#শূণ্যতার_পূর্ণতা_তুমি
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-০৬
সকালে নাস্তা খেতে বসলে বাবা বলেন,
“সুপ্রভা?কি সিদ্ধান্ত নিয়েছিস আকাশের ব্যাপারে?”
আমি বাবার কথায় চুপ করে থাকি।বাবা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন।আমার হাবভাবে বুঝে ফেলেন আমি এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিই নি।বাবা আবার বলেন,
“মা?আমরা তোকে জোর করবো না।আকাশের বিষয়টা ভাবা একান্তই তোর ব্যাপার।কি করবি,কি করলে ভালো হবে ভেবে দ্যাখ তুই।সময় নে।চিন্তা করিস না।”
মা পাশ থেকে বলে উঠেন,
“আকাশের সাথে কথা বল।ওর মনের অবস্থা টা বুঝ।ছেলেটা তবে অনেক কষ্টে আছে।”
আমি এবারো কোনো কথা বললাম না।মাথাটা হালকা নুইয়ে এলো।তারপর খাওয়া শেষ হলে বিছানা এসে বসি।লম্বা শ্বাস বেরিয়ে এলো।চুপচাপ বসে থাকলাম আবার।ইদানীং আমার নিস্তব্ধতার মধ্য দিয়েই দিনগুলো যায়।আকাশ আমাদের বাসা থেকে ফিরেছে আজ দিন তিনেক হলো,এই তিনদিনে কতটা ওয়ার্ডস প্রকাশ করেছি তা গোনে গোনেও হিসেব করা যাবে।ফোনটা হাতে নিলাম।গতকাল আকাশকে ফেসবুক থেকে আনব্লক করি।ওর প্রোফাইলে ঢুকি।প্রোফাইলে নতুন আর কিছু দেয়নি।সেই বাসাতে থাকতে অফিসের কলিগদের সাথে একটা ছবি আপলোড করেছিল সেটাই শেষ পোস্ট করা।ভাবছি ঘুমাবো।এমন সময় ফোন বেজে উঠে।সুবর্ণা কল করেছে।যাওয়ার পর থেকে সুবর্ণা আমাকে আর কল করেনি।আজকে কল করেছে বিষয়টা কেমন যেন লাগলো।কি বলতে কল করেছে..ভেবে কলটা রিসিভ করি।সুবর্ণা বলে উঠে,
“ভাবী?ভালো আছো তুমি?”
“হ্যাঁ,ভালো।”
সুবর্ণা কিছুটা শব্দ করে এবার শ্বাস ছাড়ে।শ্বাসের কণাতে রাগ প্রকাশ পাচ্ছে কিছুটা।বললো,
“ভাইয়ার সাথে আর কথা বলেছো?ডিসিশন নিয়েছো?সবতো জানলে ভাবী!”
সুবর্ণার কথা শুনে চুপ হয়ে গেলাম!সুবর্ণা আবার বলে,
“ভাবী তুমি বুঝতেছো কতটা কষ্ট দিতেছো ভাইয়াকে?আরেহ ভাইয়া আজ দুইদিন হলো বাসায় নাই।কোথায় আছে তাও জানি না!ভাইয়ার ফোন অফ!ভাইয়ার সব ফ্রেন্ডসদের কল করেছি কেউ কিছু জানে না।তাদের কারো বাসায়ই নাকি যায়নি।মা বাসায় কি অবস্থা করতেছে।অন্য জায়গায় বিয়ে করতে।অন্যমেয়ে আনতে।তোমার সাথে সংসার ভেঙ্গে ফেলতে এসব উল্টাপাল্টা কথা বলে।ভাইয়া এসব তাল ঝালে বাসা থেকেই বেরিয়ে গেছে।ভাইয়ার কোথাও শান্তি নাই।কেনো এত কষ্ট দাও আমার ভাইয়াকে তোমরা!কেনো কষ্ট দাও বলো আমাকে!”
সুবর্ণা কেঁদে দেয়!আমার মনটা আরো দ্বিগুণ বেজার হয়ে যায়।কিছু বলতেও মুখে কথা আসে নি।শুধু ঠোঁট নড়া ছাড়া।সুবর্ণা এভাবে ফোনের মাঝে কল কেঁটে দেয় কিছু না বলে।আমি কিছুক্ষণ ওভাবেই বসে থাকি।বসে থাকার পর তারপর ফোনটা আবার হাতে নিই।ব্লক লিস্টে যাই।আকাশকে ব্লক করেছিলাম আলতো হাতে তা আনব্লক করি।তারপর সেই নাম্বারে কল দিই।কিন্তু শ্বাসটা ভারী হয়ে আসে আমার মুহূর্তে। নাম্বার আসলেই অফ!
———————————————————
রাতটা কিভাবে কেঁটেছে জানি না!বাসায় আর ভালো লাগে নি!বাবাকে বলে সকালে নাস্তা শেষ করে বান্ধবী টয়ার বাসায় যাই।টয়া আমাকে দেখে খুশি হয় খুব।কী থেকে কী দেবে ভেবে পায়না।তারপর হরেক রকমের নাস্তা দুই ঘন্টার মধ্যে বানিয়ে আমার সামনে হাজির করে।টয়ার মা ভারী মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে,
“তা মা?জামাই বাবাজীকে সাথে করে নিয়ে আসতে পারলে না?একটু দেখতাম।টয়ার থেকে তো শুনেছি অনেক সুন্দর তোমার জামাই।ভালে পরিবারেও বিয়ে হয়েছে।”
আমি হাসলাম।জোরপূর্বক হাসলাম।টয়া তালে বলে উঠলো,
“কিরে নিয়ে আসতে পারলি না?”
“নিয়ে আসবো নি পরের বার!”
তারপর কিছুক্ষণ টয়ার বাসায় সময় কাটিয়ে বের হলাম সি.এন.জি স্ট্যান্ডের দিকে!তারপর সি.এন.জি তে উঠে বাসার দিকে রওনা করি।কিছুটা পথ যেতেই সি.এন.জি ব্রেক কষে খুব জোরে!আর মাথাটা বের করে সামনে তাকিয়ে বকতে শুরু করে,
“এই ব্যাটা দেখে শুনে চলতে পারিস না!যেচে এসে গাড়ির সামনে পড়িস পরে আবার আঙ্গুল তুলে ড্রাইভারের দোষ দিস!চোখ, কান কই থাকে তোদের?অনার্য কোথাকার!দেখছেন আপা?কীভাবে এসে আমার গাড়ির উপর পড়লো!মন চায় হাড্ডি-গুড্ডি গুঁড়া করে হাসপাতালে নিয়ে শোয়াইয়ে রাখতে।তাহলে শিক্ষা হবে এদের!”
ড্রাইভারের চিল্লাপাল্লায় আশপাশে মানুষ জড়ো হয়!ঠিক তখন সেই লোকটি পেছনে ফিরে।একটা দৃষ্টি দিতেই আমার ভেতরটা ধপ করে জ্বলে উঠে।আকাশ!আশপাশে মানুষগুলার চিল্লাপাল্লা।আকাশকে আঙ্গুল তুলে বলতেছে,
“এই ব্যাটা এখানে তো ড্রাইভারের দোষ না!এখন তো মরে চিৎ হয়ে থাকতিস ব্যাটা!ভাই আপনি যান!এরে আমরা দেখি!পাবলিক রাস্তায় মাঝঝানে হাঁটবে আর ড্রাইভারের দোষ দেবে এটাতো হয়না!”
ঠিক তখন আকাশ বলে।অত্যন্ত ছোট গলায়,
“দ্যাখেন আমি উনার দোষ দিই নি।আমার খেয়াল ছিলনা সেদিকে।”
এতটুকুই ছিল আকাশের কথাবার্তা। সবাই আকাশের কথা শুনে হাসে।হাসিতে বুঝাচ্ছে-বাচ্চাদের মতন কথা বলতেছে!ড্রাইভার গাড়ি আবার স্টার্ট করবে আমি নেমে গেলাম গাড়ি থেকে সাথে সাথে,
“এই মেয়ে যাবা না?”
আমি সোঁজা হেঁটে আকাশের দিকে তাকালাম।চোখ পানিতে ভিঁজে গেল আমার!এই দুই দিনে কি অবস্থা তার!চুল উসকোখুসকো।চামড়া রোগা!চোখমুখ নিস্তেজতা!বললাম,
“আপনি বাসায় যাচ্ছেন না কেনো?বাইরপ কি করতেছেন আপনি?”
আকাশ আমার কথার জবাব দিতে চাইলো না!আমাকে পাশ কেঁটে চলে যেতে চাইলো।আমি সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম আকাশের। আশপাশের সবাই অবাক।সবাই বলে,
“এই মেয়ে?এই ছেলে আধ পাগলা তোমার আবার কি হয়?”
কারো কোনো কথাই কানে আসছে না যেন।আকাশকে বললাম,
“কোথায় যাচ্ছেন আপনি?শুনতে পাচ্ছেন আমার কথা?”
আকাশ এবার বললো,
“কি শুনবো আর!কারো কথাই শোনার ইচ্ছে নেই আমার!”
এ বলে আবার পা বাড়ায়।আমি আকাশের পেছন পেছন ছুটি। ড্রাইভার পেছন থেকে ভাড়ার জন্যে চিল্লাপাল্লা করতে থাকে,
“এই মাইয়া যতটুকু আসছো,ততটুকু পর্যন্ত আমার ভাড়া দিয়ে তারপর যাও!”
আমি তাড়াতাড়ি এসে আবার ড্রাইভারের টাকাটা দিয়ে,আবার আকাশের পিছু নিলাম,
“শুনুন?এসব কি করতেছেন আপনি?কি করতেছেন!?লোকজন কিসব বলতেছে!বাসায় ফিরে যান।আপনার কি অবস্থা হয়েছে আপনি দেখেছেন একবার নিজেকে!এইরকম ভালো না।মানুষ পাগল বলে!”
আকাশ এবার আমার দিকে শান্ত চোখে তাকায়।তবে শান্ত চোখের মাঝে তাচ্ছিল্যতা ভাব ফুঁটে ওঠে।আমি মাথা নুইয়ে ফেলি সাথে সাথে।আকাশ যেন আমাকে কিছু বলতে যেয়েও থেমে গেল।সেও চুপচাপ,এখন আমিও।কিছুক্ষণ এভাবে নিরবতার পর আকাশ বলে,
“বাসায় চলে যাও এবার।সন্ধা হয়ে গেছে।”
খুবই শান্ত ছিল কথাটা। আমি চুপ করেই রইলাম।আকাশ আবার বললো,
“চুপ করে আছো যে?সি.এন.জি ডাকি।থাকো এখানে।”
এ বলে আকাশ পা বাড়ায় ডান দিকে।ঠিক তখন আমি আকাশের হাত ধরে ফেলি।আকাশ দাঁড়িয়ে যায়।আর আকাশ হাতের দিকে তাকায় অবাক দৃষ্টিতে।কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে বলে উঠি,
“আপনিও যাবেন আমার সাথে।”
“আমি যাবো না।তুমি যাও।রাত নামলে আবার সমস্যা।”
বলতে সামনে একটা সি.এন.জি পেয়ে যায়,
“এই মামা দাঁড়ান!”
সি.এন.জি ড্রাইভার সাথে সাথে আকাশের কথার আওয়াজ পেয়ে সি.এন.জি থামায়।আমি সি.এন.জি ড্রাইভারের দিকে তাকিয়ে এবার বলি,
“জ্বী,মামা…এবার আপনি আমাকে এবং আমার জামাইকে আমার শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছে দিন।”
আকাশের এতক্ষণের বিস্ময়তা এবার যেন আকাশ ছুঁয়ে যায়!আর আমি নিচের দিকে তাকিয়ে মুখের সামনে হাত এনে কেনজানি মিটমিট করে হাসতে থাকি!
চলবে……