#শেষ_ঠিকানা
#পর্ব_১৪ (শেষ পর্ব)
#মেহরিন_রিম
_অপু!কি হয়েছে অপুর?
_আমি জানিনা হিমি। আমিতো ওর বাড়িতে গিয়েছিলাম ওর কাছে ক্ষমা চাইতে। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি ও সেন্সলেস হয়ে পরে আছে। আমি ওকে হসপিটালে নিয়ে এসেছি, তুই প্লিজ একটু আসতে পারবি।
_আচ্ছা আচ্ছা তুই শান্ত হ আমি আসছি।
হিমি কলটা রাখতেই অর্নব ও চলে আসে অফিস থেকে। হিমি ওকে সবটা জানানোর পর অর্নব এবং হিমি একসঙ্গে হসপিটালে যায়।
অর্নব,হিমি হসপিটালে যেতেই সেখানে দিবাকে দেখতে পায়। যদিও দিবার সঙ্গে কোন কথা বলেনা হিমি। সেদিন অপূর্বের কথা শোনার পর দিবা নিজের ভুলটা বুঝতে পেরে হিমির কাছে গিয়ে নিজের সব কাজের কথা জানিয়ে দেয়। সেদিনের পর থেকে হিমি দিবার সঙ্গে প্রয়োজন ছাড়া কোন কথা বলে না,সে ভাবতেও পারেনি তার সবচেয়ে কাছের বান্ধবী এমনটা করতে পারে। দিবা অনেকবার অর্নবের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও অর্নব তার সঙ্গে কোন কথা বলেনি। হিমি আর অপূর্বের সম্পর্কের কথা জানার পর অর্নব নিজে থেকেই দূড়ে সরে গিয়েছিল। কিন্তু দিবা অর্নবকে অপূর্বের ব্যাপারে বিভিন্ন খারাপ কথা শোনায়, সে বলে অপূর্ব হিমিকে ঠকাচ্ছে। অর্নবের এখন নিজের উপর রাগ হয়, সে কি করে দিবার কথায় কনভিন্স হয়ে গেলো নিজেও জানেনা। নাহলে সে কখনই কারোর সম্পর্ক নষ্ট করতে চাইতো না।
হিমি আর অর্নব কে দেখেই দিবা তাদের কাছে এসে বলে,
_দেখনা হিমি, অপুর কি হলো হঠাৎ। এই সবকিছু আমার জন্য হচ্ছে তাইনা? ও আমাকে বলেছিল যেন ওর সামনে না আসি,আমি তবুও বারবার ওর কাছে গিয়েছি। এই জন্যই ওর এই অবস্থা তাইনা? আমি ওর কাছ থেকে দূড়ে চলে যাবো হিমি,বিশ্বাস কর। তাহলে অপু ঠিক হয়ে যাবে বল?
হিমি কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলল,
_প্লিজ দিবা,আমরা এখানে তোর কান্না দেখতে আসিনি। ডক্টর কি বলল সেটা বল।
তাদের কথার মাঝেই ডক্টর বেরিয়ে এলো। অর্নব,হিমি গিয়ে ডক্টরকে জিজ্ঞেস করতেই সে বলল,
_দেখুন আমরা যতটা বুঝতে পারছি, অধিক পরিমানে নেশা করার কারণে ওনার এই অবস্থা হয়েছে। আর তার উপর উনি হয়তো কোনো কারণে প্রচুর পরিমানে ডিপ্রেসড। ওনার নেশা করাটা কমাতে হবে, নাহলে আরো বড় কিছু হয়ে যেতে পারে।
অর্নব বলল,
_ডক্টর ও এখন ঠিক আছে তো?
_হ্যা আপাতত উনি আউট অফ ডেঞ্জার। আপনারা চাইলে দেখা করতে পারেন।
ডক্টর সেখান থেকে চলে যেতেই দিবা বলে,
_আ আমি যাবো ওর সাথে দেখা করতে।
দিবা যেতে নিলেই অর্নব তাকে আটকে দিয়ে বলে,
_দিবা,তুমি নিজেও জানো অপূর্ব তোমাকে দেখতে চায়না। তাই ওর সামনে গিয়ে ওকে শুধুশুধু বিরক্ত করোনা।
অর্নব হিমির দিকে তাকিয়ে বলে,
_হিমি,তুই যাও।
হিমি অবাক হয়ে অর্নবের দিকে তাকিয়ে বলে,
_আমি একা যাবো?
অর্নব দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
_কোথাও না কোথাও অপূর্বের এই অবস্থার জন্য আমিও দায়ী,আর সেইজন্য প্রচুর গিল্টি ফিল হচ্ছে আমার। অপূর্বকে একমাত্র তুমি ই বোঝাতে পারবে,আমার মনে হয় তুমি বললে অন্তত ও কিছুটা বুঝবে।
হিমি কিছুক্ষন চুপ করে থেকে অপূর্বর কেবিনের দিকে গেলো।
অপূর্ব চোখের উপর হাত দিয়ে শুয়ে আছে। হিমি ধীরে ধীরে একটা চেয়ার টেনে বেড এর পাশে বসে বলল,
_অ অপু..
চেনা কণ্ঠ শুনে অপূর্ব হাত সরিয়ে নিলো চোখ থেকে। হিমির দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে সামান্য হেসে বলল,
_আমি কি জাগ্রত অবস্থাতেও স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম।
হিমি নিচের দিকে তাকিয়ে বললো,
_কেমন আছো এখন?
ঠোঁটে থাকা হাসিটা মিলিয়ে গেলো অপূর্বের। হিমি যে আসলেই তার সামনে বসে আছে সেটা বুঝতে পেরে উঠে বসলো সে। অবাক চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
_ত তুমি এখানে!
_নিষেধাজ্ঞা আছে বুঝি?
_তেমন টা নয়। আসলে তোমাকে আশা করিনি তাই আরকি।
_বললে না তো কেমন আছো?
অপূর্ব সামান্য হেসে বলল,
_ভালোই আছি।
_কত ভালো আছো তা তো দেখতেই পাচ্ছি।
অপূর্ব কিছু বলল না। হিমি এবার অপূর্বর দিকে তাকিয়ে বলল,
_আমার জন্য নিজেকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছো? আমার যে নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে অপু।
_আমি তোমাকে কিছু বলিনি তো, তোমার কোনো দোষ নেই। যা হয়েছে তা আমার ভাগ্যে ছিল।
_তাহলে নিজের ভাগ্যকে মেনে নিচ্ছোনা কেন? আমিতো সবটা মেনে নিয়েছি অপু,কিন্তু তুমি? তুমি কেন ভালো থাকার চেষ্টা করছো না?
_কি করবো বলো…. বড্ড একা লাগে নিজেকে। আমি যে কেন বেঁচে আছি এর কারণ টাই খুজে পাইনা।
_তাহলে তুমি বিয়ে করছো না কেন? নিজের জীবনটা নতুন করে শুরু করো অপু।
_সম্ভব না, এ জীবনে আমি তোমাকে ভুলতে পারব না।
_আমি তো ভুলতে বলছি না, তুমি নাহয় নতুন করে কাউকে নিজের মনে জায়গা দাও। দেখো দিবাও তো তোমাকে….
_প্লিজ হিমি,প্লিজ। ওর নাম নিওনা আমার সামনে।
_আচ্ছা ঠিক আছে, ওর কথা আমি বাদ দিলাম। কিন্তু তুমি একটা জিনিস বোঝার চেষ্টা করো, জীবন কারো জন্য থেমে থাকতে পারেনা। তুমি এভাবে নিজের হাতে নিজের জীবনটা নষ্ট করতে পারোনা অপু।
অপূর্ব কিছু বললো না। হিমি নিজের চোখের জলটুকু মুছে বলল,
_এটা আমার রিকুয়েস্ট অপু, জীবনটা নতুনভাবে শুরু করো। এমন একটা মেয়েকে বিয়ে করো যে সারাজীবন তোমার পাশে থাকবে।
অপূর্ব অশ্রুসজল চোখে তাকিয়ে রইলো হিমির দিকে। তবে হিমি তার দিকে তাকাতে পারলোনা। ছুটে বেরিয়ে গেলো কেবিন থেকে। অপূর্ব চোখ বন্ধ করে নিলো। মনে মনে হিমির বলা কথাগুলো ভাবতে লাগলো, সত্যি ই কি জীবনকে আরেকটা সুযোগ দেওয়া উচিৎ!
____
কেঁটে গেছে আরো এক বছর। তবে সেদিনের পর থেকে দিবা আর অপূর্বর সামনে আসেনি,হয়তো নিজের দোষের শাস্তি সে মেনে নিয়েছে। সে বুঝে গেছে অপূর্ব কখনোই তাকে মেনে নেবে না,তাই আর তাকে বিরক্ত করেনি দিবা। নিজেকেই গুটিয়ে নিয়েছে সে।
আজ অপূর্বর বিয়ে। হ্যা অপূর্ব বিয়ে করছে, খুব সাধারণ একটা মেয়েকে। অপূর্বের মতোই তারও মা বাবা নেই। কাজের সূত্রে এক পাহাড়ি এলাকায় যাওয়া হয়েছিল অপূর্বের,সেখানেই নিশির সঙ্গে পরিচয় তার। নিশি খুব মিশুক একটা মেয়ে, ওর সঙ্গে যেন হিমির অনেকটা মিল খুজে পায় অপূর্ব। হিমির সম্পর্কে সবটাই জানে নিশি, সে হাসিমুখেই সবটা মেনে নিয়েছে। অপূর্ব এবং নিশি দুজনেই মূলত ভালোভাবে বাঁচার জন্য একজন সঙ্গী চায়। অত:পর, অনেক চিন্তা ভাবনা শেষে অপূর্বও নিজেকে আরেকটা সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। হিমিকে ভুলতে পারবেনা সে জানে,তবে নিশিকে নতুনভাবে নিজের মনে জায়গা দেওয়ার চেষ্টা করবে সে।
হিমি-অর্নব ও এসেছে বিয়েতে। অপূর্ব যে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটা জানতে পেরে তারা দুজনেই ভীষণ খুশি হয়েছে। খুব সাধারণভাবেই বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। অপূর্ব এবং নিশির নামমাত্র কিছু আত্মীয় আর বন্ধুরা ছাড়া কেউই নেই।
কাজি সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করেন। নিশিকে কবুল বলতে বলার পর সে কিছুক্ষন চুপ থেকে কবুল বলে দেয়। এবার অপূর্বের পালা,অপূর্বকে কবুল বলতে বলার পর সে পাশ ফিরে হিমির দিকে তাকায়।
হিমি অর্নবের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। অপুর্ব তার দিকে তাকাতেই সে মুচকি হেসে হাত দ্বারা ‘অল দা বেস্ট’ বোঝায়। অপূর্ব সামান্য হেসে নিশির দিকে তাকিয়ে তার হাতের উপর হাত রেখে কবুল বলে দেয়।
হিমিও সকলের সঙ্গে হাসে। তবে নিজের ভিতর এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে তার। নাহ, তার কষ্ট হচ্ছে না বরং সে খুশি হয়েছে। তবুও এই অদ্ভুত অনুভূতির মানে জানা নেই তার, জানতেও চায় না। নিজের হাতে কারোর ছোঁয়া পেয়ে উপরে তাকালো হিমি। অর্নব তার কানের কাছে এসে বলল,
_কষ্ট হচ্ছে?
হিমি ঠোঁটে চওড়া হাসির রেখা টেনে অর্নবের হাতটা আরো শক্ত করে ধরে বলল,
_আপনি আমায় কষ্ট পেতেই দেবেন না।
অপূর্ব অনেক্ষন ধরে সামনের দিকে তাকিয়েই বসে আছে। নিশি সেটা খেয়াল করে তার দিকে কিছুটা এগিয়ে এসে বলল,
_হিমি আপুর কথা মনে পরছে? কষ্ট হচ্ছে তার জন্য?
অপূর্ব নিশির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
_কষ্ট হলেই বা কি? তুমি আছো না! কি,পারবে না আমার সব কষ্ট ভুলিয়ে দিতে?
হাসলো নিশি। অপূর্বর বাহু জড়িয়ে ধরে তার কাধে মাথা রেখে বললো,
_আমিতো তাই চাই অপু.. আপনার প্রথম ভালোবাসা হতে পারনি তো কি হয়েছে? শেষ ঠিকানা হয়ে তো সারাজীবন আপনার পাশে থাকতেই পারি…
#সমাপ্ত
[যারা সম্পূর্ন গল্পটা পড়েছেন তাদের কাছে অনুরোধ রইলো,নিচের লেখাটুকু পরবেন।
গল্পটার মধ্যে আমি কয়েকটা বিষয় তুলে ধরতে চেয়েছি, কতটা পেরেছি জানিনা। প্রথমত আমি ভুল বোঝাবুঝির পরিনতি তুলে ধরতে চেয়েছি। দ্বিতীয়ত, ভালোবাসার কিছু বাস্তবতা তুলে ধরতে চেয়েছি। বাস্তবতা এত সোজা নয় আর জীবন কারোর জন্য থেমে থাকতে পারেনা। বন্ধুত্ব খুব সুন্দর একটা জিনিস তবে এই বন্ধুই মাঝে মাঝে শত্রু হয়ে ধরা দেয়। পরিশেষে, ভাগ্যকে মেনে নিয়ে জীবনে এগিয়ে যেতেই হবে। জীবন একটাই,আর এই জীবনে ভালো থাকার অধিকার সবার আছে। তাই নিজের ভালোটা বুঝে নেওয়াই শ্রেয় বলে আম মনে করি।
এটা আমার লেখা প্রথম গল্প ছিল, আমি যে এতটা রিসপন্স পাবো কখনই ভাবি নি। তার উপর আপনাদের এত সুন্দর মন্তব্য।
গল্পটা যাদের ভালো লেগেছে তারা পারলে দু লাইন রিভিউ দিয়ে যাবেন। আর যাদের ভালো লাগেনি তাদের নিকট আমি ক্ষমাপ্রার্থী। এভাবেই আমার পাশে থাকার অনুরোধ রইলো। ইনশাল্লাহ আবারো নতুন গল্প নিয়ে হাজির হবো। ]
সুন্দর গল্প, গল্পের পরিশেষে লেখা কথাগুলি ও খুব সত্যি।