#শ্রাবণ_দিনের_প্রেম
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব-৩
টেক্সটগুলো কারো নয় অভ্রের পাঠানো।
‘জান আজকের তারিখ মনে আছে!
‘পাখি তুমি কি সত্যি আমার সাথে ব্রেকআপ করতে চাইছো!
‘ওয়াটার লিলি,তুমি কি সত্যি আমাকে ভুলে যাবে?
‘ডিয়ার রেইনবো, আমার কথা তোমার মনে পরছে না।আমরা কত রাত কথা বলে পার করেছি। যাস্ট একটা রাত আমার সাথে কাটাতে বলেছি, এরজন্য তুমি আমাকেই ছেড়ে দেবেে!
আলিশার টেক্সটগুলোর দিকে তাকিয়ে চোখ ঝাপসা হয়ে উঠলো। রিপ্লাই লিখছে আর ডিলিট করছে, ততক্ষণে চোখ থেকে নোনাজল গড়িয়ে পরছে।হুট করে পরিচিত নাম্বার থেকে কল আসা শুরু করলো। রিসিভ করবে না করবেনা করতে করতে রিসিভ করে কানে ধরলো মোবাইলটা।
ওপাশ থেকে এলোমেলো শব্দে অভ্র বলছে,আমি তোমাকে ভালোবাসি। বুঝেছো। এই কথাটা মাথায় রেখো। অভ্র নিজের জিনিসে কারো ছায়া সহ্য করে না।
‘এই মধ্য রাতে মাতাল হয়ে একটা মেয়ের সাথে অসভ্যতা করতে লজ্জা লাগে না!
‘একদম আমার সাথে বাজে কথা বলবে না। একদিন সহ্য হলো না। ব্রেকআপ হওয়ার আগেই আরেকজন জুটিয়ে নিলে! আমি তো এই আলিশাকে চিনিনা!
‘অভ্র তুমি যদি ভাবো তোমার বাজে কথা আমি সহ্য করবো, তাহলে ভুল ভাবছো। নিজের মত ভাবো সবাইকে!
‘একদম কথা বলবি না। তোর সাথে বিয়ের আগে বাসর করতে চেয়েছি। তাই বলে ব্রেকআপ মেনে নিলি। তাহলে দিনদুপুরে অন্য ছেলের বাহুতে কি করছিলি।
‘তোমার বাজে কথা শোনার মত টাইম আমার কাছে নেই।
‘তোকে প্রথম দেখেছিলাম তোর স্কুলের র্যাগ-ডে তে। তারপর থেকে তোর কথা ভেবে তোকে কত খুঁজেছি। সেই আবার দেখা হলো আমার কলেজের রি ইউনিয়ন অনুষ্ঠানে। তুই কেন আসলি সেদিন! না তুই আসতি আর না তোর সাথে আমার প্রেম হতো।
আলিশা কল কেটে দিলো। এখন কথা বলাই বেকার।
হাঁটুতে মুখ গুঁজে কান্না করা শুরু করলো।
✨সকালে নাস্তা করে বেড়িয়ে পরলো ক্লাসের উদ্দেশ্য। আজ রাস্তায় তেমন কোন গাড়ী নেই। সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টির সময় এই এক সমস্যা। এদিকে ক্লাসের সময় ও হয়ে যাচ্ছে। হাতে ছাতা কাঁধে ব্যাগ।
মানাফ আজ অফিস জয়েন করবে, তাই সকাল সকাল বের হলো বাসা থেকে। মানাফের সাথে হুরায়রা ও আছে।
গড়ী চলছে, হুট করে হুমায়রা বলে,ড্রাইভার গাড়ী থামান তাড়াতাড়ি।
গাড়ি থামাতেই হুমায়রা আলিশাকে কল করলো, যদিও গাড়ী দেখেই আলিশার বুঝতে বাকি নেই। গাড়ির ডোর খুলে ভেতরে ঢুকতেই চিৎকার করে বলে,আপনি?
‘আস্তে ম্যাম আপনার সিঙ্গন্যাল থামান। আমি এই বাদর মহাশয়ের ভাই।
‘আলিশা আস্তে করে বলে,এটচ তোর ভাই! সিরিয়াসলি তোর এই অভদ্র ভাইয়ের এতো এতো প্রসংশা করতি!
‘এই যে মিস লেখিকা,আমি আপনাকে সাহায্য করলাম আবার অভদ্রও হলাম!
‘তা নয় তো কি? কারো ব্যাক্তিগত ভিডিও পর্মিশন ছাড়া দেখা, কোথাকার ভদ্রতা!
‘এটা আমি ভুল করেছি কিন্তু ইচ্ছে তে না। ওর পাসওয়ার্ড হ্যাক করেছিলাম ও কি করে সেটা দেখার জন্য। হুট করে তোমার ভিডিও সামনে চলে আসলে দেখে ফেললাম৷ বাইদা ওয়ে তোমার, লেখা তুমি আসবে বলে, গল্পটা কিন্তু দারুণ। শুভকামনা রইলো আগামীর জন্য।
‘আপনি আমার লিখা পড়েন!
‘পড়ি মাঝে মাঝে, মোটামুটি ভালো লিখো। তবে আরো ইমপ্রুভমেন্ট দরকার। ব্যাপার না চেষ্টা করলে হয়ে যাবে।
‘আলিশা ছোট করে বলল,ধন্যবাদ।
‘কি বললে,শুনতে পাইনি, আবার বলো।
‘হুমায়রা কলেজ গেটে চলে এসেছি তুই নামবি নাকি থাকবি!
ওদের আগে মানাফ নেমে গাড়ীর ড্রোর খুলে দিলো।
হুমায়রা আর আলিশাও নেমে আসলো।
‘দূর থেকে একজন শকুনের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। নিজের হাত নিজে মুষ্টিবদ্ধ করে রাগ নিয়ন্ত্রণ করা বৃথা চেষ্টা করে পাশের দেয়ালে স্বজোড়ে আঘাত করলো। দেয়ালে আঘাত করলে, আঘাত নিজের কাছেই ফিরে আসে৷ কিন্তু এই মূহুর্তে হাতের আঘাতের চেয়ে হৃদয়ের আঘাত বেশি। তাই অনুভব হচ্ছে না।
‘আলিশা আগে চলে আসলো। হুমায়রা কি যেনো বলছে মানাফকে।
আলিশা ক্লাস রুমে ঢুকবে তার আগেই। অভ্র আলিশার হাত ধরে টেনে একটু ফাঁকা জায়গা নিয়ে আসলো৷
‘কি সমস্যা আপনার! মেয়ে দেখলেই টানাটানি করতে ইচ্ছে করে!
‘ওই ছেলেটাকে?
‘আপনাকে কেন বলবো!
‘বলতে হবে, কারন এখন আপনারা ভাইরাল টপিক।
‘আপনাকে কিছু বলতে আমি বাধ্য নই।
‘অভ্র আলিশার হাত পেছন দিক থেকে ঘুরি ধরে নিজের একদম কাছে এনে বলে,তুই আমার মানে আমার! আমার না হলে অন্য কারো না৷তোর বিয়ে দরকার তাইতো! যাহহহ কাল যাবো তোর বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।
‘একটা কথা আছে না,রাত গ্যায়া বাদ গ্যায়া। সো মিস্টার অভ্র আপনিও সেভাবে আমার জীবন থেকে আউট হয়ে গেছেন। এখন আপনি আমার এক্স। আর হ্যা ওই ছেলেটা প্রেজেন্ট।
‘আলিশা অভ্র যতদিন বেঁচে আছে তোমার প্রেজেন্ট, ফিউচার সব সে।
‘তো ডাক্তার আহিয়ান আনান অভ্র, আপনি স্ব ইচ্ছে তে আমাকে ছাড়বেন নাকি লোক জড়ো করবো?
‘অভ্র আলিশাকে ছেড়ে দিয়ে বলে,তোমার ঠিকানা একটাই মিসেস অভ্র।
আলিশা ক্লাসে এসে ক্লাস করলে, পুরো,ক্লাসে হুমায়রার সাথে কোন কথা হলো না। ক্লাস মেষ করে গ্রুপ স্টাডি করতে বসবে তার আগে, হুমায়রা বলে,কিরে অভ্র আবার এমন করছে কেন?
‘পাগল উন্মাদ হয়ে গেছে। এখন বলে ও আমার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবে।
‘সেটা তো ভালো কথা ঝগড়া মিটিয়ে নে।
‘ভালো কথা তোর জন্য। আমার জন্য না। যে ছেলে সামান্য রুম ডেটকে ইস্যু করে ব্রেকআপ করে দেয়। তার সাথে আমার হবে না। এরচেয়ে তোর ভাই ভালো এরকম ছেলে পেলে ঝুলে পরবো,।
✨
মানাফ অফিসে এসে সবার সাথে পরিচিত হয়ে, সিজের কেবিন এসে বসলো। কফি মগে চুমুক দিতে দিতে আলিশার পেজে ঘুরছিলো। আলিশার আজকের পোস্ট চোখে পরলো। যেটা ঘন্টা খানিক আগেই করেছে।
‘যে চলে যেতে যায় তাকে আটাকবে না। বরং যেতে দাও! জোড় তরে ঘর পেলেও মন পাওয়া যায় না।
‘পোস্ট পড়ে মানাফ বিরবির করে বলছে আমি, তোমার রুপে মুগ্ধ, তোমার গুণে খু’ন! এখন বেঁচে থাকতে হলে আমার তোমাকে প্রয়োজন। মিস লেখিকা।এমন সময় হুসনা কয়েকবার ডোর নক করে, বলল,স্যার আসতে পারি! বার কয়েক বলার পর মানাফ খেয়াল করলো নিজের দিকে তাকিয়ে বলে, আসুন।
‘স্যার বারোটা বাজে মিটিং আছে। আমি সব ফাইল রেডি করে এনেছি,আপনি একবার চেক করে নিবেন।
ফাইলগুলো নেয়ার সময় মানাফ খেয়াল করলো হুসনা শাড়ী পরা৷ কোন কিছু দ্বিধা না করেই জিজ্ঞেস করলো, আপনি অফিস শাড়ী কেন পরে এসেছেন!
‘স্যার এটাই তো রুলস, সব মেয়ে স্টাফরা শাড়ী পরবে।
‘আর ছেলে স্টাফরা কি পাঞ্জাবি পরে আসে!
‘নাহহহ স্যার তা কেন হবে। তারা নিজের ইচ্ছে মত ড্রেস পরে আসে।
‘ওহহহ আমি ভাবলাম শাড়ী, পাঞ্জাবি পরে অফিসে বিয়ের আয়োজন করতে আসে হয়তো। তা এ নিয়ম কে করলো!
‘কামাল সাহেব।
‘বাবা কিছু বলেনি!
‘স্যার এসব বিষয় তেমন একটা খেয়াল করেন না।
‘আগামীকাল থেকে নিজের সাচ্ছন্দ্য মত ড্রেস পরে আসবে। তবে হ্যা অবশ্যই রুচিসম্মত হতে হবে!
‘জ্বি স্যার।
হুসানা চলে আসাবে এমন সময় মানাফ বলে,আমার জন্য এক কাপ সুগার ফ্রী কফি পাঠিয়ে দেবেন।
‘হুসনা বাহিরে এসে আনন্দ মুচকি হাসছে,মনে মনে বলছে ইশশ মিস্টার হবু জামাই একবার আমার দিকে ভালো করে তাকালো না!
✨আলিশা স্টাডি কম্পিলিট করে বাসার দিকে রওনা দিয়েছে এমন সময় তার সামনে এসে হাজির…….
#চলবে