#শেষ_বিকেলের_মায়া (২)
“স্যার এখন রাত আটটা বাজে। এই সময়ে আমি কি করে বের হব? একটু বোঝার চেষ্টা করুন। আমি না হয় কাল ভোর বেলা চলে আসব।”
“নো মোর এক্সকিউজ ফারিহা। ফাঁকি বাজি আমার একদম ই পছন্দ নয়।”
“কিন্তু স্যার।”
“স্টপ। আর একটা কথা ও নয়। তোমার সাথে আমার কি এগ্রিমেন্ট হয়েছে ভুলে গেলে? ওকে তুমি যদি চাও তাহলে আমি এগ্রিমেন্ট টা ক্যানসেল করে দিচ্ছি।”
“নো নো স্যার । প্লিজ প্লিজ এমন টা করবেন না। আমি এখনি আসছি।”
“ওকে। আমি লোকেশন টা ম্যাসেজ করে দিচ্ছি দ্রুত আসবে।”
“জি স্যার।”
ফোনটা ছুঁড়ে ফেলে দিল ফারিহা। এই অসময়ে রিহান কেন ডাকছে তাকে? তবে রিহান কি কোনো বাজে মতলব করল! ফারিহা আর ভাবতে চাইল না। কারণ রিহান তাকে পেপারে সাইন করা মাত্র ই এক লাখ টাকা ক্যাশ দিয়েছে। এখন তাকে সন্দেহ করা মানে প্রতিশ্রুতির খেলাপ। ফারিহা কাঁধে ব্যাগ টা নিয়ে মায়ের রুমে গেল। মা কে একটু আগেই খাইয়ে দিয়েছে। এখন বোধহয় ঘুমিয়ে পড়েছে। ফারিহা আর জাগাল না। আল্লাহর নাম নিয়ে রিহানের দেওয়া লোকেশনে চলে আসল।
একটা বড়ো ফাইফ স্টার রেস্টুরেন্ট। আলো তে চোখ ঝাঁঝিয়ে যাচ্ছে। ফারিহা হাত দিয়ে চোখটা বার কয়েক ডলে নিল। আশে পাশে তাকিয়ে ঢোক গিলল। কারণ সবাই বেশ দামি কাপড় পরে আছে। আর ওর পরনে কম দামি মলিন একটা থ্রি পিস। ফোনটা বের করে রিহান কে কল করল সে।
“স্যার আমি তো পৌছে গেছি এখন কি করব?”
“একটু এগিয়ে লেফ্ট গিয়ে সোজা এগিয়ে যাও। ১০৬ নাম্বার টেবিলে চলে আসবে।”
“জি স্যার।”
ফোন রেখে ফারিহা দ্রুত আগাতে লাগল। গুটি কয়েক মানুষ ওর দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ওড়নার কোণ খামচে হাঁটতে লাগল সে। কিছু দূর যেতেই একজন ওয়েটার আটকে দিল।
“কোথায় যাচ্ছেন?”
“জি ১০৬ নাম্বার টেবিল।”
ওয়েটার ফারিহাকে ভালো করে পরখ করে নিল। সন্দিহান চোখে তাকিয়ে বলল,
“আপনাকে দেখে তো মনে হচ্ছে না রেস্টুরেন্টে খেতে এসেছেন। মতলব কি হ্যাঁ?”
অপমানে গা জ্বলে উঠল ফারিহার। তার ভ্রু যুগল কুঁচকে গিয়েছে। তবে কিছু বলতে পারল না সে। একটা তপ্ত নিশ্বাস ফেলল কেবল। ওয়েটার আবার একি প্রশ্ন করল। ফারিহা ফাঁকা ঢোক গিলে তুতলিয়ে বলল,”না মানে একজনের সাথে দেখা করতে এসেছি।”
ওয়েটারের মুখ বলে দিচ্ছে সে ফারিহাকে বিশ্বাস করছে না। ফারিহা পাশ কাটিয়ে আগাতেই ওয়েটার সামনে এসে দাঁড়াল।
“বুঝেছিস নিশ্চয়ই কোনো ধান্দা আছে। কাউন্টারে আসুন, তারপর ঠিক হবে ভেতরে যেতে পারবেন কি না।”
“দেখুন আমার লেট হচ্ছে আমাকে এখনি যেতে হবে।”
ওয়েটারের সাথে ফারিহার ছোট খাটো তর্ক লেগে গেল। যার ফলে কিছু মানুষ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে মজা নিতে শুরু করেছে। এক সময় ওয়েটার ফারিহার হাত ধরে টানতে লাগল।
“হাত টা ছাড়ো।”
ওয়েটার ফারিহার হাত ধরেই পেছন ঘুরে তাকাল। রিহান আবারও বলল,”হাত টা ছাড়তে বলেছি আমি।”
রিহানের কথাতে ওয়েটার থতমত খেয়ে গেল। কারণ কথাটা বেশ জোরেই বলেছে রিহান। ওয়েটার জড়সড়ো হয়ে রইল।
“স্যার আম সরি। এক্সচুয়ালি ওনাকে দেখে মনে হলো ওনি কোনো ধান্দা তে এসেছেন। তাই আমি কাউন্টারে নিয়ে যেতে চাচ্ছিলাম।”
ওয়েটারের কথায় স্পষ্ট বিরক্ত হলো রিহান। তার চোখে মুখে রাগের ও দেখা মিলল। তবে ফারিহার দিকে তাকিয়ে আর কিছু বলল না। মেয়েটি লজ্জায় ডুবে আছে। রিহান হতাশ হলো। কারণ ফারিহার ড্রেস আপ ফাইফ স্টারে আসার উপযুক্ত নয়। তাই গলায় ঝাঁঝ এনে বলল,”সি ইজ মাই গেস্ট। নাও গেট লস্ট।”
ওয়েটার মাথা নিচু করে চলে গেল। ফারিহা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল।
“আসলে আমি….।”
“নো নিড টু এক্সপ্লেইন। কাম উইম মি।”
ফারিহা আর কথা আগাল না। রিহানের পিছু পিছু হাঁটতে লাগল। রিহান একটা টেবিলে বসে ফারিহা কে বসতে বলল। মিনিটের মধ্যে একজন ওয়েটার দুটো কোল্ড কফি দিয়ে গেল সাথে দিল এক বাটি চাউমিন। ফারিহা কাঁচুমাচু করতে লাগল। বড্ড অস্বস্তি হচ্ছে ওর। যদি ও টেবিল টা বেশ কর্ণারে।
“চাউমিনটা খাও।”
ফারিহা খেল না। একই ভাবে বসে রইল। হাত দুটো বার বার ভাঁজ করছে আর খুলছে। রিহানের তীক্ষ্ম দৃষ্টি বিষয়টা বুঝতে পারল।
“এক্সকিউজ মি চপ স্টিক টা রেখে চামচ দিয়ে যান প্লিজ।”
ফারিহা এক পলক তাকাল। রিহানের সাথে চোখা চোখি হওয়াতে বেশ লজ্জা পেল। ওয়েটার চপ স্টিক বদলে চামচ দিয়ে গেল। রিহান ইশারা করল চাউমিন খেতে। ফারিহা একটু খেল। তার হাত কাঁপছে। রিহান টেবিলের উপর একটা শপিং ব্যাগ রাখল। ফারিহা অবাক চোখে তাকাতেই রিহান বলল
“পাশের রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে আসবে।”
“মানে?”
“নো মোর ওয়ার্ড। চেঞ্জ করে আসো তারপর বলছি।”
ফারিহা মায়ের কথা ভেবে কথা বাড়াল না। মায়ের সুস্থতার জন্য রিহানের সমস্ত কথা শুনতে হবে তাকে। পরিস্থিতি এমন যে রিহান যদি বলে এখন ওর সাথে বেডে যেতে তাহলে তাই যেতে হবে। বিষয়টা ভাবতেই ওর চোখ দুটো ছলছল করে উঠল। আর্থিক সংকট বুঝি মানুষকে নোংরা করে দেয়? এই যে আজ যদি মায়ের অসুখটা না হতো তবে কি এত টাকার জন্য হলেও রিহানের কাছে আসত? না কোনো ভাবেই না। সে আত্মসম্মিনের দিকে এক চুল ও ছাড়তে রাজি নয়। তবে পরিস্থিতি তাকে অসহায় করে তুলল। ব্যাগটা নিয়ে রিহানের দেখানো রুমে চলে এল। রুমটা দেখেই ফারিহার চোখ চড়খগাছ। বিশাল বড়ো রুম, এক পাশে গোল বেড। লাইটিং সহ কিছুটা প্রকৃতির ছায়া ও আছে। মিনিট পাঁচেক পুরো রুমে চোখ বুলাল। এত সুন্দর রুমে কখনোই আসা হয় নি। হাতের ব্যাগ টার কথা মনে হতেই মুখ টা মলিন হয়ে এল। ব্যাগ টা খুলে একটা ড্রেস পেল। ড্রেসটা কটন কাপড়ের সিম্পল গ্রাউন। তবে অনেক সুন্দর। ফারিহা চেঞ্জ করে নিল। সাথে দেওয়া ইয়ারিং , ওয়াচ আর গলায় ছোট্ট পেনডেন্ট ও পরে নিল। চুল গুলো বেঁধে নিয়ে বের হয়ে আসল। দরজা খোলার আওয়াজে ফারিহার দিকে তাকাল রিহান। ফর্সা রঙের সাথে ব্লু রঙের গ্রাউন টা খুব সুন্দর মানিয়েছে। একটু আগের শুকনো ফ্যাকাশে ফরিহা আর এখন কার ফারিহা যেন আকাশ পাতাল ফারাক। শুধু মাত্র ড্রেস আপের কারণে মানুষের এত চেঞ্জ? রিহান আর ভাবতে পারল না। ভ্রু যুগল কুঁচকে উঠে দাঁড়াল। ফারিহার কাছে আসতেই দেখল মেয়েটা হাত মোচড়াচ্ছে। চোখে মুখে দ্বিধার রেখা।
“রুমে আসো।”
ফারিহা বড়ো বড়ো চোখ করে তাকাল। রিহান আবার বলল,”রুমে আসো।”
“মানে?”
“আসতে বলেছি আসো। এত প্রশ্ন কেন করছ?”
অজানা ভয়ে ফারিহার বুক ধুকপুক করে উঠল। রিহান কি সত্যি তাকে বেডে নিবে? ভাবতেই গা গুলিয়ে আসল। চোখে পানি চিক চিক করে উঠল।
“এই মেয়ে কতবার বলতে হবে এক কথা?”
এ সময়টা ফারিহার চোখের পানি চলে আসল। বড়ো দ্বিধা কাজ করছে। তবে মায়ের মুখটাও মনে পড়ছে। সব মিলিয়ে তাকে যে যেতেই হবে। চোখের পানি আড়াল করে কাঁপা স্বরে বলল
“আসছি স্যার।”
চলবে….
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি