#শেষ_বিকেলের_মায়া (৮)
রিহান মোটামুটি সব ধরনের ব্যবস্থাই করে নিয়েছে। ফাহিমার পাসপোর্ট তৈরি হলেই সিঙ্গাপুরের ফ্লাইট। সেখানে বিশেষ মানুষের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা হবে। ফারিহা আলু কা ট ছিল। ওমন সময় কল এল। রিহানের কল দেখে হুড়মুড়িয়ে ওঠল সে।
“হ্যাঁ স্যার।”
“কোথায় আছ?”
“বাসায়।”
“এখনি বের হও।”
“কেন?”
“মম তোমার সাথে দেখা করতে চায়।”
“এখন?”
“হুম।”
“কিন্তু কেন?”
“সেটা তো আমিও জানি না।”
“যদি উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করে?”
“আরে আগে আসো তো।”
“জি।”
তৎক্ষণাৎ হাত মুখ ধুয়ে নিল মেয়েটি। কিছু দিন আগে বেশ কিছু জামাকাপড় পাঠিয়েছে রিহান। সেখান থেকেই একটা পরে নিয়ে বলল,”মা আমি আসছি।”
“কোথায় যাস? এই দুপুর বেলা?”
“কাজ পড়ে গেছে মা।”
“এই মধ্য দুপুরে?”
“হ্যাঁ মা। জানো তো রিহান স্যারের থেকে অত গুলো টাকা নিয়েছি। তুমি কষ্ট করে ভাত ফুটিয়ে নিও?”
“ঠিক আছে। সাবধানে যা তুই।”
“আচ্ছা মা।”
হনহনিয়ে বের হলো ফারিহা। ছাদের উপর থেকে দৃশ্যটি দেখতে পেল আদীব। মেয়েটির প্রতি বিশেষ ভালো লাগা টা ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। সে ফারিহার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে নিশ্বাস ফেলল। রিকশায় উঠতেই কল এল রিহানের।
“বের হয়েছ?”
“জি স্যার।”
“শোনো,মম সম্ভবত কোনো গেট টুগেদারে নিয়ে যাবে তোমায়।”
“কি!”
“আরে শোনো কথা।”
“স্যার আমি একা ওখানে কীভাবে কি করব।”
“শোনো পুরো কথা।”
“হুম।”
“আমি আছি। তবে একটা কথা মাথায় রাখবে একটার বেশি দুটো কথা বলার দরকার নেই। ইউ নো হোয়াট আমার মমের কিছু ফ্রেন্ডস আছে। এই আন্টি গুলো এক একজন ভীষণ চালাক। এদের সামনে একদম ভেজা বিড়ালের মতো থাকবে। কোনো গন্ডগোল যেন না হয়।”
ভয়ে ফারিহার বুক ধীম ধীম করছে। এদিকে রিহান কল রেখে তৈরি হচ্ছে। মনে মনে আল্লাহ কে স্মরণ করছে মেয়েটি। না জানি কি আছে তার ভাগ্যে!
রিহানদের বিশাল বাসাটার কাছে এসে থামল রিকশাটা। ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে সে চেয়ে রইল বাড়ির দিকে। আলিশান এই বাড়িটা যে কারো শখের বস্তু হতে পারে। তবে এই মুহূর্তে ওর কাছে বাড়িটাকে পরীক্ষা কেন্দ্র বলে মনে হচ্ছে। একই ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে সে। রিহান তাকে দেখতে পেয়ে এদিকটায় এল। মৃদু স্বরে বলল,”ভেতরে না গিয়ে দাঁড়িয়ে আছ কেন?”
ফারিহার ধ্যান নেই। সে তাকিয়ে বিশাল অট্টালিকার পানে। কত টাকা খরচ করলে এমন বাড়ি পাওয়া যায়?
“ফারিহা।”
এবার ধ্যান ভাঙল মেয়েটির। লজ্জা পেল যেন। রিহান কি কিছু লক্ষ্য করেছে? তার চাহনিতে কি লোভ ছিল? ফারিহা ভেবে পায় না। সুন্দরের প্রতি আর্কষণ থেকেই সে চেয়েছিল। লোভ তো জাগে নি মনে। সে নিশ্বাস ফেলল। গরম উত্তপ্ত তার গতি।
“ভেতরে আসো।”
বাক্যের সমাপ্তিতে রিহান তার হাত টেনে ধরল। সহসা এমন করে না ছেলেটা। সে লক্ষ্য করেছে রিহান যথেষ্ট মার্জিত। অকারণে শরীরে স্পর্শ কিংবা চাহনিতে বাজে কোনো ইঙ্গিত নেই। সামনে এগোতেই বিষয়টা আরো স্পষ্ট হলো। রুনা এদিকেই আসছেন। মুখে মোহনীয় হাসি।
“মাশআল্লাহ।”
লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেলল ফারিহা। রিহানের ভেতরে ভীষণ চিন্তা। তবু সে বাইরেটা শান্ত করে রেখেছে। খানিক বাদে ঘরে নিয়ে আসা হলো ওদের। নাস্তা দেওয়া হলো। ফারিহা জুসের গ্লাস নিয়ে নাড়াচাড়া করছে। রুনা কাজে ব্যস্ত হলেন। হুট করেই দোতলা থেকে তড়িৎ গতিতে নেমে এল রিহান। ফারিহা তাকানোর সময় অবধি পেল না।
“কাম ফারিহা।”
“কোথায়?”
“পেছন পেছন আসো।”
পুনরায় প্রশ্ন না করে ছুটে এল ফারিহা। রিহান তার ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে দিল। সে শব্দে মেয়েটির ভেতর কেমন করে ওঠল।
“মম তোমাকে আন্টিদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে আর বিয়ের ডেট ও সম্ভবত ফিক্সড করে বলে আসবে।”
বিয়ের কথা শুনে চমকে ওঠল ফারিহা। তার দৃষ্টিতে ভয়।
“আমি জানি না বাট এই বিয়ের এনাউন্সমেন্ট এখন করা যাবে না। কিছুতেই না।”
ফারিহা আগ বাড়িয়ে কথা বলতে পারল না। তারা দুজনেই চায় বিয়েটা যেন না হয়। কোনো ভাবে আটকে থাকুক। রিহানের বিচলিত চেহারা সময়ের সাথে সাথে রঙ বদল করতে লাগল। হঠাৎ সে বলে ওঠল,”তুমি মম কে কনভেন্স করবে।”
“আমি?”
মেয়েটি যেন অবাকের চরম পর্যায়ে অবস্থান করছে। রিহান রগরগে কণ্ঠে বলল,”তো? সব প্যারা কি আমার নিজের? কাজে কোনো ফাঁকি দেওয়া চলবে না। আইডিয়া বের করো।”
কথা শেষে কোথাও একটা চলে গেল রিহান। ফারিহা তাকিয়ে রইল। অসহায়ের ছাপ তার মুখশ্রীতে। এ কেমন কথা বলে গেল লোকটা?
অনেক ভেবেও ফারিহা কোনো উত্তর পেল না। রিহান ড্রাইভ করছে। পেছনে বসেছেন রুনা। আর ফ্রন্ট সিটে ফারিহা। মেয়েটি এমনিতেই চুপচাপ। এখন যেন আরো চুপ হয়ে গেছে। রুনা তার বান্ধবীর সাথে আলাপচারিতা শেষ করে বলল,”একি মা, এমন মৌন আছ কেন? রিহান, তুই ও কি বল তো। মেয়েটার সাথে কোনো কথা বলছিস না।”
রিহান হাসার ভঙ্গিতে ফারিহা কে বলল,”কথা বলছ না কেন?”
দুজনের চোখাচোখি হলো। ফারিহার চোখ মুখের অবস্থা দেখে রিহান ভীত হয়ে পড়ল। মেয়েটা সব ডুবিয়ে না ফেলে!
পাঁচ তারা হোটেলে এসে স্বভাবতই কাঁচুমাচু করতে লাগল ফারিহা। রিহান আলগোছে তার হাতটা আগলে নিল। বিষয়টা যদিও নাটক তবু শিরশির অনুভূতিতে ছেয়ে গেল ফারিহার শরীর। আসার পূর্বে রূনা তাকে শাড়ি পরিয়েছে। সুন্দর শাড়িটার সাথে মেয়েটিকেও মানিয়েছে বেশ। রিহান বুক ফুলিয়ে পথ চলছে। যেন খুব খুশি তার পাশের মেয়েটিকে পেয়ে। এরই মধ্যে রুনার বান্ধবীরা এসে গেল। একে একে সকলের সাথে কুশলাদি হলো। রিহান নিজের স্বভাবে ফিরে গিয়ে বলল,”পুরো হোটেলের নজর কেড়ে নিয়েছে আমার সুন্দরী আন্টিরা। লুক, যুবক গুলো কেমন করে তাকিয়ে আছে।”
পাশ থেকে এক জন বলল,”অহ রিহান। তুমি সব সময় এমন রসিকতা কোরো বেটা। এতটা ও ইয়াং নই আমরা।”
আরেকজন বলল,”আন্টিদের কব্জা করার ধান্দা না? বাট হবে না মাই বয়। দেখি দেখি আসল মানুষটিকে।”
কথার শেষে ফারিহার দিকে এগিয়ে যেতে নিল ভদ্র মহিলা। কিন্তু রিহান আটকে দিল।
“নো আন্টি। আমার বউ এত স্বস্তা না। গিফ্ট ছাড়া দেখা যাবে না।”
রুনা ছেলেকে চোখ রাঙালেন। বরাবরই এমন করে থাকে ছেলেটা। আন্টিরা হেসে ওঠলেন। এদিকে ফারিহার বুকের ভেতর অসম্ভব কম্পন ধরে গেছে। মনে হচ্ছে এখুনি মাথা ঘুরিয়ে পড়বে। খাবারে টেবিলেও খুব একটা খেতে পারল না ফারিহা। ছুঁ ড়ি,কা টা চামচের ব্যবহার সে জানে না এমন না। তবু তার হাত কাঁপছে। রিহান সেটা লক্ষ্য করে নিজের প্লেট থেকে স্টেক এর একটা অংশ ফারিহার দিকে এগিয়ে দিল। ফারিহার বিস্মিত দুটি নয়ন। চোখের ইশারায় খেতে বলল রিহান। ফারিহা ঘোরের মধ্যেই খাবারটুকু গ্রহণ করল। তাদের এই রোমান্টিক মুহূর্তটুকু দেখে সকলে প্রশংসা করতে ভুলল না। ধ্যান ফিরতেই সবটা বুঝতে পারল ফারিহা। লজ্জায় নত হয়ে রইল সে। অথচ রিহান নির্বিকার!
চলবে….
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি
|