শ্রাবণের এক সন্ধ্যায় পর্ব ৭

0
247

#শ্রাবণের_এক_সন্ধ্যায়
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_সাত

রাস্তার মধ্যে দাড়িয়ে আছে সুপারস্টার তাজওয়ার। তাকে ঘিরে ভীড় জমেছে সাধারন জনগনের মাঝে। কয়েক’টা মেয়ের সাথে তাজওয়ার খুব ক্লোজ হয়ে ছবি তুলছে। দূর থেকে তারিন গাড়িতে বসে এইসব লক্ষ্য করছে। তাজওয়ারের চারপাশে এত মেয়ের আনাগোনা দেখে রাগে শিরা-উপশিরা গুলো বিশিয়ে গেলো। স্ট্যায়িং’টা শক্ত করে চে’পে ধরলো।
তাজওয়ার এত ভীড়ে ক্লান্ত হয়ে সবাই’কে সাইড কাটিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো। গাড়িতে উঠে বড় বড় নিশ্বাস ফেলে ড্রাইভার’কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো…..

–গাড়ি ছাড়ো কুইক।

ড্রাইভার গাড়ি স্ট্যাট দিতেই ডিরেক্টর এসে জানালায় নক করলো। তাজওয়ার বিরক্ত হয়ে বলে উঠলো…..

–আজকে আমি খুব বেশি টায়ার্ড। সো ডোন্ট ডিস্টার্ব মি প্লিজ…

ডিরেক্টর’কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে গাড়ি চলতে শুরু করলো। গাড়ি চলতে শুরু করলে তাজওয়ার যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো। ফোঁস করে নিশ্বাস ছেড়ে নিজে নিজেই মিনমিনিয়ে বলে উঠলো……

–তোমার সাথে আমার অনেক হিসাব মেলানোর বাকি আছে বিউটিফুল লেডিস। আমার প্রতি কেনো এত ঘৃনা? কিসের প্রতিশোধ নিতে চাও তুমি? এইসব প্রশ্নের উওর আমাকে জানতেই হবে। যতক্ষন না অব্দি আমি সব প্রশ্নের উওর জানতে পারছি ততক্ষন অব্দি আমার শান্তি নেই……
____________________________________________
বিশাল বড় ড্রয়িং রুমে বিভিন্ন দামী জিনিস পত্র দিয়ে সাজানো। সোফার উপর বসে বসে খবর দেখছিলেন জহির হোসেন। হাত ধোয়া উঠা চা নিয়ে ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করলেন রাইমা বেগম। চায়ের কাপ’টা জহির হোসেনের হাতে দিয়ে সোফায় বসতে বসতে বলে উঠলো…….

–আমার তাহমিদ কি কোনোদিন আমাদের সবার সাথে দূরত্ব কমাতে পারবে না? ডাক্তার কি বললো?

স্ত্রী’র কথা শুনে জহির হোসেনের মন’টা খারাপ হয়ে গেলো। হাফ ছেড়ে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলে উঠলো…..

–কেনো পুরনো বিষাক্ত অতীত মনে করাতে চাও তাহমিদ’কে। থাকুক না ও ওর বর্তমান নিয়ে ভালো। তুমি বরং এইসব ভুলে ছেলের জন্য মেয়ে দেখা শুরু করো। ছেলের তো কম বয়স হয়’নি বিয়ে করবে কবে?

জহির হোসেনের কথা শুনে রাইমা বেগম বুঝতে পারলেন। তিনি এই মুহূতে এই বিষয়’টা এড়িয়ে যেতে চাচ্ছে। কিন্তু সে তো একটা মা। ছেলে যে তাদের সাথে সব সময় একটা দূরত্ব বজায় রাখে তা সে বেশ বুঝতে পারে। আর এই দূরত্বের কারন ও তাদের অজানা নয়। ছেলে’টা কি কোনোদিন নিজ থেকে এই দূরত্ব কমাতে পারবে না? কোনোদিন মা বলে জড়িয়ে ধরবে না? কোনোদিন কি মন খারাপ হলে মায়ের কোলে এসে ঘুমাবে না? কথাগুলো ভাবতে ভাবতে রাইমা বেগমের চোখের কোনে অশ্রু ফোটা জমতে শুরু করলো। আঁচল দিয়ে অশ্রুটুকু মুছে নিয়ে বললো…..

–আমি কালকের থেকেই তাহমিদের জন্য মেয়ে খোঁজা শুরু করবো। আমার ছেলের জন্য তো আর যে সে মেয়ে খুঁজলে চলবে না। একটা শান্ত শিষ্ট পরির মতো মেয়ে খুঁজে নিয়ে আসব।

বলে সোফা থেকে উঠে নিজের রুমের দিকে পা বাড়িয়ে মনে মনে বলতে লাগলো…..

–তুই কোথায় আছিস? কেমন আছিস? আমি জানিনা। কিন্তু তুই আমার ছেলের জীবনে আর কোনোদিন ফিরে না আসলে সব থেকে বেশি খুশি আমি হবো। তুই আমার ছেলের জীবন’টাকে ন’রক করে রেখে দিয়েছিস। কোনোদিন ফিরে আছিস না। কোনোদিন না……

বলে মুখে আঁচল চা’পা দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে নিজের রুমে চলে গেলো। আর জহির হোসেন স্ত্রীর যাওয়ার পানে তাঁকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজে নিজে বলে উঠলো……

–সবাই তোকে ভুল বুঝলেও আমি বিশ্বাস করি আমার মেয়ে কোনোদিন ভুল কাজ করতে পারে না। একদিন তুই এসে সবার ভুল ভেঙে দিবি। আমি সেদিনের অপেক্ষায় আছি মা…….
___________________________________________
তাজওয়ার’কে চলে যেতে দেখে তারিন ও মুচকি হেসে গাড়ি স্ট্যাট দিলো। এর মধ্যেই নামল শ্রাবন ধারা। হুট হাট কোনো গর্জন ছাড়াই নেমে পড়লো বৃষ্টি। অসময়ে বৃষ্টি দেখে তারিন কিছু’টা চোখ মুখ কুচকালো। জানালা’টা বন্ধ করে দিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। গাড়ি ছাড়ার পর বিরক্ত লাগছে না। বরং ভালোই লাগছে। সাউন্ড বক্সে প্রিয় গান’টা ছেড়ে দিলো। পুরনো কিছু স্মৃতি মনে করতে করতে বাসার নিচে এসে গাড়ি থামলো। বৃষ্টি দিয়ে ভিজে’ই ভেতরে প্রবেশ করলো। ভেতরে ঢুকে সার্ভেন্ট’কে এক কাপ কফি দেওয়ার জন্য অর্ডার দিয়ে উপরে নিজের রুমে চলে এলো। নিজের রুমে এসে হুট করে ড্রেসিং টেবিলের দিকে নজর দিতেই থেমে গেলো। কত দিন যাবৎ আয়না দেখা হয়না। নিজেকে সুন্দর করে সাজানো হয় না। সব রঙ হারিয়ে গেছে জীবন থেকে কয়েক বছর আগে। নিজের রঙিন জীবন’টাকে কালো অবয় এসে গ্রাস করে নিয়েছে। আজ অনেক বছর যাবৎ নিজেকে একটু রঙিন ভাবে সাজাতে ইচ্ছে করলো। ইচ্ছে’টাকে দমিয়ে রাখতে পারলো না তারিন। ছুটে গিয়ে কেবিনেট থেকে একটা টকটকে লাল রঙের শাড়ি বের করে নিলো। শাড়ি পড়তে না জানলে ও ইউ-টিউব দেখে খুব সুন্দর করেই ঝটপট শাড়ি’টা পড়ে নিলো। ড্রেসিং-টেবিলের সামনে বসে সময় নিয়ে নিজেকে সাজালো। একবার চুল গুলো খোঁপা করে নিলো। পরক্ষনে’ই কিছু একটা মনে করে চুল গুলো ছেড়ে দিলো। নিজেই নিজেকে দেখে লজ্জা লজ্জা মুখ করে হাসচ্ছে। এর মধ্যে’ই সার্ভেন্ট এসে দরজায় নক করলো। তারিনের আদেশ পেয়ে ভেতরে ঢুকে তারিনের সাজ দেখে হা করে চেয়ে রইলো খানিক ক্ষন। তারপর কফির মগ’টা রেখে তারিনের পা-থেকে মাথা অব্দি দেখে দুই গালে হাত দিয়ে অবাক স্বরে বলে উঠলো…..

–আল্লাহ গো আফা আপনে আইজা কত্ত সুন্দর কইরা সাজচ্ছেন। আপনেরে দেইখা তো আইজকা সব ছ্যামডারা পা’গল হইয়া যাইবো। বিশ্বাস করেন গো আফা আইজা আপনারে এক্কেরে পরির লাহান লাগতাছে…..

তাহেরার কথা শুনে তারিন মুচকি হাসলো। লজ্জা পেলে ও মুখ’টা গম্ভীর করে উওর দিলো….

–ইদানীং বেশি কথা বলো তাহেরা। যাও গিয়ে পড়তে বসো। সামনে তোমার এক্সাম ভুলে গেছো।

তাহেরা তারিনের ধমক খেয়ে দৌড়ে হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেলো। তাহেরা চলে যেতেই তারিন হাসতে লাগলো আপন মনে। হাসতে হাসতে কফির মগ’টা নিয়ে বেলকনি’তে পা বাড়ালো।
____________________________________________
বাইরে ঝুম বৃষ্টি। আকাশ’টা বার বার গর্জন করে কেঁদে উঠছে। চারদিকে কিছুক্ষন পর পর চিলতে আলোর রেখা ফুটে উঠছে। বাতাসে শনশন শব্দ হচ্ছে। আকাশের গর্জনে বিল্ডিং এর কাচের জানালা গুলো বার বার কেঁপে উঠছে। বেলকনিতে দাড়িয়ে এক বৃষ্টি কন্যা। কফির মগ থেকে ধোয়া উঠছে। ফর্সা শরীরে লাল রঙের কাপর’টা বড্ড মানিয়েছে। দুই হাত ভর্তি লাল চুড়ি। বাতাসের তোড়জোড়ে বুকের আঁচল’টা খানিক’টা সরে আছে। যার কারনে গলার নিচের দিক’টা সম্পূর্ণ দেখা যাচ্ছে। বৃষ্টির ফোটা এসে বারবার ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে বৃষ্টি কন্যা। আর বৃষ্টি কন্যা সব প্রতিশোধ, বিষাদ ভুলে বৃষ্টি উপভোগ করতে ব্যস্ত। হাত বাড়িয়ে দিলো বৃষ্টির পানিতে। খোলা চুলের এক পাশে বেলিফুলের মালা গাঁথা সুন্দর করে। বাতাসে খোলা চুলগুলো উড়ছে আপনমনে। ঠোঁটে টকটকে লাল রঙের লিপস্টিক গুলো ফুটে আছে। মেকাপবিহীন মুখে। ডাগর ডাগর চোখে কালো কাজল’টা খুব মানিয়েছে। চোখ বন্ধ করে বৃষ্টির পানিতে হাত ভিজালো। মুখে ফুটে আছে ভুবন ভুলানো হাসি।
গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে বুকে হাত গুঁজে এক মনে চেয়ে আছে তাজওয়ার বৃষ্টি কন্যার দিকে। ভিজে একাকার অবস্থা ওর। তাও যেনো ঘোর কাটছে না। তারিন বৃষ্টি নিয়ে খেলায় এতই ব্যস্ত যে তাজওয়ার’কে দেখতেই পায়নি। তাজওয়ার ঘোর লাগা কন্ঠে বলে উঠলো…..

–বৃষ্টি কন্যা এসেছো তুমি..
কোনো #শ্রাবণের_এক_সন্ধ্যায়
আমার মনে ফুল ফুটাতে..
রহস্য ঘেরা রিভেঞ্জওয়ালা লাভ নিয়ে…..

#চলবে

[ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কাল থেকে নিয়মিত পাবেন কাল এক্সাম শেষ ?‍♀]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here