#শ্রাবণের_এক_সন্ধ্যায়
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#দ্বিতীয়_পর্ব
–উফফ তোমার ফিগার দেখলে যাস্ট নেশা ধরে যায়। এত সুন্দর ফিগার ধরে রাখার রহস্য কি মামনি? আমাদের ও একটু বলো? আমরা না হয় আরো সুন্দর করে দিব………
মেডিকেল কলেজের গেটে পা রাখতে’ই কয়েক’টা বখাটে ছেলে পেছন থেকে ওড়না টেনে ধরলো তারিনের। তা দেখেও তারিন খুব শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো ওদের দিকে। ছেলে গুলোর মধ্যে একজন তারিনের ওড়না’টা এক টানে খুলে নিয়ে হাতে প্যাঁচাতে প্যাঁচাতে দাত বের করে উপরোক্ত কথা গুলো বলে উঠলো। কথা’টা বলেই ওরা সবাই এক সাথে হেসে উঠলো। আর তারিন খুব শান্ত চোখে ওদের দিকে তাঁকিয়ে বাঁকা হাসচ্ছে। উপস্থিত সবাই ওদের দিকে তাঁকিয়ে। দূর থেকে কয়েক’টা ছেলে এগিয়ে আসার জন্য পা বাড়াতে’ই তারিন ওদের ইশারায় থামিয়ে দিলো। তারপর এপ্রোন’টা একটু টেনে ঠিক করে নিলো। ছেলে গুলো তারিন’কে এত শান্ত দেখে কিছু’টা অবাক হলো। তারিনের জায়গায় অন্য মেয়ে হলে বোধহয় এতক্ষনে কান্না-কাটি চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হয়ে যেতো। আর সেই জায়গায় তারিন এত শান্ত রয়েছে কি করে? ছেলেগুলো এইবার মুখের ভঙ্গিমা বিশ্রি করে হাসতে হাসতে তারিনের চারদিকে ঘুরতে লাগলো। তা দেখে তারিন বুকে হাত গুঁজে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে দাড়িয়ে দৃষ্টি দিলো সামনের দিকে। ছেলেগুলোর মধ্যে আরেকজন এইবার তারিনের সামনে একটু ঝুঁকে বিশ্রি ভঙ্গি’তে বললো…..
—বলো না মামনি। তোমার এই ভরা যৌবনের রহস্য কি? তোমাকে দেখলেই বার বার তোমার এই রুপে ডুব দিতে ইচ্ছে করে…..
এইটুকু বলে তারিনের দিকে হাত বাড়াতেই ছেলে’টা বিকট শব্দ করে চিৎকার করে উঠলো। ওর চিৎকারে সবাই ভড়কে গেলেও তারিন শান্ত। বাকি সবাই ওর দিকে তাঁকাতে’ই দেখলো ছেলে’টা ওর লজ্জা স্থান ধরে ব্যাথায় ছটফট করতে করতে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। সবাই এক মুহূর্তের জন্য অবাক না হয়ে পারলো না। এই কয়েক সেকেন্ডের মাথায় ওর কি হয়ে গেলো? বাকি ছেলে গুলো ওর অবস্থা দেখে ভয়ে ঢোঁক গিলছে। তারিন ওদের দিকে তাঁকিয়ে হাসোজ্জল মুখে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো…..
–কি যেনো বলছিলি….. আমার ভরা যৌবনের রহস্য কি? রাইট। আমার ভরা যৌবনের রহস্য তো দূরে থাক আমার রহস্য জানতে পারলে তোদের একেক’টার প্যান্ট নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কেনো শুধু শুধু নিজেদের ভুরি ওয়ালা ইজ্জত নষ্ট করবি?
বলে ছেলে’টার হাত থেকে ওড়না’টা এক টানে নিয়ে গলায় প্যাঁচিয়ে ছেলেটার কাঁধে হাত রেখে বলে উঠলো…..
–চিল ম্যান চিল। গুড বায়। খুব শিঘ্রই আমাদের দেখা হবে আশা করছি…..
বলে’ই শিষ বাজাতে বাজাতে তারিন ভেতরে ঢুঁকে গেলো। ভেতরে ঢুঁকে তারিন একবার ওর জুঁতার দিকে তাঁকিয়ে মুচকি হাসলো। কারন, তারিনের পায়ে এক ইঞ্চি লম্বা হিল ছিলো তাই ছেলে’টার মেইন জায়গায় যে আজ প্রবলেম হয়ে যাবে তা বেশ বোঝা যাচ্ছে।
____________________________________________
এর মধ্যে কেটে গেছে দুইদিন। তাজওয়ার এখন খানিকটা সুস্থ। মাথার আঘাত’টা সেরে উঠতে সময় লাগবে। কেবিনের বেডে হেলান দিয়ে বসে আছে তাজওয়ার । ওর সামনেই স্যুপের বাটি হাতে নিয়ে বসে আছে রাইমা বেগম। কিন্তু, তাজওয়ার কিছুতে’ই খাবেনা। ওর মাথায় একটা’ই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। কে ওই মেয়ে’টা? কেনো এমন করলো? তাজওয়ারের ভাবনার ছেদ ঘটলো ফোনের আওয়াজে। ফোন’টা হাতে নেওয়ার জন্য হাত বাড়াতে’ই রাইমা বেগম ধমকের স্বরে বলে উঠলো…..
–এখন ফোনে কথা বলার মতো সিচুয়েশন নেই তাজ। তোর প্রবলেম হবে….
তাজওয়ার এক প্রকার চেঁচিয়ে বলে উঠলো….
–মামনি প্লিজ আমাকে একটু একা ছেড়ে দাও। প্লিজ এখন যাও তুমি।
বলে ওর মায়ের হাত থেকে ফোন’টা নিয়ে কারোর নাম্বারে ডায়াল করলো। কয়েকবার রিং হওয়ার সাথে সাথে ওপাশ থেকে কেউ একজন হ্যালো বলতে’ই তাজওয়ার শান্ত কন্ঠে বললো…..
–চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে ওই মেয়ে’টার সম্পূর্ণ ডিটেইলস আমার চাই।
বলে ফোন’টা কে’টে দিলো আর কিছু বলার সুযোগ দিলোনা ওপাশের মানুষ’টাকে। রাগে ওর মাথায় যন্ত্রনা শুরু হয়েছে। একটা মেয়ের এত সাহস কি করে হতে পারে ভাবতে পারছেনা? রাইমা বেগম ছেলের চোখ দুটো দেখে’ই বুঝতে পারলো তাজওয়ার রেগে আছে। তাই তিনি তাজওয়ারের কাঁধে হাত রেখে বললো…..
—বাবা আমি জানিনা মেয়ে’টা কে? আর কেনোই বা তোকে আঘাত করলো। তবে আমি এটা বেশ বুঝতে পারছি যে, এর মধ্যে নিশ্চয়ই কোনো রহস্য রয়েছে। আর আমার মনে হয়ে মেয়ে’টার পরিচয় খুঁজে বের করার পাশাপাশি এই রহস্য’টাও খুঁজে বের করা বেশি ইম্পোটেন্ট…..
বলে তিনি বেরিয়ে গেলো। ডান হাত দ্বারা কপালে স্লাইড করতে করতে নিজে নিজেই বললো…..
—তোমাকে তো আমার খুঁজে বের করতেই হবে। কিন্তু সেটা প্রতিশোধের জন্য না…
বলে বাঁকা হাসলো। অন্যদিকে, মিডিয়ার লোকেরা যা নয় তাই বলে হেডলাইন বানিয়ে খবর রটাচ্ছে। এইসব তাজওয়ারের কাছে বিরক্ত লাগছে। এরা চ্যানেলের নাম বাড়ানোর জন্য যা নয় তাই বলে বেড়াবে। এইসব ভাবতে ভাবতেই তাজওয়ার চোখ বন্ধ করতে’ই মেয়েটার মুখ ভেসে উঠলো। চারপাশে মেয়েটার কন্ঠস্বর বাজতে লাগলো। তাজওয়ার তড়িঘড়ি করে চোখ খুলে চারদিকে একবার তাঁকালো। নিস্তব্দ রুমে তাজওয়ার স্পষ্ট শুনতে পেলো ওর বুকের স্পন্দন। ডান হাত’টা হার্ট বরাবর রেখে মুচকি হেসে বলতে লাগলো……
— তোমার রোমাঞ্চকর মধুর ধ্বনি আমাকে দেওয়া করে দিবে মাই বিউটিফুল লেডিস……
তাজওয়ার কথা’টা শেষ করে হাসতে লাগলো। এর মধ্যে কেউ দরজা থেকে বলে উঠলো…..
–বাহ যে তোর মাথা ফা’টালো তুই তার প্রেমে পড়ে গেলি। ক্যায়া বাত …
তাজওয়ার হাসি বন্ধ করে দরজা’র দিকে তাঁকাতে’ই দেখলো তাসনিম দাড়িয়ে আছে। তাসনিম হলো তাজওয়ারের বেস্ট ফ্রেন্ড। পেশায় একজন অভিনেত্রী। সেই সুবাধেই ওদের পরিচয়। তাসনিম কে দেখে তাজওয়ার এক গাল হেসে বলে উঠলো…..
–বিলিভ মি ইয়ার মেয়েটার ককন্ঠস্বর যাস্ট অসাধারণ। আমি কিছুতে’ই ভুলতে পারছিনা।
তাসনিম তাজওয়ারের কথা শুনে শব্দ করে হাসলো।
–লাইফে ফাস্ট টাইম দেখলাম একজন রিভলবার ঠেঁকিয়ে প্রোপজ করছে। অন্য জন্য যে মাথা ফা’টালো তার প্রেমে পড়ছে। ভাই তোদের প্রেম-কাহিনী তো অমর হয়ে থাকবে আজীবন। নোবেল পাওয়া দরকার তোদের……
কথা’টা বলেই তাসনিম হেসে উঠলো। ওর সাথে তাল মিলিয়ে তাজওয়ার ও হাসতে লাগলো।
____________________________________________
তারিন কলেজ থেকে বেরিয়ে সোজা হসপিটালের উদ্দেশ্য রওনা দিলো। ঘন্টা খানেকের মাথায় হসপিটালের সামনে এসে গাড়ি’টা থামিয়ে এপ্রোন’টা হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। তারিন’কে দেখেই গেটের দারওয়ান সালাম দেওয়ার আগেই তারিন খুব মিষ্টি করে হেসে লম্বা একটা সালাম জানালো দারওয়ান’কে। তা দেখে দারওয়ান এক গাল হেসে তারিনের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উঠলো…..
–অনেক বড় হও মা….
প্রতি উওরে তারিন হেসে ভেতরে চলে গেলো। চোখে চশমা’টা ঠিক করে এপ্রোন’টা পড়তে পড়তে ভেতরে ঢুকলো। তারিন’কে দেখেই সবাই দাড়িয়ে মাথা নিচু করে ফেললো। তা দেখে তারিন ভ্রু কুচকে গম্ভীর কণ্ঠে বললো…..
–সময় নষ্ট করা আমার একদম পছন্দ নয়। দাড়িয়ে না থেকে যে যার মতো কাজ করো…..
বলে আর এক মিনিট ও এখানে দাড়ালো না। সোজা তাজওয়ারের রুমে ঢুকে গেলো। অপরিচিত একটা মেয়ে’কে হুট করে কেবিনের ভেতরে প্রবেশ করতে দেখে তাসনিম আর তাজওয়ার দুজনেই খানিক’টা অবাক হলো। সেদিকে তারিন নজর না দিয়ে সোজা তাজওয়ারে’র সামনে গিয়ে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে উঠলো…..
–হ্যালো আই এম রুবাইতা তারিন।
তাজওয়ার যেনো বিদ্যুতের শক খেলো। কেনো যেনো মেয়ে’টার কন্ঠস্বর খুব চেনা মনে হচ্ছে। কিন্তু,এই মেয়েটাকে তো আগে কোথাও দেখে’নি ও। তাহলে কে এই মেয়েটা?
#চলবে
[ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। অনেকদিন পর লেখায় হয়তো আমার অনেক ভুল হচ্ছে প্লিজ ক্ষমা করবেন। আর রহস্য আস্তে আস্তে ক্লিয়ার হবে]