#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_০৫
#অধির_রায়
নিয়তির ব্যথার জন্য পা ফেলতে পারছে না৷ তবুও কষ্ট করে পা ফেলার চেষ্টা করছে। ধীর পায়ে ওয়াসরুমের দিকে পা বাড়াতেই নিয়তি শূন্যে ভাসতে থাকে।
— নিয়তি চিৎকার করতে নিলেই নির্বণ বলে উঠে, “স্টপ! একটা কথাও বলবে না৷ হাঁটতে পারছে না মহারানী তাও হাঁটার চেষ্টা করছে৷ ”
— আপনি এখনো জেগে আছেন। আর আপনি হুট করেই ভুতের মতো আমাকে কোলে তুলে নিলেন কেন?
— হাঁটতে পারছো না সেদিকে তোমার কি কোন খেয়াল আছে? নিজের দিকে এভার একটু খেয়াল রাখো।
— আমাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না৷ আমার কিছু হবে না৷ এর থেকে কত বড় আঘাত পেয়েছি তখন কিছু হয়নি৷ এখন আবার কি হবে?
— কথায় আছে না ” ভাঙবে ঠিক মচকাবে না৷” আমি তোমাকে ওয়াসরুমে দিয়ে আসছি৷
— এই এই না৷ নামান আমাকে। আপনি আমার ওয়াসরুমে যাবেন৷ আমি ওয়াসরুমে যাব না৷ আপনিই যান ওয়াসরুমে।
— ওকে ফাইন৷ আমারও কোন ইচ্ছা তোমার মতো মোটুকে কোলে তুলে নিতে।
— আপনার উপর চাঁদ ভেঙে পড়বে৷ আমার ভর মাত্র ৫৬ কেজি৷ আমাকে মোটু বানিয়ে দিলেন৷ আমি এখনো একটা নিষ্পাপ শিশু।
— চোখ বড় করে, ” তুমি শিশু৷ মিস নিয়তি তুমি শিশু নয়৷ তোমাকে বুড়ী শিশু বলতে হবে।”
— নিয়তি নির্বণের বুকে কামড়ে দিয়ে ” ওই ব্যাটা আপনাকে আমি কোলে নিতে বলেছি৷ নামান আমাকে৷”
— নির্বণ ক্ষেপে বলে উঠে, ” তোমার মতো মেয়েদের সাহায্য করাটাই আমার ভুল।”
নির্বণ নিয়তিকে ছেড়ে দেয়৷ সাথে সাথে নিয়তি ফ্লোরে পড়ে যায়। নিয়তি ভাবতে পারেনি নির্বণ তাকে ফেলে দিবে৷
— নিয়তি কোমরে হাত দিয়ে, “ও মাগো ও বাবা গো আমার কোমর ভেঙে গেছে৷ তোমাদের মেয়ে পঙ্গুত্ব হয়ে গেছে৷ আর কেউ তোমাদের মেয়েকে বিয়ে করবে না৷”
— চেঁচিয়ে বলে উঠে, “সাট আপ। এত রাতে তোমার নাটক না করলে হয় না৷” সব সময় ড্রামা নিয়ে থাকে৷ একটা ড্রামাবাজ মেয়ে।
— আপনি জানেন, “আমার কোমর ভেঙে গেছে৷” একে তো আমি ঠিকভাবে হাঁটতে পারছি না৷ তার উপর কোমরে ভেঙে গেছে৷
নির্বণ নিয়তি কোমরে হাত রেখে দেখার চেষ্টা করে৷ নিয়তি কোমরে ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেয়ে নির্বণের শার্ট খাঁমচে ধরে। নির্বণ নিয়তির কোমরে হাত দিয়ে নিয়তিকে কোলে তুলে নেয়৷ নিয়তি চোখ বন্ধ করে নির্বণের গলা জড়িয়ে ধরে৷ এটা ভেবে যে আবার ফেলে দিবে না তো।
নির্বণ নিয়তিকে কোলে করে ওয়াসরুমে নামিয়ে দিয়ে আসে৷ আসার সময় নিয়তি ওয়াসরুমের দরজা বন্ধ করতে নিলেই নির্বণ পা দিয়ে তা আটকাতে বাঁধা দেয়৷
— নিয়তি শুকনো গলায় বলে উঠে, “আপনি দরজা বন্ধ করতে দেন না কেন? আপনার সমস্যা কি?”
— ব্রু নাচিয়ে বলে উঠে, ” আমি বাহিরে আছি৷ দরজা বন্ধ করতে হবে না৷ তোমার কাজ শেষ না হওয়া অব্দি আমি এখানেই আছি৷ ভিতরে যাব না৷ এইজন্য তোমাকে আমি আটকাচ্ছি যেন কোন সমস্যা হলে সাহায্য করতে পারি৷”
নিয়তি বাধ্য মেয়ের মতো নির্বণের কথা মেনে নেয়। নির্বণ ওয়াসরুমের বাহিরে নিয়তির জন্য অপেক্ষা করছে৷ নিয়তি ভাবতেই পারছে না নির্বণ তার জন্য এত কিছু করবে। নিয়তি ভেবে নিয়েছিল নির্বণ বাহিরে নেই৷ হেঁটে চলে যেতে নিলেই নির্বণ চোখ পাকিয়ে সামনে দাঁড়ায়।
— ক্ষেপে বলে উঠে, ” এই মেয়ে তুমি কি একবার কিছু বললে বুঝতে পার না৷ আমি কতবার বললাম আমি বাহিরে তোমার জন্য ওয়েট করছি৷”
— আসলে স্যার আমি বুঝতে পারিনি৷ আমি ভেবেছিলাম আপনি চলে এসেছেন৷
নিয়তির উপর রাগ দেখিয়ে নিয়তিকে কোলে তুলে নেয় নির্বণ। নিয়তিকে বিছানায় শুয়ে দেয়৷ নিয়তির গায়ের উপর কম্বল দিয়ে দেয়।
— নিয়তি কিছু বলতে নিলেই নির্বণ থামিয়ে বলে উঠে, “যদি মুখ থেকে একটা কথা বের হয় কোমর যতটা ভালো আছে ততটাও ভালো থাকবে না৷”
নিয়তি ভয় পেয়ে কম্বল চোখে মুখে দিয়ে শুয়ে পড়ে৷ নির্বণ সোফায় এসে নিয়তির দিকে মুখ করে শুয়ে পড়ে৷ নিয়তি চোখ মুখ থেকে কম্বল সরিয়ে নিয়ে ভাবতে শুরু করে।
” স্যার আপনি সব সময় মানুষের ভালো চেয়ে এসেছেন৷ কিন্তু নিজের দিকটা একবারও ভেবে দেখেছেন৷ নিজের কষ্ট কাউকে বুঝতে দেন না৷ আপনি সব সময় অন্যের খেয়াল রাখেন৷ অন্যের চাওয়া পাওয়া গুরুত্ব দেন৷ আপনার মনটা ভীষণ ভালো।
নিয়তি ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ে জানা নেই৷ সকাল বেলা ঘুম ভাঙে নির্বণের ডাকে৷ নির্বণ নিয়তির জন্য চা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
— নিয়তি হতদন্ড হয়ে উঠতে নিলে নির্বণ বলে উঠে, ” একদম উঠতে হবে না৷ আমি তোমার জন্য চা করে নিয়ে এসেছি৷ নিজ হাতে চা করে এনেছি।”
— আপনি আমার জন্য চা করে এনেছেন৷ আই কান্ড বিলিভ দিস।
— কেন আমি চা বানাতে পারি না৷ আমি অনেক ভালো চা বানাতে পারি৷ খেয়ে দেখতে পারো৷ আর হ্যাঁ তোমার বিছানা থেকে আজ উঠতে হবে না৷ তোমার সব কাজ আমি করে দিব৷ চা খেয়ে নাও ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে৷
নিয়তি কোন কথা না বাড়িয়ে চা নিয়ে খেতে শুরু করে৷ চা মুখে দিয়েই ফেলে দিতে চাই৷ কিন্তু কি মনে করে ফেলে দেয় না৷ চায়ে চিনির পরিবর্তে লবণ দেওয়া হয়েছে৷ লবন চা বলতে নিয়েও বলল না৷
— নিয়তি কোমল কন্ঠে বলে উঠে, ” স্যার প্লিজ একবার দেখে আসেন মা ঘুম থেকে উঠছে কি না৷”
— ওকে আমি দেখে আসছি। তুমি চা খেয়ে কাপ হাতেই রাখবে। একদম নিচে নামার চেষ্টা করবে না৷
নিয়তি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে দেয়৷ সে মাটিতে পা ফেলবে না৷ নির্বণ রুম থেকে চলে যেতেই নিয়তি চা বেসিনে ফেলে দিয়ে আসে৷ নির্বণ এসে দেখে নিয়তি একই ভাবে আধ অবস্থায় শুয়ে আছে৷
— নিয়তি বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টিয়ে বলে উঠে, ” প্লিজ স্যার আমাকে মাটিতে নামার অনুমতি দেন৷ আমি মার কাছে যাব৷ মার কাছে না গেলে মা কি ভাববে বলেন না৷”
নির্বণ নিয়তির দিকে একবার তাকিয়ে নিয়তির হাত থেকে চায়ের কাপ নিয়ে রুমের বাহিরে চলে আসে৷ নিয়তি মন খারাপ করে বিছানা থেকে উঠে পড়ে৷
— নিয়তি জোরে জোরে বলে উঠে, ” আমিও দেখে নিব নিয়তিকে আটকায় কে? নিয়তি কারো উপদেশ মানে না৷ নিয়তি একাই একশো দোকানে তিনশো। সরি দু’শো।
_________
— নির্বণের মা চিন্তিত কন্ঠে বলে উঠে, ” একি নিয়তির কি হয়েছে? এভাবে তুমি কোলে নিয়ে আসলে যে।”
— নির্বণ শান্ত গলায় বলে উঠে, ” উনি তো নিয়তি। উনার আবার কি হবে? রাখে কখনো নিজের খেয়াল। গতকাল রাতে চা ফেলে দিয়েছে নিজের পায়ে।”
— একি কিভাবে? এমন একটা ঘটনা ঘটে গেছে আর তুমি আমাকে এখন জানাচ্ছো?
— কি করব আর? তোমাকে টেনশনে রাখতে চাইনি৷ আমি তুফান মেইলকে বলেছি যে, ” আজ রুমে বসে বিশ্বাম নাও৷ কে শুনে কার কথা? উনি তো এখানেই এসেই ছাড়বে। (নির্বণ)
— নির্বণের মা মুচকি হেঁসে, ” আমার সোনা মা আমাকে বুঝি মিস করছিলে৷” আমি জানতাম আমার সোনা মা আমাকে খুব মিস করে৷
— নির্বণ দৌড়ে দাঁড়িয়ে মনে মনে বলে উঠে, ” ড্রামাবাজ মেয়ের ড্রামা শেষ হয় না৷ কত ড্রামা করতে পারে। ভাবা যায়৷ একে না দেখলে জানতেই পারতাম না। ”
— নিয়তি নির্বণকে ভেংচি কেটে বলে উঠে, ” আমি অন্যদের কি মতো গোমড়া মুখু? আমি সবাইকে মিস করি৷ আপনাকে না দেখলে আমার দিন যে যায় না৷”
— কিন্তু মা তুমি তো আজ অসুস্থ। তুমি বরং রেস্ট নাও৷ আমি একদম ঠিক আছে৷ আমার জন্য অনেক সার্ভেন্ট আছে।
— মা সার্ভেন্টরা কি কোন কাজ নিজের মনে করে করে? তারা তো লোভ দেখানোর জন্য কাজ করে৷ আমি আপনাকে কথা দিয়েছি তো আপনার সব কাজ আমি করব৷ আর আপনাকে সুস্থ করে তুলবো আমি। আর হ্যাঁ থেরাপি রেগুলার দিতে হয়৷ না হলে সমস্যা হতে পারে৷
— নির্বণ চোখ পাকিয়ে, “এই মেয়ে স্টপ।” মায়ের দিকে তাকিয়ে নরম স্বরে বলে উঠে, ” মা তুমি কোন চিন্তা কর না। নিয়তির সব কাজ আজ আমি করে দিব৷ ”
— কি আপনি আমার কাজ করতে পারবেন? আপনি তো একটা কাজ করতে পারেন না৷ করেছেন কোনদিন এসব কাজ?
— নিয়তি তুমি ভুলে যেওনা নির্বণ কেন চ্যালেঞ্জ হারে নি৷ আর কোনদিন হারবে না৷
— ওকে দেখা যাক। পারলে মাকে উঠিয়ে বসান৷
নির্বণ নিয়তির রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মার দিকে এগিয়ে আসে৷ মাকে কোলে তুলে নিয়ে হুইলচেয়ার বসিয়ে দেয়৷
নিয়তি নির্বণের এমন সাহসিকতা দেখে খুশী হয়ে যায়৷ নিয়তি ভেবে নিয়ে ছিল মাকে বিছানায় হেলান দিয়ে বসিয়ে দিবে।
— নিয়তি বলে উঠে, ” এভার মায়ের পা মালিশ করে দেন৷ দেখি মালিশ করতে পারেন কিনা ?”
নির্বণ তার মায়ের পায়ে ঠান্ডা তেল লাগাতে নিলেই নিয়তি বলে উঠে, ” কথায় আছে না ছাগল দিয়ে হাল চাষ করানো যায় না৷”
— নির্বণ ক্ষেপে বলে উঠে, ” কি বললে তুমি? আমি ছাগল? ”
— আপনি শুধু ছাগলই নয়৷ আপনি একটা গাধা।
— আর একবার বলে দেখো আমাকে গাধা। তোমার কি অবস্থা করি তুমি নিজেও জানতে পারবে না?
— আপনি গাধার মতো কাজ করবেন৷ আর আপনাকে গাধা বলা যাবে না৷
— আমি গাধার মতো কি কাজ করলাম?
— আপনি কি কচি খোকা। কিছুই জানেন না৷ মালিশ করতে হলে তেলটা হালকা গরম করে নিতে হয়৷ যারা এমন ভুল করে তাদেরকে বলা হয় মাথা মোটা, গাধা।
নির্বণ রেগে গজগজ করতে করতে তেল গরম করতে চলে যায়৷ এই দিকে নির্বণের মা আর হাসি আটকে রাখতে পারছে না। তিনি অট্টহাসি দিয়ে উঠেন৷ নির্বণ এসে দেখে তারা হাসছে।
— নির্বণ হুংকার দিয়ে বলে উঠে, “তোমাদের হাসার পর্ব শেষ হলে কাজটা করতে দাও৷”
নির্বণ খুব যত্ন সহকারে পা মালিশ করে দেয়৷ নির্বণের মাও নির্বণের প্রতি খুব খুশি হয়৷ এভাবে নিয়তির পাশে দাঁড়ানোর জন্য৷
_______________
সন্ধ্যার দিকে নিয়তি মুখ গোমড়া করে বসে আছে৷ প্রতিদিন সে তার বাবার সাথে এই সময়ে দেখা করতে যায়৷ কিন্তু আজ যেতে পারছে না৷ কাউকে কিছু বলতে পারছে না৷
নির্বণ নিয়তির সমস্যা বুঝতে পারে৷ নিয়তির দিকে একটা শাড়ি বাড়িয়ে দিয়ে বলে উঠে, ” শাড়িটা পড়ে নাও৷”
— কেন? আমি এই শাড়িতেই ভালো আছি৷ আমি এখন শাড়ি পাল্টাতে পারব না৷
— গতকাল থেকে এক শাড়ি তোমার গায়ে। মা পাল্টাতে বলেছে। আমি চাইনা এই নিয়ে কোন কথা হোক।
— ওকে.. কিন্তু।
— আমি বাহিরে আছি। সমস্যা নেই৷ দরকার পড়লে ডাক দিও৷
নিয়তি শাড়ি পড়ার পর সোফায় বসে আছে। নির্বণ হুট করেই তেড়ে আসে। নিয়তি তো ভয় পেয়ে সোফায় পা তুলে বসে৷ নিয়তিকে কোলে নিয়ে হাঁটতে শুরু করে। নিয়তি কিছু বলতে নিলেই ঝাঁকি দেয়৷ পড়ে যাওয়ার ভয়ে নিয়তি নির্বণের গলা জড়িয়ে ধরে।
নিয়তি ভাবতেও পারেনি নির্বণ তার জন্য এত কিছু করবে৷
চলবে……