শেষ থেকে শুরু পার্ট ১৭ +১৮

0
285

#শেষ_থেকে_শুরু
কলমে: লাবন্য ইয়াসমিন
পর্ব:১৭

বিষাদের পরে আসে কাঙ্ক্ষিত সুখ। সুখ দুঃখ অঙ্গ অঙ্গিভাবে জড়িত। দুঃখ ছাড়া সুখের মর্ম বোঝা যায় না। ক্ষুদ্র এই মানব জীবন, কারো সরল রেখার মতো সোজাসাপ্টা হয় কারো আবার বক্র । হৈমন্তীর জীবনটা সরল রেখার মতো হয়নি। নিজের ভূলে বা পরিবারের ভূলে পথচলা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরাফাত অরিনকে নিয়ে আমেরিকা ফিরে যেতে চেয়েছিল কিন্তু ঝামেলা তৈরী হয়ে গেলো। আবিরের বাবা সুস্থ মানুষ অফিসে গিয়ে অসুস্থ হয়ে গেলেন। উনি সকালবেলায় সুস্থ সবল ছিলেন কিন্তু অফিসে যাবার কিছুক্ষণ পরেই আবির খবর পাই ভদ্রলোক অফিসের লিফটের মধ্যে পড়ে আছে। আবির আর অপেক্ষা করেনি দৌড়ে গিয়েছে। অরিন কান্নাকাটি করে একাকার অবস্থা করে ফেঁলেছে। হাসপাতালে নেওয়ার পরে আবিরের বাবা রেসপন্স করছে খুব কম। ডাক্তার প্রথমে ভেবেছিল উচ্চ রক্তচাপের জন্য এমন হয়েছে কিন্তু পরীক্ষা করে তেমন কিছুই ধরা পড়েনি।তবে উনার শরীরে বিষাক্ত কিটনাশকের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে যেটা রক্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে সারা শরীরে। আবিরের অবস্থা খারাপ। ডাক্তার দ্রুত রক্ত পরিবর্তনের ব‍্যবস্থা করলেন। জমে মানুষের টানাটানি চললো। ফারজানা হক ভেঙে পড়ছেন স্বামীর শোকে।

এসব ঝামেলায় এক মাস পার হয়ে গেলো তবুও উনার উন্নতি হলো না।ডাক্তার বললেন উনি সুস্থ হবেন তবে সময় লাগছে। আবির এক সঙ্গে অফিস আর হাসপাতাল সামলাতে গিয়ে হৈমন্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি। কিভাবে মাস পেরিয়ে গেছে বুঝতেই পারেনি। তাছাড়া মায়ের কান্নাকাটি তো আছেই।যখন একটু ফ্রি হলো ফোন করতেই হৈমন্তীর নাম্বার বন্ধ পেলো। আবির ভ্র কুচকে ফেলল। সঙ্গে সঙ্গে মারিয়াম আন্টিকেও ফোন করলো কিন্তু সেখানেও একই অবস্থা ফোন বন্ধ। পাগলের মতো দুদিন একভাবে ফোন করলো কিন্তু ফলাফল শূন্য।। কিভাবে যোগাযোগ করবে বুঝতে পারছিল না। ওখানে চেনাজানা একজনের সঙ্গে কথা বলে তাকে পাঠিয়ে দিলো হৈমন্তীর বাসাই গিয়ে খোঁজ নেওয়ার জন্য। লোকটা ওখানে গিয়ে যা বলল
তাঁতে আবিবের পায়ে নিচে মাটি সরে গেলো। মারিয়াম আন্টি খুন হয়েছেন। হৈমন্তী আর জান্নাতের খোঁজ পাওয়া যায়নি। মারিয়াম আন্টির খুনেরর পরে উনার ছেলে এসে বাড়িতে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। কেউ বলতে পারেনা হৈমন্তী আর বাচ্চাটা কোথায় আছে। বিপদ যখন আসে তখন এক সঙ্গেই আসে। আবির বাংলাদেশ থেকে কিভাবে হৈমন্তীর খোঁজ নিবে। বাড়ির পরিস্থিতি খারাপ এই অবস্থায় ওর কোথাও যাওয়া যাবে না। আরাফাতও যেতে পারেনি। অরিন যেতে রাজি না। পড়াশোনার চাইছে বাবা মা অধিক প্রিয়। বাবার কাছাকাছি থাকতে চাই দূরে গিয়ে যদি কিছু হয় পরে আফসোস করতে হবে। এমন কিছুই সে করবে না। আরাফাত শশুরের কাজকর্মগুলো দেখাশোনা করছে। তাছাড়া উপাই নেই। আবির যখন হৈমন্তীর কথা ভেবে পাগল হয়ে যাচ্ছিলো তাঁর ঠিক দুদিন পরে ওর কাছে একটা চিঠি আসলো। হৈমন্তী লিখেছে,

মিস্টার আবির এহসান,
আমি ভালো আছি আর ভালো থাকবো। আমাকে নিয়ে ভাবতে যাবেন না। আপনি বরং নিজের মতো জীবনটা আবারও শুরু করুন। আমার ভালো থাকা আমি খুঁজে নিয়েছি। আরেকটা বিয়ে করে সংসার করেন আপনার ভালো হবে। আমার পিছনে হাত ধুয়ে পড়ে আছেন এটা আমি পছন্দ করছি না। তাই চলে যাচ্ছি নতুন যায়গায়। আমাদের কখনও আর দেখা হবে না। ভালো থাকবেন।
ইতি
হৈমন্তী।

চিঠিটা পড়ে আবিরের চোখ দুটো অশ্রুতে পূর্ণ হয়ে উঠলো। ভালোবাসার অপরাধে মেয়েটা ওকে শুধু দুঃখই দিলো। কি হতো যদি শেষ থেকে শুরু করতো? হৃদয় ভাঙার হাহাকার নিয়ে জ্বলপুড়ে অঙ্গার হয়ে বাঁচার চাইতে মৃত্যু ভালো ছিল। কিন্তু ওর উপরে তো অনেক দায়িত্ব। বাবার চিকিৎসা বোন আর মায়ের দেখাশোনা করা। একটা মেয়ের জন্য স্বার্থপরের মতো জীবন থেকে পালিয়ে যাওয়ার মানেই হয়না। আবির চিঠিটা কয়েকবার পড়লো। তবে খটকা লাগলো চিঠিটা হাতে লেখা না বরং কম্পিউটারে টাইপ করে লেখা। আবির ভ্রু কুচকে ভাবলো ফোন কম্পিউটারের জন্য আজকাল কি লোকজন পেন বিক্রি ছেড়ে দিলো? বুঝতে পারলো না এর রহস্য কি তবে হৈমন্তীর উপরে ও প্রচণ্ড ক্ষেপে গেলো। সিদ্ধান্ত নিলো এই মেয়েকে নিয়ে ও আর ভাববে না। হিটলারের মতোই চলুক ওর কি যায় আসে। আবিরের চিঠির সঙ্গে সঙ্গে ও বাড়িতে রাজীব আর আরাফাতের কাছও কম্পিউটারে টাইপ করা চিঠি আসলো। সকলে বুঝতে পারলো হৈমন্তী ইচ্ছে করেই লুকিয়ে আছে। যে ইচ্ছা করে লুকিয়ে থাকে তাকে খুজে পাওয়া যায় না। থাকুক যদি ভালো থাকে । আরাফাত লোকজন দিয়ে খোজখবর নিয়েছে কিন্তু পাইনি চিঠি পেয়ে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে। এভাবে আরও কয়েক মাস পার হয়ে বছর পেরিয়ে গেলো সেই চিঠির পরে হৈমন্তীর আর কোনো চিঠি আসলো না। রাজীব অস্থির হয়ে আরাফাতকে পাঠিয়েছিল তবুও খোঁজ মিলাতে পারলো না। সকলের চিন্তা কোথায় গেলো মেয়েটা? হৈমন্তীকে না পেয়ে আরাফাত দেশে ফিরে এসেছে। আপাতত দেশেই থাকবে। অরিন বাবা মায়ের সঙ্গে থাকে। আরাফাত নিজের বাড়িতে। ওদের সম্পর্কটা এগোতে পারেনি সেখানেই আছে। বাবার অসুস্থতার জন্য শশুর বাড়িতে থাকা হয়না। হাসপাতালে পালা করে বাবার দেখাশোনা করছে। আবির আগের মতো নেই গম্ভীর হয়ে গেছে। সারাদিন অফিসে থাকে রাতে হাসপাতালে বাবার কাছে। ভেবেছিল বাইরে নিয়ে চিকিৎসা করাবে কিন্তু ডাক্তার বলে দিয়েছে। এখানে থেকেও যা হবে বাইরে গিয়েও তাই হবে। নড়াচড়া কথা বলা কিছুই পারেনা। বিছানায় পড়ে থাকে। তবে কিছুদিন হচ্ছে সামান্য পরিবর্তন হয়েছে। আরাফাত দিন একবার হাসপাতালে এসে খোঁজখবর নিয়ে যায়। তাছাড়া কি বা করার আছে। অরিনের এক কথা যতদিন বাবা সুস্থ না হচ্ছে ততদিন সে আরাফাতের সঙ্গে থাকবে না। আরাফাত জোরজবরদস্তি করে না। ছেলেমেয়েদের কাছে বাবা মা কতটা প্রিয় ওর জানা আছে। বউ পালিয়ে যাবে না। সারাজীবন পড়ে আছে কিন্তু বাবার য‍দি কিছু হয়ে যায় তখন কি হবে।

_______________
মাথায় হাত রেখে উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে চয়নিকা। হৈমন্তীর জন্য খারাপ লাগে। মেয়েটা ওকে মা হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল সেই জন্য ও সারাজীবন হৈমন্তীর কাছে ঋণী থাকবে। মেয়েটার কথা ভাবলেই বুকের মধ্যে হুহু করে। আদো বেঁচে আছে কি তারও নিশ্চয়তা নেই। ভিবিন্ন কথা মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। রনি ইস্কুলে গেছে। বয়স ছয় বছর পেরিয়ে গেছে। ছেলেটা দেখতে ঠিক মায়ের মতোই হয়েছে। চয়নিকার ধ‍্যান ভাঙলো রোহানের কথা শুনে। রোহান হঠাৎ হঠাৎ সপ্তাহে একদিন হাজির হয়। তাছাড়া তাকে পাওয়া যায় না। কোথায় তাকে কি করে একমাত্র সে আর আল্লাহ্ জানে। চয়নিকা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বলল,

> হাওয়া হয়ে যাওয়া তোর স্বভাব হয়ে গেছে। একটা বিয়ে করনা ভাই তাহলে অন্তত বাড়িতে থাকার টনিক খুঁজে পাবি। বয়স কতো হচ্ছে দেখেছিস?

রোহান দাঁত বের করে অমায়িক হাসি দিয়ে বসতে বসতে বলল,

> নিশ্চয়ই করবো তবে সময় হয়নি এখনো। আপা দুলাভাই কোথায়রে?

চয়নিকা সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলল,

> অফিসে আছে। রোবট হয়ে যাচ্ছে দিনদিন। হৈমির খোঁজ নেই বাড়িতে অশান্তি লেগেই আছে। মেয়েটা জিদ করে এমন করলো। কত আশা করেছিলাম এবার বুঝি সব ঠিক হবে। কিছুই হলো না।

> একটা কথা বলবো আপা? দেখ রাগ করবি না কিন্তু?

> বল।

> দুলাভাই হৈমন্তীর নামে কিছু অর্থসম্পদ রেখেছে তুই বিস্তারিত জানিস?

> হুম জানি।

রোহান ভ্রু কুচকে বলল,

> জেনেশুনে তুই চুপচাপ আছিস? শোন আপা দুলাভাই যা কিছু করছে সব কিন্তু হৈমন্তীর নামে চলে যাবে। দেখ তোরা যাকে আদর যত্ন দিয়ে মানুষ করছিস সে কিন্তু হৈমন্তীর ছেলে। তোদের কোনো সন্তান নেই বিধায় সব কিছু রনির হয়ে যাবে তোদের কি থাকবে? ভালো মানুষ তোরা তাইবলে এতো ভালো? এতো পরিশ্রমের টাকা পয়সা বোন আর বোনের ছেলে পাবে তোরা কি পাবি?

রোহানের কথা শুনে চয়নিকা ভ্রু কুচকে ফেলল। ভাইকে ওর অসহ‍্য লাগছে। সিনেমার কুটনৈতিক শাশুড়ির মতো চিন্তা ভাবনা। রনি ওদের ছেলে। হৈমন্তী কখনও ছেলেকে ফিরিয়ে নিবে না এইটুকু ভরসা মেয়েটার উপরে করাই যায়। তাছাড়া রনি যে ওদের ছেলে না এটা বাইরের কেউ জানেনা। শুধু নিজেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে । রোহান ছাড়া রনিকে নিয়ে এমন মন্তব্য আজ অবধি কেউ করেনি। চয়নিকাকে সকলে রনির আম্মু বলেই ডাকে। ওকে এভাবে চুপচাপ ভাবতে দেখে রোহান আবারও বলল,

> আপা ভাবার দিন শেষ। মা ছেলে মিলে তোদের লুটপাট করছে। তাছাড়া ফরহাদের মতো অমানুষের ছেলেকে তোরা পালবি কেনো? বাচ্চার অভাব নেই দেশে। টাকা থাকলে সব হয়। আমি হাসপাতালে খোঁজ নিয়েছি একটা বাচ্চা আছে ওদের কাছে। এক বছর বয়স। ছেলেটা খুব কিউট তুই রাজি থাকলে ওকে নিয়ে আসি। আর রনিকে ওর বাপের কাছে দিয়ে আসব। কি বলিস?

চয়নিকা নিজেকে সামলাতে পারলো না। ওর চোখমুখ শক্তি হয়ে উঠেছে। রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে ঠাটিয়ে রোহানের গালে থাপ্পড় লাগিয়ে দিলো। ভাই না হলে এতক্ষণ খুন করে ফেলতো। রনি ওর জীবন। সেই ছোট থেকে তিলতিল করে মানুষ করেছে। ছেলেটা মা ভক্ত। রাতে মায়ের কোলে ছাড়া ঘুমাতে পারেনা। হাতে করে খাওয়াতে হয়। সেই ছেলেকে ও কিভাবে দূরে ঠেলে দিবে? কখনও না বেঁচে থাকতে না। মন হয় মরে গেলেও আত্না ছেলের আশেপাশে ঘুরবে। কত দরদ দিয়ে সন্তান লালনপালন করেছে। চয়নিকা দাঁতে দাঁত লাগিয়ে ফিসফিস করে বলল,

> এখুনি তুই আমার চোখের সামনে থেকে দূর হয়ে যা। অর্থসম্পদের দরকার নেই আমার। আমি শুধু রনিকে চাই। ও আমার ছেলে শুধু আমার। জন্ম দিলেই মা হওয়া যায় না। ওকে আমি এই দুহাতে মানুষ করেছি। ওকে দেওয়ার কথা তুই কিভাবে বলতে পারিস? তুই আমার রনিকে কেড়ে নেওয়ার চিন্তা করছিস তাইনা?

রোহান বেশ বিপদে পড়ে গেলো। ভেবেছিল বোন ওর কথা শুনবে এভাবে রেগে যাবে না। বাঁচার জন্য জোরকরে ঠোঁটে হাসি এনে বলল,

> আপা রাগ করিস না আরে আমি তো মজা করছিলাম। তুই কি রিয়াক্ট করিস দেখার জন্য। তাছাড়া বাচ্চা পাওয়া কি ডালভাত নাকি। তুই প্লিজ রাগ করিস না। রনি তোর ছেলে সবাই জানে।

রোহানের কথা শুনে চয়নিকা শান্ত হতে পারলো না। হাতমুখ শক্ত করে হুটকরে উপরে চলে গেলো। রোহান কিছুক্ষণ একা বসে থেকে বেরিয়ে গেলো। মাথায় পেশার চলছে। একটা পরিকল্পনা করেছিল সফল হতে পারলো ন।
________________________
আলিশান বাড়ির সোফায় বসে আছে লতা। এই বাড়িটা গতমাসে ফরহাদ কিনেছে। লোকটা জাদুর চেরাগ পেয়েছে। কিসের একটা ব‍্যবসা করছে সেখান থেকেই ফেঁপে ফুলে আজ এই অবস্থানে। লতা চাহিদা মতোই সবকিছু পেয়েছে কিন্তু পাইনি নিজের স্বাধীনতা। ফরহাদ ওকে কিছুর অভাবে রাখেনা।কিন্তু ওর আশেপাশেও ঘেঁষে না। রুম পযর্ন্ত আলাদা করেছে। লতার বাইরের টান কমেছে। ও চেয়েছে ফরহাদের সঙ্গেই থাকতে। জীবনে যায় করেছে আর এসব করবে না। কিন্তু কর্মফল তো পেতেই হয়। ফরহাদ ওকে হাতে মারেনি ঠিক তবে ভাতে মেরেছে। বাইরের লোকজনের কাছে ওর পরিচয় গোপন রাখে। হৈমন্তীর জন্য লোকটা পাগল হয়ে উঠেছে যেটা লতা সহ‍্য করতে পারেনা। ফরহাদের মা শায়লা বানু ঘরের এক কোনে পড়ে থাকে। ফরহাদ উনার সঙ্গে কথা বলা বহু আগেই বন্ধ করে দিয়েছে। ভদ্রমহিলা ধুকেধুকে মরছে। নিজের কৃতকর্মের জন্য আফসোস করেন। একমাত্র ছেলে কথা বলেনা মা বলে ডাকেনা এর থেকে কষ্টের কিবা আছে। ফরহাদ বাড়িতে থাকেনা বললেই চলে। বাড়িতে যেটুকু থাকে লতা আশেপাশে ঘুরঘুর করে কথা বলতে চাইলে ওকে কঠিন কোনো কথা বলে দমিয়ে দিতে দুবার ভাবেনা। ওর দৃষ্টিতে লতা চরিত্রহীন লোভী মহিলা।। লতার ছেলেকে দেখলে ওর রাগ দ্বিগুণ বেড়ে যায়। জীবন বাঁজি রেখে অর্থসম্পদের পাহাড় গড়ে তুলছে শুধু হৈমন্তীর জন্য। মেয়েটাকে ওর চাই। যেভাবেই হোক চাই।

(চলবে )

#শেষ_থেকে_শুরু
কলমে: লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:১৮

গভীর রজনী, হালকা তন্দ্রা এসে ভর করেছে অরিনের আঁখি পল্লবে। কিছু সময় মানুষের জীবন সত্যিই বিষাদের ঘন আধারে আছন্ন হয়ে যায়। হঠাৎ করে অরিন অবুঝ থেকে বুঝদার হয়ে উঠেছে। আরাফাতকে নিয়ে হৃদয়ের গহীনে নানারকম চিন্তার ঘুরপাক খাচ্ছে। সঠিক সময়ে সম্পর্কের মূল্য দিতে জানতে হয় নয়তো পরে কিছুই করার থাকে না। আরাফাত ভদ্রলোকের ছেলে, নিজেও যথেষ্ট ভদ্রলোক তাতে সন্দেহ নেই। লোকটা ওকে পর্যাপ্ত স্বাধীনতা দিয়েছে এমনকি বিয়ের এতগুলো দিন পার হলো তবু ওর কাছে স্বামীর অধিকার নিয়ে ঝামেলা করেনি কাছেও আসেনি। হয়তো এটা একপক্ষিক ভালো তবে আদো কি এটা ভালো? একদম ভালো না। যদি হঠাৎ ছেলেটার মন মেজাজ পরিবর্তন হয়ে যায় তখন? হতেই পারে অস্বাভাবিক কিছু না। সমাজের ন‍্যায় মানুষও পরিবর্তনশীল। মানব মনের তল পাওয়া সহজ না। তাছাড়া চিরন্তন সত্য অনুযায়ী মানুষের কিছু জৈবিক চাহিদা আছে। যেটাকে অস্বীকার করার স্বাদ বা সাধ‍্য কারো নেই। কথাগুলো ভেবে অরিনের মাথা পাগল হয়ে যাচ্ছে। ভালো মানুষের বড্ড অভাব পৃথিবীতে। পাওয়া কষ্ট যদি পেয়েও তাকে হেলাই হারিয়ে ফেলা হয় তার মতো হতভাগ্য কেইবা আছে? না না কিছুতেই অরিন ওকে ছাড়বে না। রবিন ওর হৃদয় পটভূমি থেকে সেই কবেই বিলীন হয়ে আরাফাত জায়গা দখল করে নিয়েছে এটা বুঝতে বেশ সময় লেগে গেলো। লোকটা আজ দুদিন হাসপাতালে আসছে না। অরিন ফোন দিতে চেয়েও দিতে পারেননি। কথা বলতে জড়তা কাজ করে সঙ্গে জমা হয়েছে মরার লজ্জা। এই লজ্জা জিনিসটা ওর বিরক্তি লাগে। মনে হয় ভূলে যাবে ওর লজ্জা নামের অদৃশ্য বস্তুটা আছে। কিন্তু হয়না লোকটা ওর আশেপাশের থাকলেই হয়েছে। কথা পযর্ন্ত জড়িয়ে যায়,হাতপা ঠকঠক করে কাঁপাকাঁপি করে। তবে এসব নিয়ে চললে তো হবে না। ওকেই এগিয়ে যেতে হবে। সন্তানের কাছে বাবা যেমন গুরুত্বপূর্ণ স্ত্রীর কাছে স্বামীও তেমন গুরুত্বপূর্ণ ব‍্যাক্তি। একজনের জন্য অরেকজকে আঘাত করা বোকামি। সম্পর্কের যত্ন না করলে মরিচা পড়ে যায়। অরিন সিদ্ধান্ত নিলো এখন থেকে লোকটার আশেপাশে থেকে ভালোবাসার উপলব্দি করাবে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই ওর চোখ লেগে গিয়েছিল। কেবিনের বাইরে বসে ছিল এতক্ষণ। ওর বাবার শরীর মোটামুটি ভালো। চোখ খুঁলে তাকাতে পারে আঙ্গুল নড়াচড়া করছে। ডাক্তার বলেছে খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবে।। আবির এসেছিল কিছুক্ষণ বাবার কাছে বসে চলে গেছে।ওর অফিসের কাজ আছে। গতকাল মিটিংয়ের জন্য কোথায় একটা যাবে। হঠাৎ মাথার উপরে কারো স্পর্শ পেয়ে অরিনের তন্দ্রা ছুটলো। তাড়াতাড়ি সোজা হয়ে ঘুমঘুম চোখে তাঁকিয়ে দেখলো আরাফাত ওর পাশে দাঁড়িয়ে আছে। লোকটার দৃষ্টি সোজাসুজি ওর চোখের উপরে। অরিন গুটিয়ে গেলো। কয়েকবার চোখের পাতা ঝাপটে অভিমানি কন্ঠে বলল,

> দুদিন কোথায় ছিলেন? খোঁজখবর নেই কেনো?

আরাফাত মলিন হেসে বলল,

> কাজের জন্য বাইরে গিয়েছিলাম। হৈমির খোঁজ চলছে। বন্ধুকে দিয়ে ওখানকার পুলিশের কাছে ডাইরি করেছি । যদি খোঁজ পাই। তুমি এখানে কি করছো? আম্মুতো আছে। তুমি একদিন বাড়িতে গিয়ে বিশ্রাম করতে। চেহারার কি অবস্থা হয়েছে দেখেছো?

আরাফাত কথাগুলো বলতে বলতে অরিনের কোলঘেঁসে বসে পড়লো। অরিন নড়েচড়ে বসলো। শরীরে কাঁটা দিচ্ছে। লোকটাকে নিয়ে কিছুক্ষণ আগেও উল্টাপাল্টা ধারণা তৈরী হয়েছিল ভেবেই লজ্জা লজ্জা পাচ্ছে। অরিকে চুপচাপ দেখে আরাফাত ওর হাতটা নিজের মুঠোয় নিয়ে বলল,

> ঘুমিয়ে যাও শরীর খারাপ হবে। আমি ভেবেছি আগামীকাল থেকে রাতে এখানে থাকবো তুমি বাড়িতে থাকবে। রাতে এমনিতেই আমার তেমন ঘুম আসেনা। নানারকম চিন্তাভাবনা হচ্ছে। পাগল পাগল লাগছে। বোনটা কোথায় আছে কে জানে।

অরিন মন খারাপ করে ফেলল। চোখ জোড়া ছলছল করছে। হৈমির জন্য সবাই কষ্ট পাচ্ছে। আবিরের মুখে আগে হৈমির নাম শুনলেও এখন আর শোনা যায়না। তাছাড়া দরকার ছাড়া ছেলেটা একটা কথাও উচ্চারণ পযর্ন্ত করেনা। ছেলেটা আগে এমন ছিল না। ওর এই পরিবর্তনের জন্য কোথাও না কোথাও হৈমি একটু হলেও দোষী। অরিন দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলল,

> মেয়েটার মধ্যে জিদ চেপেছে। ছোট থেকেই আপনারা ওর উপরে শুধু ঝামেলা চাপিয়ে দিয়েছেন। একবার না দুই দুইবার বিয়ে দিয়েছেন। আবার নাকি রোহান ভাইয়ার সঙ্গে বিয়ে ঠিক করে ফেলেছেন এসবের জন‍্যই হৈমি পালিয়ে আছে। ও কাউকে কষ্ট দিতে চাইনি তর্কাতর্কি করে। নিরবে সরে গিয়েছে।

আরাফাত চোখ বন্ধ করে কয়েক সেকেন্ড ভেবে বলল,

> ছোট থেকেই ও চুপচাপ স্বভাবের। ওর এমন চুপচাপ থাকাটাই আমাদের ভাইবোনদের নজর কাড়ে। প্রচণ্ড ভালোবাসি আমরা ওকে। ও সকলের বাধ‍্য মেয়ে। বড় ভাইয়া ওর জন্য দুবার ছেলে দেখেছে ও একবারের জন্য ও মানা করেনি। মন থেকেই মেনেছে। ভেবেছে ভাইয়া ওর ভালো চাই। যা হবে ওর মঙ্গলের জন‍্যই হবে। মেয়েটার নিয়তি ওর সঙ্গে খেলা করেছে। ভালো চাইতে গিয়ে খারাপ করে ফেলেছি। যাইহোক এমনটা আর হবে না। ও নিজের মতো যা করতে চাইবে সাপোর্ট করবো কিন্তু এভাবে লুকিয়ে থাকাটা মানতে কষ্ট হচ্ছে। আমাকে অন্তত বলতে পারতো।

আরাফাত একদমে কথাগুলো বলে থামলো। চারদিকে শুনশান নির্জন পরিবেশ। কেবিনের বাইরে দুজন মানব মানবি বসে আছে। রাস্তায় গেটের কাছে কুকুর ডাকছে। হাসপাতাল বড্ড নিষ্ঠুর জায়গা। জীবনের শেষ বা শুরু এখান থেকেই সূচনা হয়। একদিকে সাদা কাপড়ে ঢেকে কারো লাশ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অন‍্যদিকে অপারেশন থিয়েটারে কোনো সদ‍্য ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশুর চিৎকারের আকাশ বাতাস কেঁপে উঠছে। জীবন বুঝি এমনিই। আরাফাত হঠাৎ অরিনকে নিজের পায়ের উপরে ঘুমানোর জন্য টেনে নিলো। হঠাৎ ওর এমন কাজে অরিন চমকে উঠলো। লোকটার কাছাকাছি আসার সুযোগ হয়নি তেমন। আরাফাতের মুখে কোনো ভাবলেশ নেই। শুধু মৃদু কষ্টে বলল,

> একটু ঘুমাও, আমি জেগে আছি। ভেতরে আম্মা আছে অসুবিধা হবে না।

অরিন গুটিসুটি মেরে আরাফাতের পায়ের উপরে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। ওর ডান হাতটা এখনো আরাফাতের হাতের মধ্যে মুষ্টিবদ্ধ। অরিন ছাড়িয়ে নিতে চাইছে না। দরকার কি ছাড়িয়ে নেওয়ার? লোকটা ওর নিজস্ব সম্পত্তি। একান্ত নিজের।

_____________

ঘরময় পায়চারি করছে লতা। মন মেজাজ প্রচণ্ড খারাপ। ইচ্ছা করছে সবকিছু ধ্বংস করে ফেলতে। খুন করা সহজ হলে আজকে অনেকগুলো খুন করে ফেলতো। ফরহাদ একগাদা শপিং করে আলমারিতে লক করে রেখেছে। সেখানে নানারকম জিনিসপত্রের ঠাসাঠাসি। হয়তো হৈমন্তীর জন্য দামি দামি শাড়ি আর জুয়েলারি কিনেছে। কিন্তু সেসব পাওনা তো হৈমন্তীর জন্য না। এগুলো লতার অধিকার। এসব নিয়ে মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেতে খেতেই আরেক ঝামেলা হাজির। ফরহাদ জেলে থাকতে কালু নামের এক পাতি বখাটে মস্তানের সঙ্গে লতার গভীর প্রেম হয়। এতোটাই গভীর ছিল যে লতা তখন চোখে কালুকে ছাড়া কাউকে দেখতো না। ফলাফল যা হবার হলো। লতা প্রেগনেন্ট হয়েছে কালুকে জানানোর পরে কিসের ভালোবাসা। কালু লা পাত্তা। শেষমেষ সেই ফরহাদের কাছেই আসতে হলো। সেই কালু এতোদিন পরে ওকে আর বাবলুকে ফিরিয়ে নিতে চাইছে। কতবড় সাহস লোকটার ভেবেই রাগে গা জ্বলছে লতার। যখন চেয়েছিল তখন নিলো না এখন প্রেম দেখাতে আসছে। তাছাড়া তখন অভাবের মধ্যে ছিল। এখন তো আর তেমন কিছুই হচ্ছে না। ফরহাদ ওর সঙ্গে কথাবার্তা না বললেও টাকা পয়সা ঠিকই দিচ্ছে। এমন সুযোগ হেলাই হারানোর মতো বোকা মেয়ে লতা না। কালুর কাছে কিছু নেই। বস্তিতে থাকে। রাতদিন মারামারি কাটাকাটি করে সাতবেলা জেলে থাকে। ওই কুমিরের কাছে গিয়ে মরতে পারবে না। কালু ওকে থ্রেট দিচ্ছে। লতা গেলেই ফরহাদ হৈমন্তীকে ফিরিয়ে আনতে পারে ভেবেই গায়ে কাটা দিচ্ছে। কিভাবে কালুকে বোঝাবে এই কঠিন সমস্যাগুলো বুঝতে পারছে না। একবার কালুর কাছে যাওয়া উচিৎ ভাবলো তবে মন সাড়া দিলো না। লোকটা এক নাম্বারের লম্পট। কিভাবে যে প্রেমটা হয়ে গিয়েছিল কে জানে। বাবলুকে ফেরত দেওয়া যাবে না। সবাই জানে বাবলু ফরহাদের ছেলে। এখন কালু ওকে নিয়ে গেলে ফরহাদের সম্পত্তি হাতছাড়া হয়ে যাবে এটাই বোঝাতে হবে কালুকে। বাইরে ফরহাদ এসেছে। গাড়ির শব্দে ওর ধ‍্যান ভাঙলো। লতা উঁকি দিয়ে দেখলো লোকটা চাবি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠছে। লতা সময় নষ্ট না করে একবারে ফরহাদের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। হঠাৎ লতার আগমনে ফরহাদের ভ্রু কুচকে গেলো। বিরক্তি নিয়ে পাশ কাটিয়ে যেতে গেলো কিন্তু হলো না। ও এবার মুখ খুলল,

> লোকজন কম পড়েছে যে আমার রাস্তা আটকে দিচ্ছিস? চরিত্রহীন মেয়ে, দিলি তো আমার মেজাজ খারাপ করে?

ফরহাদের ধমক শুনে লতা কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল,

> আমার সঙ্গে তুইতুকারি করছো কেনো? ভূলে যেওনা একসময় আমি তোমার পরম প্রিয় ছিলাম।

> সেসব মনে করলে আমার মরে যেতে মন চাই। কি জঘন্য ছিলাম আমি। ছি তোর মতো মেয়েকে স্পর্শ করেছি। ইয়াক বমি আসছে

লতা ফুপিয়ে কেঁদে উঠে বলল,

> একসময় তুমি আমার জন্য পাগল ছিলে। তখন হৈমন্তীর জন্য তোমার মনে ঠিক এমনিই ধারণা ছিল। আসলে কি জানো ফরহাদ তুমি কাউকেই ভালোবাসো না। তুমি শুধু নিজেকে ভালোবাসো। নিজের সুখের কথা ভেবে একজনকে ছেড়ে আরেকজনকে আকড়ে ধরতে চাইছো। যাইহোক আমি তোমাকে ছাড়ব না কখনও না।

লতা কথাগুলো বলে চলে গেলো। ফরহাদের মেজাজ খারাপ হলো। ইচ্ছা হলো লতাকে গিয়ে উত্তম মাধ্যম রড দিয়ে পিটাতে কিন্তু হাত নোংরা করতে ইচ্ছা করছে না। হৈমন্তীর খোঁজখবর করছে ফরহাদ। খুব তাড়াতাড় বউ বাচ্চাকে নিজের দখলে নিয়ে নিবে। ভাবলো একবার শুধু খোঁজ পাই।
_______________________________
ল‍্যাপটপে মুখ গুজে বসে আছে আবির। একটা প্রজেক্টের কাজ করছে। রাতদিন সব একাকার অবস্থা। কোনো বিরাম নেই। ফারজানা হক গুটি গুটি পায়ে ছেলের পাশে এসে দাঁড়ালেন। আবির চোখ নিচে রেখেই বলল,

> আম্মো কিছু বলবে?

ফারজানা হক বহু কষ্ট ওষ্ঠে হাসি ফুটিয়ে বলল,

> আরশীকে তোর কেমন লাগে?

আরশী হচ্ছে ফারজানা হকের বোনের মেয়ে। খুব গম্ভীর আর রাগচটা স্বাভাবের জন্য সবাই ওকে এটোম বোম বলে ডাকে। আবির কিছু না ভেবেই বলল,

> এটোম বোমকে আবার কেমন লাগবে? মোটামুটি কিন্তু কেনো?

> গতকাল আসছে মেয়েটা। পড়াশোনা শেষ হয়েছে। তোর খালামনি একটা প্রস্তাব পাঠিয়েছে। আমি ভেবেছিলাম তোকে বলবো না তবুও বলছি। বয়স হচ্ছে বিয়ে সাদি করবি তো?

আবির চট করে মায়ের মুখের দিকে তাঁকালো। এদের মতিগতি বুঝতে ওর অসুবিধা নেই। তাইবলে আরশী কিভাবে কি? আরশী আমেরিকা ছিল। ওর খোঁজখবর রাখা হয়নি আবিরের। তাছাড়া মেয়েটা বড্ড বেশিই অহংকারী। ওসব মেয়েকে বিয়ে করলে জীবন শেষ। আবির মুখটা কঠিন করে বলল,

>দেশে আর মেয়ে ছিল না শেষপর্যন্ত তোমার বোনের মেয়ে? শোনো আম্মু আমি বিয়ে টিয়ে করবো না। আব্বু সুস্থ হলে ভেবে দেখবো এখন আসো। সুখে থাকলে ভূতে কিলোই।

ফারহানা হক কষ্ট পাচ্ছেন। স্বামী সুস্থ থাকলে ছেলেটাকে ধুমধাম করে বিয়ে করাতে পারতেন। আগামীকাল বোন আর বোনের মেয়ে আসছে। কিছুদিন এখানেই থাকবে। ওদের বাসা চট্টগ্রামে। মেয়েটা এখানে কিসের জব করবে তাই এখানে বাসা নিবে। বোনের বাড়ি থাকতে বাইরে থাকা কেমন দেখাই তাই উনি জোরজবরদস্তি করেই নিজের বাড়িতে তুলছেন। তাছাড়া চোখের সামনে ঘুরতে ঘুরতে যদি আবিরের চোখে মেয়েটার জন্য ভালোলাগা তৈরী হয়ে যায় মন্দ হবে না। কিন্তু আদো কি আবিরের নজর অন‍্য কোনো মেয়ের উপরে আছড়ে পড়বে?কি জনি পড়তেও পারে আবার নাও পারে।

_______________

আরাফাত ভিডিও কলে কথা বলছে আমেরিকার এক বন্ধুর সঙ্গে। গতকাল থেকে সেখানে তল্লাশি চলছে। হাসপাতাল থেকে শুরু করে কবরস্থান পযর্ন্ত কিছুই বাদ রেখেনি। সন্দেহজনক বিষয় হচ্ছে মেয়েটা এক বছরের বেশি নিজের একাউন্ট থেকে টাকা উঠাইনি। কিভাবে সম্ভব এটা? আরাফাত ভাবলো, ওকি কোনো কাজকর্ম করছে? ওর একাউন্ট থেকে না টাকা উঠানো হয়েছে, না টাকা জমা হয়েছে। যেমনি ছিল তেমনই আছে। টাকা উঠানো হলে একটা ক্লু পাওয়া যেতো। ওর ইউনিভার্সিটি থেকেও কোনো তথ্য দিচ্ছে না। তবে সেখানে ও একদিনও ক্লাশ করতে যায়নি। পরীক্ষা শেষ হয়েছে দুমাস আগেই। কথাছিল এক বছর থেকে চলে আসবে। ভিসার মেয়াদ বাড়ানো হয়নি। আরাফাত কথা শেষ করে ল‍্যাপটপ নিয়ে বসলো। হৈমন্তীর একাউন্ট চেক করে যখন ল‍্যাপটপ বন্ধ করতে গেলো ঠিক তখনই ওর মেসেঞ্জারে একটা ছবি আসলো।। আরাফাত চেক করে দেখলো এটা দুদিন আগে আমেরিকার থেকে বাংলাদেশে আসার যাত্রীদের লিস্ট। ও মনোযোগ দিয়ে লিস্টটা চেক করতে থাকলো। প্রশ্ন,এখানে কি আদো হৈমন্তীর নামটা পাওয়া যাবে?

চলবে

ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here