শ্রেয়সী পর্ব ৩৯

0
375

শ্রেয়সী
লেখাঃখাইরুন নেছা রিপা
পর্বঃ৩৯

রাতে দু’জনে মিলে একসাথে ডিনার করলো। কণা তখনো ভালো মেয়ের মতো দোলনায় ঘুমিয়ে চলেছে। শিশির রুমে ঢুকতে নিলেই বিন্দু বাধা দিয়ে বললো,
–এখন না!”
–কেন?”
–আমার একটু কাজ আছে এখন এই রুমে পা রাখা যাবে না।”
–মেম এর মর্জি।”
বিন্দু হাসলো! খুব সুন্দর করে। শিশির মুগ্ধ হয়ে সে হাসি চোখে ধারণ করলো। এ হাসির তীব্র ঝাঁজ যেন বুকে এসে প্রবলভাবে ধাক্কা খায়। নিজেকে সামলে নিয়ে দরজা ছেড়ে শিশির চলে গেল।

আজ সেজেছে বিন্দু নতুন সাজে। শিশিরের দেওয়া সেই নতুন শাড়িতে নিজেকে মুড়িয়ে নিয়েছে মাথা থেকে পা অব্দি। চোখের নিচে গাঢ় কাজলের রেখা এঁকেছে, হাতভর্তি রেশমী চুড়ি,কানে এক জোড়া ঝুমকো, ঠোঁটে লেপ্টে দিয়েছে গাঢ় খয়েরী লিপস্টিক আর গলায় মোটর মালা। নিজেকে দেখে নিজেই যেন লজ্জায় বিষম খাচ্ছে বিন্দু। না জানি আজ শিশিরের কী হবে। নির্ঘাত আজ শিশিরের মৃত্যু হবে বিন্দুর হাতে ভাবতেই ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসির রেখে টেনে ধরলো বিন্দু। মাথাভর্তি কালো চুলগুলো পিঠে ছড়িয়ে রেখেছে আঁচলটা টেনে মাথায় দিয়ে আবারও একবার নিজেকে ড্রেসিংটেবিলের আয়নায় ভালো করে পরখ করে নিলো। কোথাও কোনো সাজের কমতি নেই তো! ড্রেসিংটেবিলের সামনে থেকে উঠে গিয়ে ফোনটা হাতে নিলো ম্যাসেজ অপশনে গিয়ে একটা ছোট্ট ম্যাসেজ লিখলো,”এখন ভেতরে এসো!” ম্যাসেজটা সেন্ড করেই খাটের ওপর পা দুলিয়ে বসলো। ভেতরে কী সব যেন হচ্ছে বিন্দুর। বারবার শরীরের লোম কাঁটা দিয়ে উঠছে। একটা শীতল বাতাস যেন ক্ষণিক বাদে বাদেই পুরো শরীরে বইছে। হাত দু’টো মুঠো করে দৃষ্টিহীনভাবে তাকিয়ে থাকলো ফ্লোরের দিকে৷ অবাক করা বিষয় শিশিরের মুগ্ধ চাহনিপূর্ণ মুখটা যেন ফ্লোরে ভেসে উঠেছে। বিন্দু উদ্বিগ্ন হয়ে বললো,
–আপনি এসেছেন?”
কিন্তু পাল্টা কোনো উত্তর বিন্দু পেল না। তখনি দরজা ঠেলে ভেতরে পা রাখলো শিশির। বিন্দুও খাট থেকে উঠে দাঁড়ালো। ওমনি মাথার কাপড়টা পরে গেল। ফ্যানের বাতাসে বিন্দুর শ্যাম্পু করা চুলগুলো লাগামহীনভাবে উড়ছে। বিন্দু তাদের বাধা দেওয়ার কোনো চেষ্টাই করছে না। যেন বিন্দু ওদেরকে বলে দিয়েছে,
“তোরা, তোদের মন-ইচ্ছামতো উড়বি।”
শিশির মুগ্ধ চাউনিতে তাকিয়ে আছে। শিশিরের খুব ইচ্ছে করছে বিন্দুর এলোমেলো চুলগুলোকে একটু ছুঁয়ে দিতে। ধীরে ধীরে শিশির এগিয়ে এসে বিন্দুর সামনে দাঁড়ালো। হাত বাড়িয়ে আলতো করে মুখের ওপর এসে পরা চুলগুলো সরিয়ে দিলো। বিন্দু চোখের পাতা বন্ধ করে পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে আছে৷ শিশির বিন্দুর ঠোঁটে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে দিলো। বিন্দু শক্ত করে শিশিরকে জড়িয়ে ধরেছে। বিন্দুর প্রতিটা গভীর নিঃশ্বাস শিশিরের মুখে পড়ছে। এক ঝটকায় বিন্দুকে কোলে তুলে নিলো বিছানায় শুয়ে দিয়ে চলে যেতে নিলেই বিন্দু শিশিরকে বাঁধা দিয়ে বললো,
–প্লিজ!”
বিন্দুর চোখে-মুখে শিশিরকে কাছে পাওয়ার গভীর আবেদন। শিশির সেই আবেদন উপেক্ষা করে বিন্দুর নাকটা আলতো করে টেনে দিয়ে দুষ্টুমির ভঙ্গিতে বললো,
–কিসের প্লিজ হু!”
বিন্দুর মেজাজ বিগড়ে গেল। যেন কিছুই বোঝে না। শোয়া থেকে এক লাফে উঠে বসলো। তীক্ষ্ম মেজাজ দেখিয়ে বললো,
–একদম ভাব করবেন না। কিছু বোঝেন না মনে হয়?”
শিশির অন্যদিকে মুখ করে বললো,
–না বললে কী করে বুঝবো?”
বিন্দু শিশিরের টি-শার্টের কলার খামচে ধরে দাঁত কিড়মিড় করে বললো,
–আপনাকে সম্পূর্ণ করে পেতে চাই। আর আজ, এই মুহূর্তে! আর এক্ষুণি চাই।”
শিশিরের খুব হাসি পাচ্ছে সেই সঙ্গে বেশ মজাও লাগছে। শিশির কোনরকম হাসি চেপে বললো,
–আমি তো তোমারই আছি।”
–এবার কিন্তু খুব খারাপ হচ্ছে বলে দিলাম।”
–কী করলাম আমি?”
–না আপনি কী করবেন? আপনি তো সাধু পুরুষ। কারো অগোচরে ভালোই তার সবকিছু লুটপাট করতে পারেন। অথচ যখন সে নিজে থেকে কাছে পেতে চায় তখনই যত বাহানা।”

শিশির এবারে ভয় পেয়ে গেল। শনির দশা আবার কোনদিক থেকে ঘুরে এসে শিশিরের দিকে পরে বলা তো যায় না। কোনরকম ঢোক চেপে বললো,
–মা…মানে?”
–মানে আবার কী? আমি সব জানি। কণা আপনার আর আমার মেয়ে। আমি আগে প্রেগন্যান্টই ছিলাম না। তাই ইচ্ছে করে দুধের সাথে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে দিয়ে সেদিন আপনি আমার সাথে ঘনিষ্ট হয়েছিলেন।”
শিশির ভয়ে রীতিমতো ঘামতে শুরু করেছে। বিন্দুর দিকে তাকিয়ে ওর মনের ভাব বোঝার বৃথা চেষ্টা চালাচ্ছে। কিছুই শিশিরের বোধগম্য হচ্ছে না। বিন্দু খানিকটা সময় শিশিরের উত্তরের অপেক্ষা করলো তারপর গলা চওড়া করে বললো,
–সাধু পুরুষ আসছেন উনি। পেটে পেটে এত শয়তানি! আর এখন যেন ভাজা মাছাটাও উল্টে খেতে পারেন না।”
শিশির বাজখাঁই গলায় বললো,
–আসলে বিন্দু তখন হয়েছে কী…!”
–চুপ আর একটা কথাও বলবেন না। আমার পারমিশন ছাড়া কেন আমাকে টাচ করলেন? কেন…কেন…কেন?”
এবারের শিশিরের ভয়টা আরও বেড়ে যাচ্ছে। ক্রমান্বয়েই বিন্দু রেগে যাচ্ছে।
–স্যরি বিন্দু!
–একদম স্যরি বলবেন না। নাক টেনে দিবো কিন্তু। এত বড় অন্যায় করে এখন স্যরি বলা হচ্ছে । কোন সাহসে এমনটা করলেন হু?”
শিশির অসহায় ভঙ্গিতে বিন্দুর দিকে তাকালো। বিন্দু মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বললো,
–এখন এর শাস্তি পেতে হবে আপনাকে। আমার পারমিশন ছাড়া আমাকে টাচ করা একদম উচিত হয়নি আপনার।”

শিশির নির্বোধের মতো বললো,
–আচ্ছা। কী শাস্তি দেবে আমায়?”
–আমাকে অনেকগুলো ইয়ে দিতে হবে…!”
–ইয়ে মানে কী?”
বিন্দু ভিষণ জোরে শিশিরের নাক টেনে দিয়ে বললো,
–নেকামো তাই না? মেজাজ গরম করবেন না বলে দিলাম।”
–তুমি আমার ওপর রেগে নেই তো?”
–এখনও রেগে আছি। আমি যা চাই তা দিয়ে দিলে রাগ ভেঙে যাবে।”
–সত্যিই রেগে নেই তো?”
–আরেহ আজব তো৷ আপনি কি চান আমি রেগে থাকি?”
–উঁহু! একদম চাই না।”
–প্রথমে যখন জানলাম তখন খুব রাগই হয়েছিলো। ভেবেছিলাম বাড়িতে চলে যাব। কিন্তু কী আর করা কণাকে যেহেতু পেয়েছে তখন ভাবলাম রাগ করা অনর্থক। তাই রাগ-টাগ সব ঝেড়ে ফেলেছি। অযথা রাগ দেখিয়ে কী লাভ। আর আমি তো আপনার বউই হই। যদিও আপনি একটু অন্যায় করেছেনই আমাকে না জানিয়ে। তবু শুধুমাত্র কণার বাবা বলে ক্ষমা করলাম। নয়তো আপনাকে আমি…!”
–তা এসব কিভাবে জানলে?”
–ডায়রিতে তো সবই লিখে রেখেছেন। ভাগ্যিস চোখে পড়েছিলো। নয়তো তো একটা ভুল ধারণা নিয়েই থাকতাম। আর রিপোর্টগুলোও দেখলাম।”
শিশির ঘোর লাগা দৃষ্টি নিয়ে বিন্দুর দিকে তাকিয়ে আছে। কত ভয়টাই না পেয়েছিলো এসব জানলে বিন্দু কী হুলস্থূল কাণ্ডই না বাঁধায়। ভাগ্য ভালো সবটা বিন্দু মেনে নিয়েছে।

বিন্দুর নাকের ডগায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে। শিশির কিছুই বললো না। একটু ঝুঁকে বিন্দুর নাকে চুমু খেল। বিন্দু চোখ বন্ধ করে শিশিরের প্রতিটা স্পর্শ পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। শিশির নিজের বাহুডোরে তার অর্ধাঙ্গিনীকে আবদ্ধ করলো। বিন্দুও শিশিরকে আঁকড়ে ধরলো সমস্ত শক্তি দিয়ে। আজ আবার মিলন হলো দু’টি মনের! দু’টি হৃদয়ের! দু’টি আত্মার!

প্লিজ কেউ বাজে মন্তব্য করবেন না।

চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here