শ্রাবন আধারে তুমি
লেখিকা :আফরিন ইসলাম
পার্ট:৪
আস্তে আস্তে চোখ মেলে রাই তাকালো ৷মাথাটা এখনো ভার হয়ে আছে ৷ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখলো নয়টা বাজে ৷রাই তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে গেল ৷
নিচে নামতেই রাই অবাক হয়ে গেল ৷সবাই বাড়ী পরিষ্কার করছে ৷বাড়ী রং করার জন্য লোকও এসেছে ৷হঠাৎ এত লোক কেন কাজ করছে এর মানে রাই বুঝলো না ৷রাই রান্না ঘরে উকি মারতেই আনিলা বেগমকে দেখতে পেল ৷রাই মলিন কন্ঠে একবার বলল মা ৷ আনিলা বেগম পেছনে ঘুড়ে রাইকে দেখে একটা মুচকি হাসি দিল ৷তারপর রাইয়ের কাছে এসে বলল আমার মায়ের ঘুম হয়েছে ৷
রাই বলল হুমম হয়েছে ৷
আনিলা বেগম বললেন কত বেলা হয়েছে দেখেছিস ৷তাড়াতাড়ি খেয়ে নে যা ৷
আমার খেতে ইচ্ছে করছে না মা ৷
কেন রে কি হয়েছে আবার ৷
আমার মাথাটা ব্যাথা করছে ৷কিছু ভালো লাগছে না ৷
আনিলা বেগম ব্যস্ত কন্ঠে বলল বেশি ব্যাথা করছে ৷ডাক্তার ডাকতে বলবো তোর বাবাকে ৷
না মা এমনিই ব্যাথা করছে ৷তুমি টেনশন করো না ৷
এখন যা খেয়ে নে তাড়াতাড়ি ৷অনেক কাজ আছে আমার ৷
মা একটা কথা বলবো ৷
হ্যা বল তাড়াতাড়ি ৷
মা বাড়িতে এত লোক কেন কাজ করছে ৷কেউ কি আসবে বাড়িতে ৷
আনিলা বেগম মুচকি হেসে বললেন আবরার আসছে ৷আজ সকাল পাচঁটায় কল করেছিল এয়ারপোর্ট থেকে ৷এখন প্লেনে আছে ৷আসতে আসতে বিকেল হয়ে যাবে ৷
রাইয়ের পা ঠান্ডা হয়ে এসেছে ৷বুকের ভেতর অজানা ঝড় শুরু হয়েছে ৷বুকের বা পাশটা খুব করে কাপঁছে ৷রাই কোনো রকম খেয়ে নিজের ঘরে চলে গেল ৷রাইয়ের চোখে জল রাশি জমা হয়ে গেছে ৷আজ কি সত্যি সে আসবে ৷আচ্ছা আবরার কি তার সাথে একটু কথা বলবে ৷নাকি দূরে ঠেলে দেবে ভুল বুঝে ৷রাই পুরো ঘর পরিপাটি করে গুছিয়ে রাখলো ৷কাবার্ডের অর্ধেক ফাকা করে রাখলো ৷
বিকেল হয়ে গেছে ৷রাই ডিভানে দাড়িয়ে আছে ৷রাইয়ের ছোট মনে হাজারো কথার ছন্দ খেলা করছে ৷হঠাৎ গাড়ীর শব্দে রাইয়ের ধ্যান ভাঙ্গে ৷আফজাল খান আবরারকে রিসিভ করতে গিয়ে ছিল ৷রাই একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো গাড়ীর দিকে ৷রাইয়ের অপেক্ষার প্রহর শেষ করে গাড়ীর ভেতর থেকে কালো কোর্ট পরা আবরার বেড়িয়ে এলো ৷রাইয়ের বুকে লাভডাব আওয়াজ প্রচন্ড গতিতে বেড়ে গেছে ৷রাই আর দাড়ালো না দৌড়ে চলে গেল মিশকার ঘরে ৷
আবরার নিজের বাড়ীতে অনেক দিন পর এসেছে ৷আনিলা বেগমের খুশির শেষ নেই ৷ছেলেকে জরিয়ে ধরে তিনি কেদেঁ ফেললেন ৷আবরারও মাকে জরিয়ে ধরলো ৷
আবরার নিজের ঘরে আসলো সব কিছু নিয়ে ৷মায়ের কান্না থামাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে তার ৷ঘরটা পরিষ্কার দেখে আবরার খুশি হলো ৷আবরার চারদিকে তাকালো কিন্তু কাউকে দেখতে পেল না ৷যার জন্য এসেছে তাকেই কোথাও দেখতে পেল না সে ৷আবরার ফ্রেশ হতে ওয়াসরুমে চলে গেল ৷ফ্রেশ হয়ে নিজের জিনিস কাবার্ডের ফাকা জায়গায় রাখলো ৷তারপর বাকি অর্ধেক জায়গায় রাখা কাপড় গুলো কয়েকটা ব্যাগে ভরে নিল ৷
আবরার বাড়ীর সবার সাথে আড্ডা দিয়েছে ৷সাদিও এসে ছিল আবরার সাথে দেখা করতে ৷রাত দশটা বেজে গেছে আবরার ঘরে বসে আছে ৷তার খুব রাগ হচ্ছে কারো উপর ৷সে রাগে মাথা নিচু করে বসে আছে ৷
অন্যদিকে রাই মিশকার ঘরে বসে আছে ৷সে আবরার ঘরে যাবে না ৷ আনিলা বেগম অনেকক্ষন ধরে রাইকে বুঝিয়ে শেষ পর্যন্ত রাজি করায় ৷
রাই ভয়ে ভয়ে ধীর পায়ে ঘরে প্রবেশ করে ৷চিরচেনা ঘরটাতে আজ প্রবেশ করতেই তার ভয় করছে ৷রাই ঘরে যেয়ে দেখলো আবরার ঘরে নেই ৷রাই বিছানার এক কোনে যেয়ে শুয়ে পড়তে গেল ৷রাই আবরার সামনা সামনি হতে চায় না ৷রাই বিছানাতে শুয়ে পড়বে এমন সময় একটা পুরুষনালি কন্ঠ তার কানে ভেসে এলো ৷রাই পেছনে তাকিয়ে দেখলো আবরার কঠিন চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে ৷আবরার বলল
তুমি আমার বেডে কি করছো ৷
রাই কাপাঁ কাপাঁ কন্ঠে বলল আমি তো এখানেই ঘুমাই প্রতিদিন ৷
মানে তুমি এতদিন এখানে ঘুমিয়েছো আবরার বলল ৷
রাই মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলল ৷
আবরার চোখে এক রাশ ঘৃনা থাকলেও রাইয়ের চোখে এক সমুদ্র ভালোবাসা ৷আবরার আবারো বলল আজ থেকে আর এখানে ঘুমাতে পারবে না তুমি ৷
মলিন কন্ঠে রাই বলল তাহলে আমি কোথায় ঘুমাবো ৷
ডিভানে ঘুমাবে তুমি ৷আমার ঘরে তোমার জায়গা হবে না ৷
রাইয়ের ছোট মনে কষ্ট গুলো দলা পাকিয়ে যাচ্ছে ৷রাই নিজের জায়গায় দাড়াতে পারছে না ৷তার খুব কষ্ট হচ্ছে ৷আবরার কথা গুলো বলে কাবার্ড খুলল তারপর একটা পেপার রাইয়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল এই পেপারে সাইন করে দাও ৷
রাই বলল এটা কিসের পেপার ৷
আবরার কাঠ কাঠ গলায় বলল ডিবোর্স পেপার ৷তুমি এই বাড়ীতে আর চার মাস থাকতে পারবে ৷তারপর তুমি চলে যাবে ৷ আবরার কাবার্ড খুলে একটা প্যাকেট বের করলো ৷তারপর আবরার বলল এখানে দেনমোহরের সব টাকা আছে ৷চার মাস পরে চলে যাবে তুমি আমাকে মুক্তি দিয়ে ৷এখন পেপারে সাইন করে দাও ৷
রাই বুক ভরা কষ্ট নিয়ে বলল এখন সাইনটা না করলে হয় না ৷চার মাস পরেই না হয় সাইনটা করবো ৷
আবরার বলল না এখনই করে দাও ৷তোমাদের মতো মেয়েদের বিশ্বাস নেই ৷তোমরা ছেলেদের ফাসাঁতে সব করতে পারো ৷এখন তাড়াতাড়ি সাইন করে দাও ৷
রাই কথা বাড়ালো না ৷চোখের পানি মুছে সাইন করে দিল পেপারে ৷রাই সাইন করতেই আবরার পেপারটা নিয়ে গেল ৷তারপর বলল এখন যাও ঘর থেকে ৷আর শোন তোমার জামা কাপড় আর কাবার্ডে রাখতে পারবে না ৷আমি ব্যাগে ভরে রেখেছি ৷ঘরের অন্য কোথাও রেখে দিও ৷রাই নিজের কান্না আটকে রাখলো যতটা সম্ভব ৷সে আবরার সামনে দুর্বল হবে না ৷রাই শীতের মধ্যে চলে গেল ডিভানে একটা বালিশ আর কম্বল নিয়ে ৷
(আচ্ছা গল্পটা কি বোরিং আমাকে কমেন্ট করে জানাবেন…..আর একটু গঠন মূলক কমেন্ট করবেন প্লিজ )
চলবে…