শ্রেয়সী পর্ব ১২

0
252

#শ্রেয়সী
#পর্ব_১২
#লেখনীতে_নাদিয়া_সিনহা

সুনামি আসুক অথবা ঝড় তুফান। এমন কি কেয়ামত হলেও আমাকে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে হবেই। কারণটা আরাবী। সে হুমকি দিয়ে গেছে যদি আমি প্রতিযোগিতায় পার্টিসিপ্যান্ট না করি তাহলে আমার বাড়ি গিয়ে বলবে সে আমার প্রেমিক পুরুষ। এতেই আমার হাত পা কাঁপা-কাঁপি করে ভূমিকম্প সৃষ্টি করে ফেলেছে। ভয়ে আমি হ্যাঁ করে দেই। আর ঠিক তখন সে জানায় আমাকে তার কথা মতো প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হবে৷ এটা শুনে আমার মাথা ভনভন করে উঠে। বেশ বুঝতে পারছি যা বলবে তা নিশ্চয়ই আমার জন্য কষ্টদায়ক হবে। ভেবে ভেবে নিজেই নিজের মাথা ফাটিয়ে ফেলছি। আর এদিকে নুসু রোদ্দুর অবস্থাও ভীষণ করুন। একজন নাচ করবে তো একজন বিতর্ক। নুসু নাচের ‘ন’ও জানে না অথচও ওকে বলা হয়েছে নাচতে। আর রোদ্দু সে যতই পটর পটর করুন বির্তকের মাঝে টপিক বাদ দিয়ে ঝগড়া বাঁধিয়ে ফেলে। পারে না বিপরীতে পক্ষের মানুষকে কশিয়ে দুটো চ’ড় মা’র’তে। এমন একটা বাজে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে যায়৷ রোদ্দুর মায়ের বড্ড ইচ্ছে ছিল মেয়ে কে ডাক্তার করার৷ কিন্তু সে নিজেই এখন বলে,”তুই ডাক্তার হলে নির্ঘাত মানুষ মে’রে ফেলবি। তোকে ডাক্তারি পড়ানো যাবে না। বলা তো যায় না কখন কে এসে মামলা করে দেয়। তার থেকে ভালো তুই আইন নিয়ে পড়। আসামি মিথ্যা বললে দুটো চ’ড় বডিয়ে দিবি। ব্যাস তোর চ’ড়ে সব সত্যি বলে দিবে।” এ নিয়ে রোদ্দুর যত ঝগড়া।

-“শ্রেয়ু খবর পেয়েছিস?”

হন্তদন্ত হয়ে ঘরে প্রবেশ করে নুসু। উত্তেজিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে। আমি স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করি,
-“কী খবর?”

-“আরাবী ভাইয়ারা তোকে দিয়ে গান করাবে শুনেছি।”

নুসুর কথায় চারশ চল্লিশ ভোল্টের শক খাই। অক্ষিদ্বয় তাৎক্ষণাক বৃহৎ আকৃতি ধারণ করে। গান করাবে আমাকে দিয়ে। তাও পুরো ভার্সিটির সামনে। আমি তো লজ্জায় দাড়াতে পারব না। গান করব কি করে? ভয়ার্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করি নুসুর পানে। অতঃপর জিজ্ঞেস করি,
-“তুই কোত্থেকে শুনলি?”

-“সাজ্জাদ ভাই ওরা এটা নিয়ে আলোচনা করছিলো তখন শুনেছি। শুনেই দৌড়ে তোর কাছে চলে এলাম।”

-“এখন কি করব আমি? গান তো ভুলেও করব না। প্লিজ আমাকে এ যাত্রায় বাঁচিয়ে দে বইন।”

-“তুই আমাকে বাঁচা আগে। তোরটা তাও ভালো। আমাকে কি দিয়েছে নাচ? লাইক সিরিয়াসলি?”

-“আমি বাড়ি চলে যাব ছুটি নিয়ে। দাঁড়া ভাইয়া কে কল দিচ্ছি।”

-“লাভ নেই রে। ওরা স্যার কে বলেছে অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া অব্দি কাউকে ছুটি না দিতে। যদি কেউ কথা অমান্য করে তাহলে শাস্তি দেওয়া হবে।”

ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম। নুসু আর আমি একে অপরের দিকে বার কয়েক দৃষ্টি আবদ্ধ করছি এবং সরাচ্ছি। আচমকা দরজার ঢেলে ভিতরে প্রবেশ করে রোদ্দু। দেখে মনে হচ্ছে বেশ ক্লান্ত। অর্ধেক শরীর ঘামে ভিজে গেছে। রোদ্দু এসেই ধপাস করে বিছানায় হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে পরে। আমার আর নুসুর দিকে একবার দৃষ্টি আবদ্ধ করে আবার বন্ধ করে ফেলে। রোদ্দু চোখ বন্ধ রেখে বলে,
-“এভাবে প্যাঁচার মতো তাকিয়ে আছিস কেনো? মুখ দেখে মনে হচ্ছে জামাই না পাওয়া শোকে শেষ হয়ে যাচ্ছিস।”

নুসু দ্রুত রোদ্দুর কাছে গিয়ে বসে এবং বলে,
-“রোদ্দুরে আমাদের শ্রেয়ুর ক্লাস লেগে গেছে।”

-“এই আঁতেলের আবার কিসের ক্লাস?”

আমি কঠিন দৃষ্টিতে রোদ্দুর দিকে তাকাই। আমাকে পাত্তা না দিয়ে নুসু কে ভ্রু নাচিয়ে একই প্রশ্ন করে।
-“শ্রেয়ু কে দিয়ে সিনিয়রা গান করাবে শুনেছি।”

-“এতে ক্লাস কোত্থেকে আসলো?”

আমার আর সহ্য হচ্ছে না রোদ্দুর এই ভ্রুক্ষেপহীন কথাবার্তা। চিবিয়ে চিবিয়ে বলি,
-“গাধার রানী তুই কি জানিস না আমি গান করতে পারি না।”

আমার কথায় রোদ্দু উচ্চস্বরে হেসে দিয়ে বলে,
-“স্কুলে কে যেনো গান করতো? কাকের কন্ঠে গান।”

-“ফা’জ’লা’মো করিস না। সেখানে সবাই পরিচিত ছিলো তাই।”

-“ঢং বাদ দে। গিয়ে গানের প্রাকটিস শুরু করে দে।”

-“রোদ্দু প্লিজ আমাকে বাঁচা আমি গান করব না। প্লিজ প্লিজ।”

ছোট ছোট চোখ করে আমার দিকে রোদ্দু বলে,
-“এত করে যখন বলছিস তোর উপর একটা দয়া করাই যায় কি বলিস?”

-“প্লিজ হেল্প মি।”

-“তোরা এখানে অপেক্ষা কর আমি আসছি।”

নুসু ভ্রুকুচকে বলে,
-“কই যাস বইন? সমস্যার হাল বের করে যা।”

-“ছোট মানুষ ছোট চিন্তা। আসছি।”

আমাদের আর কোনো কথা না শুনে রোদ্দু বেরিয়ে পরে। ভয়ে আমার হাত পা জমে গেছে। কি করব এখন? মস্তিষ্ক পুরো শূন্য। নুসুও টেনশন শেষ। কারণ তাকে নাচতে হবে তাও পুরো কলেজ ভার্সিটির সাম্মুখে। যেখানে সবাই থাকবে।
আমাদের ভাবনার মাঝেই রোদ্দু একটা প্যাকেট নিয়ে ঘরে প্রবেশ করে। আমার সম্মুখে প্যাকেরটা রেখে বলে,
-“নে শুরু কর।”

আমি তড়িঘড়ি প্যাকটা খুলে দেখি আইসক্রিম বক্স। বিষ্ময় নিয়ে রোদ্দুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করি,
-“এটা কি এনেছিস?”

-“চোখ নেই তোর? অন্ধ তুই? দেখতেই পারছিস। আবার জিজ্ঞেস করিস কেনো?”

-“এটা দিয়ে আমি কি করব? আমাকে বাঁচাতে বলেছি। আর তুই আবার জন্য খাবার নিয়ে এসেছিস? জানিস না টেনশন হলে আমি খেতে পারি না।”

-“সরি বইন ভুল করে আইসক্রিম নিয়ে এসেছি। তোর জন্য ঘাস আনার দরকার ছিলো।”

-“ফা’জ’লা’মো করিস না প্লিজ। আমাকে বাঁচি নে।”

-“এই পুরো বক্স আইসক্রিম খাওয়া শুরু কর। দরকার পরলে আরো নিয়ে আসব।”

-“কিন্তু এত আইসক্রিম আমি কেনো খাব? আর কিভাবে খাব?”

-“আরে গাধী বেশি আইসক্রিম খেয়ে গলা ভেঙ্গে ফেল।”

-“গলা ভাঙ্গে কি হবে?”

রোদ্দু আমার দিকে বিরক্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
-“তুই না সত্যি গাধা। গলা ভাঙ্গলে তোর আর গান করতে হবে না। অযুহাত দিয়ে বেঁচে যাবি।”

বিশ্বজয়ের হাসি ফুটে উঠে আমার মুখশ্রীতে৷ রোদ্দুর প্লান কাজ করবেই করবে। আমি আর না ভেবে জলদি আইসক্রিম খাওয়া শুরু করি। যেভাবে হোক ঠান্ডা জ্বর লাগাতে হবে। না হয় এর থেকে বাঁচার উপায় নেই। আমাকে আইসক্রিম খেতে দেখে নুসু ঠোঁট উল্টে রোদ্দুকে বলে,
-“শুধু ওর জন্য আনলি আমার জন্য একটা নিয়ে আসতি।”

-“এনেছি। হলের ফ্রিজে আছে। খেলে নিয়ে আয়।”

নুসু দৌড়ে আইসক্রিম আনতে যায়। এনেই দ্রুত বক্স খুলে খেতে শুরু করে। আমি আমার মত খেয়েই যাচ্ছি। পেটে আর বিন্দু পরিমান জায়গা নেই তবুও আইসক্রিম খাচ্ছি যতই হোক আজ ঠান্ডা লাগাতেই হবে। আইসক্রিম খাওয়ার এক পর্যায় নুসু রোদ্দু কে বলে,
-“রোদ্দু আমরাই শুধু খেয়ে যাচ্ছি। তুই খাবি না?”

রোদ্দু আমরাই শুধু খেয়ে যাচ্ছি। তুই খাবি না?”

-“না।”

-“কেনো? রাগ করেছিস?”

রোদ্দু চোখ তুলে নুসুর দিকে তাাকিয়ে বলে,
-“বিতর্ক আছে সাজ্জাদ দ্যা বাজ্জাতের সাথে। আইসক্রিম খেয়ে গলার বারোটা বাজাতে চাই না। তাহলে হেরে যাব।”

-“কি বুদ্ধি রে তোর রোদ্দু। এই আমার মাথায় এমন বুদ্ধি আসে না কেনো রে?”

-“তুই যে গাধা সে জন্য। আমি তোদের মতো গাধা নাকি?”

-“চুপ কর। তুই যে কি তা আমার খুব ভালো করে জানা আছে।”

রোদ্দু পাত্তা না দিয়ে মুখ বাকিয়ে অন্য দিকে মুখ করে নেয়। নুসু আইসক্রিম খাওয়া শেষে রোদ্দু কে বলে,
-“রোদ্দু প্লিজ আমাকেও ওই নাচের কম্পিটিশন থেকে বাঁচা।”

-“তোকে বাঁচালে কি দিবি আমাকে?”

-“তুই কি চাস বল?”

-“যাহ! কিছু দিতে হবে না। তুই আমার বান্ধবী তোর জন্য তো একটু ছাড় দেওয়াই যায় কি বলিস?”

-“হ্যাঁ! প্লিজ প্লিজ হেল্প কর একটু।”

রোদ্দু বসা থেকে উঠে টেবিলের উপর থেকে স্টিলের স্কেল নিয়ল আবার পূর্বের জায়গায় বসে পরে। আমি নীরব দর্শক হয়ে সব কিছু পরখ করছি। রোদ্দু আচমকা নুসুর পায়ে জোরে আঘাত করে দেয়। নুসু আচমকা আক্রমণে অপ্রস্তুত হয়ে পরে। নুসুও জোরে চিৎকার করে উঠে। আমি বড় বড় চোখ করে ওদের দুজনের কর্মকান্ড পরখ করছি কেবল। নুসু চিৎকার দমিয়ে রোদ্দু কে বলে,
-“হা’রা’মি, মীর জাফরের বংশ মা’র’লি কেনো?”

-“তোকে যেনো আর নাচ না করতে হয় সেজন্য।”

-“তাই বলে মা’র’তে হবে? মা’র’লে কি এমন হবে যে নাচ করতে হবে না?”

-“শোন তোকে যদি মে’রে হসপিটালে ভর্তি করিয়ে দেই। তাহলে আর তোকে নাচ করতে হবে না। এমন কি তোকে আর কোনো কিছুতে অংশ নিতে হবে না”

-“রাখ তোর কুবুদ্ধি। তোর হাতের মার থেকেও নাচ করা শ্রেয়।”

-“তাহলে করিস মানা তো করিনি।”

নুসু রাগে রোদ্দুকে স্কেল দিয়ে এক ঘা বসিয়ে দেয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে আমি রোদ্দু কে বলি,
-“রোদ্দু আমার গলায় তো সমস্যা হচ্ছে না।”

-“রাতে ফুল স্পিডে ফ্যান ছেড়ে ঘুমাবি। সকালে দেখবি তোর কন্ঠে বাঁশের আওয়াজ।”

বলেই হাসতে শুরু করে দুজন। আমি বক্সটা টেবিলে রেখে কাঁথা মুড়িয়ে শুয়ে পরি। মনে মনে ভীষন আনন্দ লাগছে। আর গান করতে হবে না। নিশ্চিন্তে ঘুম দেওয়া যাবে।

~চলবে….

[পর্বটা খাপছাড়া লাগতে পারে। কিছুদিন ধরে আমি একটু সমস্যার মধ্যে আছি তাই অগোছালো আর ছোট পর্ব হয়ে গেছে। তার জন্য আমি সত্যি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। ধন্যবাদ সবাইকে]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here