#শ্রেয়সী
#পর্ব_৯
#লেখনীতে_নাদিয়া_সিনহা
বাড়িতে এসেই দৌড়ে বাবা-মায়ের ঘরে ছুটে যাই। আসার পথে তনুফ ভাইয়ার থেকে শুনেছি আমার আসার কথা মা জানে না। শুধু বাবা, দাদাভাই আর তনুফ ভাইয়াই জানে। তাই প্রথমেই মায়ের কাছে ছুটে যাই। মায়ের ঘরে পা রাখতেই দেখি ভাবি আর মা বসে গল্প করছে। আমি চুপিচুপি গুটিগুটি পায়ে পেছন থেকে জোরে চিৎকার করে উঠি। মা এবং ভাবি ওরাও চিৎকার করে পিছনে তাকায়। আমাকে দেখেই মা বসা থেকে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে হুহ্ করে কেঁদে উঠে। আমার চোখের কোনেও অশ্রু টলটল করছে। আমাকে শক্ত করে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে মা। কিয়ৎক্ষন এভাবে থেকে ছেড়ে দেয়। অতঃপর আমার কন্ধে ঠাস করে চ’ড় বসিয়ে দেয়। হতভম্ব দৃষ্টি নিক্ষেপ করি মায়ের পানে। অতঃপর তটস্থ হয়ে প্রশ্ন করি,
-“মা’র’লে কেনো?”
মা নাক মুছতে মুছতে বলে,
-“এভাবে ভয় দেখালি কেনো?”
-“তাই বলে এত জোরে মা’র’বে?”
-“না এখন তো তোকে পূজা করতে হবে। তাই না?”
-“দরকার পরলে তাই করবে। আমার মত একটা ভদ্র, সভ্য মেয়ে পৃথিবীতে আছে কি না সন্দেহ।”
-“জানা আছে আমার তুই কেমন।”
আমি আম্মুর কন্ধে মৃদু ধাক্কা দিয়ে বলি,
-“তুমি না জানলে কে জানবে বলো?”
-“হয়েছে। কি খাবি বল?”
-“হোটেল দিয়েছো নাকি?”
-“ফা’জি’ল এসেই ফা’জ’লা’মো শুরু করে দিয়েছিস। যা জিজ্ঞেস করছি উত্তর দে।”
-“আপাতত যা আছে তাই খাইয়ে দেও। খুদা লেগেছে অনেক।”
-“রুমে গিয়ে গোসল করে নে। আমি খাবার নিয়ে আসছি।”
চোখের চল মুছতে মুছতে আম্মু চলে যায়। মায়েরা বোধ হয় এমনি। সন্তান দূরে গেলে কষ্টে নির্জীব হয়ে যায়। আর কাছে এলে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী। তবে কখন প্রকাশ করেন না। নিজের মত করেই লুকিয়ে যায়। আমার মা টাও ওমন। প্রকাশ করে না ঠিক। তবে ভালোবাসে অধিক।
-“এই শ্রেয়ু কি ভাবছিস? এখানে এসে আমার পাশে বস। আয়!”
ভাবির কথায় আমি তার পাশে গিয়ে বসি। আমার দৃষ্টি ভাবির উদরে। মৃদু হেসে হাত বাড়িয়ে ভাবির উদর ছুঁয়ে দেই৷ ভাবির ওষ্ঠেও প্রশান্তির হাসি। মা হওয়ার অনুভূতি বুঝি খুব সুখময় হয়? কি জানি? আমি তো মা হইনি তাই জানিও না। যখন হবো তখন পুরে পুরিভাবে উপভোগ করব।
-“তোমার উদর বড় না কেনো?”
-“এখনই বড় হবে? মাত্রই তো চারমাস। ছয়, সাত মাস যাক তারপর।”
-“এত টাইম কেনো লাগে বলো? আমার তো তরই সইছে না।”
-“বোকা মেয়ে হবে খুব তাড়াতাড়ি। তুই আবার যখন বাড়ি আসবি তখন দেখবি তোর জন্য ছোট্টো একটা পিচ্চু অপেক্ষা করছিলো।”
-“আমি তো খুব এক্সাইটেড। আমাদের বাসায়ও একটা পিচ্চি বাবু থাকবে। আমি যখন তখন আদর করতে পারবো ইয়েএএ।”
পুরো ঘরে দৌড়ে ঝাপটে আনন্দ বিলাস করছি। সত্যি খুব খুব খুব বেশিই আনন্দ লাগছে। ছোট ছোট পায়ে আমাদের পুরো বাড়ি হাঁটবে কেউ। আধ-আধ কন্ঠে অস্পষ্ট স্বরে ফুপি বলে ডাকবে। হঠাৎ নিচ থেকে ডাক আসে খাবারের। আমি ভাবি কে নিয়ে আস্তেধীরে নিচে খাবার ঘরে চলে যাই। সেখানে আগে থেকেই৷ বাবা, দাদাভাই, তনুফ ভাইয়া বসে আছে। আমাকে দেখা মাত্র বাবা দুই হাত প্রসারিত করে উচ্চস্বরে বলে,
-“আমার রাজকন্যাটা তবে ঘরে ফিরেছে। বাবার কাছে আয়।”
আমি দৌড়ে বাবা কে জড়িয়ে ধরি। বাবাও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে আমাকে। আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। ধরা গলায় বাবা কে বলি,
-“বাবা আই মিস ইউ সো মাচ।”
-“আই মিস ইউ টু মা। ওখানে থাকতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো?”
-“না বাবা কোনো সমস্যা নেই।”
-“যদি সমস্যা হয় অথবা কেউ কিছু বলে তাহলে সবার আগে বাবা কে বলবি মনে থাকবে?”
আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সম্মতি দেই। বাবা আমাকে বসতে বলে। আমি গিয়ে মায়ের পাশে বসি। মা খাইয়ে দিবে বলেছে। মা এক লোকমা খাবার মুখে তুলে দেওয়ার পর কেউ এসে আমার চোখ জোড়া শক্ত হস্তের আবরণে বদ্ধ করে দেয়। আমি চমকে কেঁপে উঠি। হঠাৎ এমনটা হওয়া দরুন আমি বেশ চমকে উঠি। নিজের শরীরের সবটুকু শক্তি দিয়ে আগন্তুকের হাত আমার চোখ থেকে সরিয়ে পিছনে ফিরে তাকাই। অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তি কে দেখে চমকে উঠি। যাকে দেখছি সত্যি কি আমার সম্মুখে সে দাঁড়িয়ে? নাকি আমার মনের ভ্রুম। আমি চিৎকার দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরি।
-“কাকের মত কন্ঠ তোর। তার উপর ষাঁড়ের মত করিস চিৎকার। এমনি আমার টাকায় পয়সার অভাব কানের পর্দা ফেটে গেলে সুস্থ হবো কিভাবে?”
রাগে, দুঃখে শান ভাইয়া কে ছেড়ে দুই কদম পিছিয়ে বলি,
-“এই জন্যই বাদর কে এত প্রায়োরিটি দিতে নেই। যেমন তুমি একটু প্রায়োরিটি দিতে না দিতে মাথায় চরে বসেছো।”
-“ঢাকায় পড়ে দেখছি তোর সাহসও বেড়েছে। এই ট্রেনিং কার থেকে নিয়েছিস হু?”
-“দ্যা গ্রেট শ্রেয়সী রাহমানীর কারো ট্রেনিং-এর প্রয়োজন হয় না। উল্টো সে সবার ট্রেইনার। তুমি চাইলে ট্রেনিং দিতে পারি। চিন্তা করো না আমি ফ্রীতে শিখিয়ে দিব। কেমন?”
-“যাহ সর বুচি। তোর থেকে ট্রেনিং নিব আমি? শান রাহমানী! হাউ ফানি।”
কথাটা বলে শান ভাইয়া আমার চেয়ারে বসে পরে। আমি তেড়ে এসে বলি,
-“আমার চেয়ারে কেনো বসলে? দেখছো আমার খাওয়া শেষ হয়নি।”
-“নাম লেখা আছে তোর চেয়ার এটা? আর তুই আমাদের মতো ভাত খাচ্ছিস নাকি রে? আমি তো জানি তুই ঘাস খাস।”
দাঁত বের করে হাসছে শান ভাইয়া। আমি রেগে শক্ত করে ভাইয়ার চুল খামচে ধরে। ভাইয়া চিৎকার করছে তবুও আমি ছাড়ছি না। পাশ থেকে মা বলছে, “ছেড়ে দে আমার ছেলে কে।” বাবাও শান্ত হতে বলছে। দাদাভাই আর ভাবিও মিটমির করে হাসছে। অতঃপর তনুফ ভাইয়া এসে ওর থেকে আমাকে ছাড়িয়ে নেয়৷ আমি তনুফ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে উচ্চস্বরে বলি,
-“তোমার বাদর ভাই বাড়ি এসেছে আগে বললে না কেনো? তাহলে কি আমি আসতাম নাকি? আমি এখনই চলে যাব।”
তনুফ ভাইয়া বলে,
-“শ্রেয়ু তোকে বলেছিলাম না সারপ্রাইজ আছে। শান এসেছে বলেই তোকে নিয়ে এলাম। বাড়িতে সবাই আছে তুই ছাড়া ফাঁকা ফাঁকা লাগছিলো।”
শান ভাইয়া বলে,
-“যা যা! তুই গেলে আমারই শান্তি। সমগ্র মহল জুড়ে আমারই রাজত্ব হবে।”
শান ভাইয়ার কথায় আমি দমে যাই। চোখ ছোট ছোট করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলি,
-“যাব না আমি কোথায়। এখানেই থাকব।”
শান ভাইয়া কপট রাগ দেখিয়ে বলে,
-“বুচি কোথাকার এখনই বের হো বাড়ি থেকে।”
আমি টুপ করে গিয়ে চেয়ারে বসে পরি। শান ভাইয়া বোকার মত তাকিয়ে থেকে বলে,
-“কিরে বুচি তুই তো দেখি চালাক হয়ে গেছিস। এই তোর মাথার গোবর গুলো কই গেলো?”
-“কেনো ভাইয়া তোমার মাথায়।”
শান ভাইয়া ভ্যাঁবাচ্যাঁকা খেয়ে যায়। বাবা, দাদাভাই, তনুফ ভাইয়া, ভাবি, মা সবাই আমার কথায় উচ্চস্বরে হেসে দেয়। আমি ধীরে ধীরে মায়ের হাতে খেতে থাকি। ইচ্ছে করেই করছি। শান ভাইয়াও বসে আছে মায়ের হাতে খাওয়ার জন্য। তবে আমি সাইট দিলে তো খাবে। প্রায় অনেক্ক্ষণ ধরে খাওয়ার পর আমি উঠি। শান ভাইয়া আমার মাথায় চ’ড় মেরে ধাক্কা দিয়ে বলে,”দূর হো আমার চোখের সামনে থেকে বিভীষণ একটা।”
আমি মুখ ভেঞ্চি দিয়ে চলে যাই নিজের ঘরে। ঘরে পা রাখতেই বক্ষস্থলে কেমন হু হু করে উঠলো। কেমন মনে হচ্ছে চাপা কষ্ট বেরোতে না পেরে অন্তস্থলেই পাথরের ন্যায় পরে জমে আছে৷ এক অশান্তিময় ক্লেশ তীব্র বেগে দুমড়েমুচড়ে উঠেছে হৃদয়ে। এ ব্যথা সরানোর উপায় আমার জানা নেই। ফোন হাতে নিয়ে রোদ্দু কে কল করি।
-“শ্রেয়ু আমি তোকে কল দিতাম এখন দেখি তুই-ই দিলি। শোন না কি হয়েছে। বাড়িতে আমি অনশনব্রত করেছি।”
-“কেনো? আবার কি গোলমাল পাকিয়েছিস?”
-“তোর কি মনে হয় আমি সব সময় গোলমাল করি?”
-“তুই ছাড়া কেউ করতে পারে না আমি মনে করি। এবার আসল কাহিনি বল।”
-“অপমান করলি তো ঠিক আছে যা আজ থেকে ভালো হয়ে যাবো।”
-“দেখা যাবে।”
-“আচ্ছা শোন আসল কথাই তো বলা হয়নি। আমার ফোনটা তো পুরোনো হয়ে গেছে ঠিকঠাক চলেও না। তাই বাড়িতে বলেছি শহরে কলেজে পড়ি একটা ফোন কিনে দেও। ওমা তারা কি বলে জানিস?”
আমি বিরক্ত হয়ে বলি,
-“কি বলে?”
-“তারা বলে কি না ‘পড়তে গেছিস এত রঙ্গলীলা কিসের? বেশি বেশি করলে বিয়ে দিয়ে শশুর বাড়ি পাঠিয়ে দিব। তখন ফোন নয় পুরো সংসারে তদারকি করবি।’ কি বলে দেখেছিস?”
-“দেখিনি শুনলাম।”
-“মজা নিস না। প্লিজ উপায় বল।”
-“ফালতু কাজের উপায় আমার কাছে নেই। ফোন রাখ তুই। আর শোন আমাকে ফোন দিবি না। অ’স’ভ্য!”
রোদ্দুর উত্তর না শুনেই বিরক্ত হয়ে কল কেঁ’টে দেই। কল দিয়েছি একটু মন ভালো করতে৷ ওর আজাইরা কথা বলে বলে আমার মনটা আরও খারাপ করে দিচ্ছে। ফা’জি’ল মেয়ে একটা। বিরবির করে ইচ্ছে মত বকছি রোদ্দু কে। এরই মধ্যে শান ভাইয়া আমার ঘরে আসে। আমাকে বির বির করতে দেখে জিজ্ঞেস করে,
-“কার গুষ্টি উদ্ধার করছিস বুচি?”
-“কার আবার রোদ্দুর।”
-“কেনো রে? ওই গাধী কি এখনও গাধীই রয়ে গেলো?”
-“তার থেকেও বেশি হয়েছে। টকিং মেশিন একটা।”
হতাশ নিশ্বাস ছেড়ে আফসোসের কন্ঠ শান ভাইয়া বলে,
-“ব্যর্থ আমরা আমাদের মত সভ্য, শান্ত, ভদ্র মানুষের কাছে রেখেও তোদের মানুষ করতে পারলাম না। সত্যি আমরা ব্যর্থ, হতাশ আমি।”
-“এ্যাহ! আমরা না হয় অ’ভ’দ্র তুমি তো ভদ্র তাহলে ভদ্র হয়ে আমার মত অ’ভ’দ্রে’র সাথে ঝগড়া করতে তেমার লজ্জা করে না।”
-“কি বললি তুই? আমি তোর সাথে ঝগড়া করি? আরে ঝগরুটে মহিলা তুই পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করিস আমার সাথে। আমি বাবা ভদ্র শান্ত ছেলে তাই তোদের ফাদে পা দিয়ে ফেলি।”
-“ফালতু কথা না বলে আগে বলো আমার জন্য কি এনেছো?”
-“তোর জন্য আবার কি আনব? তুই যদি মানুষ হতি তাহলে আনতাম।”
আমি অগ্নি দৃষ্টিতে তাকাতেই শান ভাইয়া উচ্চরস্বরে হেসে বলে,
-“তোর আলমারিতে দেখলাম একটা লাগেজ। সেটা কার?”
ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করি,
-“কিসের লাগেজ? আমি তো আনিনি? আর তুমি আমার আলমারিতে হাত দিয়েছো কেনো?”
-“যা গিয়ে দেখ আগে। আমি গেলাম ঘুমাতে।”
শান ভাইয়া চলে যায় নিজের ঘরে। আমি দ্রুত পায়ে আলমারির দিকে অগ্রসর হই। আলমারি খুলে দেখি সত্যি সত্যি একটা লাগেজ। আমি ওটাকে নিয়ে বিছানায় বসি। লাগেজ খুলতেই একটা চিরকুট পাই। সেখানে লেখা,
-“ভাবিস না বুচি ভালোবেসে এনেছি। যদি কিছু নাই আনতাম তাহলে তুই আমার বাঁচা হারাম করে দিতি।”
চিরকুটটা দেখে আমি হেসে দেই। শান ভাইয়া যতই বলুক আমাকে সহ্য হয় না ততোই সে চায় আমি যেনো তার কাছে কাছে থাকি। জানি ভাইয়া আমাকে অনেক ভালোবাসে। পুরো লাগেজ জুড়েই ছিলো বেশির ভাগ চকলেট। তবে খেতে ইচ্ছের করছে না তাই লাগেজটা আবার আলমারিতে তুলে রাখি৷ হঠাৎ ফোন বেজে উঠায় আমার ধ্যান ভেঙ্গে যায়। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি স্ক্রিনে ‘নুসু’ নামটা জ্বল জ্বল করছে। নুসুর পুরো নাম নুসাইবা। আমরা সব বন্ধুরা ছোট করে নুসু বলি। আর এক মুহুর্তও সময় ব্যয় না করে দ্রুত ফোন রিসিভ করি,
-“কেমন আছিস নুসু?”
-“এই তো ভালো। তুই কেমন আছিস?”
-“ভালোই আছি। তবে বাড়িতে মন টিকছে না।”
-“তুই যে বাড়ি যাবি বললি না তো আগে। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি তুই রোদ্দু নেই। তারপর শুনি তোরা বাড়ি গেছিস।”
-“হ্যাঁ! শান ভাইয়া এসেছে তাই। বাড়িতে সবাই আছে আমি নেই ফাঁকাফাঁকা লাগে। তাই বাবা আর ভাইয়ারা নিয়ে আসে। চলে আসব দ্রুতই।”
নুসু বিরবির করে বলে,
-“হ্যাঁ! জলদি আয় কেউ তোর জন্য মরিয়া হয়ে আছে।”
-“কি বললি তুই? কে মরিয়া হয়ে আছে?”
-“আরে আমরা ফ্রেন্ডরা মরিয়া হয়ে আছি বুঝিয়েছি। আসবি কবে বল?”
-“এক বা দেড় সপ্তাহ পর।”
ওপাশ থেকে নুসু চিৎকার করে বলে,
-“কিহ! এত দিন থাকবি? তোর জন্য তো ম’রে যাবে।”
-“কে ম’রে যাবে আবার?”
-“তা এত দিন যে থাকবি কলেজ থেকে ছুটি নিয়েছিস?”
আমি বোকার মত ভাবতে থাকি সত্যিই তো। আমি যে নাচতে নাচতে চলে এলাম কলেজ থেকে তো ছুটি নেইনি। এবার কি হবে? কলেজে গেলে তো টিচার কথা শোনাতে ছাড়বে না। মস্তিষ্কে উদয় হয় নতুন বুদ্ধির। পেয়েছি বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার উপায়। নুসু কে বাই বলে ফোন রেখে। দ্রুত দৌড়ে যাই তনুফ ভাইয়া রুমের দিকে। দরজা খোলা থাকায় আমি আর নক করিনি৷ ঘরে ঢুকেই দেখি ভাইয়া ল্যাপটপে কাজ করছে৷ আমি গিয়ে ভাইয়া পাশে বসে ব্যস্ত কন্ঠে বলি,
-“ভাইয়া আমার ঢাকা ফিরতে হবে অতি শীগগির।”
ভ্রু কুঁচকে ভাইয়া প্রশ্ন করে,
-“কেনো?”
-“আমি তো ছুটি আনিনি। থাকব কিভাবে? কালই চলে যেতে হবে। ম্যাম কল দিয়ে বললো চলে যেতে।”
-“তোর কোন ম্যাম কল দিয়ে বললো চলে যেতে? নাম বল।”
জালে পরার মতো ফাঁদে পরে যাই। এবার কি বলব? কোনো ম্যামের নামই তো জানি না ঠিক করে। কার নাম বলব। আমাকে আমতাআমতা করতে দেখে ভাইয়া বলে,
-“তোর সাথে হয়তো কেউ ফা’জ’লা’মো করেছে।”
-“না ভাইয়া সত্যি বলছি।”
-“বাবা নিজে তোর কলেজে গিয়ে প্রিন্সিপালের থেকে ছুটি নিয়ে এসেছে। আর কলেজে গার্ডিয়ানের জায়গায় আমার নম্বর। তাহলে কল তোর কাছে এলো কিভাবে?”
থতমত মুখ করে ভাইয়া দিকে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া ভ্রু নাচিয়ে প্রশ্ন করছে বার বার। আমি ঢোক গিলে বলি,
-“হয়তো কেউ প্রাঙ্ক করেছে। আমি আসছি।”
বলেই দ্রুত প্রস্থান করি। ধূর প্লান টা কাজ করলো না। ভেবেছি এই বাহানায় ঢাকায় চলে যাবো তাড়াতাড়ি। হলো কই আর। এবার কিভাবে যাব আমি?
~চলবে…..