শেষ ঠিকানা পর্ব ৬

0
137

#শেষ_ঠিকানা
#পর্ব_৬
#মেহরিন_রিম
হসপিটালে বসে আছে হিমি, সঙ্গে তার বাবা এবং হুর ও এসেছে। চেকাপের জন্য তাকে মাসে এক দুবার হসপিটালে আসতেই হয়। সকাল ১১ টার দিকে এসেছে তারা, এখন প্রায় ১ টা বাজে। তবে ডাক্তার ওটিতে থাকায় এতক্ষন ধরে কেবিনের বাহিরে ওয়েট করতে হচ্ছে। হুর এবার বিরক্ত হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
_কতক্ষণ এভাবে বসে থাকবো বলো তো, আর কিছুক্ষন বসে থাকলে আমার কোমর ঠিক ই লক হয়ে যাবে। আপু তোরা থাক,আমি একটু ক্যান্টিনে যাচ্ছি।

হিমি কিছু বলার আগেই হুর সেখান থেকে চলে গেলো। হিমিও অনেকটা বিরক্ত হচ্ছে,একেতো মাথার মধ্যে এতো চিন্তা। এর মধ্যে চেকাপের জন্য আসতেই চায়নি সে,তবে বাবা জোড় করে নিয়ে এসেছে। এখন বসে বসে ওয়েট করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।
হুর মনের সুখে হাটতে হাটতে ক্যান্টিনের দিকে যাচ্ছে,তবে এর মাঝেই তার চোখ পড়ে পাশের ওয়ার্ড এর দিকে। কিছুটা সামনে এগিয়ে গিয়েছিলো সে, মাথার মধ্যে ওয়ার্ড এর চিত্র ভেসে উঠতেই আবার পিছনে গেলো সে। একদম সামনের বেডে থাকা রোগীর প্রেশার চেক করছে একটা ছেলে, হয়তোবা ইন্টার্নি করছে এখানে। ছেলেটিকে দেখেই যেনো মনে মাঝে লাড্ডু ফুটে উঠলো হুরের,নিজের অজান্তেই ক্রাশ নামক বাশ খেয়ে বসলো সে।
গালে হাত দিয়ে মাথা হালকা বাকিয়ে আনমনেই বলে উঠলো,
_হায়য়য়…একটা ছেলে এতটা কিউট কিভাবে হতে পারে!

_এই আপা সরেন তো।
কথাটা বলে হুরকে সামান্য ধাক্কা দিয়েই ওয়ার্ড এ ঢুকলেন একজন আয়া। ধাক্কা খেয়ে হুর পরে যেতে নিলেও নিজেকে সামনে নিলো,রাগী চোখে তাকালো তার দিকে। তবে এতে সেই মহিলার মাঝে কোনো ভাবান্তর দেখা গেলো নাম হুর নিজের চোখ ঘোরাতেই দেখতে পেলো ছেলেটা এদিকেই আসছে। হুট ঝটপট নিজের ঝুটি করা চুলগুলো এক পাশে এনে লাজুক ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রইলো। তবে ছেলেটা আসার আগেই তার সামনে বাধা হয়ে দাড়ালো আরেকটি ছেলে। কাধে হাত রেখে বললো,
_কিরে দোস্ত চলনা আজকে লাঞ্চ এ যাই, পাশেই একটা নিউ রেস্টুরেন্ট হিয়েছে।

ছেলেটা নিচের দিকে তাকিয়ে খানিকটা বাচ্চাদের মতো আচরণ করে বললো,
_কিন্তু বাহিরের খাবার খেলে তো মা বকবে। আমি কালকে মার থেকে পারমিশন নিয়ে আসব কেমন।
কথাটা বলেই স্থান ত্যাগ করলো হুরের সদ্য ক্রাশ খাওয়া ছেলেটি। এদিকে তার কথা শুনে যেন হুরের মনটা বেলুনের মতো ঠুশ করে ফেটে গেলো। ঠোট উল্টে কিছুটা কাঁদোকাঁদো মুখ করে চলে এলো হুর।

এতক্ষনে ডাক্তার চলে এসেছে। হিমিকে যে টেস্ট গুলো দেওয়া হয়েছিলো তার রিপোর্ট চেক করছেন তিনি। রিপোর্ট চেক করা শেষে হিমির কাছে এসে তার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন,
_আমার সাপোর্ট নিয়ে একটু উঠে দাড়ানোর চেষ্টা করো তো।
ডাক্তারের কথা অনুযায়ী হিমি তার সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে চেষ্টা করলো তবে কোনো লাভ হলো। কিছু উঠতে গিয়েও আবার বসে পড়লো সে হতাশার সুরে বললো,-
_পারছিনা তো ডক্টর।

ডাক্তার এবার তাকে আরো অনেকভাবে চেক করতে লাগলো। চেকাপ শেষে নিজের চেয়ারে বসে মানিক সাহেবের উদ্দেশ্যে বললো,
_দেখুন আঙ্কেল,আমি যতটা বুঝতে পারছি হিমি ওর ডান পায়ে কিছুটা বল পাচ্ছে।

মানিক সাহেব উৎসাহিত হয়ে বললেন,
_ও কি আবার হাটতে পারবে বাবা?

_একদম যে ঠিকভাবে হাটতে পারবে তার গ্যারিন্টি আমি দিতে পারছি না। তবে ডান পায়ে যেহেতু একটু হলেও বল পাচ্ছে এটা খুবই ভালো লক্ষন। সম্পূর্ন ঠিকভাবে হাটতে না পারলেও থেরাপির মাধ্যমে অন্তত ক্রাচ এর এর সাহায্য নিয়েও যদি হাটতে পারে সেটাও তো অনেক কিছু। আপনি চিন্তা করবেন না, আমি অনেকটাই আশাবাদী এ বিষয়ে।

___
ডাক্তারের কথা শুনে বাড়ির সকলে খুশিতে পাগল হওয়ার মতো অবস্থা সৃষ্টি হলেও হিমির মাঝে খুব বেশি ভাবান্তর সৃষ্টি হয়নি। তার মাথায় তো অর্নবের দেওয়া সেই শান্ত হুমকির কথা ঘুড়ছে। উদাস মনে বসে ছিলো হিমি, এমন সময় দিবার কল আসে। হিমি ফোনটা হাতে নিয়ে রিসিভ করতেই দিবা বলে ওঠে,
_হ্যালো হিমি।

_বল।

_কি ব্যাপার বল তো,কোনো খোজ খবর ই পাচ্ছিনা তোর।

হিমি বিরক্তির সুরে বললো,
_এমন ভাব করছিস যেনো কিছুই জানিস না তুই।

দিবা এবার উৎসাহিত কণ্ঠে বললো,
_দেখ আমার কাছে তোর জন্য একটা প্লান আছে।

হিমি ভ্রু কুচকে বললো,
_কি প্লান?

_মন দিয়ে শোন,তুই অর্নব ভাইয়াকে বলবি তোর সঙ্গে দেখা করতে। তারপর তাকে প্রশ্ন করবি সে কেনো তোকে বিয়ে করতে চায়,উনি তোকে ভালোবাসে কিনা।

_আমি জিজ্ঞেস করবো!

_হ্যা তুই নয়তো কি আমি জিজ্ঞেস করবো?

_কিন্তু ওনার সামনে গেলেই তো আমার নার্ভাস লাগে।

_দেখ দোস্ত,নার্ভাস হলে চলবে না। এটা তোর পুরো লাইফের বিষয়। তাই আমি যেটা বলছি সেটা কর।

ফোন্টা রেখে দিলো হিমি। নিজেও মনে মনে ভাবলো অর্নবকে আসলেই কিছু প্রশ্ন করা দরকার। অত:পর অর্নবের হোয়াটস অ্যাপ নম্বরে মেসেজ করলো,
_আমি আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাই।

____
ফোনটা হাতে নিতেই হিমির মেসেজ দেখে ঠোটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো অর্নবের। ফোনটা টেবিলের উপর রেখে নিজের চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলো অর্নব। হাসির রেখে টেনে চোখ বন্ধ করে বললো,
_ তুমি আমার হিমপরি, তুমি শুধুমাত্র আমাকেই ভালোবাসবে। আমি জানি, তুমি ঠিক এই বিয়েতে রাজি হয়ে যাবে।

ফোনকলের আওয়াজে চিন্তা ভঙ্গ হলো অর্নবের। বিরক্তির ভাব নিয়ে ফোনটা হাতে নিতেই যেন তার সব বিরক্তি কেটে গেলো। ফোনটা রিসিভ করতে অপর প্রান্তে থাকা ব্যাক্তি বললো,
_আমাকে তো ভুলেই গেলেন বোধহয়।

_আরে কি বলছো,তোমাকে কি করে ভুলে যাই বলো তো। তুমি আমার যে উপকার করেছো, তাতে করে তোমার কাছে তো আমার ঋণী হয়ে থাকা উচিৎ।

_হাহ, ভালোই তো পাম দিতে পারেন।

_আমি সত্যি কথা বলছি, আই এম রিয়েলি গ্রেটফুল টু ইউ।

_ঠিক আছে বুঝলাম, এখন বলুন সবকিছু ঠিকঠাক আছে তো?

_হ্যা,সবই তো ঠিক আছে। তোমার জন্য আমি আমার ভালোবাসার মানুষকে আবারও নিজের করে পাওয়ার সুযোগ পেয়েছি,এবার আমি আর কিছু ভুল হতে দেবোনা।

অপর প্রান্তে থাকা ব্যাক্তি বললো,
_ঠিক আছে তবে আমি এখন রাখি।

কলটা কেটে দিলো সে। চোখে মুখে থাকা মিথ্যে খুশির রেশ মুহূর্তেই কেটে গেলো। আনমনেই বলে উঠলো,
_আপনার মানুষটিকে তো আপনি পেয়ে গেলেন,তবে আমার ভালোবাসার মানুষ? তাকে কি আমি কখনই নিজের করে পাবোনা!

#চলবে
[জানি আজকের পর্বটা ছোট হয়েছে,তার জন্য আমি দুঃখিত। কালকে একটা বড় পর্ব দিবো ইনশাল্লাহ। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here