সন্ধি হৃদয়ে হৃদয়ে পর্ব ৩৫+৩৬

0
1730

#সন্ধি_হৃদয়ে_হৃদয়ে
#লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা
#পর্ব___৩৫

‘ কোথায় যাবো আমরা?’
‘ জানিনা। স্যার বলেছেন রেডি থাকতে।’
‘ আমি যাবো না। তুই আর তূর্য ভাইয়া-ই যা।’
শ্রেয়া চোখ জোড়া ছোট ছোট করে তাকায় বিছানার দিকে। প্রিয়ু পায়ের উপর পা রেখেছে ক্রসিং স্টাইলে। দিব্যি দুই পাশে দোলাচ্ছে দু পা। হাতে এখনকার নিত্যকার সঙ্গী মোবাইল। এটা ছাড়া যেন আজকাল সবার নিঃশ্বাস-ই চলে না। শ্রেয়া বার্তাহীন চট করে মোবাইলটা কেড়ে নিল।
‘ কেন যাবি না?’
‘ তোরা একসাথে রোমান্স করবি,আমি গেলে করতে পারবি বুঝি?’

প্রিয়ুর বিবশ কন্ঠে রসাত্মক বাক্য শুনে শ্রেয়া হতবাক। ভ্রুঁ যুগল কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,
‘ তোর সাথে যখন আয়ুশ ভাইয়ার সাথে দেখা করতে যেতাম, তখন তোরা রোমান্স করতি?’
‘ না তো। তোর সামনে রোমান্স করতে লজ্জা লাগবে না আমাদের?’
‘ এটাই। স্যার গর্দভ নন যে তোর সামনে রোমান্স করবে। ‘
এবার প্রিয়ু কথার তাল পেয়ে গেল। জেঁকে ধরলো শ্রেয়াকে। মুচকি হেসে গাল দু’টো উঁচু করে। পরক্ষণেই আবার ভ্রুঁ নাচায়।
‘ তার মানে ভাইয়া আড়ালে রোমান্স করে?অনেক রোমান্টিক তাই না?’
নিজের কথায় নিজে হতবিহ্বল শ্রেয়া। সরব করে ব্যগ্র গলায় বলে উঠলো,
‘ এসব নিয়ে পড়ে থাকবি?রেডি হো। নয়ত স্যার উল্টো আমাকে বকবেন। ‘
‘ তোকে ভালোবাসি বলেছেন ভাইয়া?’

প্রিয়ুর হঠাৎ প্রশ্নে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল শ্রেয়া। অপ্রতিভ হলো অত্যধিক পরিমাণে। বাহ্যিক অংশে অপ্রস্তুত ভাব এলেও মস্তিষ্কের নিউরনে নিউরনে তীব্রভাবে বিঁধে প্রশ্ন খানা। না বললেও ওর হৃদয় থমকেছে যেদিন, তক্ষুনি বুঝে নেয় তূর্যর অপ্রকাশিত অনুভূতি। একদিক থেকে ভাবলে সেটা অব্যক্ত নয়। কারণ মানুষ টা প্রতিনিয়ত নিজের আচরণে মিশিয়ে দিচ্ছে কোনো এক মনোমুগ্ধকর অনুভূতি। সন্ধি তো ঘটে গিয়েছে।
কবে,কখন,কোন স্থানে,কেমন করে অতশত প্রশ্ন না করলেও চলবে। সর্বক্ষণ ভালোবাসি না,বাসি না বলা মানুষ টার কথার ভাঁজে লুকিয়ে আছে তীব্র ভালোবাসা। শ্রেয়ার ঠোঁটে লাজুক হাসি৷ মিহি কন্ঠস্বর। ছোট্ট করে জিজ্ঞেস করলো,

‘ বলা কি খুব প্রয়োজন?’
প্রিয়ু মাথা নাড়িয়ে বললো, ‘ একদমই নয়। তবে ভাইয়ার অতীত মানে অহমিকাকে নিয়ে কথাগুলো জানতে ইচ্ছে হয় না তোর?’

‘ অতীত ঘেটে কি লাভ?যেখানে আমি ওনার বর্তমান, ভবিষ্যৎ সব। তাছাড়া ওনার মুখ থেকেই শুনেছি অহমিকা আপু বড্ড স্বার্থপরতা করেছেন। ওনার ঘৃ*ণা মিশ্রিত বাক্যগুলোই বুঝিয়ে দিয়েছে ঠিক কতটা কষ্ট দিয়েছেন অহমিকা আপু। ‘

‘ তাহলে তুই স্যারের কাছ থেকে এত দূরে দূরে থাকিস ক্যান?লজ্জা পাস?একান্তে সময় কাটাতে ইচ্ছে করে না তোর?দেখিস অহমিকা এসে আবার না তোর স্যার কে নিয়ে যায়। এত কিসের জড়তা?আমি তো আয়ুশকে পারি না খামচে মে’রে ফেলি। ‘

শ্রেয়ার চক্ষু ছানাবড়া। এই মেয়ের মুখে কিছুই আটকায় না কখনও। সময়,মানুষ, পরিস্থিতি কিছুই বিবেচনা করে না। কেবল মুখ ফোটে বলতে পারলেই যেন পরম আনন্দ, শান্তি। আনমনে কপাল কুঁচকে এলো। বললো,
‘ তুইও স্যারের মতোন লাগামহীন। ‘
নিমিষেই প্রিয়ু অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। বিছানা ছেড়ে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে। বলে,
‘ আমি কি ভাইয়ার মতো বলেছি নাকি?ভালোবেসে একটু আধটু চিমটি মা’রতেই পারি আমার জামাইকে। চাইলে তুইও মা’রতে পারিস। ‘
পরক্ষণেই প্রিয়ুর মুখের আদলে পরিবর্তন আসে ব্যাপক। শ্রেয়ার দেহ মুক্ত করে হাত ধরে বিছানায় এসে বসলো। কন্ঠে গুরুতর ভাব এনে বললো,

‘ তোকে কিছু কথা বলবো শ্রেয়া,মনোযোগ দিয়ে শুনবি। এতদিন আমি বাড়িতে সবকিছুই দেখেছি। এটাও দেখেছি বড় মা অহমিকাকে বাড়িতে আনার চেষ্টা করছেন আবারও। ওনার ভাষ্যমতে অহমিকাই মেয়ে হিসেবে ভালো। অথচ উনি অল্পতে পাওয়া সম্মানে ভুলে বসলেন তূর্য ভাইয়ার খারাপ অবস্থার জন্য সেই মেয়েটা কোনো না কোনো ভাবে জড়িত ছিল। কি না করেছেন ভাইয়া মেয়েটার জন্য? ঠিক কতটুকু ভালোবেসেছিল ওকে আমার জানা নেই। কারণ ভালোবাসা পরিমাপ করার ক্ষমতা আদৌ কারো হয় নি। তবে আমার চোখে পড়ত মাঝে মাঝে মেয়েটার জন্য ভার্সিটির ক্লাস মিস দিয়ে ভাইয়া মেডিকেল কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেন যা ওনার ব্যক্তিত্বের সাথে মিলাতে পারতাম না আমি। আমার জানামতে এবং ছোট থেকে চেনা অনুযায়ী তিনি একজন গম্ভীর এবং খুবই রগচটা স্বভাবের মানুষ ছিলেন। কোনো মেয়ের জন্য ওনার এত অপেক্ষা আমাকে ভীষণ মুগ্ধ করত। চাইতাম, আয়ুশও আমাকে এমন করে ভালোবাসুক। স্কুলে পড়তাম তখন তূর্য ভাইয়ার এসব পাগলামি আমার কিশোরী বয়সে অনেক প্রভাব ফেলে। ভেবে ভেবে সাজাতাম আয়ুশও কোনো একদিন আমাকে এমন করে ভালোবাসবে।

ছোট থেকেই ওনাদের বাড়িতে আমার আসা যাওয়া লেগে থাকত। সেই সুবাদে একদিন গিয়ে অহমিকাকে পাই সেখানে। বড় মা হাতে চুড়ি পড়িয়ে দিচ্ছিলেন। তূর্য ভাইয়ার সঙ্গে নাকি ওর বিয়ে প্রায় ঠিকঠাক। তোহাশ ভাইয়া যাওয়ার পর তূর্য ভাইয়া বেশ ভেঙে পড়েন,আঘা*ত পায় কিছু কথায়। তুই জানিস না কিন্তু আমি দেখেছি তূর্য ভাইয়ার কাছে ওনার পৃথিবী ছিলেন তোহাশ ভাইয়া। কিন্তু সেই পৃথিবী দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া ভুবন নতুন করে সাজায় অহমিকা। শক্ত মানুষও ভাঙ্গে,তবে বাহ্যিক ভাবে নয়,ভিতরে ভিতরে। আমরা চাই কেউ আমাদের হোক,আমাদের বুঝুক। তূর্য ভাইয়াও হয়ত চাইতেন,সেই চাওয়ায় পরিপূর্ণতা এনে দিল অহমিকা। আবার কেড়েও নেয় সে। একবার দুর্বলতা প্রকাশ করে ফেললে মানুষ সেই সুযোগে আরো কঠিন ভাবে আঘা*ত করে। অহমিকা নিজেকে ভালো জাহির করতে এতটাই পরিপক্ব ছিল কেউ ওর আসল রূপটাই দেখতে পারে নি। এমনকি তূর্য ভাইয়াও না। বছর খানেক চুটিয়ে প্রেম করে বিয়ের আগের দিন জানায় লন্ডন চলে যাবে। বিয়ে করবে না। বিয়ে নামক বেড়াজালে বাঁধতে চায় না নিজেকে। তূর্য ভাইয়া প্রথমে ভেবেছিল হয়ত মজা করছে আর সবাই স্বাধীনতা প্রিয় তাই অনেক বুঝায়। বুঝানোর কোনো ত্রুটি রাখে নি। এটাও বলে পড়তে চাইলে লন্ডন চলে যাক,এখন বিয়ে করতে না চাইলে অপেক্ষা করবে। পরে নাহয় করবে। কিন্তু অহমিকার একটাই কথা সে বিয়ে করবে না। একটা ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ এতটা নত হলো তার ভালোবাসার কাছে কিন্তু ফলাফল শূন্য। চলে যায় অহমিকা। সে যাওয়ার পর ভাইয়াকে এসব ব্যাপারে কেউ কিছু জিজ্ঞেস করে নি। কিন্তু কথা তো গোপন থাকে না বেশিদিন। বাতাসের মতোই বইয়ে আসে সত্যটা। লন্ডনে অবস্থিত কাজিনের সঙ্গে প্রেম অহমিকার, তাই তূর্য ভাইয়াকে ছেড়ে পাড়ি জমানো।

সেই ঘটনার পর ভাইয়াকে বাসায় দেখা যেত না সবসময়। ভবঘুরে হয়ে গিয়েছিলেন। এডভেঞ্চার দিয়ে বেড়াতেন। কোনো একদিন আয়ুশ খোঁজ নিয়ে জানতে পারে ভাইয়া অ্যালকোহল ব্যবহার করছেন। পরিবারের ভাঙন, তোহাশ ভাইয়ার করা আঘা*ত,অহমিকার করা কান্ডে হয়ত ভেঙে পড়েন তিনি কিন্তু সেটা প্রকাশ করেন নি। নিজেকে সামলেছেন অন্যভাবে। দীর্ঘ দিন অ্যালকোহল ব্যবহারের কারণে তিনি সাইকোসিস ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত হয়ে পড়েন।

নেত্রগহ্বর জলে টুইটুম্বুর। ভিতরটা ধ্বক করে ওঠে শ্রেয়ার। সাইকোসিস ডিসঅর্ডার সম্পর্কে একটু হলেও অবগত ও। এটা এক প্রকার মানসিক ব্যাধি। গুরুতরও বলা যেতে পারে। মূলত বিভ্রম সৃষ্টি করে মানুষের মধ্যে। হ্যালুসিনেশন হয় ওই মানুষ টার সবসময়। ভাবে কেউ আছে। কাউকে অনুভব করে। কখনও কখনও মস্তিষ্ক উগ্র হয়ে যায় মানুষটাকে অনুভব করে। এটা মূলত স্বল্প মেয়াদী হয়। বিরল ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন, বছরও গড়ায়। সাইকোসিস একজন ব্যক্তির পাঁচটি ইন্দ্রিয় তাদের আচরণ ও আবেগকে প্রভাবিত করতে পারে। মন বাস্তবতার সাথে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলে। তূর্যর বেলায়ও ঠিক এটাই হয়েছে হয়ত। শ্রেয়া ব্যাথাতুর কন্ঠে মৃদু আর্তনাদ করে। দুই অধর নড়েচড়ে ওঠে,
‘ সাইকোসিস ডিসঅর্ডার? ‘

‘ হ্যাঁ। তুই একবার পত্রিকায় এ রোগ সম্পর্কে পড়ছিলি আমি দেখেছিলাম, তাহলে তোর ধারণা রয়েছে। আমার আর বলতে হবে না খোলে। ভাইয়ার রোগ টা ধীরে ধীরে তীব্র আকার ধারণ করে। উনি বেশি কল্পনা করতেন অহমিকা কে। ওকে ভেবে অনেক মানুষকেই আ’ঘা’ত করে ফেলতেন। প্রথম প্রথম নিজেকে নিজ থেকেই অনেক নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করতেন কিন্তু পেরে ওঠতেন না। দিনকে দিন ক্রমশ হয় তা। কোনো গতি না পেয়ে সকলে মিলে বন্দী রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। বাড়িতেই ট্রিটমেন্ট চলত ভাইয়ার। একটা সময় ডাক্তার জানালেন চিকিৎসার পাশাপাশি আপনজনদের সেবা যত্নে ভাইয়া বাস্তব জগতে ফিরে আসতে পারেন। যেহেতু তিনি পরিবারের কাউকে সহ্য করতে পারতেন না, সেক্ষেত্রে দাদি তোকে দেখে সিদ্ধান্ত নেয় ভাইয়ার খেয়াল রাখার জন্য বউ করে আনার। উনি মনে করেছেন তুই অচেনা,তোর ক্ষতি করবে না। কিন্তু ভাবনা ভুল ফলে। তুই চলে আসার প্রায় দুই বছরের মাঝামাঝি সময়ে অহমিকা আবার ফিরে আসে। ডাক্তার আংকেল ওকে রেফার করে ভাইয়ার ট্রিটমেন্টের জন্য। প্রথমে বড় মা ওকে দেখে জানিয়ে দেয় ঘৃণায়, ট্রিটমেন্ট করাবে না। পরে ছেলের অবস্থা দেখে অটল থাকতে পারলেন না। বেশ ভালোই চিকিৎসা চালিয়ে যায় ও। সময়ের স্রোতে আবারও ভালো সেজে বড় মা’র মনও জয় করে নেয়। বড় মাও ভাবে ও ভালো হয়ে গিয়েছে। এটাও বলে ও নাকি তূর্য ভাইয়ার অবস্থা শুনেই ফিরে এসেছে। কি জানি কোন স্বার্থ হাসিলে পরাজিত হয়ে আবার কোন স্বার্থের টানে ফিরে এসেছে। ‘

এত লম্বা লম্বা বাক্যে প্রিয়ু হাঁপিয়ে উঠেছে। দীর্ঘ নিঃশ্বাস নাসারন্ধ্র বেয়ে বাহিরে উন্মুক্ত হয়। প্রিয়ু পুনর্বার বলে উঠলো,

‘ তোকে এগুলো বলার একটাই উদ্দেশ্য শ্রেয়া ভাইয়ার কাছাকাছি থাক। কাউকে তোদের আলাদা করার সুযোগ দিবি না। কাউকেই না। ভাইয়া তোকে খুব ভালোবাসে। জানিস উনি কেন এতদিন একা একা কাউকে না জানিয়ে এখানে ছিল?কারণ ভালো নেই উনি। সেদিন সকালে বেরিয়ে আসার একটাই কারণ উনি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন আবারও। পুরোপুরি পিছু ছাড়ে নি রো’গ টা। অতিরিক্ত চিন্তা করলেই মাথা ব্যাথা করে। এ ক’দিন যাবত সাইকিয়াট্রিস্টের শরণাপন্ন ছিলেন। আমাকে আর রহিমা খালাকে তোর দায়িত্ব দিয়ে রেখেছিলেন। তুই উনার দ্বিতীয় ভালোবাসা হতে পারিস তবে ভুল মানুষ না। ‘

শ্রেয়ার হৃদয়স্থলে গিয়ে তীক্ষ্ণ যন্ত্রণা বিস্তার করে প্রিয়ুর কথাগুলো। তূর্য একা একা কতকিছু সহ্য করছে অথচ ও জানতেই পারলো না। প্রিয় মানুষের সান্নিধ্য প্রয়োজন নয়ত কেউ কেউ পরিণত হয়ে যায় মানসিক রোগী তে। মানসিক রোগের ওষুধ হলো সঙ্গ,ভালোবাসা, যত্ন। কিন্তু একটা সময় ও এসবই দিল না তূর্যকে। এখনও কি দিচ্ছে? প্রিয় হোক কিংবা অপ্রিয় মানসিকভাবে বিক্ষিপ্ত মানুষগুলোকে পারলে একটুখানি সঙ্গ দেওয়া উচিত।
_______________

রিকশা চলছে সোজা পিচঢালা রাস্তা ধরে। ব্যস্ত হাতে চাচা গামছা সমেত কপালের তপ্ত জলবিন্দু কণা মুছে নিচ্ছেন। মৃদুমন্দ সমীরণে ওড়ছে শ্রেয়ার শুভ্র রঙা আঁচল। সাঁঝবেলা পার হয়ে রজনী নেমেছে সদ্য। তবুও ঘোর রজনী চারিধারে। কোথাও কোথাও নিয়ন আলো পথিকদের সঠিক পথ দেখিয়ে চলেছে যেন আঁধারের অতলে ডুবে না যায়। প্রিয়ু পাশে বসে খানি সেকেন্ড বাদে বাদে নিরবতার সমাপ্তি ঘটাচ্ছে। বেশ কয়েকবার মলিন,নিষ্প্রভ স্বরে এক রাশ আফসোস নিয়ে বলেছে,

‘ আয়ুশকে বড্ড মিস করছি। আগে দূরে ছিলাম সইয়ে গিয়েছে। এখন কাছে থেকে অভ্যাস হয়ে গিয়ে অল্প সময়ের বিচ্ছেদে দম বন্ধ হয়ে আসছে। ‘

বিচ্ছেদের বেদনার স্বাদ শ্রেয়া নিয়েছে। তাই প্রিয়ুকে প্রতুত্তরের শব্দাংশ খুঁজে পেল না। অচিরেই পেছনের রিকশা টা ওদের রিকশা পার করে থামলো। চাচাও প্যাডেল ঘুরানো বন্ধ করে দিলেন। শ্রেয়া জিজ্ঞাসু দৃষ্টি মেলেছে সবে,তখনই তূর্য অপর রিকশা থেকে নেমে আসে। মুখে কেমন একটা উদ্বিগ্ন, অস্থিরতা। বড় বড় পা ফেলে এসে ঝুঁকে ওর শাড়ির বড়সড় আঁচল টা রিকশার চাকার কাছ থেকে তুলে ঠিক করে দিল। শ্রেয়ার হৃদস্পন্দন প্রায় থমকে গিয়েছে। কি হতে যাচ্ছিল এখন!সামান্য সতর্কতার অভাবে প্রাণ টা খোয়াতে হতো। তূর্যর দিকে করুণ চাহনি নিক্ষেপ করতেই নরম,শীতল কন্ঠস্বর শুনতে পায়,

‘ মে’রেই ফেলছিলে আমাকে। ‘

#সন্ধি_হৃদয়ে_হৃদয়ে
#লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা
#পর্ব___৩৬

একই সিরিয়ালে রাস্তার একপাশে দুটো রিকশার অবস্থান লম্বভাবে। অর্থাৎ একটার পশ্চাতে অপরটার স্থান। চালক দু’জনের মধ্যে একজন তাগড়া যুবক এবং আরেকজন বেশ বয়স্ক। চামড়া কুঁচকানো। নিঃশ্বাস টাও কেমন ভারী ভারী ঠেকছে মানুষ টার। দেহে কাঁপুনি ঈষৎ। তবুও পেটের ক্ষুধা, পরিবার সামলাতে সড়কে দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছে। শ্রেয়ার অত্যন্ত কষ্ট হয় এসব চক্ষুগোচর হলে। মনে মনে কত-শত বার ভাবে ওর যেদিন অনেক টাকা হবে এসব মানুষকে সাহায্য করবে। কেননা অভাব ও বুঝে। এতিমখানা থেকে স্কুল – কলেজে পড়ার খরচের ভার নিলেও কখনও অন্যান্য খরচের টাকা দেওয়া হতো না। ওই যে রাস্তার অন্য পাশে হাওয়ায় মিঠাইয়ের মেলা বসেছে, একটা সময় সেগুলো খাওয়ার জন্য দশ টাকাও ম্যানেজ করতে পারত না। থাকা,খাওয়া,পড়া সবই তো এতিমখানার অধীনে ছিল। কলেজে ওঠে মাদারের পারমিশনে দু একটা টিউশনি করত সেগুলো থেকে পাওয়া টাকাগুলো জমিয়েই রাখত। এক পয়সাও খরচ করতে গেলে কেঁপে উঠত বুক টা। ভাবনায় আসত -অকাজে, আলতু ফালতু শখ, আহ্লাদে টাকা নষ্ট করার মানে হয় না৷ মূলত পরিস্থিতিই আমাদের মনোভাব এমন করে তুলে। কিন্তু এখন ওর অভিলাষ জাগে ছু মে’রে একটা গোলাপি রঙের হাওয়ায় মিঠাই ছিনিয়ে আনতে। হলুদ আলোয় আরো মিষ্টি মিষ্টি লাগছে হাওয়ায় মিঠাইগুলো।

প্রিয়ুর ডাকে দৃষ্টিভঙ্গ হয় শ্রেয়ার। কর্ণকুহরে আসে,
‘ স্যার কে বল আমরা রিকশায়-ই যাবো। ‘
নিমেষে চমকায় শ্রেয়া। ও এমনটাই বলবে বলবে ভাবছে। খোলা অম্বর এবং কৃষ্ণ মেঘপুঞ্জের নিম্নতলে চলবে রিকশা। সঙ্গে থাকবে অনুত্তেজিত, স্নিগ্ধ শীতল হাওয়া। উত্তাপে হাস ফাঁস প্রকৃতি কয়েক মিনিটে নিজস্ব রূপের পরিবর্তন ঘটিয়েছে। ঠান্ডা ঠান্ডা, নিরুত্তাপ পরিবেশ। ঘাড় টা আলতো ফিরিয়ে তাকায় অতীব প্রিয়তমের নিকট। তূর্য কানে মোবাইল ধরে রেখেছে। অনলাইন মাধ্যমে গাড়ি ভাড়া করার চেষ্টা। আঁচল আঁটকে যাবার সেই ঘটনার মিনিট খানেক পেরোয়। প্রিয়ু ও শ্রেয়াকে রিকশা থেকে নামিয়ে ইট পাথরের গঠিত ফুটপাতে দাঁড় করিয়ে রেখেছে তূর্য। চালক দু’জনের ভাড়া মিটিয়ে অস্থির মাখা কন্ঠে জানায়–‘ রিকশায় যাবে না। ‘

শ্রেয়া উপলব্ধি করে তূর্য সেই ঘটনায় অত্যন্ত গম্ভীর হয়ে পড়েছে। সমস্ত আদলে তীব্র ভয় শঙ্কার ছাপ। সামান্য একটু ব্যাপারে এত উত্তেজনা,ব্যগ্রতা মানুষ টার। বাসা থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে আসা হয় আজ ওরা রিকশায় ঘুরবে। ঘটনা টা হওয়ার পর তূর্য মতামত পরিবর্তন করে ফেলেছে। শ্রেয়া সোজা হয়ে প্রিয়ুকে থেমে থেমে,লজ্জাতুর কন্ঠে বললো,
‘ আমি যদি ওনার সাথে এক রিকশায় চড়ি,আপত্তি আছে তোর?মানে একা খারাপ লাগবে বাকি রাস্তা টুকু?’
প্রিয়ু মুখ কালো করে ফেললো। স্বরনালী বিষন্ন, বেদনামিশ্রিত,
‘ আয়ুশের কথা মনে পড়ে যাবে বেশি বেশি। ওর শূণ্যতায় পুড়ে ছাড়খাড় হয়ে যাবো। ‘
মনে মনে এটা নিয়েই সন্দেহাতীত ছিল শ্রেয়া। একা একা নিশ্চয়ই মনোক্ষুণ্ণ হবে মেয়েটার। সুতরাং নিজের কল্পনার জগত উচ্ছেদ করার চিন্তা ভাবনা করলো। চিকন ওষ্ঠযুগল ছড়িয়ে স্মিত হাসলো। বললো,
‘ আমরা এক রিকশায় যাবো। দেখি স্যার কে ম্যানেজ করতে পারি কিনা। ‘
‘ হুম। এক রিকশায় তুই আর ভাইয়া যাবি। আরেকটায় আমি আয়ুশকে কল্পনা করে দিব্যি নিঃশ্বাস ফেলবো। আহা!’
কথাটা বলে প্রিয়ু মিটমিট করে হাসলো। এতে যারপরনাই অবাক শ্রেয়া। এত রূপ বদলে দক্ষ এই মেয়েটা। তবে খারাপ নয়,বরাবরই মানুষকে বিমোহিত করে একেক সৌন্দর্যে,রূপে। শ্রেয়া ওর হাত টা শক্ত করে চেপে ধরে বললো,
‘ শুনেছি সুন্দর মনের মানুষ জীবসঙ্গী হিসেবে একজন ভালো মনের মানুষই পায়। প্রমাণও পেলাম। তুই ও আয়ুশ ভাই দু’জন হলেও মন এক। বুঝি না কিভাবে তোদের ঋণ শোধ করবো। উপায় বলে দিবি প্রিয়ু?’
‘ তুই যতবার হেসেছিস আমাদের ঋণ শোধ হয়ে গিয়েছে। ‘
তৎক্ষনাৎ শ্রেয়ার অবরুদ্ধ চাহনি। বিমূঢ় কন্ঠস্বর,
‘ মানে?’
প্রিয়ু গর্বিত কন্ঠে আওড়ায়–‘ তোকে ভালো রাখা,হাসিখুশি রাখার জন্যই তো এতকিছু। এতেই ঋণ শোধ হয়ে গেল। এখন জলদি যা৷ যদি ক্যাব চলে আসে?’

শ্রেয়া ভীরু ভীরু পায়ে হাঁটে। গতি নেই হাঁটায়। কদম ছোট্ট ছোট্ট। খুব বেশিই ধীরস্থ। তূর্য মোবাইল কান থেকে নামিয়ে পকেটে পুড়ে নেয়। শ্রেয়াকে আসতে দেখে কপালে ভাঁজ পড়ে। ললাট স্পর্শ করে ভ্রুঁ যুগল। প্রশ্নবিদ্ধ চাহনি নিক্ষেপ করে বলে উঠলো,

‘ কিছু বলবে?’
শ্রেয়া অতিকায় ছোট্ট নিঃশ্বাস মুক্ত করে নাকের দু ছিদ্র মাধ্যমে। বড্ড এলোমেলো ও দ্বিধান্বিত গলায় বলে,
‘ আমরা রিকশায় যাবো। প্লিজ গাড়ি নিষেধ করে দিন। ‘
তূর্য হ্যাঁ বা না কোনো বর্ণ উচ্চারণ করলো না। শ্রেয়া জিজ্ঞাসা সূচক দৃষ্টি মেলে রাখে ঠাঁই। সেকেন্ডে পল্লব অল্পস্বল্প কেঁপে ওঠে। চাতক পাখি হয়ে আছে সে উত্তরের অপেক্ষায়। তূর্য গম্ভীর স্বরে বললো,
‘ রিস্ক নিতে পারবো না। আমরা ক্যাবেই যাবো। ‘
শ্রেয়া দমলো না। বুঝানোর ভঙ্গিতে বলে উঠলো,
‘ আমি সতর্ক থাকবো স্যার। প্রিয়ুও রিকশায় যেতে চাইছে। প্লিজ। ‘
‘ তোমার নিজের খেয়াল না রাখলেও চলবে। কিন্তু আমার বউয়ের কিছু হলে একদমই চলবে না আমার। একটা কথাও না আর। ‘
ঝাঁঝালো কন্ঠে কথাগুলো বলে উঠলো তূর্য। শ্রেয়া মলিন মুখে আগের স্থানে ফিরে যেতে নিলে হাতে চাপ অনুভব করে। শ্রবণ হয় চিন্তিত স্বর-‘ আমার কাছে তুমি আমার মানসিক শান্তি শ্রেয়সী। ‘

অভ্যন্তরে ঢেউ গর্জে ওঠে। অত্যধিক নিয়ন্ত্রণ হারা তার গতি। শ্রেয়ার ভূ তলে কম্পন। মন জুড়ে শীতল স্রোত বহমান। একটা বাক্যে এত শান্তি! এত সুখ,গভীর ভালোবাসার মিশ্রণ! তাছাড়া আর কি কি আছে তাতে?হারানোর ভয়?ও তো কোনোদিন, কস্মিনকালেও ভাবে নি কেউ ওর আপন হবে,ওকে হারানোর চিন্তায় কাতর থাকবে। ভালোবাসা কি এমন হয়?গম্ভীর, রগচটা, বদমেজাজি মানুষটাকে নরম করে ফেলে,নিভিয়ে দেয় সেই মানুষের তেজস্বী প্রদীপ। তূর্য হাত ছেড়ে দিয়ে সমুখে এসে দাঁড়ালো। শ্রেয়া স্পষ্টত দেখতে পাচ্ছে কালো কুচকুচে মণিতে বিচলতা।

আরক্ত কপোলে এক হাত রাখে তূর্য। নিমেষে শ্রেয়ার নির্নিমেষ নেত্রের চাউনি নত হয়। নত মুখশ্রীতে গভীর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে তূর্যর চক্ষুদ্বয়। ঠান্ডা গলায় বললো,
‘ তোমার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দুঃখও আমায় এখন কষ্ট দেয় শুভ্রপরী। মানুষ তার প্রিয়জনকে ভালো রাখতে কত কি করে। কিন্তু আমি আমাকে ভালো রাখতে তোমার ছোট ছোট দুঃখও নিজের নামে করতে নিতে প্রস্তুত। আমরা রিকশায়-ই যাবো। বউয়ের একটা ইচ্ছে যদি পূরণ না করতে পারি কেমন জামাই হলাম?চলো। ‘

মৃদু হাসলো শ্রেয়া। নিচু স্বরে বললো-‘ আমি আপনার সাথে যাবো।’
তূর্য যেন ভুল শুনলো। সঠিক কিনা যাচাই করতে প্রশ্ন করলো,
‘ কি?’
এ যাত্রায় একটুখানি গলা উঁচায় শ্রেয়া। ঠোঁটে লাজুক হাসি,
‘ আমি আপনার সাথে এক রিকশায় যাবো। ‘
‘ কিন্তু প্রিয়ু?’
‘ ও সামনের রিকশায় থাকবে। আমি ও আপনি পিছনের টায়। ‘

তূর্য আর কোনো কিছু বললো না। দাঁড়ানো রিকশা দু’টো ডাকলো ফের। ক্যাবকে নিষেধ করলো, এমনকি অনলাইনে ভাড়া পর্যন্ত মিটিয়ে দিল। আজ গাড়ি ছাড়া বের হয়েছিল ওরা। উদ্দেশ্য একটুখানি ঘুরাঘুরি। যথারীতি প্রিয়ু সামনের রিকশায় বসলো,শ্রেয়া পিছনের টায়। তূর্য ওর শাড়ির আঁচল টা এবার ভালোভাবে ঠিকঠাক করে দিয়ে বলে উঠলো,
‘ অপেক্ষা করো। আমি আসছি। ‘
ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেল। কিন্তু শ্রেয়া নির্বাক হয়ে পড়ে কিয়ৎক্ষণ পর।

তূর্য হাতে পাঁচ টা হাওয়ায় মিঠাইয়ের প্যাকেট নিয়ে সোজা প্রিয়ুর কাছে যায়। ওর হাতে দু’টো প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে ফিরে আসলো শ্রেয়ার নিকট। তখনও বিস্ময়ের পর্যায়ে শ্রেয়া। তিনটা প্যাকেট ওর কোলে রেখে পাশে বসে পড়ে। দুই হাতের সাহায্যে রিকশার হুডি তুলে দিয়ে বললো,
‘ বউ একটু বেশি পাওনা,তাই বউয়ের ভাগে তার পছন্দের হাওয়াই মিঠাই তিনটা। ‘
‘ আপনাকে কে বললো আমার পছন্দের?’– শ্রেয়ার কন্ঠে অবাকতা।
তূর্য একটা প্যাকেট খুলে ওর হাতে ধরিয়ে দিল। নির্লিপ্ত অভিব্যক্তি তার- ‘ তোমার দৃষ্টি বলেছে।’
যতক্ষণে স্বাভাবিক হয় শ্রেয়া ততখানি সময়ে হাওয়ায় মিঠাই বাতাসের আলিঙ্গনে চুপসে ছোট আকার ধারণ করেছে। তূর্যর ইশারায় সেই ছোট অংশই মুখে নিয়ে নিল।

দু’টো দেহ পাশাপাশি। শাড়ির ভাঁজে ভাঁজে শিহরণ,বাতাসের স্পর্শ এটাই তো চেয়েছিল শ্রেয়া। সকল জড়তা কাটানোর প্রচেষ্টায় ও। মৃদু গলায় বলে উঠলো,
‘ স্যার!’
‘ বলো। ‘
শ্রেয়া বলার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছে না। ডেকেও ফ্যাসাদে পড়ে গেল। ওর নড়াচড়া দেখে তূর্য কোমরে হাত রেখে কাছে টেনে আনলো। ফিসফিস করে বললো,
‘ বলো না কেন?শরম লাগছে?ভাবছো,একটু রোমান্স করতে স্যারের সাথে এক রিকশায় উঠলাম অথচ উনি পাত্তাই দিচ্ছে না। ‘

শ্রেয়া ভড়কে গেল। সরব করে কিছু বলতে চাইলে তূর্য হুস করে ওঠে। আরো গাঢ় হয় গলার স্বর,
‘ আসলে আমার একটু না অনেকবেশি আদর করতে মন চাইছে তোমাকে। কিন্তু রাস্তাঘাট তো। তাই ধৈর্য্য সহকারে একটুই করবো। ‘
শ্রেয়া বুঝে ওঠার পূর্বেই অনাবৃত কোমর চেপে নিজের বুকের কাছাকাছি নিয়ে আসে তূর্য। কপালে ছুঁয়ে দেয় শুষ্ক ওষ্ঠদ্বয়। নাকেও স্পর্শ পড়ে সেই অঙ্গের। নিমীলিত চক্ষুদ্বয়ে তূর্যর বক্ষে এক হাত রেখে নিশ্চুপে অনুভব করে তা শ্রেয়া।

প্রিয়ু রিকশায় বসে আকাশের তারা গুণছে। জানে এটা অসম্ভব ব্যাপার তবুও ক্ষুদ্র প্রয়াস। আকস্মিক রিকশা থামতেই নজর সরিয়ে সামনে ফেলতে প্রস্তুত হয় ও। সাথে সাথেই রিকশা টা হেলেদুলে ওঠে। ধপ করে পাশে বসে কেউ। ঘাড় বাঁকাতেই দেহ পিছিয়ে যায় অনেকখানি। মুহুর্তেই আয়ুশ টেনে বুকে জড়িয়ে ধরলো। হেসে বললো,
‘ তোমার ভাঙা কোমর দেখতে আসি নি। আমার সুস্থ, নাদুসনুদুস প্রিয়ুকে দেখতে এসেছি। ‘
আয়ুশের বুকে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছে ও। সমস্ত প্রকৃতি, মানুষ, দিকবিদিক ভুলে বুকে তীক্ষ্ন দাঁত বিধিয়ে দিল। এতে হাসির মাত্রা বেড়ে গেলো আয়ুশের।
‘ ভয়ে আমাকে কামড়ানো হচ্ছে? ‘
‘ হ্যাঁ। কখন আসলে?’
‘ সকালে যখন আমার প্রিয়ু আমাকে ফেলে আসলো তখন থেকেই কেমন দম বন্ধ হয়ে আসছিল। ভার্সিটি থেকে বেরিয়েই এখানে ছুটে আসা। কি করলে প্রিয়ু?এত বছরের জাদু এখন কাজ করছে একসাথে। তুমি দূরন্ত এক জাদুকরী। ‘
____________

ঘুরাঘুরি শেষে তূর্য, শ্রেয়া ফিরে আসে। সঙ্গে প্রিয়ু,আয়ুশও। শ্রেয়া প্রথমে স্তব্ধ হয়ে যায় হুট করে আয়ুশ কে দেখে। পরবর্তীতে তূর্য জানায় এটা পূর্বপরিকল্পিত। ওরা সকালে আসার পরপরই নাকি আয়ুশ ফোন করে বলে সন্ধ্যা নাগাদ চট্টগ্রাম থাকবে ও। চমকে দেবে ওদের, বিশেষ করে প্রিয়ুকে। এত বছর ধরে যেই ভালোবাসা চেয়েছে প্রিয়ু তার চেয়েও বেশি পাচ্ছে বলে মনে হয় শ্রেয়ার। কারণ প্রিয়ুর চাওয়া ছিল সীমিত। আয়ুশের একটু যত্ন,ওর সাথে কথা বলাতেই খুশিতে লাফিয়ে ওঠতো। কখনও হয়ত কল্পনায়ও আনে নি ওকে আয়ুশ একদিন পাগলের মতোন ভালোবাসবে। শাড়িটা এখনও পাল্টানো হলো না ওর। এই লাল পাড়ের সাদা শাড়ি টা তূর্যর দেওয়া। একা একটা ফ্ল্যাটে,নির্জনে দু’টো হৃদয় একসঙ্গে বসবাস করবে আজ। রাত টা অতিরিক্ত দীর্ঘ মনে হচ্ছে শ্রেয়ার। প্রিয়ু ও আয়ুশ পাশের ফ্ল্যাটে। তূর্য শোবার ঘরে। শ্রেয়া সোফায় বসে কানের ঝুমকো জোড়া খুলছিল তখনই মোবাইলের শব্দে টেবিলের উপর তাকালো ও। তূর্যর মোবাইলের স্ক্রিনে মেহরিমার নাম্বার ভেসে ওঠেছে। কিছু একটা স্মরণে আসতেই নির্দ্ধিধায় কলটা রিসিভ করলো ও। সালাম দিয়ে কন্ঠে নম্রতা এঁটে নেয়,

‘ কেমন আছেন আম্মা?’
ওপাশ থেকে কড়া আওয়াজ আসে,
‘ তুমি কেন ফোন ধরেছো?তূর্য কোথায়?’
‘ উনি অন্য রুমে। আসার সময় দেখলাম আপনার প্রেশার বেড়ে গিয়ে শরীর খারাপ হয়ে পড়েছিল। এখন ঠিক আছেন?’
‘ তোমার না জানলেও চলবে। কথা বলো না তো। তোমার কন্ঠ শুনে আমার মেজাজ গরম হচ্ছে। এত জেনে কি লাভ? ‘
‘ আজ যদি আমার মা থাকত তাহলে সন্তান হিসেবে আমি আমার মায়ের খবর নিতাম আম্মা। জিজ্ঞেস করতাম কেমন আছে। অসুস্থ থাকলে চিন্তা করতাম। মা নেই কিন্তু আপনি আছেন। শাশুড়ি হলেও আপনাকে আম্মা ডাকি। আমি কি আমার আম্মার ভালোমন্দ জানতে চাইতে পারি না?’
মেহরিমার কন্ঠের তেজ হারিয়ে ফেললেন নিমেষে। কি মধুর মেয়েটার বলা বাক্যগুলো! মা’য়ের জন্য কতটা আকুলতা। ভিতরটা হিম হয়ে আসে ওনার। পারলেন না আর ধমকে উঠতে। নিভে যাওয়া স্বরেই বললেন,
‘ তূর্য আসলে কল দিতে বলো। ‘

#চলবে,,,!
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here