#শ্রেয়সী
#পর্ব_২৭
#লেখনীতে_নাদিয়া_সিনহা
তনুফ ভাইয়া কান্নায় ভেঙে পরে। বার বার আমার কাছে ক্ষমা চাইছে। ভাইয়াকে সামলানো বড্ড দ্বায়। বেশ খানিক পর ভাইয়া চোখের জল মুছে বলে,
-“ওয়ালিদকে আমি ছাড়ব না। এর শেষ দেখে ছাড়ব।”
আমি ভয়ার্ত কন্ঠে বলি,
-“ভাইয়া প্লিজ কিছু করো না। যা হওয়ার হয়েছে পাল্টানো যাবে না তা।”
-“তুই ভয় পাবি না শ্রেয়ু। আমি আছি, ভাইয়া আছে, বাবা আছে, শান আছে আমরা সবাই তোর সাথে আছি তো।”
-“তোমরা আমার সাথে আছো বলেই ভয় আছে। ওয়ালিদ আমার ক্ষতি করতে এসে তোমাদোরও করবে। প্লিজ ছেড়ে দেও।”
-“স্যরি বোন পারলাম না এটা।”
ভাইয়া দাঁড়িয়ে সদর দরজার দিকে এগিয়ে যায় আমি পেছন থেকে উত্তেজিত হয়ে বলি,
-“তুমি যদি কিছু করো তাহলে এবার আমি একেবারে হারিয়ে যাব।”
ভাইয়া পেছন ফিরে বলে,
-“এই ভুলটা স্বপ্নেও ভাবিস না।”
-“প্রমিস! তুমি কিন্তু জানো আমি আমার প্রমিস রাখি।”
ভাইয়া লম্বা শ্বাস টেনে বেরিয়ে যায়। আমি রোদ্দু দিকে তাকিয়ে নিচে বসে পরি। রোদ্দু এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে। রোদ্দুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরি। কান্না করার দরুন কন্ঠ অস্বাভাবিক অস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। অস্পষ্ট স্বরে রোদ্দুকে বলি,
-“এমনটা কেনো হলো আমার সাথে? এমনটা না হলেও পারতো রোদ্দু।”
রোদ্দু আমার আরও একটু চেপে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। সত্যিই তো জীবনটা এমন না হলে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যেতো? কোথাও একটা পড়েছিলাম মানুষের জীবনের প্রতিটা ধাপ একেক রকম হয়। যদি যৌবন কাল সুখময় হয় তবে বৃদ্ধ কাল হয় কষ্টের। আর যদি যৌবন হয় কষ্টের তবে বৃদ্ধ কাল হয় সুখের। কিন্তু আমার যৌবনের আগেই এত কষ্ট কেনো? এতটাই কষ্ট হচ্ছে কেবল বোধ হচ্ছে আমি বাঁচতে পারব না আর এই কষ্ট সহ্য করে। কান্নার এক পর্যায় আমি রোদ্দুর গায়ের উপর নিজের শরীরের সকল ভার ছেড়ে দেই। মস্তিষ্ক বড্ড ক্লান্ত। তাই সহ্য করতে না পেরে নিশ্চল হয়ে নিস্তব্ধ করে দেয় আমায়৷ চোখ জোড়ায় নেমে আসে অন্ধকার।
চোখের পাতা মেলতেই তনুফ ভাইয়া কে আমার পাশে বসে থাকতে দেখি। তনুফ ভাইয়া আমার দিকেই তাকিয়ে। আমাকে চোখ খুলতে দেখে বলে,
-“এভাবে আর কত শ্রেয়ু? এমন হলে সারাজীবন কাটাবি কি করে?”
-“এখন পর্যন্ত যেভাবে চলে আসছে সে ভাবেই।”
-“না আমরা সিলেট ফিরে যাব। আমি ভাইয়াকে সব জানাব।”
-“আমার কসম দিয়ে বলছি কাউকে কিচ্ছু জানাবে না আমার ব্যপারে প্লিজ।”
তনুফ ভাইয়া অসহায় ভঙ্গিতে আমার পানে তাকিয়ে। আমি চুপ করে চোখের জল ফেলছি কেবল।
দিন গুলো পার হয়ে যাচ্ছিলো কেমন করে যেনো। সর্বক্ষণ আমার অন্তরাল কেবল বিষন্নতায় ভুগতো। নিজে যে চেয়েও তা ভালো করার কৌশল বের করতে পারলাম না। আমার বিষন্ন মন প্রসন্ন করতে তনুফ ভাই আর রোদ্দু কত চেষ্টাই না করতো। তবে তা প্রসন্ন নয় বিষন্নতায় ঘিরে যেতো। ইদানীং শরীরের অবস্থাও তেমন ভালো ঠেকছে না। দূর্বল বোধ হয় সর্বক্ষণ। হুটহাট অজ্ঞান হয়ে যাওয়াটা নিত্যদিনের অভ্যস হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাথায় কেমন চিনচিন ব্যথা অনুভব হয়। মস্তিষ্কে কোনো বিষয় নিয়ে চাপ পরতেই অসহনীয় ব্যথা আরম্ভ হয়৷ সহ্য করা দ্বায়। তবুও সহ্য করে গেছি। রোদ্দু বা ভাইয়া কাউকে জানাইনি এ ব্যপারে। না হয় ওরা আরও চিন্তায় পরবে।
নুসুর কথা মনে পরে বেশ। রোদ্দু কে জিজ্ঞেস করেছিলাম নুসু এখন কোন ভার্সিটিতে পড়ে। রোদ্দু আমার দিকে তাকিয়ে শব্দ করে হেসে বলে,
-“নুসুর আর লেখা পড়া। বিয়ে করে মা হতে যাচ্ছে তোর নুসু ডার্লিং।”
রোদ্দুর কথায় আমি কিছুই বুঝি না। প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি। রোদ্দু আমার বেগ গতি টের পেয়ে নিজেই বলে,
-“তোর বিয়ের দিন রোদ্দু আর সাজ্জাদ ভাই পালিয়ে বিয়ে করে। আর নুসুও এখন প্রেগন্যান্ট।”
নুসু আর সাজ্জাদ ভাইয়ের জন্য খুব বেশি আনন্দ হচ্ছে। আমার অপূর্ণতায় ঘেরা বিষন্ন শহরে অন্তত কারো জীবন পূর্ণতা পেয়ে প্রশান্তিতে মেতে উঠেছে।
আরাবী কে দেখি না অনেক গুলো মাস পেরিয়ে গেছে। ছেলেটাকে আজ কাল বড্ড বেশি মনে পরছে। অন্তরালে কেবল বোধ হচ্ছে আমার সাথে যদি এমনটা না হতো তাহলে আজ কোনো এক ভার্সিটির ক্যাম্পাসে বসে আমি আর আরাবী মেতে উঠতাম গল্পের চরিত্র। আফসোস আজ সবই কল্পনা। আরাবীর কথা রোদ্দু কে জিজ্ঞেস করতেই বলে,
-“আরাবী ভাইয়াকে ক্যাম্পাসে আর দেখিনি তেমন। তবে শুনেছি ওনি ক্যাম্পাসে এসেছিলেন। তবে আমার সাথে দেখা হয়নি। ফোন নম্বরটা বোধ হয় পাল্টে ফেলেছে। কোথায় থাকে তা জানি না।”
রোদ্দু কথায় কেবল হতাশ নিশ্বাস ত্যাগ করি। অতঃপর বেশ করুনতায় অনুরোধ করি আরাবীর ঠিকানা জোগাড় করতে। রোদ্দু প্রথমে নাকচ করে দেয়। আমার অনুরোধে নুসু কে কল দিয়ে বলে সাজ্জাদ ভাইয়ের থেকে আরাবীর ঠিকানা নেওয়ার জন্য৷ প্রায় এক সপ্তাহের বেশি সময় পর আরাবী ঠিকানা জানতে পারি। আরাবী এখন আর তার বাবা মায়ের সাথে থাকে না। আলাদা একটা ছোট চিলেকোঠার ঘরই নিজের সম্বল করে নিয়েছে। কারণটা ঠিক জানা নেই। আরাবী ঠিকানা জানার পরের দিন রোদ্দু কে নিয়ে বেরিয়ে পরি সেখানে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। তবে ভাগ্য সহায় হয়নি তাই সেদিন আরাবী কে দেখতে পাইনি। এভাবে বেশ কদিন গিয়েও আরাবী দেখা পাইনি। পাশের দারওয়ান কাকা কে জিজ্ঞেস করলে বলেন “আরাবী বাবা তো অনেক সময় বাড়ি ফিরেনও না।” হতাশ হয়ে কেবল ফিরে আসতাম সেখান থেকে।
__________________
এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ডাক্তারের পানে। ওনার বলা বাক্য কর্ণপাত হতেই হাত-পা অবশ হয়ে যায়। মস্তিষ্কে চিনচিন ব্যাথা সৃষ্টি হয়। নির্জীব প্রাণীর ন্যায় ঠায় বসে থাকি। সমস্ত ইন্দ্রিয় থমকে যায়। নড়াচড়া করতে যেনো ভুলে যাই। সুরাইয়া ম্যাম আমার হাতটা শক্ত করে ধরে শান্ত হতে বলেন। খুব করে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু চোখের জল যেনো ফুরিয়ে গেছে।
সুরাইয়া ম্যামের সাথে ডাক্তারের ক্যাবিনে বসে ছিলাম। বেশ কিছু মাস যাবত শরীরে বেগ গতি কেবল অবনতি দিকে যাচ্ছিলো। রোদ্দু ভার্সিটিতে থাকায় আমি সুরাইয়া ম্যাম কে কল দিয়ে আসতে বলি। সুরাইয়া ম্যাম এসে আমার শারীরিক অবস্থা দেখে জোর করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে আসে। ডাক্তার কিছু টেস্ট দেয়। টেস্ট করানো শেষ হতেই ক্যাবিনে ডাকা হয়। আমি গিয়ে চেয়ারে বসতেই ডাক্তার হাসি মুখে বলেন,
-“কংগ্রাচুলেশনস মিসেস!”
আমি এবং সুরাইয়া ম্যাম উভয় অবাক দৃষ্টিতে ডাক্তারের পানে তাকাই। ডাক্তার আমার প্রতিক্রিয়া দেখে ওষ্ঠদ্বয় খানিক প্রসস্থ করে বলেন,
-“কংগ্রাচুলেশনস ফর ইউর প্রেগ্ন্যাসি মিসেস.শ্রেয়সী।”
নিশ্চুপ হয়ে কেবল শুনে যাচ্ছি ডাক্তারের প্রতিটি বাক্য। স্বপ্ন নাকি সত্য তা ঠিক ধারনা করতে পারছি না। এ কয়েক মাসে আমার সাথে যা যা হয়েছে স্বপ্ন না সত্যি তা বুঝতে বেশ বেগ পেতে হয়। অঘোর ঘুমন্ত অবস্থায়ও চোখের সম্মুখে ভেসে উঠতো সেই বি’ভ’ৎ’স’তা। যা আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খেয়েছে। আমি ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে জোর পূর্ব হেসে জিজ্ঞেস করে,
-“কোথাও ভুল হচ্ছে বোধ-হয়। আমি প্রেগন্যান্ট হবো কি করে?”
-“কোনো ভুল নেই। আমাদের ল্যাবে সঠিক পরিক্ষার পরই রিপোর্ট দেওয়া হয়।”
সুরাইয়া ম্যাম আমার হাত চেপে ধরে চুপ করিয়ে বলে,
-“ডাক্তার আসলে হঠাৎ খুশীর সংবাদ শুনলো তো তাই বিশ্বাস করতে পারছে না। আর এটা ওর কত মাস?”
-“এই তো চার মাসের কাছাকাছি মেবি।”
সুরাইয়া ম্যাম আমার দিকে অবিশ্বাস্য চাহনি নিয়ে তাকিয়ে আছে। ডাক্তার রিপোর্ট গুলো ভালো করে দেখে ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,
-“আপনার প্রেগ্ন্যাসিতে কিছু কম্পলিকেটেড আছে। তবে চিন্তা করবেন না সময়ের সাথে সাথে তা ঠিক হয়ে যাবে।”
নিশ্চুপ হয়ে কেবল শুনছি৷ বলার মতো ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। এই বাচ্চাটা নিয়ে আমি বাঁচব কি করে? সমাজ যে বড্ড ভয়ংকর। পিতৃহীন সন্তান কে যে সমাজে নিম্ন স্থানে রাখা হয়। যেখানে আমার বাঁচা দ্বায় হয়ে দাঁড়িয়ে সেখানে আমার সন্তানের ঠাই কথায় হবে? কে’ই বা দিবে তাকে পিতৃপরিচয়?
নিজেকে সামলানো বড্ড কষ্টের হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুরাইয়া ম্যাম কে ভর করে হেঁটে বাইরে বেরিয়ে আসি। নিষ্প্রাণ হাঁটছি কেবল। এতটাই উদাসীনতায় ভুগেছি যে প্রেগন্যান্ট হয়ে যেতে পারি তারও টের পাইনি। ঠিক কতটা মানসিক যন্ত্রণায় ছিলাম আমি তা আজ উপলব্ধি করতে পারছি। সুরাইয়া ম্যাম আমাকে নিয়ে কোথায় একটা চেয়ারে বসে৷ আমার দুহাত শক্ত করে ধরে বলেন,
-“প্রেগন্যান্সির এতগুলো দিন চলে গেলো আর তুমি কিছু টের পাওনি শ্রেয়সী?”
-“কখন দিন হয়েছে কখন রাত হয়েছে তার টের পর্যন্ত আমি পাইনি ম্যাম।”
-“তাই বলে এটাও টের পাওনি যে তোমার….। আচ্ছা সেসব কথা বাদ দেও। এখন কি করবে?”
ম্যামের কথা সত্যি। এতটা কেয়ারলেস ছিলাম যে বুঝিনিই আমি প্রেগন্যান্ট। ম্যাম বেশ খানিক সময় চুপ থেকে ধীর কন্ঠে বলে,
-“শ্রেয়সী আমি জানি তোমার মনের অবস্থা কি হতে পারে। কিন্তু আমার কথাটা একবার শুনো বাচ্চাটা তুমি নষ্ট করে দেও।”
চমকে সুরাইয়া ম্যামের দিকে তাকাই। ম্যাম আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,
-“তোমার বাঁচার অধিকার আছে। জানি একটা নিষ্পাপ প্রাণ মেরে ফেলা জ’ঘ’ন্য কাজ তবে ও থাকলে তোমার সারাটা জীবন জঘন্য বলে মনে হবে। নিজের প্রতি ঘৃণা জন্মাবে তাই বলছি বাচ্চাটা নষ্ট করে দেও।”
মাথা নিচু করে ধীর কন্ঠে বলি,
-“আমার সাথে যা হয়েছে তা কেবল ভাগ্যের লিখন। চাইলেও পাল্টানো যেত না। আর এই স্মৃতি কোনো দিন আমার মস্তিষ্ক থেকে দূর হবে না। সেটা বাচ্চাটা থাকলেও না থাকলেও। বাচ্চাটা থাকলে যেমন মনে পরবে না থাকলে আরও বেশি মনে পরবে। তখন নিজেকে অপরাধী বলে মনে হবে নিজের বাচ্চাকে মেরে ফেলার অপরাধে।”
-“তার মানে তুমি বলতে চাইছো বাচ্চাটা রাখবে?”
দীর্ঘশ্বাস টেনে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেই। ম্যাম আমার দিকে তাকিয়ে হাতশ নিশ্বাস ত্যাগ করে বলেন,
-“অনেক বড় ভুল করছো। বাচ্চাটা বাঁচাতে গিয়ে তোমার না প্রাণ যায়।”
আমি মৃদু হেসে বলি,
-“বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাই তো ম’রে গেছে। ম’রে গেলেও আফসোস নেই।”
________________________
বাড়ি এসে রোদ্দু এবং ভাইয়াকে প্রেগ্ন্যাসির ব্যপারে জানাতেই তারা এক বাক্যে বাচ্চাটা নষ্ট করে দিতে বলে। তবে এতে আমার ঘোর অমত। আমি চাই না আমার প্রথম সন্তান কে মেরে ফেলতে। হোক তা ভুলের খেসারত তবুও আমার গর্ভে বেড়ে উঠে তার মানে আমার সন্তানই। আমার সিদ্ধান্তে ভাইয়া এবং রোদ্দু দুজনেই বেশ আপত্তি জানায়। রাগ করে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। তবুও আমি আমার জায়গায় অটল থেকেছি। মা হওয়ার প্রথম সুখানুভূতি অনুভব হওয়া থেকে নিজেকে বঞ্চিত করব? মা হয়ে এমনটা কি করে হতে দেই? মা তো মা-ই হয়।
তনুফ ভাইয়া আমাকে ডেকে শান্ত ভঙ্গিতে বলে,
-“বাচ্চাটা রাখবি তাহলে?”
-“হ্যাঁ।”
-“একটা বাচ্চা লালন-পালন করতে কি কি প্রয়োজন তা জানিস?”
-“হ্যাঁ জানি।”
-“সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বাবার পরিচয়। কেউ জিজ্ঞেস করলে কি পরিচয় দিবি?”
এই প্রশ্নের জবাব নেই আমার। ভাইয়া যা বলছে ঠিক বলছে। আমি ওকে কার পরিচয়ে বড় করব? আমার নিজেরই তো পরিচয় নেই। খানিকক্ষণ চুপ থেকে আচমকা উত্তেজিত হয়ে ভাইয়াকে বলি,
-“ভাইয়া আমার বাচ্চাটাকে তোমার আর রোদ্দুর পরিচয়ে বড় করতে পারবে না?”
ভাইয়া জল ভর্তি দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি উত্তরের আশায় মাথা নাড়িয়ে ইশারা করছি। ভাইয়া একবার রোদ্দুর দিকে তাকায়। রোদ্দু দরজার পাশে দাড়িয়ে চোখের জল ফেলছে। রোদ্দু ভাইয়াকে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে। ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
-“বড় হয়ে গেছিস খুব।”
শব্দ করে হেসে বলি,
-“তা বড় হবো না? এক বাচ্চার মা হয়ে যাচ্ছি। এখনও কি বাচ্চা থাকব বলো?”
রোদ্দু আর ভাইয়াও হাসছে। আমার প্রতি রোদ্দুর যত্নশীলতা আগের তুলনায় আরও বেশি বেড়ে গেছে। ঠিক সময় করে খাইয়ে দেয়। একদম মায়ের মতো শাসন করে। মা কে বড্ড মনে পরে। মেয়েদের এই সময়টা মায়েরাই তো বেশি খুশী থাকে আর যত্ন করে। আমার মাও নিশ্চয়ই করতো। যেমনটা ভাবির সময় করেছিলো। তাওফের কথাও মনে পরে ছেলেটা নিশ্চয়ই বড় হয়ে গেছে। তনুফ ভাইয়া প্রায় তাওফের কথা বলে। আর আমি ভাবি আমার বাচ্চাটাও হয়তো তাওফের মতোই হবে।
জীবনে বেঁচে থাকার মাধ্যম খুঁজে পেয়েছি। আমার বাচ্চাটাকে নিয়ে সারা জীবন কাটিয়ে দিতে পারবে নিসন্দেহে। কারো প্রয়োজন নেই আমার আর। আরাবীর কাছে যাওয়াও এখন সম্ভব নয়। জানি সে আমাকে আগলে নিবে। তবে আমার বিষাক্ত জীবনে রঙ্গিন দুনিয়াকে আমন্ত্রিত করে বিষাক্ত করতে চাই না। সে থাকুক তার মতো করে। আমি না হয় দূর থেকেও কাছে থাকব।
~চলবে……