#শেষ_থেকে_শুরু
#পর্ব_১১
#নন্দিনী_চৌধুরী
২৩.
মেহেরাবখান মারা গেছেন আজকে এক সপ্তাহ।এক সপ্তাহে মেহের মুগ্ধ দুইজনেই অনেকটা চুপচাপ ছিলো।মেহের একটু বেশিই চুপচাপ ছিলো।তবুও নিজেকে শক্ত রেখে সবদিক সামলেগেছে।আজকে মুগ্ধকে কলেজে দিয়ে গেছে সে।মুগ্ধ চুপচাপ আসতে করে হেঁটে যাচ্ছে ক্লাস রুমে।ক্লাসে আসতেই সাদিয়া এসে তাকে জরিয়ে ধরলো।
সাদিয়া:মুলা কেমন আছোস?
মুগ্ধ:ভালো। তুই কেমন আছিস?
সাদিয়া:ভালো।চল বোস।
মুগ্ধকে নিয়ে সিটে বসলো সাদিয়া।মুগ্ধ মেহেরাব মারা যাওয়ার পরেরদিন সাদিয়াকে কল দিয়ে জানিয়েছিলো তার বাবা মারা গেছে।কিছুদিন সে কলেজে আসবেনা।আজকে প্রথম ক্লাস সাদাফের।সাদাফ ক্লাসে আসলো।ক্লাসে এসেই তার চোখ গেলো মুগ্ধের দিকে।সাদাফ একটা মুচকি হাসি দিয়ে ক্লাস শুরু করলো।ক্লাসে পড়ানোর ৫মিনিটের মাঝে প্রিন্সিপাল আসলেন।
প্রিন্সিপাল:মিস্টার সাদাফ আমাকে ৫মিনিট সময় দেওয়া যাবে?
সাদাফ:জি স্যার অবশ্যই।
প্রিন্সিপাল:আজকে আপনার ক্লাসে আরেকটি নতুন ছাত্রী জয়েন করছে।
সাসাফ:কে?
প্রিন্সিপাল:এইযে এই মেয়েটা।আসো মা ভিতরে আসো।
সাদাফ সহ সবাই তাকালো মুগ্ধতো তাকিয়ে অবাক হলো মুখ থেকে বেরিয়ে আসলো,
“সায়মা!”
সায়মা ভিতরে ডুকলো।সায়মাকে দেখে সাদাফ অবাক হলো।প্রিন্সিপাল স্যারের দিকে তাকিয়ে বলে,
সাদাফ:স্যার ইনিতো…
প্রিন্সিপাল:হ্যা এ হলো সায়মা ইসলাম।মেহেরাবের খানের মেয়ে।মেহেরাব খানকেতো চিনেন যিনি গত এক সপ্তাহ আগে মারা গেলেন।এ হচ্ছে তার ছোট মেয়ে।তার আরেক মেয়েও এই ক্লাসে আছে।মেহরুবা ইসলাম মুগ্ধ কই?
মুগ্ধ আসতে করে বলে উঠে,
মুগ্ধ:জি স্যার।
প্রিন্সিপাল:হ্যা এইতো।এই হলো দুইবোন।
সাদাফ:ওহ আচ্চা।[স্যার আপনি না বল্লেও আমি তা অনেক আগেই জানি।কিন্তু এই মেয়ে এখানে কেন?চোখমুখ দেখে মনেতো হচ্চেনা পড়ার জন্য এসেছে।তাহলে আসছে কি মুগ্ধের…..।]
প্রিন্সিপাল:ওকে আমি আসছি।আপনি ক্লাস কেরি ওন করেন।
প্রিন্সিপাল স্যার চলে গেলো।সাদাফ সায়মাকে সিটে গিয়ে বসতে বললো।সায়মা সিটে বসার সময় মুগ্ধের দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দেয়।সাদাফ ক্লাস করাচ্ছে আর সায়মার মুভমেন্ট দেখছে।ক্লাস শেষ হতেই সাদাফ চলে যায়।বাকি ক্লাস গুলো মুগ্ধ তাড়াতাড়ি করে বেরিয়ে আসে।সে সায়মার মুখোমুখি হতে চায়না।তাড়াহুড়ো করে বাসায় এসে পড়ে মুগ্ধ।বাসায় এসে সোজা নিজের রুমে চলে গেলো সে।ভালো লাগছেনা তার।সায়মা এই কলেজে কেন।কিছুই বুজতে পারছেনা সে।এদিকে সাদাফ কলেজের পর মুগ্ধকে খুজতেছে কিন্তু পাচ্ছেনা পরে সাদিয়ার থেকে জানতে পারে মুগ্ধ বাসায় চলে গেছে।সাদাফ ও তাই সাদিয়াকে নিয়ে বাসায় চলে আসে।
সোফায় মাথায় মাথা নিচু করে বসে আছে আরিশ।হাতে তার একটা ফাইল।হ্যা আরিশের হাতে প্রোপার্টির ফাইল।মুগ্ধ তাকে যে প্রোপার্টি দিয়ে দিয়েছে সেই ফাইল এটা।এখানে খুব সুন্দর করে লেখা।আরিশের বাবা মুগ্ধকে যেই ৪০% সম্পত্তি দিয়েছিলো।তা মুগ্ধ সজ্ঞানে নিজ ইচ্ছায় আরিশের নামে করে দিয়েছে।এখন আরিশ এই সব সম্পত্তির মালিক।আজকে সকালেই ফাইলটা হাতে এসেছে তার।আরিশ মাথাত দিয়ে বসে আছে।
সম্পত্তি যদি মুগ্ধ আমার নামেই করে দেয়। তাহলে ও আমাকে মারতে কেন চাইবে।আর ডিভোর্স এর পর তো এই সম্পত্তি ওর নিয়ে যাওয়ার কথা।তানা ও আমাকে এই সম্পত্তি দিয়েদিয়েছে।যেই সম্পত্তির জন্য ও আমাকে মারতে চাইলো।সেই সম্পত্তি ফেরোত দিয়ে দিলো কিন্তু কেন?
আরিশ পাশে থাকা ফোনটা হাতে নিয়ে ওর বাবার উকিলকে কল করলো।দুইবার রিং হবার পর কল রিসিভ হলো।
আরিশ:আসসালামু আলাইকুম আংকেল।
উকিল সাহেব:ওয়ালাইকুমুস সালাম।কেমন আছো আরিশ বাবা?
আরিশ:আলহামদুলিল্লাহ।আপনি?
উকিল সাহেব:ভালো।বউমা কেমন আছে?
আরিশ:জ.জি ভালো।আংকেল আপনার কাছে কিছু কথা জানার জন্য কলদিয়েছিলাম।
উকিল সাহেব:হ্যা বলো কি কথা।
আরিশ:আচ্ছা আংকেল বাবা যে একটা উইল করেছিলেন যেখানে তিনি বলেছিলেন আমার ওয়াইফ সম্পত্তির ৪০%পাবে।আচ্ছা কোনোভাবে যদি আমাদের ডিভোর্স হয়ে যায় তখন কি সেই সম্পত্তি নিতে পাড়বে বা আমাকে দিয়ে দিতে পারবে?
উকিল সাহেব:যদি তোমাদের ডিভোর্স হয়ে যায়।তাহলে আইনোতো প্রোপার্টি সে নিতে পারবে আবার চাইলে নাও নিতে পারে কিন্তু তোমার নামে করে দিলে সেই প্রসেস হতে অনেক সময় লাগবে।কিন্তু যদি ডিভোর্স না হয় তোমরা একসাথে তাহলে তখন তোমার নামে করে দিতে চাইলে সেইটা অনেক তাড়াতাড়ি হয়।কিন্তু তুমি এটা জানতে চাচ্ছো কেন?
আরিশ:আসলে আমার সাথে মুগ্ধের ডিভোর্স হয়ে গেছে।এখন আমার কাছে ফাইল এসেছে যেখানে লেখা মুগ্ধ ওর ভাগের প্রোপার্টি আমাকে দিয়ে দিয়েছে।এখন আপনি বলছেন ডিভোর্স এর পর এই প্রসেস হতে সময় লাগে কিন্তু আমার তো এক মাসের ভিতরেই এসে পড়েছে।মুগ্ধ কি আপনার কাছেগেছিলো এই কাজের জন্য?
উকিল সাহেব:না তবে মুগ্ধকে তুমি ডিভোর্স কেন দিলে।মুগ্ধ আমার কাছে এসেছিলো জুলাই মাসে।আমাকে বলেছিলো ওর ভাগেরটা তোমার নামে করে দিতে আমি তখন না করেছিলাম।আমার মনে হয় ও অন্য কারো মাধ্যমে করেছে।তুমি একটা কাজ করো ফাইলটার দ্বিতীয় পেজে দেখো ইসু তারিখ দেওয়া আছে আর রিলিস তারিখ দেওয়া আছে।সেই তারিখ দেখো কোন মাসের কয়তারিখ।
আরিশ:জি দেখছি।
আরিশ ফাইল চ্যাক করে উকিল সাহেবকে বলে,
আরিশ:এখানে ইসু ডেট দেওয়া জুলাইয়ের ২২তারিখ আর রিলিস ডেট আগষ্টের ৫ তারিখ।
উকিল সাহেব:তোমাদের ডিভোর্স হয়েছে কবে?
আরিশ:আগষ্টের ৭তারিখ।
উকিল:মানে এইটা তোমাদের ডিভোর্সের আগেই মুগ্ধ করেছে।ডিভোর্সের আগেই মুগ্ধ সম্পত্তি তোমাকে দিয়েদিয়েছে।কিন্ত তুমি ফাইল পেয়েছো আজকে।
আরিশ:কিহ!
উকিল:হুম।এখন আমাকে বলো তুমি মুগ্ধকে কেন ছাড়লে এতো ভালো লক্ষ্যি মেয়েটাকে তুমি ছাড়লে।
আরিশ:সে অনেক বড় কাহীনী পরে জানাচ্ছি আপনাকে।
বলেই কল কেটে দিলো আরিশ।সব উলোটপালোট হয়ে যাচ্ছে তার।মুগ্ধ যদি ডিভোর্সের আগে সব সম্পত্তি তার নামেই করে দেয় তাহলে তাকে মারতে চাইলো কেন।আর যদি তাকে মারতেই চাইলো তাহলে সম্পত্তি তাকে দিলো কেন।আচ্ছা কোথাও এমন নয়তো যে কেউ মুগ্ধকে ফাঁসিয়ে দিলো।এমন যদি হয় তাহলেতো আরিশ জীবনের সব থেকে বড় ভুল করে ফেললো।না তাকে জানতে হবে যে আসলে ব্যাপরটা কি।হ্যা তাকে জানতে হবে।
সাদাফ দাঁড়িয়ে আছে তার রুমে বারান্দায়।চোখ মুখ লাল হয়ে আছে তার।আজকে সে সব সত্যি জানতে পারেগেছে।কে তার মেহুরাণী আর তার সাথে এতো নোংড়া একটা চাল চেলেছে।সাদাফ হাত মুষ্টি বদ্ধো করে আছে।
সাদাফ:এতো বড় একটা খেলা খেলেগেছো তুমি।এভার আমি তোমার সাথে খেলাটা খেলবো।ঠিক সেইভাবেই যেভাবে তুমি আমার থেকে আমার মেহুরানীকে কেড়ে নিয়েছিলে।আমি তোমার থেকে তোমার নিজেকে কেড়ে নেবো।মিস সায়মা তৈরি হয়ে যাও।নিজের পাপের হিসাব দেওয়ার জন্য।এই সাদমান হাসান সাদাফ তোমাক্র ভোজাবে তার সাথে চিট করার শাস্তি ঠিক কি।আমি এখন বুজতে পারছি তুমি কেন কলেজে এসেছো।তোমার ভয় এটাই আমি সব জেনেযাই কিনা তাইতো।এভার দেখো তোমাকে কিভাবে আমি সায়েস্তা করি।
২৪.
মেহের আর রুহি গেছে ডাক্তারের কাছে।মুগ্ধ আজকে বাসায় একা।মেহের বলেছিলো সাথে যেতে কিন্তু মুগ্ধ যেতে চায়নি।মুগ্ধ নিজের রুমে বসে আছে।তখন ওর ফোনে কল আসলো।মুগ্ধ ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে সাদাফ লেখা।সাদাফ নামটা দেখেই ভয় পেলো।তাও ফোনটা রিসিভ করলো।
মুগ্ধ:হ.হ্যালো।
সাদাফ:মিস মুগ্ধ!
মুগ্ধ সাদাফের ডাকটা শুনে থামকে গেলো।এক আলাদা শীহরণ কাজ করছে তার ভিতর।নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
মুগ্ধ:জ.জি স্যার।
সাদাফ:আগামিকাল আমাদের বাসায় আসবেন।
মুগ্ধ:ক.কেন স্যার।
সাদাফ:আগে তোতলানো বন্ধ করেন।
মুগ্ধ:জি।
সাদাফ:আগামিকাল সাদিয়ার এংগেজমেন্ট।মেহের ভাইয়াকে বাবা নিজে দাওয়াত দিছে অফিসে।আর আমি আপনাকে দিলাম।
মুগ্ধ:এটাতো সাদিয়া বললেই হতো।
সাদাফ:সাদিয়া আপনাকে বলা আর আমি বলা একই ।বিকালে সাদিয়া আপনাদের বাসায় যাবে ওর সাথে আসবেন।মার্কেটে যাবে সাদিয়া।
মুগ্ধ:জি আচ্ছা।
সাদাফ:গুড।
বলেই কল কেটে দিলো সাদাফ।মেয়েটা ওকে এতো ভয় পায় কেন আল্লাহ জানে।যাইহোক ভয় পেলেও বউটা তার কিউট লাগে।
সাদাফ:আর কিছুদিন মেহুরানী।এরপর তোমাকে আমার ঘরের রানী করে নিয়ে আসবো।তোমার সব কষ্ট মুছে দেওয়ার দায়িত্ব আমার।
বিকালে সাদিয়া, মুগ্ধ সাদাফ মিলে শপিং করতে আসছে।সাদিয়াকে একটা গোলাপি কালারের লেহেংগা কিনে দিছে।সাদাফ মুগ্ধের জন্য একটা লেমন কালার লেহেংগা নিয়েছে কিন্তু সেটা সাদিয়ার হাত দিয়ে দিয়েছে যাতে মুগ্ধ না বুজে এটা সাদাফ দিয়েছে।আরো কিছু জিনিশ তারা কিনাকাটা করে।রাত ৮টায় বাসায় আসলো।
পরেরদিন,,,,
মুগ্ধ রেডি হচ্ছে।লেমন কালার লেহেংগাটা বেশ ভালোই ফুটেছে মুগ্ধের গায়ে।সাথে হালকা সাজ।চুল গুলো কার্ল করে এক সাইডে দিয়েছে।রেডি হয়ে মুগ্ধরা বেরিয়ে পরলো সাদাফদের বাসার উদ্দ্যেশে।সাদাফদের বাসায় আসার পর সাদাফের বাবা মেহেরদের সহরে গ্রহণ করলেন।সাদাফের বাবা মেহেরের সাথে কথা বলছে সাদাফের মা রুহির সাথে।মুগ্ধ সাদিয়ার কাছে যাওয়ার জন্য সাদিয়া রুমে গেলো আসার আগে সাদিয়ার মায়ের থেকে জেনে নিলো কোন রুমে সাদিয়া থাকে।মুগ্ধ সাদিয়ার রুমে এসে দেখে সাদিয়াকে রেডি করাচ্ছে।মুগ্ধ গিয়ে সাদিয়াকে জরিয়ে ধরলো।
মুগ্ধ:সাদু পাদু তোকে তো খুব সুন্দর লাগছে।
সাদিয়া:তোকেও সেই লাগছেরে মূলা।ভাইয়ার চয়েজ আছে বলতে হবে।
মুগ্ধ:কি বললি?
সাদিয়া:এই যা কি বললাম এটা।আরে কিছুনা বললাম সুন্দর লাগছে তোকে।
মুগ্ধ:আচ্ছা তুই থাক আমি আসছি।
মুগ্ধ বেরিয়ে গেলো সাদিয়ার রুম থেকে।মুগ্ধ বেরোনোর সময় দেখলো পাশে রুমের দরজার সাদাফ দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে।সাদাফ যখন ফোনে কথা বলে তখন হাত নারে এটা মুগ্ধের খুব ভালো লাগে।তাছাড়া সাদাফের হেয়ার স্টাইল্টা মুগ্ধের বেশ সুন্দর লাগে।মুগ্ধ একটু তাকিয়ে চোখ নামিয়ে চলে আসে।সাদাফ ফোনে কথা বলে নিচে এসে দেখে মুগ্ধ সোফায় বসে আছে। হেসে হেসে কথা বলছে সাদাফের মায়ের সাথে।সাদাফের ভাবনাত চেয়েও বেশি সুন্দর লাগছে মুগ্ধকে।আনমেনেই বলে উঠে,
“আমি বার বার শতবার বহুবার তোমার প্রেমে পরে যাই প্রিয় তোমার অই হাসির প্রেমে।বার বার খুন হতে চাই তোমার ভালোবাসায়।”
#চলবে
🙆♀️আজকে বোনাস দিমু।আজকে আমি অনেক খুশি।তাই খুশির ঠেলায় লেখতে পারিনি বেশি।তাই রাতে আরেকটা পার্ট দিমু।প্লিজ রাক কইরেন না।ভুল ত্রুটি মাফ কইরেন।