শেষ থেকে শুরু পার্ট ২৪

0
269

#শেষ_থেকে_শুরু
কলমে :লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:২৪

ডাক্তারের সামনে বসে আছে আবির। দুদিনে ওর বাবার শরীর বেশ সুস্থ হয়ে উঠেছে। কথা বলতে না পারলেও হাটতে চলতে পারছে। উনার কন্ঠনালীতে সমস্যা হয়েছে তবে ক্রমান্বয়ে ঠিক হয়ে যাবে। বাবাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া নিয়ে বেশ চিন্তা হচ্ছে। যে বা যারা এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ওরা যদি ঠিক পাই তবে আবারও আক্রমণের চেষ্টা করছে যেটা ও কিছুতেই হতে দিবে না। দরকার হলে বাবার সঙ্গে একজন লোক রাখবে। সজীবকে নিয়ে জান্নাতকে দেখতে যাওয়ার সময় হঠাৎ ফোন এসেছিল তাই হন্তদন্ত হয়ে এখানে ছুটে এসেছে। তবে এটাই স্বস্তি যে উনি ঠিক আছে। ডাক্তার বললেন উনাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ায় ভালো হবে। হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে আছেন বাড়িতে ফিরলে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে। আবির ডাক্তারের কথায় বাধ্য হয়ে রিলিজ করে নিলো। অরিন আর আরাফাত আছে সঙ্গে। ওদের সহযোগিতাই আবির বাবাকে নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসলো।। ফারজানা হকের খুশীর সীমা নেই। কতদিন পরে লোকটা বাড়িতে ফিরেছে।। আবির মাকে বুঝিয়ে দিলো কিছুতেই বাবাকে নজরের বাইরে রাখা যাবে না। রুমে সিসি ক‍্যামরা সেট কর দিলো তবে এটা অতি গোপনে রাখলো। সব ঠিকঠাক করে রুম থেকে বাইরে আসতেই আরাফাতের সঙ্গে ওর দেখা হলো। আবির ভ্রু কুচকে বলল,

> মুখটা এরকম কেনো ভাইয়া? কিছু বলবেন?

আরাফাত মলিন হেসে বলল,

> বাড়িতে ফিরতে হবে আমি চাইছিলাম অরিন আমার সঙ্গে যাক। আম্মা বারবার বলছেন। উনি কেমন মানুষ তুমি তো জানো?

আবির ওষ্ঠে হাসি ফুটিয়ে বলল,

> আপনার স্ত্রীকে আপনি নিয়ে যাবেন এতে অনুমতির কি আছে?তাছাড়া ভাইয়া আমিও আপনার সঙ্গে একমত। মন দিয়ে সংসার করুন এসব ঝামেলা আমি সামলে নিবো।

আরাফাত লাজুক হেসে বলল,

> সংসার করার সময় চলে যাচ্ছে না। সময় হলে সব হবে। তারআগে বলো রোহানের সঙ্গে তোমরা কি করেছো? বড়ভাবির মুখটা কেমন গম্ভীর হয়ে আছে। রোহান বাড়ি ছাড়া। তাছাড়া বাচ্চার বিষয়টা আমার বোধগম্য হচ্ছে না।

আবির শব্দ করে হেসে ফেলল। দারুন মজা পেয়েছে রোহানকে বোকা বানিয়ে । ওর খুব অহংকার ছিল নিজেকে মাত্রাতিরিক্ত চতুর ভাবতো।সব গুড়িয়ে দিয়েছে আবির।আরাফাত মুগ্ধ হয়ে আবিরের হাসি দেখছে। ছেলেটা যে কিছু একটা অঘটন ঘটিয়েছে এতে সন্দেহ নেই। আবির হাসি থামিয়ে ওকে প্রথম থেকে শেষ পযর্ন্ত সংক্ষেপে বলে দিলো। আরাফাত হতবাক রোহান যে এমন চরিত্রের আগে ভাবেনি। উপর থেকে সত্যিই মানুষ চেনা যায়না। মানুষ চেনা সহজ না। আবিরের কথার ওর ধ‍্যান ভাঙলো,

> ভাইয়া আমি একটু আসছি। দরকারি কাজ আছে।

> আচ্ছা

আবির ওর উত্তরের অপেক্ষা না করে বেরিয়ে আসলো। মন খারাপ হচ্ছে জান্নাতের জন্য। মেয়েটার কাছে যাওয়ার আগে শুধু বাধা আসছে। ইচ্ছে করছে একবারে নিজের কাছে নিয়ে আসতে কিন্তু ওদিকে যে লেডি হিটলার আছে। কিছুতেই জান ছাড়বে তবুও মেয়েকে ছাড়বে না। আবির কথাগুলো ভাবতে ভাবতে মির্জা বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামালো। হুটকরে জান্নাতকে বাসা থেকে আনা যাবে না। কিভাবে আনবে ভাবতে হবে। দুপুর হয়ে গেছে প্রায়। এই সময় হৈমন্তী বাড়িতে থাকবে না। আবির উপযুক্ত সময় ভেবে গাড়ির দরজা খুলে বাইরে আসলো। আকাশে পুঞ্জ পুঞ্জ মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। বাড়িতে কে আছে ওর জানা নেই। যাবে কি যাবে না ভাবতে ভাবতে ভেতরে চলে আসলো। একপা দুপা করে ভেতরে গিয়ে ওর চোখ চড়কগাছ। মেইন দরজা খোলা রয়েছে তাই আবিরে ভেতরে আসতে সমস্যা হয়নি। জান্নাত আপেল কাটার ছুরি নিয়ে খেলছে। ওর হাতের কিছুটা কেঁটে গিয়ে রক্ত ঝরছে কিন্তু মেয়েটা সেসব বুঝতে পারছে না। সামনে থাকা আপেলটাতে কোপ দিচ্ছে। আশেপাশে কেউ নেই। আমেনা বেগমের দরজা খোঁলা আছে। ভদ্রমহিলা উঁকি দিয়ে দিয়ে দেখছে। আবির দৌড়ে গিয়ে মেয়ের হাত থেকে ছুরিটা ফেলে দিয়ে ওকে কোলে তুলে নিলো। আবিরকে দেখে জান্নাতের ওষ্ঠে হাসি ফুঁটে উঠলো। হাতের কাটা অংশটা দেখিয়ে ঈশারা করছে ফু দিয়ে ব‍্যাথা কমিয়ে দেওয়ার। আবির ওর হাত নিয়ে সামান্য ফু দিয়ে হাতে চুমো এঁকে দিলো ঠিক তখনই আমেনা বেগম ছুটে এসে ঝাঝালো কন্ঠে বলল,

> ওকে ধরলে কেনো? তুমি হঠাৎ এই বাড়িতে কি করছো?

আবির থতমত খেয়ে গেলো। ভদ্রমহিলার আগের সবটা মনে আছে। তবে ওর এখন ভয় না রাগ হচ্ছে। মেয়েটার হাতে ছুরি দেখেও উনি চুপচাপ দেখছে। আবিরকে চুপচাপ ভাবতে দেখে উনি আবারও বললেন,

> কি হলো উত্তর দাও? হৈমন্তীর সঙ্গে তোমার যোগাযোগ আছে তাইনা? এই বাচ্চার বাপ কে? আমাকে কিছুই বলা হচ্ছে না কেনো?

আবির বুঝতে পারলো হৈমি আমেনা বেগমকে কিছু বলেনি। কথাটা ভেবে ওর মাথায় চট করে একটা দুষ্ট বুদ্ধি খেলে গেলো। মুখে লজ্জা লজ্জা ভাব এনে বলল,

> শাশুড়ি আম্মা মেয়েটা আমার নিজের। বিশ্বাস না হলে কাগজপত্র দেখাতে পারি। একদম বৈধভাবে মেয়ের বাবা আমি কোনো দুই নাম্বারি নেই।

আমেনা বেগমের মেজাজ খারাপ হচ্ছে। রোহানের কাণ্ডকীর্তি উনার কানে এসেছে। কি যুগ এসে গেছে সব বিয়ের আগেই বাচ্চার বাপ মা হয়ে যাচ্ছে। উনি লজ্জায় মরে যাচ্ছেন সেই সঙ্গে সমাজ সংস্কারের উপরে ধিক্কার জানাচ্ছেন। আবির কিছু ভেবে ভ্রু কুচকে মুখ কঠিন করে বলল,

> ওকে নিয়ে যাচ্ছি। আমি দেরিতে আসলে এতক্ষণে কি হতো আল্লাহ্ ভালো জানে। আপনি ঝগড়া ছাড়া কিছু পারেন বলে তো মনে হচ্ছে না। আমার মেয়ের কিছু হলে বুঝতেন আপনার এই তিড়িং বিড়িং ঝগড়া করার মজা। সামনের নির্বাচনে আপনাকে আমি নিজ দায়িত্বে এমপি বানাবো ভাবছি। সংসদ থেকে শুরু করে দেশটাও কাপিয়ে দিতে পারবেন। আন্তর্জাতিক সম্পদ আপনি। আপনাকে ঘরে রেখে দেশের ক্ষতি করবো না। আসছি এখন।

আবির আমেনা বেগমকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে আসলো। এখানে থাকলেই বিপদ। ভদ্রমহিলা এবার বাড়িতে তুফান তুলবে তাঁতে ওর কি। হৈমন্তীর উপর দিয়ে সেই তুফান প্রবাহিত হবে এটাই ওর শাস্তি। মেয়েকে না নিয়ে কাজের লোকের ভরসাতে রেখে বাইরে গেছে কত সাহস তাঁর। বাড়িতে ফিরলে বুঝবে মজা। আবির কিছু বলতে পারবে না কিন্ত আমেনা বেগম তো পারবে। মেয়ে একা ছিল ভেবেই ওর রাগ হচ্ছে। গাড়িতে বসে সেক্রেটারি জাবেদকে বলে দিল খাবার তৈরী করতে। ও এখুনি অফিসে আসছে। তাছাড়া মেয়েকে নিয়ে একটু ঘুরতে বের হবে। আবির জান্নাতের কাটা হাতটা ভালো করে পরিস্কার করে দিয়েছে। সামান্য কেটেছে কিন্তু রক্ত বের হয়েছে বেশখানিক। আবির বারবার মেয়ের হাতটা ঠোঁটে স্পর্শ করছে। এক হাতে ওকে জড়িয়ে রেখে আরেক হাতে ড্রাইভ করছে। জান্নাত অবাক চোখে আশেপাশটা দেখছে। আবির বারবার মেয়ের মুখের দিকে তাঁকিয়ে দেখছে। দিনদিন এমন হচ্ছে মেয়েটাকে ছেড়ে থাকতে ওর কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতো মায়া মেয়েটার মুখে ভুলে থাকা কষ্টের। আজকের দিনটা মেয়েটাকে নিজের কাছে রাখলে মন্দ হবে না। কথাটা ভেবে ও সিদ্ধান্ত নিলো মেয়েকে আজ ও কোথাও পাঠাবে না নিজের কাছেই রাখবে।
_________________

থমথমে মুখ করে বসে আছে রোহান। মন মেজাজ ভালো নেই। মায়ের হাতে জীবনে প্রথমবার থাপ্পর খেয়েছে সেই দুঃখে মরে যেতে মন চাইছে। তাছাড়া এই খবরটা বোন দুলাভাই থেকে শুরু করে নিকটবর্তী সব আত্মীয়দের ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে। ঝড়ো হাওয়াই আগুনের ফুলকির মতো ছড়িয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। মান সম্মান বলতে কিছু অবশিষ্ট নেই। কিন্তু যাকে কেন্দ্র করে এতো কিছু সেই মেয়েটা ঠিকই বাড়ির মধ‍্যমনি হয়ে ঘুরছে। মেয়েকে সকালবেলায় অনিমার ভাই দিয়ে গেছে। আজ অনুষ্ঠানের কথা ছিল কিন্তু হচ্ছে না। সবাইকে মানা করা হয়েছে। বাড়ির পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কোনো একটা উপলক্ষে অনুষ্ঠান করা যাবে। রুহীকে পেয়ে সকলেই মোটামুটি বেশ খুশী শুধু রোহান ছাড়া। ভেবেছিল সব মিথ্যা প্রমাণ করে ফেলবে কিন্তু তেমন কোনো পথ খালি নেই। অনিমা সব প্রমাণ নিয়ে হাজির হয়েছে। আবির আর ওর সব বন্ধুরা অনিমাকে সাহায্য করেছে ভেবেই রাগ আরও বাড়ছে। এরকম বন্ধু থাকলে শত্রুর অভাব হবে না। কতো যত্ন করে বাঁশ দিলো রোহান আজীবন মনে রাখছে। সকালবেলায় বাইরে চলে গিয়েছিল কিন্তু এখন আবার ফিরে আসতে হলো। মায়ের ফোন পেয়ে আর অপেক্ষা করেনি। ইচ্ছে না থাকলেও অনিমার সঙ্গেই থাকতে হবে। সুখে থাকার অভিনয় করাটা ভীষণ কষ্টের। সময় খারাপ যাচ্ছে মাথা ঠাণ্ডা রাখাটা জরুরি। অনিমা ওকে আশেপাশেও ঘেঁষতে দিবে না এটা ও অভার শিউর। মেয়েদের মন থেকে একবার বের হয়ে গেলে সেখানে ফিরে যাওয়া বেশ কঠিন। নয়তো ভুলিয়ে ভালিয়ে সব আদায় করা যেতো।
******
অফিসে পা তুলে বসে আছে ফরহাদ। দুদিন আগে কানে এসেছে হৈমন্তী ফিরে এসেছে কিন্তু সমস্যা হচ্ছে মেয়েটা একটা বাচ্চা নিয়ে ফিরেছে। বাচ্চাটা কার এটা ওর বোধগম্য হচ্ছে না। মেয়েটা গিয়েছিল একা আর ফিরলো ডাবল হয়ে। আবার বিয়ে করেছে বলে তেমন কোনো নিউজ পাচ্ছে না। বিশ্বস্ত একজন চরকে দিয়ে খবর এনেছে। বিয়ে হলে নিশ্চয়ই বরকে সঙ্গে আনতো নাকি অন‍্য আরো বাচ্চা? হৈমন্তীর নরম স্বভাবের কথা ফরহাদের জানা আছে। নিশ্চয়ই কারো বাচ্চা পালছে। কথাটা ভেবে ফরহাদের কপালে ভাজ পড়ে গেলো। ফাজিল মেয়ে নিজের বাচ্চাকে ভাইকে দিয়ে এখন পরের বাচ্চা পালছে। ফরহাদ ওকে ছাড়বে না। একবার হাতে পেলে ঘরে বন্দী করে রাখছে। ওর থেকে মুক্তি পাওয়া কি এতোই সহজ? ও যত্ন নিয়ে হৈমন্তীর সকল খারাপ গুণগুলো সুধরে দিবে। পাখি খুব উড়াউড়ি করেছে আর করতে দেওেয়া যাবে না। খুব তাড়াতাড়ি ওকে নিজের কাছে নিয়ে আসবে। এমনভাবে লুকিয়ে রাখবে পৃথিবীর কেউ খোঁজ পাবে না। হৈমন্তীকে নিয়ে আসবে তবে রনির বিষয়ে একটু ভাবনা আছে। রাজীবের ছেলে মেয়ে নেই। ওর সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার মাধ্যম হচ্ছে রনী। কথায় বলে রক্ত রক্তকে চিনতে ভূল করেনা। বড় হয়ে রনি যখন জানবে রাজীব ওর বাবা না তখন ও নিজ দায়িত্বে ফরহাদের কাছে ধরা দিবে। সেদিনের অপেক্ষা ও নিশ্চয়ই করবে। কিন্তু হৈমন্তীকে তো ছাড়লে ওর চলবে না। লতার প্রেমে অন্ধ না হলে মেয়েটা ওর পায়ের কাছে পড়ে থাকতো। কথাটা ভেবেই লতার উপরে ওর রাগ হচ্ছে। ফরহাদ অস্থির হয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে গেলো।
**
শাশুড়ি শায়লা বানুর সঙ্গে তুমুল ঝগড়া চলছে লতার। বয়সের ভারে এমনিই উনার অবস্থা খারাপ তারপর আবার লতার সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে ঝগড়া করতে গিয়ে উনার অবস্থা বেহাল। হাপিয়ে উঠেছেন। সকাল থেকে না খেয়ে আছেন। কাজের মহিলা আসেনি তাই বাড়িতে আজ রান্না হয়নি। ফরহাদ বাড়িতে খুব কম আসে। লতা বাবলুকে নিয়ে বাইরে খেয়ে এসেছে কিন্তু শায়লা বানুর অবস্থা তো ভালো না। ইচ্ছে করলেই বাইরে যেতে পারেন না। হাটতে চলতে কষ্ট হয়। কতবার একটা ভালো ডাক্তার দেখানোর কথা বলে কেঁদেছেন কিন্তু কে নিয়ে যাবে? লতা এসবে ধার ধারে না। শায়লা বানু ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতর হয়ে বাধ্য হয়ে রান্নাঘরে গিয়েছিলেন কিন্তু রান্না করতে পারেননি। রান্নাঘর নোংরা হয়েছে তাতেই ক্ষেপে আছে লতা। একটা দুটো কথা থেকে বিশালাকার ঝগড়া শুরু হয়েছে। ফরহাদ হঠাৎ বাড়িতে ফিরে মা আর লতার মধ্যে এরকম ঝগড়া দেখে বিরক্ত হলো। এমনিতেই লতার উপরে রাগ ছিল সুযোগ পেয়ে দৌড়ে গিয়ে লতার পেটে লাথি বসিয়ে দিলো। লতা ধপাস করে ফ্লোরে পড়ে গিয়ে পেট ধরে যন্ত্রণায় চিৎকার দিয়ে উঠলো। ওর চিৎকার ফরহাদের কান পযর্ন্ত পৌঁছনোর সময় পেলো না। ছেলেটা ওর চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে দরজা বাইরে গিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে বলল,

> তোর মেয়াদ শেষ। তোকে একবছর আগেই আমি ডিভোর্স দিয়েছি। কাগজপত্র সব উকিলের কাছে আছে। বাবলু যে কালুর ছেলে সেসবের প্রামাণ ও আমার কাছে আছে। ছেলেকে নিয়ে যেখানে পারিস চলে যা। পুলিশের কাছে যাবি যেতে পারিস আগেই আমি ব‍্যবস্থা করে রেখেছি। খুব রাজরাণী হওয়ার শখ ছিল পূরণ করে দিলাম। মরার আগে আফসোস করতে পারবি না। আর হ‍্যাঁ কালু তোর জন্য অপেক্ষা করছে। ওকে একটা রিকশা কিনে দিয়েছি তোদের দিনকাল ভালো যাবে। বিয়েটা করে নিস। তোর যা স্বভাব।

ফরহাদের কথা শুনে লতার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা হলো। ও দ্রুত ফরহাদের পা জড়িয়ে ধরতে গেলো কিন্তু ও দিলো না। সরে গিয়ে নাক ছিটকে বলল,

> দূরে থাক, তুই নিজেই নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করেছিস আমি না। আমার বিশ্বাস নিয়ে খেলা করেছিস। তোকে ক্ষমা করা যায় না। আমি নিজের স্ত্রী সন্তান ছেড়ে তোকে সুখের সমুদে ভাসিয়ে রাখবো কোন সুখে?

লতা পেটে হাত রেখে কাঁদতে কাঁদতে বলল,

> ক্ষমা করে দাও প্লিজ। আমি কথা দিচ্ছি কখনও তোমার কথা অমান্য করবো না। সব শুনবো প্লিজ দয়া করো।

ফরহাদ চড়া গলাই বলল

> তুই যাবি নাকি দারোয়ান ডাকবো?

লতা বুঝলো আর যাইহোক এই বান্দার মন গলবে না। ওকে চলে যেতেই হবে। তাই রাগে চিৎকার করে বলল,

> তুই হৈমন্তীকে পাওয়ার জন্য এসব করছিস তো ওকে তুই কখনও পাবি না।তোকে অভিশাপ দিচ্ছি।

ফরহাদ অভিশাপ পযর্ন্ত শুনলো না।ছুটে গিয়ে ওর গালে জোরে একটা থাপ্পড় দিয়ে দিলো। বাবলু দূরে দাঁড়িয়ে মায়ের উপরে হওয়া অত‍্যাচারগুলো দেখছে। লতার শরীর দুমড়ে মুচড়ে মাটিতে পড়ে আছে। অচেতন হয়নি জ্ঞান আছে তবে না থাকার মতো। গেটের কাছে কালু উকি দিচ্ছিলো। ফরহাদ ওকে ডেকে নিয়ে বাবলু আর লতাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য হুকুম দিয়ে ভেতরে চলে গেলো। শায়লা বানু ভীতিকর চোখে তাঁকিয়ে আছে। এই ছেলের সঙ্গে যেনো উনার কোনো পরিচয় নেই। কাকে দেখছে ছেলের রূপে ভেবেই ভয় করছে। ফরহাদ হন্তদন্ত হয়ে রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করলো। হৈমন্তীকে ফিরিয়ে আনতে হলে ঘর খালি করাটা জরুরি ছিল। অর্থসম্পদের অভাব নেই সেই সঙ্গে আছে যথেষ্ট ক্ষমতা আর কি চাই ওকে নিজের করে পেতে?

চলবে

ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here