শেষটা সুন্দর পর্ব ৪১

0
694

#শেষটা_সুন্দর
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
৪১।

রিতার এই মুহুর্তে মেহুলের সাথে কথা বলাটা খুব দরকার। কিন্তু সে তো তার ফোনটাও খুঁজে পাচ্ছে না। পরে অনেকক্ষণ ভেবে তার মনে হলো খালার কাছেও তো ফোন থাকতে পারে, একবার খালার কাছে চাওয়া উচিত। তাই সে আবার রান্না করে যায়। খালাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,

‘খালা, তোমার কাছে কি ফোন আছে?’

খালা বলেন,

‘না খালা।’

রিতা কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,

‘কারো কাছে কি কোনো ফোনও নেই?’

খালা বলে উঠেন,

‘ না খালা, এই বাড়ির কারো কাছে কোন ফোন নাই। এই বাড়ির কোনো কাজের লোকের কাছে ফোন থাহা নিষেধ। সাহেব বারণ করছেন।’

রিতা বিরক্ত হয়ে বলে,

‘আপনার সাহেবের দেখছি সবকিছুতেই সমস্যা। উফ, আমার ফোনটাও কোথায় রেখেছে কে জানে?’

খালা তখন জিজ্ঞেস করলেন,

‘ফোন দিয়া কি আপনার বান্ধবীর লগে কথা কইবেন?’

রিতা অবাক হয়ে চেয়ে বলে,

‘আপনি কী করে জানলেন?’

খালা হেসে বললেন,

‘আমি সব জানি। শুনেন খালা, আপাতত আপনি কারোর লগেই যোগাযোগ করতে পারতেন না। আপনার এখন কাজ হইছে সাহেবের মন গলানো। এই কাজ যত তাড়াতাড়ি করতে পারবেন ততই তাড়াতাড়িই আপনি সব সমস্যার সমাধান পাইয়া যাইবেন। বুঝছেননি?’

রিতা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,

‘কিন্তু, আমি ঐ লোকের মন কীভাবে গলাবো। ঐ লোকটাকে তো আমার সহ্যই হয় না।’

‘সহ্য না হইলেও সহ্য করতে হইব। উনি আপনার শোয়ামি, এডা তো আর ভুললে চলতো না।’

রিতার বিরক্ত হয়ে বলে,

‘তা জানি। আল্লাহ আমার ভাগ্য যে এইভাবে এই লোকের সাথে জুরে দিবে সেটা আমি জীবনে কল্পনাও করিনি।’

‘খালা, মানুষের জীবনে যে কত চমক হয়। আপনি বুঝতেন ও না কীভাবে কী হইয়া যাইব। খালি সব দেখবেন আর চমকাইবেন। এডাই তো জীবন। আমাদের জীবনের এই নিয়ম মানতেই হইব। কিছু করার নাই খালা।’

‘হ্যাঁ, সেটাই। এখন তো সব মেনে নিতেই হবে। যাকে বিষের মতো লাগত এখন থেকে তাকে মধুর মতো ভালোবাসতে হবে। আশ্চর্য জীবন।’

________

‘মেয়ে তো সবদিক দিয়েই ঠিক আছে, খালি নাকটা একটু বোঁচা; তাই না?’

পাশের মহিলাটাও মাথা ঝাঁকায়। আর সেই মুহুর্তেই তাদের সেই কথাটা রাবীরের কানে চলে যায়। সে সবেই বাসায় ঢুকেছে। ড্রয়িং রুমে যে এখন এত মানুষ থাকবে আগে ভাবেনি। আর এসেই এমন একটা কথা শোনা মাত্রই মেজাজ বিগড়ে গেল তার। সামনের সোফায় দেখল মেহুল মাথায় বড়ো ঘোমটা টেনে পুতুলের মতো বসে আছে। আর তার মা সবার সাথে কথা বলছেন আর নাস্তা বিনিময় করছেন। রাবীর চোখ মুখ কুঁচকে সামনে এগিয়ে যায়। নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করেই বলে,

‘মা, আমার ওয়াইফ কোনো পুতুল না যে উনাকে এভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে সবার সামনে প্রদর্শনীতে বসাতে হবে। আর উনাকে দেখার ইচ্ছে সবার আছে বলেই কিন্তু আমি কালকে রিসিপশনটা রেখেছিলাম। আজ এমন বাড়িতে ডেকে এনে হৈ হুল্লোর করার কোনো মানে ছিল না। মেহুল, উঠুন; আমার সাথে রুমে চলুন।’

মেহুল হা করে চেয়ে থাকে। রাবীর ঘুরে আবার সেই মহিলাগুলোর দিকে চেয়ে বলে,

‘সৃষ্টিকর্তা কাউকেই নিঁখুত ভাবে সৃষ্টি করেননি।
সবার মাঝেই কোনো না কোনো খুঁত দিয়েছেন যেন মানুষ অহংকারী হয়ে না যায়। তাই ভবিষ্যতে অন্যকারোর খুঁত বের করার আগে নিজের দিকে তাকাবেন। আপনি আমি কেউই কিন্তু একদম পারফেক্ট মানুষ নই।’

তারপর সে আবার মেহুলের দিকে চেয়ে বলে,

‘কী হলো মেহুল, আপনি এখনো বসে আছেন কেন? আসুন।’

মেহুল তার শাশুড়ি মায়ের দিকে চাইল। শাশুড়ি মা মুখ কালো করে বললেন,

‘যাও।’

মেহুল তখন উঠে রাবীরের পেছন পেছন উপরে চলে যায়। আর তারা যেতেই উপস্থিত মহিলারা নানান কথা বলতে আরম্ভ করেন। একজন রাবীরের মা’কে উদ্দেশ্য করে বললেন,

‘ভাবি, এসব কী? বিয়ে হয়েছে এক বছরও হয়নি, ছেলে দেখছি এখনই বউয়ের আঁচলের তলায় চলে গিয়েছে। আপনার অমন স্ট্রিক্ট ছেলেই যদি এমন বউ পাগল হয় তবে আমাদের ছেলেদের কী অবস্থা হবে। আমার তো রাবীরকে দেখে এখন ছেলে বিয়ে দেওয়ার ইচ্ছেটাই মরে গিয়েছে।’

আরেকজন তখন তাল মিলিয়ে বললেন,

‘হ্যাঁ ভাবি। আর আপনিও কিছু বললেন না কেন? রাবীরের বউ বলে কি আমরা একটু দেখতেও পারব না। এত ইগো ওর? ওর ব্যবহারের কিন্তু আমরা ভীষণ অপমানিত হয়েছি।’

রাবীরের মা জোরপূর্বক হাসলেন। বললেন,

‘কিছু মনে করবেন না। আজকালকার ছেলে তো, একটু তো বউয়ের পাগল হবেই। এটাই তো স্বাভাবিক তাই না। আর আমার ছেলের যথেষ্ট বিবেক বুদ্ধি আছে। ও ওর নিজের বুদ্ধিতেই সবকিছু করে। ওকে নিয়ে আমার কোনো চিন্তা নেই।’

আবার আরেকজন বললেন,

‘তাও ভাবি, ছেলেকে একটু চোখে চোখে রাখবেন। যতদিন পারবেন নিজের আঁচলে বেঁধে রাখবেন। আর শুনেন, ছেলেকে আর ছেলের বউকে বলবেন তাড়াতাড়ি বাচ্চা নিতে। তাতে হবে কী, বাচ্চা হবার পর দুজনেই বাচ্চা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে তখন ছেলের বউ আর ছেলেকে এত সময় দিতে পারবে না। আর ছেলেকে যত কম সময় দিবে ততই আপনার নামে কানপড়াও কম দিবে। তাতে আপনারই লাভ ভাবি। কথাটা ভেবে দেখবেন কিন্তু।’

_______

‘আপনি তো এভাবে না বললেও পারতেন।’

‘কোথায় কীভাবে কথা বলতে হয় সেটা আমি জানি মেহুল।’

‘রেগে যাচ্ছেন কেন? আমি তো মায়ের কথা ভেবেই বলছিলাম।’

‘মা বুঝে। তবে উনার মাথাটা উল্টিয়ে ফেলে এই মহিলাগুলো। যতসব আজগুবি কথাবার্তা বলে। আমার এই মহিলাগুলোকে একদমই পছন্দ না।’

কথা বলেই রাবীর পাঞ্জাবী খুলে একটা টি শার্ট গায়ে দেয়। সেই ফাঁকে মেহুল তার ফর্সা শরীরের খানিক অংশ দেখতে পায়। রাবীরের চোখে চোখ পড়তেই সে মাথা নুইয়ে ফেলে। রাবীর বিছানায় গিয়ে বসে। মিহি সুরে বলে,

‘নিজের হাজবেন্ডকে দেখার মাঝে কোনো অন্যায় নেই। আপনি দেখতে পারেন, আমার কোনো অসুবিধা নেই।’

মেহুল কপাল কুঁচকে বলল,

‘আমি আপনাকে দেখছিলাম না। আর আপনি কিছু খাবেন? শরবত, চা বা পানি?’

‘হ্যাঁ, গলাটা শুকিয়ে গিয়েছে। পিপাসাও লেগেছে খুব।’

‘কী খাবেন? শরবত বানিয়ে আনব।’

রাবীর তার কথা শুনে তার দিকে তাকায়। আশ্চর্য, মেয়েটা সবসময় লাল শাড়ি কেন পরে? আর ঠোঁটে এত কড়া করে লাল লিপস্টিক দিতেই বা কে বলেছে? একটা সাজহীন মুখে ঐ একজোড়া লাল ঠোঁটকে এত কেন মোহনীয় লাগতে হবে? রাবীরের যে পিপাসা বাড়ছে। রাবীরের চোখের দৃষ্টি যেন মেহুল বুঝতে পারে। তাই সে ঢোক গিলে জিজ্ঞেস করে,

‘লেবুর শরবত খাবেন?’

‘আমাকে কাতর করতে আপনার খুব মজা লাগে তাই না?’

মেহুল বুঝল না। সে চেয়ে বলল,

‘মানে?’

রাবীর মিহি সুরে বলে,

‘এক গ্লাস লেবুর শরবতে আপাতত আমার কোনো পিপাসাই মিটবে না। তাই এসবের আর প্রয়োজন নেই।’

মেহুল ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে রাবীরের অপর পাশে বসল। রাবীর হেলান দিয়ে বসে তাকে দেখছে। হুট করেই প্রশ্ন করে,

‘লাল ঠোঁট এত মোহনীয় কেন মেহুল?’

মেহুল লজ্জা পায়। অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলে,

‘কারণ সেই লাল ঠোঁটের মালিক হচ্ছে দ্য গ্রেট রাবীর খানের একমাত্র ওয়াইফ। তাই সেই লাল ঠোঁটকে তো মোহনীয় হতেই হবে, তাই না?’

মেহুলের কথা শুনে রাবীর হাসে। বলে,

‘হ্যাঁ, তাও তো ঠিক। কিন্তু সমস্যা তো অন্য জায়গায়। দ্য গ্রেট রাবীর খানের ওয়াইফ যে এটা বুঝতে পারছে না যে, তার এই লাল ঠোঁট দেখে তার হাজবেন্ডের পিপাসা ক্রমে ক্রমে কেবল বাড়ছেই। এবার এই পিপাসা সে কীভাবে মিটাবে বলুন তো?’

মেহুল ভীষণ লজ্জায় আরো লাল হয়ে উঠে। উঠে দাঁড়িয়ে বলে,

‘আমি আপনার জন্য লেবুর শরবত নিয়ে আসছি। লেবুর শরবত খেলে সব পিপাসা এমনিতেই চলে যাবে।’

এই বলে সে আর দাঁড়ায় না। দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

চলবে….

(গল্পটা কি একঘেয়ে লাগছে?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here