#শেষ_বিকেলের_মায়া (৪)
“প্লিজ কিয়া তুমি তাড়াতাড়ি আসার ট্রাই কর। আমার এই বিয়ে বিয়ে খেলা একদম ই ভালো লাগছে না। তুমি বললে আমি তোমার ডিপার্টমেন্ট এর সাথে কথা বলতে পারি। যা লস হবে সব আমি দিব তবু ও…।”
“উফ রিহান প্লিজ থামবে। দেখ বেইবি আমি ওনাদের কথা দিয়েছি। তুমি তো জানো আমি কথার খেলাপ করি না। একটা বছর ই তো। প্লিজ ম্যানেজ করে নাও। শুধু পড়াশোনা হলে আম চলে আসতাম। এখানকার বিজনেসটা আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ রিহান।”
“কিন্তু কিয়া…”
“উহু কোনো কথা নয়। বাংলাদেশে রাত একটা বাজে প্লিজ জান শুয়ে পড়ো। অসুস্থ হয়ে যাবে তো। রাখছি,কেমন?”
রিহান ফোন টা ছুঁড়ে ফেলে দিল। আর যাই হোক ওদের সম্পর্কের কথাটা বাসায় জানালেই তো হয়। কিন্তু কিয়া বার বার বারন করছে। ডিভানে জোরে লাথি মে রে রুম থেকে বের হলো সে। এতটা অসহ্য লাগছে তার।
ইরফান জোয়ার্দার ড্রয়িং রুমে বসে ছিলেন। ছেলেকে করিডোর দিয়ে পায়চারি করতে দেখে উঠে দাঁড়ালেন। একবার ভাবলেন উপরে যাবেন। কিন্তু কি ভেবে যেন গেলেন না। গলা উঁচিয়ে রিহানকে ডেকে নিলেন। বাবার সামনে এসে রিহান চুপ করে রইল। বাবা কে ভয় না পেলে ও ভীষন সমীহ করে চলে। আর তার জন্য ই এত সব নাটক করতে হচ্ছে। কারণ বাবা যদি কাউকে কথা দিয়ে ফেলেন। তখন রিহান তো বিয়ে করতে পারবে না। আর তার বাবার সম্মান টা ও ধুলোয় মিশে যাবে।
“এত রাতে করিডোরে কি করছিলে? ঘুমাও নি কেন?”
“ড্যাড ঘুম আসছিল না। তুমি এত রাতে এখানে যে? কোনো সমস্যা?”
“সমস্যা নয়। তবে ভাবছিলাম।”
“কি এমন ভাবনা যে এত রাতে ভাবতে হবে।”
ইরফান জোয়ার্দার ফোঁস করে শ্বাস ফেললেন। লুকিয়ে রাখা দীর্ঘশ্বাসটা বেরিয়ে এল। রিহান উত্তর শোনার জন্য অপেক্ষা করছে।
“ছেলে ২৭ বছর পেরিয়ে ২৮ এ পা দিয়েছে। এখনো বিয়ে করল না। প্রায় চারটা বছর হলো পড়াশোনা কম্পলিট করেছিস। চিন্তা হওয়ার কথা নয়?”
বিরক্তিতে রিহানের মুখশ্রী বির্বণ হয়ে গেল। এক কথা হাজার বার বলেছেন ভদ্রলোক। প্রথমত রিহানের বিয়ের বয়স পেরিয়ে যায় নি। আর দ্বিতীয়ত তার পড়াশোনা বেশ এগিয়েছে। যার জন্য অল্প বয়সেই গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট হয়ে গেছে। তাছাড়া রিহান তো এখনো অন্য বিষয়ে বিদেশে পড়াশোনা করে যাচ্ছে। ইরফান জোয়ার্দার গলা ঝেরে কঠোরতা এনে বললেন,”বাবা হলে বুঝতে। আমি সব সময় চাইতাম তোমার গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট হলেই বিয়ে দিব। তুমি তা মানলে না। বললে নিজের বিজনেস দাঁড় করাতে চাও। তা ও করালে তারপর আবার অন্য এক কোর্স নিলে। সেটা ও শেষ হয়েছে। এখন আবার আরেক কোর্স নিলে। তুমি কি চাও বল তো? পড়াশোনার সাথে বিয়ে না করার কি যোগ রিহান?”
রিহান ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল। কিয়ার সাথে কানাডায় পরিচয়। লাস্ট ইয়ার ছিল ও। আর কিয়া ফার্স্ট ইয়ার। ধীরে ধীরে প্রেম হয়। তবে মাস খানেক বাদেই রিহানের গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট হয়ে যায়। আর ও ফিরে আসে বাংলাদেশে। যদি ও প্রায় ই কানাডা তে কিয়ার সাথে দেখা করতে যেত। সাড়ে চার বছরের প্রেমের চার বছর ধরেই বিয়ের কথা বলছে রিহান। কিন্তু কিয়া পড়াশোনা কমপ্লিট না করে বাসায় বিয়ের কথা জানাতে পারবে না। নানা রকম অজুহাত দেখায়। রিহান দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মাত্র এক মাস একি দেশে ছিল তারা। আর এক মাসের প্রেমেই কিয়ার প্রতি বেশ দূর্বল সে। তাই তো গত চার বছর ধরে অপেক্ষা করে আছে।
“রিহান।”
বাবার কণ্ঠে চমকে গেল রিহান। আমতা আমতা করে বলল,”বল।”
“মন মস্তিষ্ক কোথায় আছে? দু বার ডাকার পর ও কোনো সাড়া শব্দ নেই।”
“সরি ড্যাড। রাত দুটো বেজে গেছে। কি বলছিলে বল। আমার ঘুম পাচ্ছে।”
বলেই হাই তুলল রিহান। পুরোটাই বাবাকে এড়িয়ে চলার জন্য। ইরফান জোয়ার্দার কিছু বলতে গিয়ে ও থেমে গেলেন। নরম সুর তুলে বললেন,”যাও। কাল কথা হবে।”
রিহান ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে চলে গেল। বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই কথা শোনার। কিছু বলাই মানে বিয়ে। পাগল হয়ে যাচ্ছে সে। না জানি বিজনেস এর কি হাল হচ্ছে। আপাতত চিন্তা মুক্ত একটা রেস্ট দরকার। রিহান দ্রুত বেডের দিকে গেল। বেডে শোয়া মাত্রই যেন নিদ্রা মহাশয় মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। মুহূর্তের মধ্যে ঘুম এসে জড়িয়ে নিল তাকে।
দরজায় খটখট আওয়াজে চোখ মেলে তাকাল ফারিহা। কাল বেশ রাত করে ঘুমিয়েছিল। আজ আবার এত সকাল সকাল কে ডাকতে এল? বিছানা থেকে উঠতে ইচ্ছে করছে না। কিন্তু দরজার ওপাশের ব্যক্তি টি খটখট করেই যাচ্ছে। যেন দরজা না খুললে ভেঙে দিবে! তাই আড়মোড়া ভে ঙে উঠে দাঁড়াল। ওড়না টা গায়ে জড়িয়ে দরজা খুলে দিল। গ্যাস বিল দিতে এসেছে। লোকটার চোখে মুখে চরম বিরক্তি। কারণ গত তিন মাসের গ্যাস বিল দেওয়া হয় না। ফারিহা হাসি হাসি মুখ করে কিছু বলবে তার আগেই লোক টা বলল,”আর সময় দেওয়া যাবে না। নয় বিল দিন না হলে গ্যাসের লাইন কেটে দেওয়া হবে।”
ফারিহা চোখে মুখে বিস্ময় ফুটে উঠল। লোকটা কিছু বলার সুযোগ তো দিবে?
“আপনি দাঁড়ান আমি এখনি সব বিল পরিশোধ করে দিচ্ছি।”
লোক টা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল। ফারিহা আলমারি থেকে দুটো হাজার টাকার নোট বের করে আনল। লোকটার হাতে টাকা টা দিতেই হন হনিয়ে চলে গেল। কি আজব?
“মা আমি খালাকে বাসা ভাড়া দিতে যাচ্ছি। কিছু লাগলে কাউকে ডেকে নিও।”
ফারিহা টাকা নিয়ে সোজা দোতলায় চলে গেল। বাসার সামনের অংশ তে তিনটে টিন শেডের দেওয়াল করা ঘর। আর পেছনে দোতলা বাসা। যার মধ্যে তিনটে ফ্ল্যাট রয়েছে। নিচের দুটো ভাড়া। আর দোতলা টা কে বাড়ির মালিক নিজেদের জন্য একটা ফ্ল্যাট করেছেন। হাসি হাসি মুখ করে দরজায় কলিং বেল বাজাল ফারিহা। মিনিট খানেক পর ও কোনো রেসপন্স পাওয়া গেল না। আবার কলিং বেল চাপল। এক কর্কশ কণ্ঠ ভেসে আসল।
“আসছি আসছি। এই সকাল বেলা রান্না বান্না কিছু করতে হয় তো নাকি? একটু সময় দে আমার বাপ। কলিং বেল টা নষ্টই করে দিলি বোধহয়।”
ফারিহা খালার কথা শুনে ফিক করে হেসে দিল। ভদ্র মহিলার নাম ডাক আছে বটে। ঝগড়াতে উস্তাদ। তবে এটা ও সত্য মন টা বেশ ভালো।
“কি রে এই ভোর সকালে? কিছু হয়েছে? তোর মায়ের শরীর কি খারাপ করেছে?”
ফারিহা নিঃশব্দে মাথা ঝাঁকাল। মুখে মৃদু হাসি ফুঁটিয়ে বলল,”সব ঠিক আছে খালা। বাসা ভাড়া গুলো দিতে এসেছি।”
“আচ্ছা। সে না হয় দিবি তার আগে ঘরে আয়।”
ফারিহা ঘরে ঢুকল। ড্রয়িং রুমের সোফা তে বসতেই ভদ্র মহিলা আর্তনাদ করে বললেন,” ইসস একদম ভুলে গেছি। চুলোয় রান্না চাপিয়েই এসে পড়েছি। তুই বোস।”
ফারিহা সম্মতি জানাল। ছিম ছাম ঘর হলে ও বেশ সুন্দর পরিপাটি গোছানো। ওকি ঝুঁকি দিতেই দেখল খালার বড়ো ছেলে আদীব এদিকেই আসছে। তাই জড়সড়ো হয়ে বসে রইল।
চলবে….
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি