঁক হয় তূর্যর। শ্রেয়ার মুখশ্রী তুলে চিবুকে আঙ্গুল রাখে। নেত্রে ভাসে রক্তাভ চেহারা,নিমীলিত আঁখিপল্লব। চিবুক হতে মন্থর গতিতে বৃদ্ধাঙ্গুল ছুঁই ছুঁই করে স্পর্শ করে ফেলে চিকন,সরু গোলাপি ঠোঁট।
শ্রেয়া সামলে ওঠতে পারে না। কি ভয়ংকর অনুভূতি! কতটা গভীর স্পর্শ খানি। আস্তে আস্তে বেড়ে যায় অধর যুগলের কম্পন৷ তূর্য হাসে, আওয়াজ বিহীন প্রাণবন্ত হাসি। দুর্বল চিত্তের মেয়েটা কেমন অশান্ত হয়ে পড়ছে। তার এতটুকুন গাঢ় ছোঁয়া সইতে হিমশিম খাচ্ছে, লজ্জা পাচ্ছে। কাঁপুনির মাত্রা দীর্ঘ না করে আঙুল সরিয়ে আনে ঝটপট। তৎপরে প্রশ্ন করলো,
‘ কি হয়েছে? সরে যাচ্ছো কেন?’
শ্রেয়া চোখ উঁচিয়ে দৃষ্টি মেললো। চাহনিতে মাদকতা ও একরাশ লজ্জার সংমিশ্রণ। দ্বিধান্বিত কন্ঠে বললো,
‘ কখন থেকে এভাবে বসে আছেন। আপনার পা ব্যাথা করছে হয়ত। চলুন রুমে যাই। ‘
‘ পা ব্যাথা করছে না তবে একটা কথা মনে পড়ে গেল। ‘
‘ কি কথা?’
‘ পরশু যে পরীক্ষা এটা মাথায় আছে?অনেকক্ষণ তো বুকে ঘাপটি মে’রে ছিলে এখন মুখ ধুয়ে একটু পড়তে বসো। ‘
‘ আমি আগেই পড়া শেষ করে রেখেছি। পরীক্ষার আগের রাতে একটু দেখলেই হবে। ‘
‘ তাহলে আরকি। তোমার জামাইয়ের বুক তোমার জন্য ফ্রি। ‘
শ্রেয়া ছাত্রী হিসেবে বেশ মেধাবী। ডিপার্টমেন্টের কোন স্টুডেন্ট টা কেমন শিক্ষক হওয়ার সুবাদে অজানা নয় তূর্যর। শ্রেয়া মিহি স্বরে বলে,
‘ রুমেই যাবো। ‘
সাথে সাথেই তূর্য শ্রবণগ্রন্থির নিকটস্থে বলে ওঠে,
‘ রুমে যাওয়ার এত উতলা? ব্যাপার কি?’
সমগ্র অঙ্গ শিরশির করে উঠলো ওর। ফের প্রয়াস চালালো তূর্যর বাঁধন মুক্ত হওয়ার। ও সত্যিই ভেবেছিল এতক্ষণ এভাবে বসে থেকে বোধ হয় পা ব্যথা হয়ে গিয়েছে তূর্যর। অথচ লোক টা ওকে নিমজ্জিত করছে লজ্জায়। এই ত্যাড়া বাঁকা কথাগুলোই তো ভালো লাগে ওর৷
মানুষ মানুষের সৌন্দর্যের,কথার,ব্যাক্তিত্বের,অঙ্গভঙ্গির,চালচলন কতকিছুর প্রেমে পড়ে। শ্রেয়া না দেখেই প্রেমে পড়ে যায়। আর দেখার পর তূর্যর কথাগুলোও ওর অনুভূতিদের আরও গাঢ় করেছে।
সুপুষ্ট দু হাত সরিয়ে আনলো তূর্য। ছেড়ে দিল দেহ খানা। শ্রেয়া চট করে ওঠে দাঁড়ায়। শাড়ির অবস্থা প্রচন্ড এলোমেলো, অগোছালো। ব্যস্ত হাতে ঠিক করার চেষ্টা করছে সে। তূর্য কতক্ষণ চেয়ে থেকে নিচের ঠোঁটে উপরের ঠোঁট চেপে ধরে। হাত বাড়িয়ে প্রথমে বিধস্ত কুঁচি গুলো ঠিক করে। প্রশ্ন করে গম্ভীর কন্ঠে,
‘ শাড়ি পড়েই ঘুমাবে?’
শ্রেয়া অস্পষ্ট রশ্মিতে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝায়। তূর্যও আর কথা বাড়ালো না। ওর হাত টা ধরে এতক্ষণ ধরে নির্জন থাকা কক্ষে আসে।
দু’জনের দেহ এলিয়ে পড়ে বিছানার দু প্রান্তে। মাঝে অনেকখানি ব্যবধান। শ্রেয়ার পা’য়ের তলা জ্বলছে। ভিতরটা উসখুস করছে। এই তো কাছে এলো দু’জন তবে দু’টো দেহ কেন অদূরে? যখনই কোনো বিষয়ে অস্থিরতা কাজ করে এ হাল হয় ওর। ক্রমাগত জ্বলতে থাকে পায়ের তলা। আস্তেধীরে ও হাত রাখে নিজেদের মাঝের খালি জায়গাটা তে। নিমিষেই ওর হাত টা কারো করপুটে বাঁধা পড়ে যায়। কিছু বুঝে উঠার আগেই সমস্ত তফাত গুচিয়ে তূর্য বকুলে সজ্জিত হাত টাও পাঁচ আঙুলে বেঁধে নেয়। হাতের এলোমেলো বিচরণে নরম বকুল ঝরে পড়ে সুতো ছিঁড়ে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে মেঝেতে। আবছা আলোতে মিলেমিশে একাকার হতে থাকে উত্তপ্ত নিঃশ্বাস।
শ্রেয়ার গলা শুষ্ক হয়ে ওঠেছে। বুক ধরফর করছে। হৃদযন্ত্রণের গতি অত্যন্ত বেসামাল। ভয়া’বহ রূপ ধারণ করেছে যেন একেকটা স্পন্দন। কিঞ্চিৎ দূরত্ব রাখে নি তূর্য। ওর কাছাকাছি এসে গলায় মুখ ছুঁইয়ে দেয়। কন্ঠস্বর অতীব নেশাক্ত, প্রগাঢ়। এক নিঃসংকোচ,মায়াময় আবেদন করে বসে,
‘ শ্রেয়সী,আমার হবে?’
নেত্রদ্বয় বুঁজে আসে ওর। চক্ষু কার্নিশ ছুঁইয়ে নেমে যায় জল। এত হৃদয় নিংড়ানো কেন বাক্যটা!কি করে জবাব দিবে ও?
তূর্য এক হাত ছেড়ে দিয়ে শ্রেয়ার উন্মুক্ত কোমরে রাখলো। গালে ঠোঁটের স্পর্শ এঁকে বললো- ‘ মুখে জবাব দিতে হবে না। সম্মতি হিসেবে অন্যভাবে বুঝিয়ে দাও। অপেক্ষা টা দীর্ঘ করো না আর। এটার যে অনেক যন্ত্রণা শ্রেয়সী। ‘
এই আকুল কন্ঠ আর শুনতে চায় না শ্রেয়া। কাঁপা কাঁপা অধর যুগল তূর্যর গালে রাখলো। তাদের স্থায়িত্ব হলো সেকেন্ড খানেক। সরিয়ে আনলো তড়িৎ বেগে। শরীরের ভাঁজে ভাঁজে খেলে গেল তরঙ্গ এবং শাড়ির ভাঁজে প্রিয় মানুষটার হাতের ঈষৎ বিচরণ। জানালার ধার ছুঁয়ে আসা চাঁদের রূপে শ্রেয়ার চক্ষে পড়ে তূর্যর ওর মুখশ্রী পানে রাখা অনিমেষ, অপলক দৃষ্টি, নেত্র।
_____________
তড়িঘড়ি করে মাথায় ওড়না চাপিয়ে নিল শ্রেয়া। প্রিয়ু এখনও হাতে ঘড়ি পড়ছে। শ্রেয়া বিরক্ত ভঙ্গিতে আওড়ায়–‘ পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবে তুই ঘড়ির বেল্ট বাঁধতে বাঁধতে। এটা কি রিকশায় বসে বাঁধতে পারবি না?’
প্রিয়ু তবুও নাছোড়বান্দা। দাঁড়িয়ে একটা মিনিট নষ্ট করেই ঘড়িটা পড়লো। এসব পড়া,পরীক্ষা ভালো লাগে না ওর। আয়ুশ যদি মুখে একটা বার,স্রেফ একবার উচ্চারণ করে ‘ তোমার আর পড়তে হবে না’ তাহলে ও আয়ুশকে গুণে গুণে একশ একটা চুমু খাবে। কিন্তু এটা কখনও হবার নয়,সেটা সে দিব্যি জানে। মুখ কালো করে শ্রেয়ার সাথে বেরিয়ে পড়লো। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় সাথে সাথেই রিকশা মিলে। প্রিয়ু ঘুম ঘুম চোখে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল,
‘ ভাইয়া চলে গিয়েছে? ‘
‘ হ্যাঁ। ওনার ডিউটি আছে পরীক্ষার হলে,তাই একটু আগেই বেরিয়ে গিয়েছেন। ‘
‘ ওহ। ‘
‘ তুই কি ওনার উপর রাগ?’
প্রিয়ু চোখ বড়সড় করে ব্যগ্র গলায় বলে ওঠে,
‘ আরে না। আসলে ভাইয়ার কারণে রাতে বেশিক্ষণ পড়তে হলো আমাদের তাই এখন ঘুম পাচ্ছে। তোর পাচ্ছে না?’
শ্রেয়া ক্ষীণ হেসে জানায়,
‘ না। দেখিস ঘুমাতে ঘুমাতে রিকশা থেকে পড়ে যাস না। ‘
প্রিয়ুর সহজ সরল স্বগোক্তি- ‘ আমার শ্রেয়ু থাকতে কখনও পড়বো না। ‘
শ্রেয়ার কন্ঠনালি গলিয়ে কথা বেরিয়ে আসলো না। সূক্ষ্ম নিঃশ্বাস ছাড়লো ও। এত বিশ্বাসের পিঠে কিছু বলাও যায় না। বলতে গেলে উপযুক্ত শব্দ নেই।
দু বান্ধবী মিলে দৌড়ে পরীক্ষার হলরুম পর্যন্ত আসে। ইতোমধ্যে স্যার ঢুকে গিয়েছে। শ্রেয়া ভালো করে তাকাতেই দেখে আজ ওদের হলে তূর্য পড়েছে। ওকে দেখেই ঢোকার আদেশ দেয় তূর্য। তাড়াতাড়ি করে প্রবেশ করে দু’জনে।
তূর্য শ্রেয়ার সামনে খাতা রেখে চলে গেল। আঁড়চোখে একটু চেয়ে খাতায় নাম লিখতে মনোনিবেশ করে শ্রেয়া। কি মনে করে অজান্তেই পুনর্বার তূর্যর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। অন্তস্থল,মন দ্রিমদ্রিম করে উঠলো। নয়ন জোড়া আটকা পড়ে তূর্যর ঘাড়ের লম্বা দাগ টার দিক। আঁচড় টা অত্যধিক তাজা দেখাচ্ছে। ফাঁকা ঢোক গিলল ও। একদিন আগের আচঁড় টা এখনও আছে। এত গভীর ভাবে দিয়েছিল?কই তূর্য তো কোনো প্রতিক্রিয়া করে নি। শরমে চোখ মুখ কুঁচকে আসছে বারংবার।
তূর্য শ্রেয়ার মুখোভঙ্গি দেখে ঝাঁঝালো দৃষ্টিতে তাকালো। খাতায় নাম টাম না লিখে মেয়েটা এমন করছে কেন,বুঝতে পারছে না সে। ঘন্টা পড়লে প্রশ্ন দেওয়ার বাহানায় কাছে এসে দাঁতে দাঁত, ঢিমে স্বরে জিজ্ঞেস করলো,’ কি হয়েছে?’
তড়াক করে লাফিয়ে ওঠে শ্রেয়া। অপ্রস্তুত ভাব। প্রশ্ন টা হাতে নিয়ে অপরদিকে চেয়ে দেখে অন্য একজন স্যার প্রশ্ন দিচ্ছেন। পাশের মেয়েটাও ড্যাবড্যাব দৃষ্টে চেয়ে আছে,তাই চেয়েও কথা টা বলতে পারলো না। চুপচাপ লিখায় মনস্থির করে। কিন্তু তাও ঠিকঠাক হচ্ছে না। বার বার তূর্যর ঘাড়ে চোখ চলে যাচ্ছে। পুরো টা পরীক্ষাই দিল ও এমন করে। বার কতক তূর্য চোখ রাঙিয়েছে সকলের অগোচরে। তবুও লাভ হলো না বিশেষ। যেন ও পাহাড়া দিচ্ছিল কেউ তূর্যর ক্ষতটা দেখে নিল কিনা। পরীক্ষা শেষ হতেই প্রাণ ফিরে পেল। খাতা জমা দিয়ে বের হয়ে প্রকৃতির তরফ হতে উপহার স্বরূপ পাওয়ার স্নিগ্ধ প্রশ্বাস টেনে নিল অভ্যন্তরে।
প্রিয়ুর চিন্তা হচ্ছে অনেক। পরীক্ষা তত একটা ভালো হয় নি। আয়ুশ বলেছে রেজাল্ট ভালো না হলে ওকে কম কম আদর করবে। একদিকে পড়তে দম বন্ধ হয়ে আসে,অন্যদিকে আয়ুশের অমন শর্ত। মোবাইল বের করে আয়ুশকে ফোন দিল। রিসিভ হতেই কিছুদূরে চলে যায় কথা বলতে বলতে। যে কেউ দেখলে অনায়সে বলবে,মেয়েটা নতুন নতুন প্রেমে পড়েছে। হাঁটতে হাঁটতে কথা বলা,গাছের পাতা টেনে ধরা কথা বলার সময়,গাছের গায়ে নখের আঁচড় কাটা এগুলো নাকি নব্য প্রেমে পড়ার লক্ষণ এতিম খানার আপার কাছ থেকে শুনেছিল শ্রেয়া। আলতো হাসলো ও এটা ভেবে। কিন্তু সেই হাসি মিলিয়ে গেল হুট করে একটা কন্ঠস্বর কর্ণে ভারী খে’তেই। সরব করে পাশে তাকালো। তূর্য ধারা’লো দৃষ্টি তাক করে রেখেছে। পুনশ্চঃ প্রশ্ন করে,
‘ পরীক্ষা দেওয়ার সময় এমন করছিলে কেন?’
শ্রেয়া অবিন্যস্তভাবে এদিক সেদিক তাকায়। ঘাবড়ে যাওয়া কন্ঠে প্রতি উত্তর করে,’ আপনার জন্য। ‘
তূর্যর মেজাজ তুঙ্গে ওঠে আছে। খাতা নেওয়ার সময় আগ্রহের ফলে কয়েক পৃষ্ঠায় চক্ষু বুলায়। ফলস্বরূপ দু একটা ভুল বিক্রিয়া চোখে লেগে যায় তার। এসব যে শ্রেয়ার গাফিলতির ফলাফল তা বুঝতে বাকি নেই। রাগান্বিত গলায় বলে উঠলো,
‘ আমার জন্য মানে?আর এত নার্ভাস ফিল করছো কেন?ভার্সিটিতে সবাই জানে তুমি আমার ওয়াইফ। ‘
‘ কি?কীভাবে?’– শ্রেয়ার কন্ঠ বেড়ে যায় মৃদু।
‘ মোবাইল বের করে নিজের ফেসবুক আইডি চেক করো। ‘
তূর্যর কথা শুনে দ্রুত হাতে মোবাইল বের করে নিজের আইডিতে ঢুকল। মেসেঞ্জার ব্যবহার করে না ও। বিয়ের ক্যাচাল প্যাঁচালের জন্য বহুদিন অনলাইন জগতে আসা হয় না। এখন ঢুকেই ও হতভম্ব। মোবাইলে কখনই লক দেই না সে। এমনকি ফেইসবুক পাসওয়ার্ড পর্যন্ত সেভ করে রাখা। তাই কাজটা কোনো রকম ভে’জাল বিহীন সেড়েছে তূর্য। ম্যারিড স্ট্যাটাসের কমেন্ট বক্সে মানুষের শুভেচ্ছার ঢল নেমেছে।
‘ এটা কখন করেছেন আপনি?’
‘ করেছি কোনো এক সময়। এখন পরীক্ষার হলে ওইসব করার কারণ বলো। ‘
তূর্যর চাউনি প্রশ্নসূচক। শ্রেয়া আমতা আমতা করে প্রতুত্তর করে,
‘ আপনার ঘাড়ে,,’
‘ আমার ঘাড়ে?’
নরমাল একটা কথা বলতে প্রচন্ড বেগ পোহাতে হচ্ছে শ্রেয়ার। এটার কারণ সম্মুখে উপস্থিত মানুষ টাই। আনতস্বরে, এক নিঃশ্বাসে বললো,
‘ নখের আঁচড় দেখা যাচ্ছে। ‘
সঙ্গে সঙ্গে কানের ছিদ্র দিয়ে হুড়মুড় করে ঝংকার তুলে কয়েকটা বর্ণ,শব্দ, বাক্য প্রবেশ করে,
‘ তাতে তোমার কি?আমার বউয়ের আদরমাখা চিহ্ন নিয়ে আমি দেশ বিদেশ সব ঘুরে আসবো। কোনো সমস্যা? ‘
শ্রেয়ার মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো। বেক্কল বনে গেল। আপনাআপনি দু ওষ্ঠ আলগা হয়ে আসে। বিমূঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে জবাবে বললো,
‘ না। ‘
#চলবে,,,!
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)