#শ্রাবণ_দিনের_প্রেম
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১১
আলিশা অভ্র একটা ক্যাফেতে পাশাপাশি বসে আছে। অভ্র আলিশার দিকে তাকিয়ে বলে,এবার বুঝেছি তোমার এতো জেদ কোথা থেকে আসলো। যেমন বাপ তার তেমন মেয়ে। কোর্টে বসে বলে কিনা এক চড় দিয়ে তোমার দাঁত ফেলো দেবো। আরেহহহ এভাবে না বলে বললেই তো হতো। তুমি কোন কথা বলবে না। যা বলার আমি বলবো।
‘তোমার কি বাজে বকবক করার স্বভাব যাবে না! আমার বাবা তো ঠিক কাজটাই করেছে! তুমি যদি হাফ মেন্টালের মত বকবক করতে থাকো। তাহলে রায় তোমার বিপক্ষে যেতো।
‘ইয়ার তোমার বাবা ভালো ভাবে তো বলতে পারতো!
‘বাবা সবার সাথে ভালো ভাবে কথা বলে না। যে যেমন তার সাথে ঠিক সেই ভাষায় কথা বলে।
‘আলিশা এবার তাহলে আমার বাবাকে তোমাদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে পাঠাই।
‘আমি তোমাকে বিয়ে করবো না।
‘এই কথাটা আর বলো না। আমি ভুল করেছি এটার জন্য আমি অনুতপ্ত। আর বর্তমানে এই রুম ডেট কোন ফ্যাক্ট না। অহরহ এমন হচ্ছে।
‘বর্তমানে হ’ত্যা,গু’ম,চু’রি, ডা’কা’তি ও অহরহ হচ্ছে। তাই বলে কি এটা অন্যায় না!যারা করছে তারা সবাই নির্দোষ! অন্যায় কাজ যতই অহরহ হোক সেটা অন্যায়-ই থাকবে।
‘হ্যা আমি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি।
‘আচ্ছা আজ উঠি তোমার কথাটা ভেবে দেখবো।
‘ডিয়ার রেইনবো কোন ভাবাবি নাই শ্রাবণ মাসের আর দশদিন বাকি এই দশদিনে বিয়েটা করে ফেলতে চাই।
‘আপনি চাইলেই তো হবে না!আমি ভেবে বলবো।
✨মানাফ ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠা উল্টোচ্ছে আর অবাক হচ্ছে। কেউ এতো যত্ন করে ভালোবাসতে পারে সুহানা কে না দেখলে বুঝতে পারতো না। আর সে কিনা হুট করে নিজের ভালো লাগাকে প্রশ্রয় দিতে যেয়ে এই নিষ্পাপ ভালোবাসাকে অবহেলা করেছে! ডায়েরিটা জায়গা মত রেখে দিয়ে অপেক্ষা করছে সুহানার জন্য।
‘একটু পর সুহানা কফি আর কিছু হালকা নাস্তা নিয়ে এসে বলে,তাড়াতাড়ি খাও আর নিজের বাসায় চলে যাও।
‘এই তুই আমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছিস!
‘মনে কর তাই। এবার তাড়াতাড়ি খেয়ে বিদায় হও দেখি।
‘সর তুই মামিকে ডেকে বল, তার একমাত্র মেয়ের জামাই এসেছে জামাই আদরের ব্যাবস্থা করতে।
‘দেখো বাজে না বকে আমার রুম থেকে যাও।
‘তুমি রাগো যদি, ফুল ঝড়ে যাবে।তুমি কাঁদো যদি হৃদয় মরে যাবে।
‘সুহানা অবাক হয়ে বলে, এটা তুমি জানলে কি করে!
‘তুমি আমার কৃষ্ণচুড়া, তুমি আমার পলাশ, তুমি আমার কাঠগোলাপ,তুমি আমার শিমুল। সব বসন্ত সব রঙে তুমি আমার প্রিয়তমা।
‘তুমি আমার শ্রাবণ দিনের প্রথম কদম ফুল। তুমি আমার শুকনো ঠোঁট এক পরম সুখ।
‘তুই আমাকে ভালোবাসিস আগে কেন বললি না!
‘তুমি বলার সুযোগ দিলে কই! এসেই তো অন্য মেয়েকে বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে গেলে। বাদ দাও সে-সব ভালোবাসলেই থাকে পেতে হবে এমনতো কোন কথা নেই!
‘কিন্তু আমার তো তোকেই বিয়ে করতে হবে তোর সুন্দর সুন্দর ছন্দ পড়ার জন্য। শোনার জন্য।
‘আপনি যাকে বিয়ে করতে চাইছেন, সে একজন লেখিকা। আর আলিশার লেখার হাত দারুণ।
‘মানে!
‘হুম আলিশা ফেসবুকে গল্প লিখে পোস্ট করে।ধারাবাহিক গল্প অনুগল্প।
‘বাদ দে আলিশা মালিশা। আমার তুই হলেই চলবে।
‘এখন ও রিজেক্ট করেছে তাই আসছো?
‘শোন তুই আমাকে এতো ভালোবাসিস তাই ও আমাকে রিজেক্ট করেছে। নয়তো আমার মত হ্যান্ডসাম ছেলেকে কেউ রিজেক্ট করে!
‘এরেহহহ আমার হ্যান্ডসাম!অভ্র ভাইয়াকে দেখেছ? সে কত হ্যান্ডসাম!
‘সুহানা তুই আমার সামনে অন্য ছেলেকে হ্যান্ডহাম বলছিস!
‘আমার সামনে অন্য মেয়েকে বিয়ের জন্য ফালাফালি করতে পারবা। আর আমি হ্যান্ডসাম বললেও দোষ!
চারু বেগম এসে বলে, কিরে তোরা কি কথা বলছিস।
‘মামি নট আজকে থেকে শ্বাশুড়ি আম্মু।
‘কি বলছিস মানাফ এসব। বাবা এখন আর এসব হবেনা তোর বাবা মানবে না।
‘মিয়া বিবি রাজি তো কিয়া কারে গা কাজি। আসি আম্মু। খুব তাড়াতাড়ি তোমার মেয়েকে নিতে আসবো।
দেখ দেখতে কেটে গেলো তিনদিন। আজ বৃহস্পতিবার। আলিশা আর অভ্রের গায়ে হলুদ। ধুমধাম করে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হলো। অভ্র আলিশাকে নিয়ে ছাদে আসলো।আলিশার গালে একটু হলুদ ছুঁয়ে দিয়ে বলে, আমার লেখিকা আগামীকাল থেকে একদম আমার নিজস্ব।
‘আলিশা লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে নিলো।
অভ্র আলিশার মুখ নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে,আর কখনো তোমাকে নিজের থেকে আলাদা করবো না৷ হালিশা।
‘হালিশা শুনেই আলিশা রেখে বলে, মিস্টার আনারস।
‘হু আর তুমি মিসেস আনারস।
‘হুমায়রা এসে বলে,তোদের প্রেম আগামীকাল থেকে শুরু করিস। এখন নিচে চল। রাত দু’টো বাজে বাসায় ফিরতে হবে।
সবাই বাসায় যাওয়ার জন্য গাড়ীতে উঠবে এমন সময় আলিশা দেখে, মানাফ আর সুহানা হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আলিশা সামনে এসে বলে, মাশা আল্লাহ কত সুন্দর মানিয়েছে! কারো নজর না লাগুক।
‘মানাফ বেশ অপ্রস্তুত হয়ে পরলো৷ সুহানা হেসে বলে,ধন্যবাদ তোমাকে আমার মিস্টার হ্যান্ডসামকে রিজেক্ট করার জন্য।
‘এভাবে কেন বলছো। অভ্র আমার জীবনে না থাকলে হয়তো রিজেক্ট করতাম না। কারণ সে সত্যি খুব ভালো মানুষ। সারাজীবন দু’জনে এভাবেই থেকো। তা বিয়ের দাওয়াত কবে পাচ্ছি?
‘নিজের বিয়ে শেষ কর, তারপর আমার আর হুমুর বিয়ের দাওয়াত একসাথে পাবে।
✨বিয়ে বাড়ির হইচই আনন্দে ভরপুর। সবাই বলছে, বর এসেছে এসেছে।
এই শব্দটা কানে যেতেই আলিশার বুকের ভেতর ধক করে উঠলো৷ বিয়ে মানে একটা নতুন জীবন। বছর পুরনো প্রেমিকটাও স্বামি হিসেবে পার্ফেক্ট হয় না। আবার একদিনের পরিচিত মানুষটাও পার্ফেক্ট স্বামী হতে পারে। নতুন জায়গা নতুন পরিবেশ নতুন মানুষ। মানিয়ে নেয়া তো আর সহজ কথা নয়।
দেখতে দেখতে কাজি সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন। বিয়ে পড়ানো শেষ হতেই। সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলল।
আলিশাকে বিদায় দিয়ে সবাই যার যার বাসায় ফিরে আসলো।
ফুলে ফুলে সজ্জিত একটা বেডে একহাত ঘোমটা টেনে বসে আছে আলিশা। রজনীগন্ধা আর গোলাপের তীব্র ঘ্রাণ কেমন মতাল করে তুলেছে পরিবেশ।
অভ্র রুমে ঢুকে দরজা লক করের, গুটি গুটি পায়ে আলিশার কাছাকাছি এসে বসলো। নিজের হাতে আলিশার ঘোমটা সরিয়ে বলে,আসমানের চাঁদ আজ আমাকে হিংসে করে বলবে,তুই তো তোর ঘরের চাঁদ রেখে আমার দিকে ফিরবি না।আমার চেয়ে তার রুপ যে মোহনীয়।
আলিশা লজ্জা পেয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। অভ্র আলিশার চোখে ফু দিয়ে বলে, তোমার এই লজ্জা রাঙামুখ আমাকে আরো,মাতাল করে তুলছে ডিয়ার রেইনবো। আজ শহর জুড়ো বৃষ্টি নামুক। সাক্ষী থাক শ্রাবণ। আমরা দু’জন মত্ত হই #শ্রাবণ_দিনের_প্রেমে।
বাহিরের বৃষ্টির তীব্রতা। রুমের মধ্যে দুটি মানুষের ভালোবাসার তীব্রতার চেয়ে কম। অবশেষে একে অপরের রঙে রঙিন হলো। দু’জনে।
সকালের মেঘ মিশ্রিত আলো, জানালার সাদা পর্দা ভেদ করে চোখে পরতেই ঘুম ভাঙে আলিশার। চোখ খুলে নিজেকে অভ্রের বাহুতে আবদ্ধ দেখে। আলতো চুমু খায় অভ্রের চিবুকে। তারপর উঠে ওয়াশরুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হয়েে,নিজের চুলের পানি ইচ্ছে করে অভ্রের চোখে মুখে ছিটিয়ে দেয়।
অভ্র রাগ নিয়ে চোখ খুললেও আলিশাকে এমন মোহনীয় রুপে দেখে সব রাগ ভুলে আলিশার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়।
বেশ কিছু সময় পর ছেড়ে দিয়ে বলে,তোমাকে সারাজীবন এভাবেই চেয়েছিলাম। আজ আমি পূর্ন। আলিশা বলে হালাল সব সময় সুখকর। আমিও তোমাকে এভাবেই চেয়েছিলাম। আজ আমি,সম্পূর্ণ রুপে তোমার হলাম।
সমাপ্তি।
আসসালামু আলাইকুম। ধৈর্য ধরে সাথে থাকার জন্য অনেক অনেক ভালোবাসা।