#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_২৮
#অধির_রায়
নিয়তি নির্বণের খুঁচা খুঁচা দাঁড়ির স্পর্শে মাতু হারা কিশোরী হয়ে যাচ্ছে৷ নিয়তি তার হাসি আটকানোর জন্য নির্বণের ঠোঁট জোড়া দখল করে নেয়৷ হাসি থামতেই নির্বণের ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে নির্বণকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়৷
— লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে বলে উঠে, “আপনি সাজ সকাল বেলা কি শুরু করে দিয়েছেন? সারা রাত পাইক্যা করে যাতায়াত করে আমি বড়ই ক্লান্ত৷”
— নির্বণ দুষ্টু হাসি দিয়ে, ” কেন ভালো লাগেনি? রাতের আকাশের তাঁরা মেলার সাথে কথা বলে বলে বার্ন শহরে ফিরে আসলে?”
— আপনার আকাশের তাঁরা আপনি দেখলেই ভালো হতো? আপনি ইচ্ছা করেই আমাকে পাইক্যায় করে নিয়ে এসেছেন৷ আপনি চাইলে টোটো বা কার হায়ার করতে পারতেন৷
— নিয়তিকে কাছে টেনে, ” কার হায়ার করে এখানে আসলে, আমি আমার বউয়ের চাঁদ পানা মুখটা দেখতাম কিভাবে?”
— এক রাশ বিরক্তি নিয়ে, ” আমাকে ঘুমাতে দেন। রাতে একটুও ঘুমাতে পারিনি৷”
— নিয়তির চুলে মুখ লুকিয়ে নেশা ভরা কন্ঠে বলে উঠে, ” সারা রাত আমার বুকে ঘুমিয়ে ছিল কে? মেবি শেওড়া গাছের প্রেত্নী।”
— নিয়তি নির্বণের চোখে চোখ রেখে,” দেখেন আপনি কিন্তু দিনে দিনে আমাকে অপমান করে যাচ্ছেন৷ কই ভালোবেসে কাছে টেনে ঘুম পাড়াবেন? তা না আমাকে প্রেত্নী বানিয়ে দিলেন৷”
নিয়তি মুখ গোমড়া করে উল্টো দিকে ঘুরে শুয়ে পড়ে৷ নির্বণ নিয়তিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে নিয়তির গলায় কিস করে৷ নিয়তি নির্বণের খুঁচা দাঁড়ি ছোঁয়ায় হাত চেপে ধরে৷ নির্বণ ধীরে ধীরে নিয়তিকে গভীরভাবে কিস করতে থাকে৷ নিয়তি নির্বণের ডিপ কিসে মাতুহার হয়ে যায়৷ নির্বণের দিকে ঘিরে নির্বণকে জড়িয়ে ধরে।
— নির্বণ নিয়তির কানে ফিসফিস করে বলে উঠে, “আমাদের একটা সোনা বেবি দরকার৷ তোমার অভিমত কি?”
নিয়তি লজ্জায় নির্বণের বুকের মাঝে একদম মুখ লুকিয়ে ফেলে৷ যেন কোন কাক চড়ুই পাখির ছানাকে তাড়া করেছে। চড়ুই পাখির ছানা তাড়া খেয়ে যেভাবে মায়ের বুকে মুক লুকায় ঠিক তেমনি নিয়তি নির্বণের বুকে মুখ লুকিয়েছে ৷
নির্বন নিয়তির উত্তর বুঝতে পারে । নির্বণ নিয়তির ঠোঁট জোড়া দখল করে নেয়৷ নির্বণের সাথে তালে তাল মেলায় নিয়তিও৷ আবারও তাদের দু’টো আত্মার মিলন হয়৷ [রিডার্সরা কিভাবে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে? চোখ বন্ধ করেন সবাই৷]
______
বারোটার দিকে নিয়তি ঘুম ভেঙে যায়৷ নিয়তি সেই একই ভাবে নির্বণের লোমহীন বুকের মাঝে শুয়ে আছে৷ নিয়তি গতকালের মতো ভুল আজ আর করতে চাইনা৷ তাই সে তারাতাড়ি উঠে ওয়াসরুমে চলে যায়৷
নিয়তি ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে দেখতে পায় নির্বণ উঠে পড়েছে৷ নির্বণের পীঠ নখ দিয়ে আছড়ানো৷ ফর্সা পীঠ থেকে রক্তের লাভা বেরিয়ে আসছে৷ দৌড়ে নির্বণকে কাছে যায়৷
— হাঁপিয়ে বলে বলে উঠে, ” আপনার পীঠে নখ দিয়ে আছড়ানো কেন? কে করেছে আপনার এমন অবস্থা?”
— নির্বণ ক্ষীণ চোখে নিয়তির দিকে তাকিয়ে, ” এতো দুশ্চিন্তার কি আছে? আমার কিছু হয়নি৷ আমি ঠিক আছি৷”
— হন্তদন্ত হয়ে, ” আপনি একদম ঠিক নেই৷ এগুলো দাগ যদি পীঠে থেকে যায়৷ এখননি এন্টিসেপ্টি মলম লাগাতে হবে।”
— কিছু হবে না নিয়তি। এভাবে ভেঙে পড়তে নেই৷ আমি ঠিক আছি৷ আর দাগ পড়ে গেলেই তো ভালো। ভালোবাসার ছোঁয়া সব সময় কাছে থাকে৷
— চকিত হয়ে, “দাগ পড়ে গেলে ভালো মানে!” আর কিসের ভালোবাসা?
— ডেভিল হাসি দিয়ে, ” তোমার কি কিছু মনে নেই সুইটহার্ট ? তুমিই এই সব দাগ কেটেছো?”
— নিয়তি অবাক চোখে তাকিয়ে, ” আমি কখন এসব করলাম? আমি ভুলেও আপনাকে আঘাতের কথা ভাবতে পারিনা৷” [ লেখাঃ অধির রায় ]
— নিয়তিকে কাছে টেনে নিয়ে, ” আজ সকালে এসব দাগ তুমিই কেটেছো? তোমার কষ্টের কাছে আমার এই কষ্ট কিছুই ছিল না৷”
— নিয়তি নির্বণের কথা বুঝতে পারে। নিয়তি লজ্জা মাখা মুখ নিয়ে বলে উঠে, ” আপনি বলতে পারতেন আপনি ব্যথা পাচ্ছেন৷ শুধু শুধু কষ্ট সহ্য করলেন৷”
নিয়তি নির্বণের সামনে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না৷ নিয়তি লজ্জা পেয়ে বেলকনিতে চলে যায়৷ নির্বণ মুচকি হেঁসে ওয়াসরুমে চলে যায়।
_________
পরিবারের সবার জন্য শপিং করে সন্ধ্যার দিকে হোটেলে ফিরে আসে নির্বণ এন্ড নিয়তি৷ নির্বণ আগে আগে চলছে৷ আর নিয়তি নির্বণের পিছু পিছু যাচ্ছে। নির্বণ হোটেলের দরজা খুলেই রেগে যায়৷
— অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, ” তুই এখানে কি করে আসলি? তোকে আমাদের রুমে কে নিয়ে এসেছে?”
— নিয়তি নির্বণের কাঁধে হাত দিয়ে, ” প্লিজ মাথা গরম করবেন না৷ আমি তাকে এখানে নিয়ে এসেছি৷”
— নিয়তির দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, ” তোমাকে সব স্বাধীনতা দিয়েছি এই না যে তুমি যা খুশি তাই করবে।”
— আমরা তো ছোঁয়াকে এভাবে একা ফেলে যেতে পারি না৷
— নিয়তি তুমি বুঝতে পারছো না কেন? ছোঁয়া তোমার সরলতার সুযোগ নিচ্ছে৷ সুচ হয়ে ঢুকে খাল হয়ে বের হবে৷ আমি তোমাকে হারাতে পারব না৷
— আপনি কেন এত হাইপার হচ্ছেন? ছোঁয়া আমাদের কিছু করতে পারবে না৷ আমাদের উচিত ছোঁয়াকে তার মায়ের কাছে পৌঁছে দেওয়া৷
— নির্বণ শপিং ব্যাগ বিছানায় ছুঁড়ে মেরে, “আমি তাকে নিয়ে যেতে পারবো না৷ তার সাথে আমি কিছুতেই কলকাতা ফিরবো না৷”
তুমি বুঝতে পারছো না কেন? সে টাকার লোভে আবার নতুন নাটক শুরু করেছে। এখন তাকে তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে ফিরে যেতে বল৷
নির্বণ আর কিছু না বলে বেলকনিতে চলে যায়৷ নিয়তি বেলকনিতে আসতে নিলেই ছোঁয়া নিয়তির হাত ধরে, ” আমার জন্য কিছু করতে হবে না৷ আমি এখানে ঠিক আছি৷ আমি জীবনে অনেক অন্যায় করেছি৷ আমাকে কেউ কোনদিন বিশ্বাস করবে না৷ আমার এমন শাস্তি পাওয়ার দরকার৷ ”
— নিয়তি ছোঁয়ার হাতে হাত রেখে, ” তোমার কিছু হবে না৷ আমি সব ঠিক করে দিব৷”
–নিয়তি বেলকনিতে পা রাখতেই নির্বণ বলে উঠে, ” এখানে কেন এসেছো? তুমি তো মানব সেবিকা। সবাইকে সাহায্য করবে৷”
— নিয়তি মাথা নিচু করে, ” আমি আপনাকে না জানিয়ে ছোঁয়াকে এখানে এনে ভুল করেছি৷ আপনি নিজেও জানেন না ছোঁয়ার কি হয়েছে?”
— নির্বণ চকিত হয়ে, ” ছোঁয়ার কি হয়েছে! তার কিছু হয়নি৷ ছোঁয়ার এটা একটা নতুন নাটক।”
— ছোঁয়া কোন নাটক করছে না৷ সে আসলে নিরুপায়। তার সুইজারল্যান্ডে কেউ নেই৷ আমি ডাক্তার আর পুলিশের সাহায্যে ছোঁয়ার পাসপোর্ট বানিয়েছি৷
— তুমি এত কিছু করলে আমাকে জানানোর প্রয়োজন বোধ টুকুও করোনি৷
— আপনি চাইনি আপনি ছোঁয়ার চিন্তা করে কষ্ট পান৷
— তুমি কেন তাকে এতটা ভরসা করছো? কে হয় তোমার?
— আমার কেউ হয় না৷ কিন্তু তার শেষ ইচ্ছা পূরণ করতেই আমি এসব করছি৷
— নির্বণ হাসি দিয়ে, ” হাহা, আবারও তোমাকে বোকা বানালো।”
— আমি বোকা হয়নি৷ বোকা হয়েছেন আপনি৷ কারণ ছোঁয়া ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত। সে যেকোন সময় মারা যেতে পারে৷ তার রোগটা প্রায় চার বছর থেকে। বর্তামানে তার অবস্থা এতটাই খারাপ যে তাকে বাঁচানোর কোন পথ নেই৷
নিয়তি কথা শুনে নির্বণের ঠোঁট শুকিয়ে যায়৷ গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না৷ কিছু না জেনে মৃত্যু শরণাপন্ন রোগীকে এভাবে কথা বলা ঠিক হয়নি।
— নির্বণ কাঁপা কাঁপা ভাঙা গলায়, ” তুমি কিভাবে জানলে ছোঁয়ার ক্যান্স্যার ধরা দিয়েছে?”
— ডাক্তার আমাকে তার সকল রিপোর্ট দেখিয়েছে। তার মাকে ফোন করে আমাদের বাড়িতে ঢাকা হয়েছে। আমাকে এসব কাজ করার অনুমতি দিয়েছেন মা৷
নির্বণ আর কিছু বলল না৷ মনে মনে নিজেকে দোষী মনে করল।
______
ভোর ছয়টায় তারা কলকাতায় পৌঁছে যায়৷ নির্বণ সবাইকে সবার গিফট বুঝিয়ে দেয়৷ নিয়তি ছোঁয়াকে ধরে নিয়ে গেস্ট রুমে নিয়ে যায়৷ গেস্ট রুমে যাওয়ার সাথে সাথে ছোঁয়ার মা ছোঁয়াকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে৷ ছোঁয়ার সমস্ত মুখে ভালোবাসার পরশ একে দিতে থাকে।
সকলে বসে আছে, কিভাবে ছোঁয়ার এমন অবস্থা হলো? ছোঁয়া মাথা নিচে করে বসে আছে৷ ছোঁয়াকে দেখে মনে হচ্ছে বিশ্ব ব্যাংক ডাকাতি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে৷
— নিয়তি আভয় বানী দিয়ে, ” দেখো ছোঁয়া আমরা তোমার পরিবারের লোক৷ কোন সংকোচ না করে আমাদের বলতে পারো। তোমার সাথে অন্যায়ের শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করব৷”
ছোঁয়া ছল ছল চোখে একবার নির্বণের দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করে, ” বৃষ্টি বাড়িতে আমি আর নির্জন (ছোঁয়ার বয়ফ্রেন্ড) নির্বণকে মেরে ফেলার চেষ্টা করি৷ সেজন্য নির্বণকে নদীতে ফেলে দেয়৷ তারপর বৃষ্টি বাড়ি থেকে সেই রাতে কলকাতায় ফিরে আসি৷ নির্জন অনেক আগেই আমাদের জন্য দুইটা সুইজারল্যান্ডের টিকেট কেটে রেখেছিল।”
— এক গ্লাস জল পান করে আবারও বলা শুরু করে, “পরের দিন সকাল বেলা আমি আর নির্জন সুইজারল্যান্ড চলে যায়৷ নির্জন আমাকে বলেছে সেখানে তার মা বাবা থাকেন৷ তাদের সাথে দেখা করেই আমাদের বিয়ে হবে৷ আমাকে একটা বিশাল বড় বাড়িতে নিয়ে যায়৷ সে জানায় এটা তাদের বাড়ি৷ আমি খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়৷ আমি কল্পনাও করতে পারিনি আমি এত বড় বাড়ির বউ হবো৷ আমাকে লুকিয়ে নির্জন একটা রুমে নিয়ে যায়৷ আমাকে বলে যায়, আমি এখানেই যেন থাকি৷ তার মা বাবাকে সারপ্রাইজ দিবে আমাকে দেখিয়ে। তার কথামতো আমি রুমে অপেক্ষা করি৷ সন্ধ্যার দিকে রুমে মধ্যবয়স্ক দুইজন লোক রুমে প্রবেশ করে। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম নির্বণের বাবা, কাকা৷ কিন্তু আমি ছিলাম তাদের খাবার৷”
নির্জন রুমে এসে বলে উঠে,” স্যার মালটা একদম পিউর৷ কেউ কোনদিন টার্চ করেনি৷ আমার টাকা বুঝিয়ে দেন। এক রাত আমাদের সাথে থাকবে৷ আমি বাহিরে আছি৷”
“নির্জনের কথা শুনে আমি ঘাবড়ে যায়৷ নির্জনের পায়ে পড়ি৷ নির্জন আমাকে লাথি দিয়ে রুমের দরজা বন্ধ করে চলে যায়৷ আমি তাদের কিছু বলতে নিব তার আগেই তারা আমার মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে দেয়৷ আমার হাত পিছনে বেঁধে ফেলে৷ তার পর তারা আমাকে কুকুরের মতো ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায়৷”
ছোঁয়া আর কিছু বলতে পারল না। কান্নায় ভেঙে পড়ে৷ নিয়তির হাত চেপে ধরে আবারও বলতে শুরু করে,” এখানেই শেষ নয়৷ প্রতিদিন রাতে আমি দুইজন তিনজন লোকের ভোগকারী মোহিনী হতাম৷ এভাবে চলে যায় পুরো দুই মাস৷ এক দিনের জন্য বাহিরে বের হতে পারিনি৷ একদিন নির্জন আমাকে খাবার দিতে রুমে আসে, আমি ওয়াসরুমের স্টেন দিয়ে নির্জনের মাথায় আঘাত করি৷ যার ফলে নির্জন মাটিতে থুবড়ে পড়ে। আর সেই দিন নির্জনকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়৷ মানে তার হাত থেকে বাচার জন্য তাকে খুন করি৷ রক্তমাখা শরীর নিয়ে বাহিরে বের হলে সেখানকার লোকরা আমাকে ধরে একটা পতিতালয়ে বিক্রি করে দেয়৷ সেখানে দুই বছর আমার জায়গা হয়৷ সেখানেও একদিন সুযোগ বুঝে মালকিনকে মেরে ফেলে পালিয়ে আসি৷ তার পর ভিক্ষা করে চলতে থাকে আমার জীবন।”
সকলে ছোঁয়ার কাহিনী শুনে কান্নায় ভেঙে পড়ে৷ এভানে চলতে থাকে কিছুদিন। হুট করেই একদিন ছোঁয়ার মুখ থেকে ব্লাড ঝরতে থাকে৷ ছোঁয়া শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে৷
চলবে…
/