#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_২৫
#অধির_রায়
নির্বণ নিয়তির পথ আটকিয়ে দাঁড়ায় একটা ছোট মেয়ে। নির্বণ অতি যত্নে মেয়েটার গালে হাত রাখে।
— নির্বণ হাঁটু গেড়ে বসে, ” এনি প্রবলেম।”
— মেয়েটি বলে উঠে, ” আপনারা কি বাঙালি? আমি বাংলায় কথা বলতে পারি। আর সুইজারল্যান্ডের ভাষায় কথা বলতে পারি না, না পারি ইংরেজিতে কথা বলতে৷ অন্য কোন ভাষায় কথা বলতে পারি না৷”
— নিয়তিও হাঁটু গেড়ে বসে, ” আচ্চা তুমি কান্না করছো কেন? কি হয়েছে তোমার?” তোমার মা বাবা কোথায়?
— মেয়েটা কান্না করে বলে উঠে, ” প্লিজ আমার একটা হ্যাল্প করেন। আমিও ইন্ডিয়ান৷ এখানে ঘুরতে এসে হারিয়ে ফেলেছি আমার মা বাবাকে। কিন্তু এখানে এসে আমার একটা ভিক্ষুকের সাথে আমার দেখা হয়৷”
— “ভিক্ষুকের সাথে দেখা হয়েছে! ” অবাক হয়ে বলে উঠে নির্বণ।
তোমার কথা কিছু বুঝতে পারছি না৷ প্লিজ আমাকে একটু ভালোভাবে বুঝিয়ে বলবে।
— স্যার আসলে আমি যখন মা বাবার জন্য কান্না করছিলাম তখন এক ভিক্ষুক আমাকে তার সাথে নিয়ে যান৷ তিনিও অসহায়, তারও কেউ নেই৷ সকাল থেকে আমরা দু’জনে না খেয়ে আছি। আর উনার মুখ থেকে সকাল থেকে রক্ত ঝড়ে যাচ্ছে৷
— নির্বণ হন্তদন্ত হয়ে, ” এখন উনি কোথায়? আর উনি কেমন আছে? আমাকে নিয়ে চল উনার কাছে।”
মেয়েটি চোখের জল মুছে নির্বণের হাত ধরে ডাস্টবিনের পাশে শুয়ে থাকা একটা মধ্যবয়স্ক মহিলার কাছে নিয়ে যায়৷ নিয়তি অতি যত্নে মহিলাটিকে নিজেদের দিকে ঘুরিয়ে নেয়। বাচ্চা মেয়েটি কান্না করে যাচ্ছে।
নির্বণ মহিলাকে দেখে এক পা পিছিয়ে যায়৷ মহিলাটি আর কেউ নয়৷ মহিলাটি হলো ছোঁয়া। নির্বণের চোখ থেকে জল ঝড়ে যাচ্ছে। কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। নির্বণ কি বলবে বুঝতে পারছে না?
নিয়তি নির্বণকে ডেকে যাচ্ছে। কিন্তু নির্বণের কোন সাড়া শব্দ নেই৷ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছোঁয়ার দিকে। নিয়তি নির্বণকে টার্চ করলেই নির্বণের ঘোর কাটে৷
— আপনি এভাবে ভয় পেয়ে আছেন কেন? কি হলো আপনার? আপনি কেন ভেঙে পড়ছেন? চোখের জল মুছে ফেলেন?
— হাত দিয়ে ইশারা করে ভাঙা গলায় আমতা আমতা করে বলে উঠে, ” ছোঁয়া..।”
— নিয়তি চকিত হয়ে, ” কি! ছোঁয়া এখানে আসবে কোথা থেকে৷ উনি সুইজারল্যান্ডে আসলেন কিভাবে?”
— হ্যাঁ, আমি ঠিক বলছি ওই মেয়েটা আর কেউ না৷ ওই মেয়েটাই হলো ছোঁয়া।
নিয়তির কাছে হাতজোড় করে, প্লিজ নিয়তি তুমি ছোঁয়াকে ঠিক করে দাও।”
_______
হসপিটালের করিডরে বসে অপেক্ষা করছে নিয়তি, নির্বণ, আর ওই বাচ্চা মেয়েটা৷ নির্বণ পাথরে পরিণত হয়ে গেছে। তার মাথায় কিছু কাজ করছে না৷ এখনও চোখ থেকে অনবরত বন্যা বয়ে যাচ্ছে।
ভালোবাসা এতটাই পবিত্র যে, ” কখনো কাউকে আলাদা করতে চায় না৷ কিন্তু কিছু কিছু মানুষ এই ভালোবাসা নিয়ে খেলা করে। আজ পবিত্র ভালোবাসাকে খেলা হিসেবে বেছে নিচ্ছে৷ যার ফলে ঝড়ে যাচ্ছে বহু যুব সমাজ।
ডাক্তার ছোঁয়াকে দেখার পর বেরিয়ে আসে৷ নিয়তি ডাক্তারের সাথে কথা বলার জন্য এগিয়ে যায়৷
— নিয়তির ডাক্তারের দিকে ক্ষীর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, “ডক্টর ছোঁয়ার কি হয়েছে? ”
— ডাক্তার মাথা নিচু করে বলে উঠে, ” ছোঁয়ার ক্যান্সার ধরা দিয়েছে। উনার আয়ুষ্কাল আর বেশিদিন নেই৷ ”
— নিয়তি নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে বলে উঠে, ” ওকে ডক্টর। আমাদের কি রাতে এখানে থাকতে হবে?”
— সরি ম্যাম। আমরা কাউকে রোগীর সাথে এলাউ করি না৷ আমরা কিছুতেই আমাদের নিয়ম ভঙ্গ করতে পারব না৷
।
।
নিয়তি নির্বণের কাঁধে হাত রাখাতে নির্বণ নিয়তির দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়। নিয়তি আভয় বানী দিয়ে বলে উঠে, ” আপনি কোন চিন্তা করবেন না৷ ছোঁয়া একদম ঠিক হয়ে যাবে।
_______
নিয়তি, নির্বণ, আর বাচ্চা মেয়েটি এক সাথে বসে আছে। কারো মুখে কোন কথা নেই৷
— নিয়তি নির্বণের দিকে একবার তাকিয়ে বাচ্চাটির গালে আলতো করে হাত রেখে বলে উঠে, ” আচ্চা তোমার নাম কি?”
— মিষ্টি হেঁসে বলে উঠে, ” আমার নাম মিহু। আমি ইন্ডিয়ায় থাকি। প্লিজ আমাকে আমার মা বাবার কাছে পৌঁছে দিবে।”
— আচ্চা তোমার মা বাবা কোন হোটেলে উঠেছিল? তুমি কি কিছু জানো?
— হ্যাঁ আমি জানি৷ তারা এই হোটেলেই উঠেছে। কিন্তু আমি এই হোটেলে সেদিন রাতে এসেছিলাম কিন্তু গেইট লক ছিল।
— তুমি কি জানো, তোমার মা বাবা কত তলায় থাকে?
— জানি না৷ তবে আমার বাবার নাম তূর্জয়।
— ওকে সমস্যা নেই৷ তুমি আমার সাথে কাউন্টারে চল৷ তাদের সাথে কথা বলে জানতে পারি কিনা৷
নিয়তি মিহুকে নিয়ে কাউন্টারে আসে৷ কাউন্টারে আসতেই মিহু নিয়তির হাত ছেড়ে দিয়ে দৌড়ে তার মা বাবাকে জড়িয়ে ধরে। আসলে তারা এখনই বের হচ্ছিল।
তারা মেয়েকে ফিরে পেয়ে মিহুর মুখে একের পর এক ভালোবাসার পরশ একে দিতে থাকে। ফ্লাইডের সময় হয়ে যাছে সে কারণে নিয়তির সাথে তেমন কোন কথা হলো না৷ নিয়তিকে বিদায় জানিয়ে তারা চলে যায়।
_______
নির্বণ স্নান করে ওয়াসরুম থেকে বের হচ্ছে৷ ঠিক তখনই নিয়তি রুমে প্রবেশ করে৷ নির্বণ গায়ে জলের ফোঁটা মুক্ত দানার মতো চকচক করছে৷ নিয়তি নির্বণের অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
নির্বণ নিয়তির কাছে এসে টুপ করে নিয়তির কপোলে আলতো করে একটা ভালোবাসার পরশ একে দেয়৷ নিয়তি নির্বণের এমন ব্যবহারে খুব শকট। একটু আগে যে মানুষ কথা বলতে পারছিল না৷ এখন কি না সেই মানুষ এতটা পরিবর্তন।
— নিয়তি চোখ বড় করে, ” আপনি কি ঠিক আছেন? নাকি আপনি পাগল হয়ে গেলেন?”
— হোয়াট৷ তোমার মাথা ঠিক আছে৷ আমি কেন পাগল হতে যাব? আই অ্যাম ফাইন৷
— আপনার একটুও কষ্ট হচ্ছে না ছোঁয়ার জন্য৷
— ও হ্যালো। আমি অতীতকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে চাই না৷ আর যে ছোঁয়ার আমাকে প্রাণে মারার জন্য দু’বার ভাবেনি৷ আমি তার জন্য ভাববো। খারাপ লেগেছিল তাকে দেখে। কিন্তু এখন খারাপ লাগছে না৷
— ভুতের মুখে রাম রাম। আমি কি সত্যি বেঁচে আছি নাকি আমি কোমায় চলে গিয়েছি৷
নির্বণ নিয়তির ঠোঁট জোড়া দখল করে নেয়৷ নিয়তি নির্বণকে ধাক্কা দিতে নিলে নির্বণ নিয়তির হাত দরজার সাথে চেপে ধরে৷ নিয়তি নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে৷ দুই মিনিট পর নিয়তির ঠোঁট ছেড়ে দেয়৷ নিয়তি দূরে দাঁড়িয়ে থেকে হাঁপাতে থাকে। মনে মনে নির্বণের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করে যাচ্ছে৷
— নিয়তি ক্ষেপে বলে উঠে, ” আপনি কি আমাকে মেরে ফেলবেন? এভাবে কেউ কাউকে কিস করে। আর একটু হলে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যেত।”
— তার মানে তুমি কোমায় নয়৷ তুমি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছো। তোমাকে দাঁড়া কিছু হবে না৷ ভালো করে কিসও করতে পারে না৷
— আমি তো আপনার মতো গরিলা নয়৷ যে কিসের ক্ষেত্রে পারদর্শী হবো৷
— আমি গরিলা৷
— হ্যাঁ আপনি গরিলা৷
— আমি গরিলা হলে তুমি প্রেত্নী৷
— আমি প্রেত্নী নয়৷ আমি হলাম মায়া পরী৷
— নির্বণ মুচকি হেঁসে, ” আসছে আমার মায়া পরী৷ দেখে মনে হচ্ছে এই মাত্র কারো বাসা থেকে চুরি করে আসল। না না তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি কাজের মেয়ে সকিনা।
— নিয়তি ক্ষেপে বলে উঠে, ” আমি কাজের মেয়ে সকিনা৷ দাঁড়ান আমি আপনাকে দেখোচ্ছে৷
নিয়তি নির্বণের দৌড়ানি দেয়৷ নির্বণ বেডের চারদিকে রাউন্ড করতে থাকে। হঠাৎ করেই নিয়তি পড়ে যেতে নিলে নির্বণ নিয়তির হাত ধরে বেড়ে পড়ে যায়৷
কারো মুখে কোন কথা নেই৷ একে অপরের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। দু’জনেই নেশার ঘোরে আছে। নির্বণের ঠান্ডা স্পর্শ নিয়তিকে কাছে টানছে। নির্বণও নিয়তির মায়া ভরা চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।
চলবে…