#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_৩২ (অন্তিম পর্ব)
#অধির_রায়
কান্না করতে করতে নিয়তি চোখ মুখ কালো হয়ে গেছে৷ নিয়তির দিকে চোখ তুলে তাকানো যাচ্ছে না৷ একদিন এক রাত না খাওয়াতে একদম ভেঙে পড়েছে৷
নির্বণ সূর্যদেবকে প্রমাণ জানিয়ে সিদ্ধান্ত নেয় “সে কখনও নিয়তির ক্ষতি হতে দিবে না৷ আমি আমার সন্তান স্ত্রীর কোন ক্ষতি হতে দিব না৷” নির্বণ ঠিক করে নেয় সে নিয়তি এখন একা ছাড়বে না৷ সব সময় নিয়তির পাশে ছায়া হয়ে থাকবে৷
নিয়তি চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে সারা রুম বাহারি রকমের ফল দিয়ে ভর্তি৷ রুমের মাঝে দু’টাে নিউ ফ্রিজ।
— নিয়তি চকিত হয়ে, ” এসব কি, রুম ফল দিয়ে ভর্তি কোন?”
— নির্বণ নিয়তির পাশে বসে, ” এসব কিছুই না৷ তুমি সব সময় ফল খাবে৷ আমি তোমার বা আমাদের বেবির কোন ক্ষতি হতে দিব না৷”
— কিন্তু আমি এত ফল কিভাবে খাবো?
— তোমাকে খেতেই হবে৷ তোমার স্বাস্থ্যের সাথে আমাদের সন্তানেও খেয়াল তোমাকে রাখতে হবে৷ আমি ডক্টরের সাথে কথা বলে জানতে পারি তুমি রক্তশূন্যতায় ভোগছো৷ তোমাকে আমি কিছুতেই অসুস্থ হতে দিব না৷”
— কিন্তু এসবের কোন দরকার নেই৷
— কোন কথা নয়৷ আমি যা করতে বলবো, আজ থেকে তাই করতে হবে৷ আমার কথামতো তোমাকে চলতে হবে৷ আমি দিনকে রাত বললে রাতই হবে৷
নিয়তি মনে মনে বলে উঠে, ” কি আমার মহাগুরু এসেছেন, তার কথা মতো নিয়তি চলবে? নিয়তি কারো কথামতে চলে না৷”
— নির্বন নিয়তিকে গালে টুপ করে একটা লাভ ব্রাইট দিয়ে, ” তোমার মাথা থেকে বাজে চিন্তা ঝেড়ে ফেলে দাও৷ এখন তোমাকে কিছু চিন্তা করতে হবে না।”
— নিয়তি কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে নির্বণের হাত চেপে ধরে বলে উঠে, ” আপনি আমার বেবিকে এবর্শনের জন্য কোন পরিকল্পনা করছেন না৷”
— নির্বণ নিয়তিকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে, ” আমাকে দেখে তোমার তাই মনে হয়৷ আমি তোমার কোন ক্ষতি হতে দিব না৷”
— নিয়তি কান্না করে, ” আমাকে কথা দেন আমাদের সন্তানকে আপনি কখনও অবহেলা করবেন না৷ যদি আমি কোনদিন এই পৃথিবীতে না থাকি৷”
— নিয়তির কথা নির্বণের বুকের তীরের মতো লাগে৷ নির্বণ কাঁপা কাঁপা ভাঙা গলায় বলে উঠে, ” আমি তোমার কোন ক্ষতি হতে দিব না৷ আমি থাকতে তোমাকে স্বয়ং যমরাজ আমার কাছ থেকে তোমাকে কেঁড়ে নিতে পারবেন না৷ আমি তোমার ঢাল হয়ে থাকবো৷”
— নির্বণের হাত চেপে ধরে, ” আর আমাদের সন্তান৷ আমি কখনও আমার সন্তানের গায়ে ফুলের টোকা পড়তে দিব না৷ নিজের জীবন উৎসর্গ করে হলেও আমি আমার সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখবো।”
— নিয়তির চোখের জল মুছে দিয়ে, ” আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি কেউ তোমাকে এবর্শনের জন্য জোর করবে না৷ আমি আমার সন্তানের কোন ক্ষতি হতে দিব না৷ প্লিজ সুইটহার্ট এবার একটু হাসো৷”
নির্বণের ভরসা পেয়ে নিয়তি মুচকি হাসে৷ নির্বণ মুচকি হেঁসে বলে উঠে, ” সরি সুইটহার্ট যদি আমাকে আমাদের সন্তান আর তোমার মাঝে যেকোন একটা বেছে নিতে বললে আমি তোমাকে বেছে নিব৷”
________
নির্বণ নিয়তির সব দায়িত্ব নিয়ে মিজ হাতে খাইয়ে দেয়৷ নিয়তির দেখাশোনা করার জন্য আলাদাভাবে দুইটা নার্স রেখে দিয়েছেন৷ নিয়তি প্রায় প্রতি ১০ দিন পর পর চেকআপ করেন৷ নিয়তি এখন আগের থেকে অনেকটা সুস্থ৷
নিয়তি পেটে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে নির্বণের বাচ্চা। নিয়তি নির্বণ এই বাড়ি এখন মাতিয়ে রাখে৷ নিয়তি রাতে হুট করেই নির্বণের হাত চেপে ধরে৷
— নির্বণ তড়িঘড়ি করে বলে উঠে, ” নিয়তি তোমার কি হয়েছে? আমাকে বল তোমার কোথায় কষ্ট হচ্ছে?”
নিয়তি নির্বণের দিকে তাকিয়ে নির্বণের হাত অনেক জোরে চেপে ধরে আছে৷ নির্বণের হাতে মিয়তির নখ ঢুকে যাচ্ছে৷ নির্বণ তবুও নিজেকে শান্ত রেখেছে৷
— নিয়তিকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে, ” কি হলো নিয়তি এভাবে ভয় পেয়ে আছো কোন?”
— নিয়তি কান্না করে দিয়ে, ” আমি মনে হয় আর বাঁচবো না৷ আমার খুব কষ্ট হয় যখন আমার পেটে বেবি নাড়াচাড়া করে৷ আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনা।”
— প্লিজ নিয়তি এমন কথা বলো না৷ সৃষ্টি কর্তা তোমার সাথে আছে৷ তিনি তোমার কিছু হতে দিবে না৷
— নিয়তি নির্বণকে জড়িয়ে ধরে, ” আমাকে কথা দেন আমার কিছু হলে আমার বাচ্চাকে কোনদিন অবহেলা করবেন না৷ তার মাথা থেকে বাবার ছায়া কেঁড়ে নিবেন না৷”
— নির্বণ আধো আধো চোখ থেকে নোনাপানি ফেলে বলে উঠে, ” আমি তোমার কিছু হতে দিব না৷ আমি তোমার আর বেবির দুই জনের মাঝে কারো কোন ক্ষতি হতো দিব না৷”
নিয়তি ঘাড়ে গরম জলের স্পর্শ পেয়ে বলে উঠে, ” আপনি কান্না করছেন কেন? আমি আমার সাহস৷ আপনি এভানে ভেঙে ফেললে আমি নিজে কিভাবে শক্তি পাবো?”
— নির্বণ মুচকি হেঁসে, ” এই দেখো আমি চোখের জল মুছে নিয়েছি৷ আর কখনও কান্না করবো না৷ তুমি আমাকে কথা দাও! কখনও বাজে চিন্তা মাথায় নিয়ে আসবে না৷”
— নির্বণের হাত ধরে, ” আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি৷ আর কোনদিন বাজে চিন্তা মাথায় নিয়ে আসবো না৷ এবার একটু হাসেন৷”
নির্বণ নিয়তিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে৷ যেন নিয়তি কোন কিছুতে কষ্ট না পায়৷
_________
সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না৷ নদীর জলের মতো বয়ে যেতে থাকে৷ এভানে পার হয়ে যায় নিয়তি নির্বণের জীবন৷ নিয়তি সকলের সাথে বসে কথা বলছে৷ ডক্টরের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী এখনো দুইদিন বাকি আছে।
হঠাৎ করেই মিয়তির ল্যাভার পেইন উঠে৷ নিয়তি চিৎকার করে বলে উঠে, ” মা আমার ভীষণ ব্যথা করছে।”
নিয়তি কথা বুঝতে পেয়ে নিয়তিকে সাথে সাথে হসপিটালে নিয়ে চলে আসে৷ ডক্টর কিছু বন্ডের ফাইল পূরণ করার জন্য তাদের কাছে আসে৷
— ডক্টর বলে উঠেন, ” আমি আপনাদের অনেক আগেই বলেছিলাম এবর্শন করাতে৷ এখন আপনারা কাকে বাঁচাবেন৷ সন্তান নাকি মা৷”
— নির্বণ পিছন থেকে বলে উঠে, ” ডক্টর নিয়তি বাঁচিয়ে দেন৷ নিয়তিকে ছাড়া আমি থাকতে পারব না।”
— ডক্টর নির্বণের দিকে তাকিয়ে, ” তাহলে প্রচুর ব্লাড প্রয়োজন হবে। আপনারা কি ব্লাডের ব্যবস্থা করেছেন?”
— নিয়তির বাবা বলে উঠেন, ” আমি আমার মেয়েকে রক্ত দিব৷ আমার আর নিয়তি রক্তের গ্রুপ এক। আমাদের দুইজনের রক্তের গ্রুপ (O+).”
— নির্বণ নিয়তির বাবার সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠে, ” না বাবা তার দরকার পড়বে না৷ আমি ব্লাডের ব্যবস্থা করে রেখেছি৷”
কই তোমরা আসো।
নির্বণের ডাক শুনে নির্বণের তিনটা ফ্রেন্ড আসে। ডক্টরের সাথে তারা চলে যায়৷
অপারেশনের লাল লাইট অন হতেই সকলের মাঝে চিন্তার উত্তেজনা উঠে যায়। নির্বণ সেখান থেকে মন্দিরে চলে আসে৷
ইশ্বরের কাছে নিয়তির জন্য প্রার্থনা করে৷ নির্বণ ইশ্বরের কাছে কান্না করতে করতে বলে উঠে, ” হ্যা, সৃষ্টিকর্তা। আপনি আমার নিয়তিকে বাঁচিয়ে দেন৷ আমি এই পৃথিবীতে আর কিছু চাইনা৷ আমি কোনদিন আপনর কাছে হাত পেতে কিছুই চাইনি৷ আজ আপনার কাছে এসেছে আপনার বান্দা৷ আপনার বান্দাকে ফিরিয়ে দিবেন না৷ নিয়তিকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না৷ আমার নিয়তিকে যদি নিয়ে যান৷ আমাকে নিয়ে যেতে হবে৷”
_______
ডক্টর বেরিয়ে আসলেই সবাই ডক্টরকে ঘিরে ধরে৷ সকলের মাঝে টান টান উত্তেজনা। কিন্তু নির্বণ এক ধ্যানে চেয়ারে বসে আছে৷ যেন জীবন্ত একটা লাশ হয়ে গেছে৷
— নির্বণের মা কান্না জনিত কন্ঠে বলে উঠেন, ” আমার নিয়তি ঠিক আছে তো? ডক্টর আমরা বেবি চাইনা৷ আপনি আমার মেয়েকে ঠিক করে দেন৷”
— ডক্টর হাসিমুখে বলে উঠেন, ” চিন্তার কোন কারণ নেই৷ আউট অফ ডেঞ্জার। ইশ্বর আপনাদের সহায় ছিল৷ মা ও সন্তান উভয়েই ভালো আছে৷”
সকলের মুখে হাসি৷ নির্বণ দৌড়ে এসে ডক্টরের হাত ধরে, ” আমি কি নিয়তির সাথে দেখা করতে পারি৷ প্লিজ ডক্টর আমাকে একটু দেখা করতে দেন৷”
— সরি মি. নির্বণ চৌধুরী। আমরা এখনই কাউকে এলাউ করবো না৷ তবে আপনাদের জন্য খুব ভালো খবর আছে৷”
— নির্বণ চকিত হয়ে, ” কি খবর ডক্টর! নিয়তির কিছু হয়নি তো?”
— ডক্টর মুচকি হেঁসে, ” আপনার স্ত্রীর টুইন বেবি হয়েছে৷ একটা ছেলে একটা মেয়ে। বাচ্চাদের সাথে আপনারা দেখা করতে পারেন৷”
ডক্টর চলে যেতেই নার্স সন্তান দু’টোকে নির্বণের হাতে দিয়ে যায়৷ নির্বণ দুই হাত দিয়ে নিজের ছেলে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেন৷ যাকে বলে আনন্দের অশ্রু।
নির্বণ তাদের সন্তানকে তার মা আর নিয়তির বাবার কাছে দিয়ে সে নিয়তির সাথে দেখা করতে যায়। নিয়তির এই মাত্র জ্ঞান ফিরেছে৷ নিয়তির অবুঝ চোখ দু’টো শুধু পরিচিত কারো খুঁজ করছে। নির্বণকে দেখে ঠোঁটে মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে।
নির্বণ নিয়তির হাত ধরে পাশে বসে। নিয়তি টলমল চোখে তাকিয়ে বলে, ” আমার বেবি কই? প্লিজ আমি একটু আমার সন্তানকে দেখতে চাই৷”
— নির্বণ নিয়তির হাত বুকে নিয়ে, ” তারা একদম ঠিক আছে৷ আমি বলেছিলাম না কারো কোন ক্ষতি হতে দিব না।”
— মির্বণ চকিত হয়ে, ” তারা মানে কি?”
— তারা মানে আমাদের টুইন বেবি হয়েছ। একটা ছেলে একটা মেয়ে। ইশ্বর আমাদের মনের আশা পূরণ করেছে৷ আমি তাদেরকে তোমার কাছে নিয়ে আসছি৷
পাতা উল্টো দেখো, একটা গল্প লেখা
কিছু জানা কাহিনি, কিছু কিছু অজানা
গোধূলি বেলা কনে দেখার আলোতে
উলু সানাই এ সাত পাকে বাঁধে যে৷
ছবির মতো ছোট ঘরে, বরণ ডালায় চৌকাঠে সে৷
নির্বণ আর নিয়তি তাদের বেবির নাম আগেই ঠিক করে রেখেছিল। নিধি আর নিহানকে নির্বণ নিয়তির কাছে দেয়৷ নিয়তির একটু কষ্ট হলেও নিধি & নিহানের কপোলে ভালোবাসার পরশ একে দেয়৷ নির্বণও তাদের কপালে ভালোবাসার পরশ একে দেয়।
____________
সময় চলে যায় স্রোতের মতো। কারো জন্য অপেক্ষা করে না৷ দেখতে দেখতে ছয় বছর পার হয়ে গেছে। নিয়তির বাবা এই সময়ের মাঝে গত হয়ে গেছেন৷ ছোঁয়ার মা তাদের গ্রামের বাড়ি চলে এসেছেন৷ ছোঁয়ার কাকার ছেলে ছোঁয়ার মাকে নিয়ে চলে এসেছে৷
নিয়তি, নির্বণ, নির্বণের মা ডাইনিং রুমে বসে আছে৷ নিধি নিহানকে দৌড়াচ্ছে।
— নিধি ক্ষেপে বলে উঠে, ” দাঁড়া নিহান৷ এখন না দাঁড়ালে তোর সাথে কথা নেই৷”
— নিহান বলে উঠে, ” তুই স্বীকার কর তুই হার মেনে নিয়েছিস৷”
— নিধি মুখ গোমড়া করে চলে আসতে নিলেই নিহান নিধির সামনে এসে কান ধরে, ” প্লিজ রাগ করিস না৷ আমি আমার সব চকলেট তোকে দিয়ে দিব৷”
— নিধি মুচকি হেঁসে, ” তুই কান ধরে উঠ বস কর৷ তাহলে তোকে ক্ষমা করে দিব৷”
নিধির কথামতো নিহান কান ধরে উঠ বস শুরু করে৷ নিধি বলে উঠে, ” এই কুম্ভকর্ণ হাত বাড়া।”
নিহান হাত বাড়ালে নিধি নিহানের হাতে রাখি পড়িয়ে দেয়৷” নিহান তার সব থেকে প্রিয় ডল নিধিকে গিফট করে৷ নিধি খুশিতে নিহানকে জড়িয়ে ধরে৷
— নিধি আনন্দের সাথে বলে উঠে, ” লাভ ইউ দাদা৷” আমার কথা না শুনলে তোকে আর কোনদিন রাখি পড়াবো না৷”
— ওকে। এখন থেকে তোর কথা শুনেই চলবো৷
— চল গ্রেনির কাছে।
নিধি নিহান নির্বণের মাকে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে। নিধি তার গ্রেনির কোলে মাথা রাখে৷ নিধির সাথে সাথে নিহানও মাথা রাখে৷ নিধি একটা গান ধরে৷ যা কেউ বিশ্বাস করতে পারেনি৷
ভাই সাথী মোর কত না আপন
নেয় ভুলে যাওয়ার কোন কারণ৷ (!!)
মনে মনে কবু দেবনা তো দুঃখ
হাসাবে তোমায় সারা জীবন। (!!)
রাখি বাঁধলে বোন রাখনে মান৷(!!)
“”””””” রাখি বন্ধন “””””'””
আনন্দ উল্লাসের সাথে মেতে উঠে সবাই৷ ভাই বোনের বন্ধন আত্মার বন্ধন৷
— নির্বণ নিয়তিকে চোখ টিপল দিয়ে বলে উঠে, ” হালকা আঁধার দিচ্ছে ঘিরে। আবছা আলো নিচ্ছে ঘিরে।”
— নিয়তি নির্বণের বুকে মাথা রেখে, ” অল্প করে হোক না শুরু ভালোবাসা এখনো ভীরু৷”
অসমাপ্ত