#শ্রাবণ_দিনের_প্রেম
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -২
ক্লাস শেষ করে ক্যাম্পাসে বসে নোটস করছিলো আলিশা। এমন সময় অভ্র এসে বলে, হায় হালিশা।
‘আলিশা অভ্রর কথায় পাত্তা না দিয়ে নিজের মোবাইলে লাউডস্পিকারে Break-up song ছেড়ে দিয়ে নিজের কাজ করতে লাগলো।
দিয়া আলিশার পাশেই বসে মুখ টিপে হাসছে।
অভ্র আলিশার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে, শোকে কি পাগল হয়ে গেলে নাকি মিস হালিশা।
‘আলিশা গান বন্ধ করে বলে,পাগলের সুখ মনে মনে, তা আপনার মত আনারসের জন্য শোক পালন করবে কে শুনি!
‘কামন হালিশা আমাকে ভুলভাল বোঝাতে পারো বাট নিজেকে কি বোঝাবে?
‘নিজেকে বুঝিয়েছি আপনার মত একটা পঁচা আনারসকে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে সামনে ইয়ার ফাইনাল পরিক্ষা সেটায় মনযোগী হবো। এরকম নর্দমা কত আসবে যাবে!
‘ওই যে প্রবাদ আছে আঙ্গুর ফল টক, ব্যাপারটা সেরকম হয়ে গেলো।
‘আলিশা অট্র হাসি দিয়ে বলে,নাইস জোক্স। আপনি এমন কোন রাজপুত্র না। যাকে না পেয়ে আফসোসে মরে যাবো। সো আমার পিছে না ঘুরে নিজের পড়ালেখায় মনোযোগ দিন। আফসোস করে লাভ নাই জানি আমার মত সুন্দরী, রূপবতী আপনার কপালে নেই। সো রাস্তা ছাড়ুন।
‘আমি ডাক্তার আহিয়ান আনান অভ্র আমার এক ইশারাতে মেয়েদের লাইন লেগে যাবে৷
‘আপনার মত ছেলেদের জন্য লাইনের মেয়ে ঠিক আছে, কোন ভদ্র মেয়ে লাইনে দাঁড়াবে না নিশ্চয়ই।
অভ্র আলিশার হাত শক্ত করে ধরে বলে, খুব বাড় বেড়েছে দেখছি। তুমি ভুলে যাচ্ছো আমি কে?
আলিশা নিজের হীল দিয়ে অভ্রর পায়ে পারা দিয়ে বলে,আপনি ভুলে যাচ্ছেন আমি কে! কেউ ইট মারলে তাকে পাটকেল মারতে আলিশা জানে। সো বি কেয়ার ফুল৷
আলিশা ক্লাস রুমের দিকে চলে গেলো, সাথে দিয়া, আর সুস্মিতা।
রোদ অভ্রকে বললো,তোর টোপ উল্টো না পরে! চাইলি জ্বালাতে আলিশা তো নিজেই আগুন সে জ্বলার চেয়ে জ্বালাবে বেশি।
‘বাদ দে আমিও দেখে নেবো ওকে। ব্যাকডেটেট মেয়ে, এই যুগে কে বিয়ের জন্য অপেক্ষা করে, বিয়ের আগে একসাথে সময় কাটানো কি এমন ব্যাপার। এখনি তো সময় ইন্জয় করার।
‘তুই কি আলিশার সাথে এজন্য ব্রেকআপ করলি৷ ও রুম ডেট করতে মানা করলো তাই!
‘দেখ ও যথেষ্ট রূপবতী মেধাবী ওকে বিয়ে করা যায় কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে! আর কি এমন ভুল জিনিস চেয়েছি! ভেবেছিলাম ব্রেকআপের কথা শুনলে রাজি হয়ে যাবে। উল্টো পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করতে লেগে পরেছে৷
‘ছেড়ে দে অভ্র ক্যাম্পাসে ওর সাথে এসব নিয়ে ঝামেলা করলে বিষয়টা জানাজানি হয়ে যাবে৷
‘অভ্র সহজে কাউকে ছাড়ে না। আর নিজের শিকার তো নাই! আগে প্রেম ছিলো এখন জুনুন।সো দেখি ও আমার হাতে ধরা না দিয়ে কোথায় যায়? যত দূরেই উড়ে যাক পাখি, সন্ধ্যা হলেই আমার ঘরে বন্দী।
‘বন্দী হওয়ার মত পাখি আলিশা না। আমার যা মনে হয়।
‘এই রোদ তোকে কি আলিশা দশটাকা ঘুস দিয়ে ওর চামচামো করতে বলেছে! দেখি তোর আলিশা কোন ঘরে বন্দি হয়।
✨
রাত ন’টায় বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে মানাফ হুরায়রার রুমে এসে বলে, কিরে পেত্নী কি খবর!
‘আমার খবর যাই হোক তোমার খবর কি?
‘আমি আবার কি করলাম?
‘তুমি জানোনা তুমি কি করেছো!
‘নাহহহ জানিনা তো!
‘এই দেখো আলু আমাকে ব্লক করে দিয়েছে।
‘আলু মিন আলিশা আঞ্জুম!
‘হুম। মানাফ শব্দ করে হেসে বলে,এই আসলেই এই মেয়ে মেডিক্যাল দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী!
‘ভাইয়া!
‘আরে সামান্য কথায় নিব্বিদের মত তোকে ব্লক করে দিল!
‘এটা সামান্য কথা না। ও মাঝে মাঝে দু’একটা ভিডিও করে কিন্তু সেটা আমরা তিনজন ছাড়া কেউ দেখে না।
‘তো তাতে কি এমন হইছে, তোর আইডি পাস ছিলো আমার কাছে আমি দেখে ফেলছি। এরজন্য এমন বিহেভ করবে!
‘আর ওর লেখালেখির বিষয়টাও সবাই জানেনা। তুমি সব ঘেটে দিছো।
‘আচ্ছা তোর বান্ধবী মাঝ রাস্তায় বৃষ্টির মধ্যে পাগলের মত ভিজতে ছিলো, সাহায্য করায় আবার ঝগড়ুটে মেয়েদের মত।ঝগড়া করাও শুরু করে দেয়। তাই পাগল থামাতে এটা বলেছি।
‘এরজন্য এসব বলবা আর কোন কথা ছিলো না!
‘শোন তোর আলুকে বল আমাকে ধন্যবাদ আর ট্রিট দিতে সাথে আমার কোর্ট দিয়ে যেতে সুন্দর করে ওয়াশ করে।
‘আমি কল করবো, তুমি সরি বলবা। যদি সরি বলো তাহলে তোমাকে ধন্যবাদ বলতে বলবো।
‘লাগবে না ধন্যবাদ বলবো না সরি। অজ্ঞান হয়ে রাস্তায় পরে থাকতো, সাহায্য করেছি আবার সরিও বলবো! থাক তুই তোর আলু, পটল তরকারি নিয়ে।
‘ভাইয়া একদম ভালো হবে না বলে দিচ্ছি, ভালোয় ভালোয় সরি বলে দে।
‘,বলবো না সরি কি করবি?
‘বাবার কাছে বিচর দেবো।
‘দে কে ধরে রাখলো। আমিও বলবো সৌরভ দাদা বাবুর কথা। তার বাচ্চা মেয়ের হবু জামাই বলে কথা শ্বশুরের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো।
‘তুই এতো বাজে কবে হলি!
‘যাহহহহ ওমনি বাজে হয়ে গেলাম!আর হ্যা শোন আমি কাউকে সরি বলি না৷ তবুও ভুলটা আমার হলে ভেবে দেখতাম। ভুল তোর আলুর সরি হোক বা ধন্যবাদ সেটাও বলতে হবে তোর আলুর
মিসেস সেলিনা এসে বলে, এতো বড় হয়ে গেছিস এখনো ঝগড়া করিস বাচ্চাদের মত। তাড়াতাড়ি খেতে আয় রাত কত হয়েছে খবর রাখিস!
✨
রাতের এগারোটায় বাসায় ফিরলো আলিশা। নাহার বেগম খাবার টেবিলে খাবার বাড়তে বাড়তে বলেন, ফ্রেশ হয়ে আয় একসাথে খাবো।
‘মা দেখো আমাকে এই মূহুর্তে কোন প্যারা দিওনা৷ প্লিজ। আমি জানি তুমি এখন কোন একটা ইস্যু নিয়ে বলা শুরু করবা। প্লিজ মা, সারাদিন ক্লাস, পড়া সব করতে করতে আমি টায়ার্ড।
‘কথা কম বলে তাড়াতাড়ি আয়৷
আলিশা ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে এসে চেয়ার টেনে বসলো।
নাহার বেগম আলিশার প্লেটে খাবার তুলে দিয়ে বললেন, কালকে বৃহস্পতিবার। কালকে তোর ফুপির বাসায় যাবো বসুন্ধরা।
‘আমি যেতে পারবো না আম্মু সপ্তাহ খানেক পর আমার এক্সাম আমি খুব চাপে আছি।
‘তুই বই নিয়ে যাবি সাথে, কিন্তু যেতে হবে।
‘জোড় করো না আম্মু আমার পক্ষে সম্ভব না। প্লিজ আম্মু বারবার এক কথা বলবা না।
আলিশা খাবার শেষ করে নিজের জন্য এক কাপ কফি করে নিয়ে পড়ার টেবিলে বসলো। বই খুলে বইয়ের পাতায় চোখ রেখে হারিয়ে গেলো অতীতে।……..
তখন সবে নতুন নতুন ক্লাস শুরু করেছে কয়েকমাস হবে। শ্রবাণ মাসের শুরুর দিকে হঠাৎ বৃষ্টির মত দেখা হয় অভ্রর সাথে। ক্লাস শেষে রাতের ন’টায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে বাসের অপেক্ষা করছিলো৷ হুট করে ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়। কোন দোকানের ছাউনির নিচে যাবে তার আগেই অভ্র একটা ছাতা এগিয়ে দিয়ে বলে, কোন ইয়ার।
‘আলিশা কথার উত্তর দিচ্ছে না ছাতাও নিচ্ছে না। অভ্র নিজেই ছাতা মেলে দিয়ে বলে,আমি অভ্র ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্ট সেম কলেজ।
এবার আলিশা ছাতা নিলো, আস্তে করে বলল আমি প্রথম বর্ষের।
‘ওহহহহ নিউ। আচ্ছা কিছু মনে না করলে আমি তোমাকে ড্রপ করে দেই। আমার নিজের গাড়ী মানা করবে না আশাকরি।
‘কিন্তু ভাইয়া৷ আমার আর আপনার রাস্তা তো ভিন্ন!
‘রাস্তা চাইলেই এক করা যায়, চলো তো। ও হ্যা নামটা কি তোমার?
‘আলিশা আঞ্জুম।
আলিশার ভাবনার মাঝেই পর পর কয়েকটা টেক্সট টোন বেজে উঠলো ফোনে৷ ভাবনা থেকে বের হয়ে ফোন হাতে নিতেই টেক্সট গুলো পরে ভ্রু কুচকে বলে, হোয়াট!
#চলবে