#শ্রাবণ_দিনের_প্রেম
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৭
পাত্রী হিসেবে আলিশাকে দেখে, মনে মনে ক্ষুব্ধ হলেন দিশা বেগম। তিনি ভেবে বসলেন, আলিশা হয়তো আগে থেকেই মানাফকে ভালোবাসতো।এরজন্যই হুমায়রার সাথে আলিশার এতো ভালো সম্পর্ক!
দিশা বেগম আলিশার হাতে একটা বালা পড়িয়া দিলেন। মনে তার এক আকাশ অভিমান। তার পুরো পরিবার তাহলে আগেই জানতো পাত্রি কে? ভুল ধারণা পুষে মনের মধ্যে বি’ষ তৈরি করছে।
শাফিন বলল,তাহলে এবার ছেলে, মেয়ে একটু আলাদা কথা বলুক।
ছাদের রেলিং ঘেসে এই কড়া রোদে দাঁড়িয়ে আছে দু’জনে। দু’জনে চুপ কারো,মুখে কোন কথা নেই। নিরবতা ভেঙে আলিশা বলল,আমি এ বিয়ে করতে পারবো না।
‘স্পেসিফিক কোন কারণ?
‘সেটা তো আপনার জানার প্রয়োজন নেই আমি বলছি আমি বিয়ে করবো না। মানে আমার বিয়ে করার কোন ইচ্ছে নেই।
‘সেটা আমাকে কেন বলছো! তোমার পরিবারের লোকদের বল!
‘তাদের বলতে পারলে নিশ্চয়ই আপনাকে বলতাম না।
‘তাহলে আমাকে বলেও কোন লাভ নেই। কারণ বিয়ে আমি তোমকেই করবো!
‘দেখুন আপনি দু’বছরের বাচ্চা না। আপনি বায়না করবেন, জেদ করবেন। এডাল্ট পারসন সো বোঝার চেষ্টা করুন!
‘আমি বুঝতাম যদি বিয়ে না করার কারণ দেখাতে পারতে! কিন্তু এমন বিয়ে করবো,না। এমন কথা অনেক মেয়েই বিয়ের আগে বলে, পরে কিন্তু তারাই স্বামী ভক্ত হয়ে যায়।
‘দেখুন আপনার কি মনে হয়, আমি চার বছরের বাচ্চা মেয়ে না ভেবে যা খুশি বলে দিয়েছি! নট আমি যথেষ্ট ম্যাচিউর আমি ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷
‘আচ্ছা কেন বিয়ে করতে চাইছো না! এখন বিয়ে করবে না পড়ালেখা করবে এটাই তো!
‘হুম এখন আমি আমার ক্যারিয়ারে ফোকাস করতে চাই।
‘ধরো আমাদের বিয়ে হয়ে গেলো। আমি কি তোমাকে তোমার স্বপ্ন পূরণে বাঁধা দেবো! কখনো,না। তোমার লাইফ তোমার মত গুঁছিয়ে নেবে। আমি তোমাকে ছায়া হয়ে আগলে রাখবো।
‘আমি এতোটা নাজুক নই, যে আমার অন্য কারো ছায়া লাগবে। আমি নিজের সাথে নিজে ডিল করে নেবো৷ সো নিচে যেয়ে আপনি বলবেন,বিয়েটা আপনি করছেন না!
‘আমার তো বিয়ে করতে কোন আপত্তি নেই। তাই আমি এমন কিছু বলবো না। আপনার সমস্যা আপনি বলুন।
‘সমাজের মানুষ শিক্ষত হয়েছে, কিন্তু সমাজের নিয়ম কিন্তু পরিবর্তন হয়নি। এখনো মেয়ের অমতে ইমোশনাল ড্রামা করে তাকে জোড় করে বিয়ে দেয়া হয়! মেয়েদের কথা বা ইচ্ছে কোনটার মূল্য কারো কাছে নেই। সেটা হোক আমার পরিবার কিংবা আপনার মত,শিক্ষিত পুরুষ মানুষ!
‘তোমাকে একদম পরীর মত লাগছে। আচ্ছা তোমার শাড়ী রঙটা কি?
‘আপনার কি মনে হচ্ছে আমি আপনার সাথে মজা করছি!
‘রেগে যাচ্ছ কেন?বলো কি রঙের শাড়ী।
‘আপনার মাথায় সমস্যা আছে কোন নিউরোলজিস্টের সাথে যোগাযোগ করুন।
‘তুমি কিসের ডাক্তার হবে?
‘ধৈর্যের একটা লিমিট থাকে আপনি তা ক্রস করে ফেলছেন?বলেই আলিশা সামনের দিকে পা বাড়ায়
‘মানাফ আলিশার হাত ধরে, আলিশা থেমে যেয়ে অগ্নি দৃষ্টিতে মানাফের দিকে তাকায়।
মানাফ আলিশার হাত ছেড়ে দিয়ে বলে,আমি ততদিন তোমার জন্য অপেক্ষা করবো, যতদিন তুমি নিজে আমাকে বিয়ে করতে রাজি না হচ্ছো। আজকে তোমার হাত তোমার অনুমতি ছাড়া স্পর্শ করেছি, খুব তাড়াতাড়ি তুমি নিজে আমার হাত স্পর্শ করবে!আর হ্যা এ রঙের শাড়ী আর পরবে না, তোমাকে মারাত্মক সুন্দর লাগে। মানাফ নিচে চলে গেলো। আলিশা দাঁড়িয়ে আছে। রোদের তাপ কমতে শুরু করছে কেবল মাত্র৷ আলিশা শূন্যে দৃষ্টি রেখে বলে,আপনার জীবনে হয়তো কখন ওই মূহুর্ত আসবেনা। মানাফ ভাই।
মানাফ আবার ফিরে এসেছিলো আলিশাকে সাথে নিয়ে একসাথে নিজে নামবে তাই। এসে আলিশার কথা শুনে বলে, জানো তোমার এই ভাইয়া ডাকার মানে ভবিষ্যতের ছ্যাইয়া।
‘আপনি আবার!
‘চলো একসাথে নিচে যেতে হবেে,একসাথে এসেছি, এক সাথে না গেলে কেমন দেখা যায়!
‘হাঁটুন আমি আসছি।
✨
অভ্র কাছাকাছি এসে, ঈশান কে কলকেটে করলো। ঈশান বলল,ওনারা এখনো বাসায় আর একটু পর বেড় হবে।
‘বেড় হলেই আমাকে বলবা।
‘ওকে জিজা জী।
কল কেটে অভ্র নিজের ফোন থেকে লাগা তার আলিশাকে কল করতে থাকে।
‘সমস্যা কি আপনার! সেই কখন থেকে কল করেই যাচ্ছেন, ভদ্রতা কি বেঁচে খেয়েছেন?
‘অ বেবি ইউ আর সো কিউট। তুমি এতো কিউট কেন বলে তো! একদম মিঠাই বাড়ির রসগোল্লা।
‘আপনার সাথে রসাল কথা বলার মত ফালতু সময় আমার নেই।
‘তুমি বাহিরে আসবে! নাকি আমি তোমার ফুপির বাসায় আসবো!
‘আমিও আসবো না, আপনিও আসবেননা।
‘কি বলো রেইনবো! একজনকে কে তো আসতেই হবে! হয় তুমি নয় আমি।
‘সমস্যা কি আপনার কেন পরে আছেন আমার পিছু!
‘মন চাচ্ছে তাই! এতো কথা বলার কি আছে, আমি আসছি তোমার আসতে হবে না।
‘ভুলেও না তুমি কোথায় আছো বলো আমি আসছি।
‘মেহদী মার্টের সামনে তাড়াতাড়ি আসো ডিয়ার।
আলিশা ফোনটা বেডে ছুড়ে ফেলে, শাড়ী চেঞ্জ করে আসলো। দু’হাতে মাথা চেপে ধরে চোখ বন্ধ করতেই ভেসে উঠলো সেদিনের ঘটনা৷
অতীত……
একটা মেডিক্যাল ক্যাম্পে গিয়েছিলো আলিশারা। সেখানে অভ্রও ছিলো। দিনগুলো ভালোই কাটছিলো, কিন্তু হুট করে একদিন বিকেলে, অভ্র কল করে বলে, রেইনবো, আজ বিকেলে দ্যা লাস্ট মুন রিসোর্টে আসো-তো সারপ্রাইজ আছে৷ তোমার জন্য।
‘কিসের সারপ্রাইজ বলতো!আজকে তো কোন বিশেষ ডে না!
‘সারপ্রাইজ দিতে বিশেষ ডে লাগে! আর এতো প্রশ্ন করছো কেন! আসতে বলছি আসবা।
‘আচ্ছা আসবো।
‘ওকে বেবি ডল, লাভ ইউ।
‘লাভ ইউ টু ডিয়ার ডাক্তার।
ঠিক সময় রেডি হয়ে বের হয়ে গেলে, হুমায়রাকে সাথে নিতে চাইলেও অভ্র রাগ করবে এটা ভেবে নিলোনা। পার্পল কালারের শাড়ী, আর হালাকা সাজ।এতেই অপরুপা লাগছে, আলিশাকে। আসতে আসতে মাগরিবের আজন দিয়ে দিয়েছে। আলিশা রিসোর্টে আসতেই কয়েকজন স্টাফ আলিশার হাতে ফুলের বুকে দিয়ে ওয়েলকাম করে বলে,ম্যাম দ্বিতীয় তলায় চারশো পঁচিশ নাম্বার রুম।
‘আলিশা এসে রুমের দরজা খুলতেই তার পুরো দুনিয়া ঘুরে গেলো৷ পুরো রুমটা ফুলে ফুলে সজ্জিত। মনে হচ্ছে কোন হানিমুন কাপালের জন্য স্পেশাল ডেকোরেট করা।রুমে চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে পিছু ফিরে একদম বাড়াতেই অভ্র আলিশাকে এক টানে নিজের কাছে নিয়ে আসলো। অভ্র আলিশার কোমড়ে এক হাত রেখে আলিশাকে একদম নিজের বাহুতে বন্দি করে নিলো৷ আলিশা আর অভ্র দু’জনে একদম কাছাকাছি। আলিশা কিছুক্ষণ সমস্যা নিয়ে নিম্ন স্বরে বলল,অভ্র এসব কি!
‘অভ্র এক হাত দিয়ে আলিশার গালে স্লাইড করতে করতে বলে,ভালোবাসা রেইনবো। আজকে আমার রঙে তোমাকে আরো রঙিন করে তুলবো।ভালোবাসি জান। আজকে কোন না শুনবো না।
আলিশা নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে অভ্রকে ধ্বাক্কা দেয়। হটাৎ এমন হওয়ায় অভ্র কিছুটা দুরে সরে পিছনে থাকা কাভার্ডের সাথে বাড়ি খায়। আলিশা রক্ত চক্ষু করে অভ্রর দিকে তাকিয়ে বলে,সিরিয়াসলি অভ্র, তুমি আমাকে এমন মেয়ে ভাবো! তোমার মনে হলো এমন সারপ্রাইজ দেখে নাচতে নাচতে আমি তোমার সাথে এসব করতে রাজি হয়ে যাবো! আমি আলিশা আমার বাবার গর্ব মায়ের সম্মান। আর আমি তাদের বিশ্বাস ভরসা নষ্ট করে এসব করবো!
‘অভ্র নিজেকে স্বান্ত রেখে বলে, আলিশা আমরা বয়ফ্রেন্ড, গার্লফ্রেন্ড আমাদের মধ্যে এসব হওয়াটা স্বাভাবিক। এখানে খারাপ কি?
‘সেটাই অভ্র তোমার চোখে এটা ভালো, আমার চোখে এটা নোংরামি। তোমার যদি এতোই চাহিদা তাহলে চলো এক্ষুনি আমরা বিয়ে করবো।তারপর মিটিয়ে নাও তোমার সব চাহিদা। আমার নিজের সম্মান এভাবে কলুষিত আমি করতে পারবো না। কথাটা বলেই আলিশা রুম থেকে বের হওয়ার জন্য পা বাড়ালো।
‘এই রুম থেকে বেড় হওয়ার জন্য একটা শর্ত আছে! হয়তো আমার কাছে আসবে নয়তো আমাদের সম্পর্ক এখানেই শেষ! যে মেয়ে সামান্য বিশ্বাস করে নিজেকে আমার কাছে সমর্পণ করে দিতে পারে না। তাকে ডাক্তার আহিয়ান আনান অভ্রের চাই না।
‘যে ছেলে একটা মেয়েকে সম্মান করতে পারে না তাকে আমি চাইনা।
#চলবে