সন্ধি হৃদয়ে হৃদয়ে পর্ব ১২

0
1757

#সন্ধি_হৃদয়ে_হৃদয়ে
#লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা
#পর্ব___১২

আঁধারের ভিড়ে লুকিয়ে পড়েছে সমস্ত প্রকৃতি। দূর হতে সুদূরে থইথই করছে অন্ধকার। শ্রেয়া এক ভয়ংকর কান্ড ঘটিয়ে ফেলেছে। কয়েকবার চেয়েও পাশে থাকা মানুষটাকে বলতে পারছে না। আর জানলে হয়ত লোকটা রাগে ওকে ভস্ম করে দিতে কুণ্ঠাবোধ করবে না। যেই গম্ভীর, কাঠখোট্টা, তেঁতো ধাঁচের লোক!ওর ইতস্তত অনুভব হচ্ছে এটা বলতে–‘ ভুলবশত বাসের ঝাঁকুনিতে আপনার পানির বোতলে মুখ লেগে গিয়েছে স্যার। ‘ এটা বললে হয়ত তূর্য ওকে মশলা ভেবে ইচ্ছে মতোন শিল নোড়ায় পিষবে। তারপর শরবত বানিয়ে গিলে ফেলবে। ছি!ছি! কিসব ভাবছে সে ভয়ের তাড়নায়। বলার কি দরকার?ও তো লিপস্টিক ব্যবহার করে নি। তাহলে নাহয় বোতলে দাগ লেগে থাকত,প্রমাণও মিলত। তবে শ্রেয়ার অন্তঃস্থল কড়া নাড়ছে,অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষায় আছে কখন মানুষ টা বোতল থেকে পানি পান করবে। কখন ওর ওষ্ঠের ছোঁয়া তূর্যর ঠোঁট ছুঁয়ে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবে। পরক্ষণেই শ্রেয়া নিজের সকল ভাবনা,কল্পনার ইতি টেনে সিটে ঘাপটি মেরে বসে রইল। এসব ভাবনাও ওর জন্য নিষেধ। বহুকাল পূর্বের ন্যায় হৃদয় পথে এলোমেলো অনুভূতিদের বিচরণ পুনর্বার চায় না ও। এই অবিন্যস্ত অনুভূতিরা যেন ওর হৃদয় কুঠিরে বসবাস করে অস্থির করে তুলে সমগ্র সত্তা। বাড়িয়ে দেয় মানুষ টাকে চাওয়ার অদম্য ইচ্ছে।

‘ বোতলে মুখ লাগিয়েছ?’
শ্রেয়া ধরফর করে উঠলো তূর্যর লহু স্বর শুনে। বিস্ফোরিত নেত্রদ্বয় মেলে মাথা নাড়িয়ে বললো,
‘ মানে?’
তূর্য তীর্যক চাউনি নিক্ষেপ করে আঁধারে শ্রেয়ার মুখভঙ্গি বুঝার চেষ্টা করলো। বাসের সব লাইট নিভিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাত্রীরা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। সবাই নয়,কোনো কোনো কপোত-কপোতী মগ্ন প্রেমময় বাক্য বিনিময়ে। কিছুক্ষণ আগেই শ্রেয়া দেখেছে একটা মেয়ে পাশের ছেলেটার কাঁধে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমের দেশে পাড়ি জমিয়েছিল। বিতৃষ্ণায় ভরে উঠেছিল বুকটা এটা ভেবে পাশের মানুষটা ওর জন্য বৈধ হলেও কাঁধে কিংবা বুকে মাথা রাখার অনুমতি নেই। অনুমতি অনেক দূরের শব্দ, লোকটা তো নিজের বউই চিনে না,বিয়ের সম্পর্কেও জানে না। কিন্তু সেসব চিন্তা বাদ দিয়ে শ্রেয়া এখন ভয়ে আছে,তূর্য কি ওকে মুখ লাগিয়ে পানি পান করতে দেখে ফেলল?তাকে কিছু বলতে না দেখে শ্রেয়ার গলা শুকিয়ে এলো। আবছা আবছা আলোয় চোখে পড়ল তূর্য বোতলে মুখ লাগিয়ে পানি পান করছে। শুকনো ঢোক গিলল শ্রেয়া। ওর দিকে পানির বোতল টা বাড়িয়ে দিয়ে তূর্য গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,

‘ আমি বলে মেনে নিলাম। আর অন্য কারো বোতলে মুখ লাগাতে যেও না। সবাই তোমার স্যারের মতো দয়াবান হবে না৷ ‘

লজ্জায় মিইয়ে গেল শ্রেয়া। তূর্যর থেকে পানির বোতল টা নিয়ে নিজের কাছে রাখল। ইশ!দেখে ফেলল স্যার। মনে মনে বলে নিজেকে গালাগাল করতে লাগল। শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। তূর্যর অত্যধিক সন্নিকটে অজস্র ভালো লাগা কাজ করছে তার মনে। চো’রা দৃষ্টিতে তাকালো পাশে। তূর্যর হাতে ধরা পড়ে গেল তৎক্ষনাৎ। তূর্য মোবাইল থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দুর্বোধ্য হেসে বলে উঠলো,
‘ তোমার লিপ বামের ঘ্রাণ টা সুন্দর। বোতলে মুখ না লাগালে হয়ত নাসারন্ধ্রে ঘ্রাণ টা প্রবেশ করত না। মস্তিষ্ক জানান দিত না পাশের মেয়েটার অধর স্পর্শ লেগে আছে এখানে। কিন্তু আফসোস ততক্ষণে আমার ওষ্ঠদ্বয় ছুঁয়ে ফেলেছে সেই স্থান। ‘

শ্রেয়া এতক্ষণে বুঝতে পারল তূর্য না জেনেই মুখ লাগিয়ে ফেলেছিল। আর আগের প্রশ্নটা এমনিতেই করেছিল জানার জন্য। লজ্জায় এখন ওর মরি মরি অবস্থা। যেভাবেই হোক ধরা তো পড়ে গেছে। লিপস্টিক না হোক লিপ বাম ওকে ফাঁ’সিয়ে দিয়েছে হাতেনাতে। মৃদু কন্ঠে উচ্চারণ করে,
‘ স্যরি স্যার। ‘
তূর্যর চোয়াল শক্ত হয়ে এলো মুহুর্তেই। দাঁতে দাঁত চেপে চাপা গর্জন করে উঠলো,
‘ তুমি কি তোমার জীবনের প্রত্যেক ভুলের স্যরি বলেছো?’
শ্রেয়া হকচকালো। ভড়কে গেল। প্রতিটা ভুলের স্যরি বললেও একটা ভুলের কখনও বলা হয় নি। কখনো হবেও না। মনে মনে আওড়ালো–‘ আপনাকে ছেড়ে আসার ভুলের স্যরি টা আমার কখনও বলা হবে না স্যার। এটাই আমার ম’রণ পর্যন্ত বাকি থেকে যাবে। ‘
বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো ওর। সঠিক জবাব নেই তার কাছে। তাই এক প্রকার এড়িয়ে গিয়ে টানা টানা চোখ জোড়ার করুণ দৃষ্টি বাহিরে নিবদ্ধ করে। কানে আসে রিংটোনের তীক্ষ্ণ শব্দ,সেই সাথে গম্ভীর, ভরাট কন্ঠস্বর,
‘ ইডিয়ট!’

শ্রেয়ার কপাল কুঁচকে গেল। এটা কি ওকে বললো তূর্য? আঁড়চোখে তাকিয়ে দেখে স্ক্রিনে একটা নাম্বার জ্বলজ্বল করছে,কোনো নামে সেইভ নেই। তার মনে হচ্ছে কল দেওয়া ব্যাক্তি কে গা*লি দিয়েছে তূর্য। হতে পারে আবার ওকে। বলা তো যায় না। সাংঘাতিক একটা লোক!

ঘন্টার পর ঘন্টা পেরিয়ে গেল। শ্রেয়া একটাবারও ঘুমালো না বাসে। অথচ ওর চোখ ব্যাথা করছিল তন্দ্রায়। ঘুমোলে যদি তূর্যর উপর গিয়ে পড়ে তা ভেবে ঘুমাতে পারল না৷ গ্রীষ্মের গরমে অবস্থা বেগতিক। মৃদুমন্দ হাওয়া বইছে। তবুও তাতে কুলোচ্ছে না। কমছে না উত্তাপ। তূর্য একটু পর পর বলছে জানালা থেকে সরে বসতে বলছে ওকে। কারণ সে নাকি বাতাস আসতে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে।

শ্রেয়া বিস্মিত, হতবাক। ঠাহর হলো তূর্য এসব বাসে যাত্রায় অভ্যস্ত না। হয়ত নতুন যাত্রী এ বাসের। মাথায় ঢুকছে না এসি বাস,গাড়ি ছেড়ে এরকম বাসে কেন আসতে গেল তূর্য। ভীষণ খারাপ লাগছে ওর মানুষ টার জন্য। বাসের জ্বলন্ত বৈদ্যুতিক বাতিতে ও ব্যথিত চোখে বারবার অবলোকন করছে তূর্যর ফর্সা মুখের রক্তিম হাল। মন টা বিষিয়ে উঠেছে। একটা সময় অত্যধিক ব্যাথা অনুভব করলেও সে ছেড়ে এসেছিল তূর্যকে তখনও বক্ষস্থলে এত কম্পন হয় নি আজ যতটা হচ্ছে তার সান্নিধ্যে। তবে কি দূরে গেলে ভালোবাসা বাড়ে কথাটা নিছক? শ্রেয়া নিজ মনে বললো,’ দূরে গেলে ভালোবাসা বাড়ে সঠিক তা মানুষের মনভেদে,আর কাছে এলে যন্ত্রণা বাড়ে প্রিয় মানুষটাকে পাবো না বলে। ‘ জীবনের সমীকরণ অত্যন্ত এলোমেলো, অগোছালো। নয়ত মানুষ প্রিয়জন কাছে পেলে খুশিতে অশ্রু গড়ায় কিন্তু শ্রেয়া?সে তো কাছে থেকেও যোজন যোজন দূরত্ব অনুভব করে অনলে দগ্ধ হচ্ছে। এর চেয়ে দু’টো দেহের, দু’জনকার নিঃশ্বাসের দূরত্বই বুঝি শ্রেয়।
______________

বাস এসে থামলো নির্দিষ্ট গন্তব্যে। তবে শ্রেয়া ও তূর্যর নয়,বাসের গন্তব্য।স্ট্যান্ড থেকে এখন আবার অটো কিংবা রিকশা ধরে বাসায় যেতে হবে। শ্রেয়া ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে একপাশে দাঁড়িয়ে রইল। ভালোই রাত হয়েছে। গভীর রাত বললেও দোষ হবে না। স্ট্যান্ডে বাসের যাত্রী বিহীন তেমন একটা মানুষজন নেই। তূর্যও বাস থেকে নেমে কোথায় যেন উধাও হয়ে গিয়েছে। শ্রেয়ার সতর্ক মন কোনো রিকশাওয়ালাকে ভরসা করতে পারছে না। মুখোশের আড়ালে কত শয়-তান যে লুকিয়ে থাকে তা অগণিত ও মানুষের দৃষ্টির বাহিরে। এখন কিভাবে যাবে ভেবে ভেবে কূল হারিয়ে ফেলছে। না ভেঙে পড়া যাবে না। ব্যাগ থেকে ছোট ছু’রি টা হাতে নিয়ে নিল। তৎপরে একজন রিকশাওয়ালার কাছে এগিয়ে গেল যাবে কি-না জানার উদ্দেশ্যে। যদি লোকটা অর্ধ রাস্তা গিয়ে একা পেয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাহলে বুকে ছু-রি গেঁথে দিবে। ভাড়া ঠিক করল ষাট টাকা। উঠতে যাবে তখনই পিছন থেকে অন্য একটা রিকশার টিংটং শব্দ কর্ণধারে পৌঁছায়। থমকে যায় পা। ঘাড় বাঁকিয়ে দেখে রিকশায় তূর্য। একপাশে চেপে বসে গম্ভীর স্বরে বললো,
‘ আসো।’
শ্রেয়ার মন ছুটে যেতে চাইছে। সত্যি বলতে ভীত হয়ে আছে ও। একা একা যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না। তবুও মলিন মুখে বললো,
‘ স্যার রিকশা ঠিক করে ফেলেছি। ওনাকে কথা দিয়ে আপনার সাথে যাওয়াটা কেমন দেখায় না?’
সাথে রিকশাওয়ালাও তাল মেলাল। তূর্য ঈগল চোখের সূক্ষ্মতায় পরখ করে নিল আধবয়স্ক লোকটাকে। এক লাফে রিকশা থেকে নেমে দাঁড়াল সে। হাজির হলো শ্রেয়ার অতি নিকটস্থে। ওয়ালেট বের করে একশত টাকার একটা নোট রিকশাওয়ালার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,
‘ এর চেয়ে কম নাকি বেশি?’
শ্রেয়া কন্ঠে একরাশ বিস্ময় ঢেলে তড়িঘড়ি করে বলে,
‘ কি করছেন?আমি দিব আমার টা। আপনি যান স্যার। ‘
তূর্য পাত্তা দিল না। আধবয়স্ক লোকটার দিকে চেয়ে গাঢ় স্বরে বললো,
‘ কত ঠিক করেছে? ‘
‘ ষাট টাকা। ‘
‘ সমস্যা নেই। পুরোটা রাখুন। আর অন্য যাত্রী নিয়ে যাবেন। এটাও খেয়াল রাখবেন যাত্রীরা কখনও যেন আপনার দ্বারা ক্ষ-তিগ্রস্ত না হয়। ভালো মানুষের দাম পৃথিবীতে নগন্য হলেও পরকালে অনেক। ‘

থতমত খেয়ে যায় রিকশাওয়ালা। গলা শুকিয়ে যায় ওনার। তূর্য রিকশায় উঠে অপেক্ষা করতে লাগল শ্রেয়ার। উপায়ন্তর না পেয়ে শ্রেয়া উঠে বসল। চেপে বসল একপাশে। তূর্যর কন্ঠে তেজ,
‘ ছাত্রী বলে প্রটেক্ট করছি, এখন পড়ে গিয়ে ভার্সিটিতে বলে বেড়াবে স্যার তোমার কোমর ভেঙে দিয়েছে। ফা’লতু মেয়ে। ‘

শ্রেয়া এবার একটু সোজা হয়ে বসল। ঝাঁকুনিতে বার বার এক দিকে হেলে যাচ্ছে ও। নিমিষেই অনুভব করলো তূর্য একটা হাত পিছন দিয়ে নিয়ে ওর পাশে রাখল। বাহুতে নয়,রিকশায়। বেঁধে ফেলেছে ওকে বন্ধনে। এই বন্ধনে স্পর্শ নেই,হাত টা ওর গায়ে অব্দি লাগছে না। বুকে দুরুদুরু শব্দ হচ্ছে ক্রমাগত। চোখ বুঁজে ফেলল সে। গড়িয়ে গেল এক ফোঁটা নোনতা,তপ্ত জল। এমন করে কেউ খেয়াল রাখে নি কখনও।
রাতের বিশুদ্ধ সমীরণ গায়ে এসে বারি দিচ্ছে। তূর্য সাবলীল কন্ঠে বলে উঠলো,
‘ রিস্ক নিতে পারব না, পরে জে-লের ভাত খেতে হবে। ‘
শ্রেয়া নিশ্চুপ। বলবে না কিছু। অজান্তেই হোক,যেভাবেই হোক স্বামী নামক মানুষ টার যত্ন তো মিলছে। জীবনে না পাওয়ার মধ্যে এটা অনেক বড় এক পাওয়া।

বিশ মিনিটের পথ পারি দিয়ে রিকশা এসে থামল বিল্ডিংয়ের সামনে। শ্রেয়া ভাড়া দিতে চাইলে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো তূর্য। তাৎক্ষণিক চুপসে গেল সে। তূর্য ভাড়া মিটিয়ে হাঁটা ধরলো ওকে রেখে। অকস্মাৎ হাঁটার গতি থামিয়ে বলে,
‘ আমাদের যাত্রা টা দীর্ঘ হতো,যদি পুরোনো পথ টা ছেড়ে না দিতে।’

বুকের ধুকপুকানি বেড়ে গেল শ্রেয়ার। কি বলে গেল এটা তূর্য? ফ্ল্যাটে ঢুকে দরজা লাগিয়ে বিছানায় পড়ে রইল। মিনিট, মিনিট করে আধঘন্টা অতিবাহিত হয়। চোখ লেগে আসে। কলিংবেলের আওয়াজে হুড়মুড়িয়ে উঠে বসল। দরজা মেলতেই দেখে তূর্য। ইতোমধ্যে স্নান সেড়ে ফেলেছে সে। ছোট ছোট চুলগুলো ভেজা। মুখটা স্নিগ্ধ। শ্রেয়ার হৃদস্পন্দন থমকে গেল ক্ষীণ সময়ের নিমিত্তে। কন্ঠে কম্পন,
‘ কিছু লাগবে স্যার?’
‘ তোমাকে লাগবে। ‘

তূর্য নির্লিপ্ত,নির্বিকার। শ্রেয়ার স্পন্দনের গতি তড়িৎ বেগে বাড়তে আরম্ভ করে। থামানোর জো নেই। আমতাআমতা করে জিজ্ঞেস করলো,
‘ কি বলছেন?’
বিরক্ত হলো তূর্য। বললো,
‘ তোমাকে লাগবে। একটু খিচুড়ি রান্না করে দিতে পারবে?ভীষণ ইচ্ছে করছে খেতে। আমি পারি না। পরে মনে পড়ে যায় এখানে আমার পরিচিত বলতে প্রিয়ু ও তার ফ্রেন্ড আছে। আর প্রিয়ুর ফ্রেন্ড মানে আমার ব,,,
এতটকু বলে তূর্য থেমে ক্লান্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। উল্টো দিকে দম আটকে যায় শ্রেয়ার। তূর্য কি সব জেনে গেল?নিশ্চয়ই ওকে ঘৃ*ণা করবে। শ্বাস রোধ হয়ে আসছে ওর। মাথা টা ঝিমঝিম করছে। তূর্য কপালে ভাঁজ ফেলে অর্ধসমাপ্ত শব্দটা উচ্চারণ করে,
‘ বেয়াইন। ‘

তূর্যকে রেখে দৌড়ে চলে গেল শ্রেয়া। রুমে এসে মুখে হাত চেপে কাঁদল কতক্ষণ, কয়েক মিনিট। ফিরে আসে মাথায় ওড়না সমেত। মুখ ধুইয়ে এসেছে। দরজা লাগিয়ে তূর্যকে বললো–‘ চলুন স্যার। ‘

রান্নাঘরে এসে শ্রেয়া যত দ্রুত পারছে সব করার চেষ্টা করছে। তূর্যকে তখন চেয়েও না করতে পারে নি। শত হোক মানুষটা ওর স্বামী। হঠাৎ কানে মোবাইলের শব্দ ভেসে আসল। চেয়ে দেখে তূর্য মোবাইলটা এখানে ফেলে চলে গিয়েছে। ড্রইং রুমে হয়ত। সেখান থেকে টিভির আওয়াজও আসছে। শ্রেয়া মোবাইলটার কাছে এলো। ‘মা’ দেখেই কয়েক পা পিছিয়ে গেল ও। ধরবে না,তূর্যকেও ডাকবে না। পড়ে থাকুক। এই মহিলাকে এখন ভীষণ ভয় হয় ওর।

তূর্য নিজেই ড্রইং রুম থেকে উঠে এলো। মোবাইলটা হাতে নিয়ে শ্রেয়ার দিকে চেয়ে রিসিভ করে। কন্ঠে গম্ভীরতা এঁটে বললো,

‘ বলো। ‘
ওপাশ থেকে মেহরিমার অশ্রুসিক্ত কন্ঠ,
‘ এভাবে চলে গেলি তুই?আমি তোর জন্মদাত্রী মা তূর্য। তোর খারাপ চাই আমি?ভালো চাওয়া অন্যায়?এতটুকুই তো চাই অহমিকাকে বিয়ে করে সুখের সংসার কর,অগোছালো জীবন টা সাজা। আগেও তুই বাড়ির বাহিরে থাকতি,যেখানে মন চায় এডভেঞ্চারে চলে যেতি,এখনও চাকরির দোহাই দিয়ে দূরে চলে গেলি। ‘

‘ মানুষের একটাই হৃদপিন্ড হয় মা। সেখানে একজনকেই জায়গা দেওয়া যায়। যদি তুমি আমাকে তা দ্বিখণ্ডিত করে দু’জনকে জায়গা দিতে বলো তাহলে আমার ম’রণ নিশ্চিত। ‘

রোষপূর্ণ কন্ঠে কথাটা বলে মোবাইলটা হাতে চেপে ধরে দ্রুত বেগে রান্নাঘর ছাড়ল তূর্য। শ্রেয়ার চোখ গড়িয়ে অবাধে জল নেমে যাচ্ছে। তার স্বামী অন্য কাউকে ভালোবাসে!

#চলবে,,,!
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here