#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_২৪
#অধির_রায়
রাতের আকাশে তাঁরার মেলা। সব তারকাদের হার মানিয়ে উঠেছে পূর্নিমার চাঁদ। চাঁদের আলোই সুইজারল্যান্ডের বিচের সমুদ্রসৈকতে আয়েশ করে বসে বসে আইসক্রিম খাচ্ছে দু’জনে।
— নিয়তি নির্বণের কাঁধে মাথা রেখে, “চলেন আমরা বালির উপর দিয়ে হেঁটে কথা বলি৷ এভাবে বসে বসে আইসক্রিম খেতে ভালো লাগছে না৷”
— হ্যাঁ, তুমি একদম ঠিক বলেছো, আমরা হেঁটে হেঁটে আইচক্রিম খেতে পারি৷
আইসক্রিম হাতে নিয়ে দু’জনে হেঁটে হেঁটে খেয়ে যাচ্ছে। খাওয়ার কথা বললে ভুল হবে৷ নিয়তির একবার নির্বণের আইসক্রিমের উপর অট্যাক করছে৷ নির্বণ নিয়তির আইসক্রিমের উপর। অবশেষে সুইজারল্যান্ডের স্পেশাল চক্রবাক আইসক্রিম ডাস্টবিনে জায়গা করে নিল।
বিচের সব থেকে বড় সুন্দর এবং আকর্ষনীয় দৃশ্য হলো সাগরের জল। চাঁদের আলোয় জলের গায়ে সাথে মিশে রয়েছে৷ প্রতিটি ঢেউয়ের বাঝে বাঝে ভিন্ন ভিন্ন কালারে পতিত হচ্ছে৷ ঢেউয়ের সাথে অনেকে খেলা করছে৷ যখন ঢেউ আসে তখন জল হালকা নীল রঙের দেখায়। যা পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য অদ্বিতীয়।
— মুখে এক ঝাঁক হাসির রেখা টেনে বলে উঠে, “আমিও স্নান করব সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে ? দেখেন সকলে কত ঢেউয়ের সাথে মেতে উঠেছে৷”
— নির্বণ গম্ভীর কণ্ঠে, ” না, একদমই না৷ এখন স্নান করলে তোমার জ্বর আসতে পারে। আমরা এই আবহাওয়ার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারিনি এখনও।” আমরা আসলাম মাত্র এক দিন হলো।
— “কিছু হবে না৷ প্লিজ চলেন না! আমি তো অনেল সয়মে অসময়ে স্নান করেছি৷” প্যাঁচার মতো মুখ করো
— অন্যদিকে মুখ করে, ” আমি সমুদ্রের ঢেউয়ের মাঝে নামতে পারব না৷ তোমার ইচ্ছা হলে তুমি নিজেই স্নান করে নাও৷”
— নির্বণের সামনে দাঁড়িয়,” কেন? প্লিজ আমি আর কিছু করব না৷ একদম ভালো মেয়ের মতো থাকবো৷ আপনাকে কখনও বিরক্ত করতে যাব না৷ আপনি যত ইচ্ছা মুখ গম্ভীর করে থাকতে পারেন৷”
— কর্কশ কন্ঠে, ” তুমি কি কিছু বুঝতে চাও না৷ নাকি বুঝার চেষ্টা করো না। তোমার কোন আইডি আছে৷ রাত ১১ টার দিকে স্নান করবে৷ স্নান করা মানে জ্বরকে নিমন্ত্রণ করা৷”
— নির্বণকে জড়িয়ে ধরে, “আপনার কিছু হবে না, আমি আছি তো৷ জ্বর হলে আপনার সব জ্বর আমি নিজের করে নিব৷ আপনাকে কখনও কষ্ট পেতে দিব না৷ ”
নিয়তি নির্বণের কোন কথা না শুনে নির্বণকে টেনে নিয়ে যায় স্নান করতে৷ নির্বণ বাধ্য হয়ে নিজের জিনিসপত্র একটা আইসক্রিম ওয়ালার কাছে রাখে। তারপর নিয়তির মুখের হাসির জন্য সমুদ্রের জলে নামে৷
অল্প জলে বালির সাথে খেলা করছে নিয়তি। প্রকৃতির মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে। নির্বণ নিয়তির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নিয়তির হাসি নির্বণের মনে ভালোবাসার দাগ কেটে যাচ্ছে। যদি এই মুহুর্তটা থেমে যেত৷ তাহলে নির্বণ সারাজীবন নিয়তির দিকে এভাবে ভালোবাসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো।
— নির্বণের ঘোর কাটে নিয়তির জল ছিঁটানোতে। নির্বণ অপ্রস্তুতভাবে বলে উঠে, “ননসেন্স।” এসব কি? আমার দিকে এভাবে জল ছিঁড়ে দেওয়ার মানে কি?
— সরি। আপনিকে অনেকক্ষণ থেকে ডাকা হচ্ছে৷ কিন্তু আপনি কোন সাড়া দেননি৷ এজন্য আমি আপনার চোখে মুখে জল ছিঁড়ে দেয়৷
নির্বণ বুঝতে পারে সে নিয়তির দেখার নেশার ঘোরে ভুল কিছু বলে ফেলেছে। নির্বণ নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য নিয়তির হাত ধরে নিজের কাছে টেনে আনে৷
— কোমল স্বরে, “আমার বেবির মম্ বুঝি রাগ করেছে আমার উপর৷ আমি তো সেটা ফার্ন করেছি৷ প্লিজ মন খারাপ কর না৷”
— অসহায়ভাবে বলে উঠে, “আমি কিছু মনে করেনি৷” চলেন আমরা এখন হোটেলে ফিরে যায়৷
নিয়তি চলে আসতে নিলেই নির্বণ এক হাত দিয়ে নিয়তির হাত ধরে অন্য হাত দিয়ে নিয়তির দিকে জল ছুঁড়ে মারে। নিয়তি চোখে হাত দেয়৷
— এই থামেন৷ আমার চোখে জল আসছে। আমি চোখ মেলে তাকাতে পারছি না৷
কিন্তু নির্বণ নিয়তির চোখের দিকে জল ছুঁড়েই যাচ্ছে৷ নিয়তি নির্বণের দিকে অতি কষ্টে এগিয়ে আসে৷ আর নির্বণের মাথা ধরে জলে নাকানিচুবানি খাওয়াচ্ছে৷ নির্বণ নিয়তির মাথা ধরে জলে নাকানিচুবানি খাওয়াচ্ছে৷
___________
অনেকক্ষণ ধরে স্নান করছে কিন্তু কিছুতেই বালি গা থেকে উঠছে না৷ নির্বণ খুব রেগে আছে নিয়তির উপর৷ কিছুতেই নিয়তি ওয়াসরুম থেকে বের হচ্ছে না৷ প্রায় এক ঘন্টা থেকে নিয়তি ওয়াসরুমে স্নান করে যাচ্ছে। এই দিকে নির্বণের গায়ের বালি শুয়ে কাট হয়ে গেছে৷ ধীরে ধীরে শুকনো বালিই গা থেকে ঝড়ে যাচ্ছে৷
— নির্বণ ক্ষেপে বলে উঠে, ” নিয়তি ওপেন দ্যা ডুর। আর কতক্ষণ লাগবে। প্রায় এক ঘন্টা থেকে তুমি ওয়াসরুমে কি করছো?”
— নিয়তি নির্বণের কথা শুনেও না শুনার ভান করে, “কি বললেন? বুঝতে পারি নি৷ প্লিজ পুনরায় আবার বলেন৷
— “নিয়তি ভালোভাবে বলছি দরজা খোল, না হলে দরজা ভেঙে ফেলবো।” রেগে বলে উঠে নির্বণ।
আমি আর অপেক্ষা করতে পারব না৷
নিয়তি বুঝতে পারে তার উপর অনেক রেগে আছে৷ কোন উপায় না পেয়ে ওয়াসরুমের দরজা খোলে দেয়৷
— নির্বণ ওয়াসরুমে প্রবেশ করে বলে উঠে, ” স্নান করতে কতক্ষণ লাগে। আমি তো মনে করতেছি তুমি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছো।”
— ইনোসেন্ট ফ্রেস নিয়ে বলে উঠে, ” আমি কি করব বলেন? গা থেকে কিছুতেই বালি উঠছে না? দেখেন সোপ অর্ধেক হয়ে গেছে। কিন্তু বালি এখনও অর্ধেক হয়নি৷”
— নিয়তির মাথায় টুকা দিয়ে, “আরে বুদ্ধু এসব বালি একা তুলতে পারবে না৷ মানুষের গায়ের স্পর্শে এসব বালি উঠে যায়৷ কোনদিন হিন্দি মুভি দেখোনি৷ মানলাম তুমি সুইজারল্যান্ডে এর আগে আসো নি। কিন্তু বইয়ের পাতায় কোনদিন পড়েনি মান্টিকালো বিচের বালির কথা।”
— মুখ বাংলার পাঁচের মতো করে, ” আমি জানলে এমন কখনোই করতাম না৷ সোপ দিয়ে অনেক চেষ্টা করলাম। কিন্তু কিছুই কাজ হচ্ছে না।”
— সোপ দিয়ে এসব বালি উঠবে না৷ আমি তোমার বালি তুলে দিচ্ছি। তুমি আমার বালি তুলে দাও৷ তাহলে আমরা এই বালি থেকে মুক্তি পাবো৷
একে অপরকে সাহায্যের মাধ্যমে দেহ থেকে অনেক কষ্টে বালি দূরে করে। তাদের জীবনে এটা একটা বড় অভিজ্ঞতা।
__________
ক্যাফেতে নির্বণের জন্য বসে অপেক্ষা করছে নিয়তি৷ সেই সকাল থেকে কিছু খাওয়া হয়নি৷ খাওয়া হয়নি বললে ভুল হবে। তাদের মাঝে কেউ তো সকালে উঠেনি৷ তাহলে খাবে কি করে?
রাতে অনেক দেরিতে ঘুমানোর জন্য তাদের ঘুম ভাঙে দুপুর বারো টার দিকে। নিয়তি ক্ষুধা লাগাতেই নিয়তি নির্বণকে ছেড়ে একাই ক্যাফেতে চলে আসে।
এই দিকে নির্বণ নিয়তি ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে নিয়তিকে খুঁজে যাচ্ছে। হোটেলের ছাঁদে, বেলকনিতে, হোটেলের চারপাশে। কিন্তু কোথাও নিয়তিকে খুঁজে পাচ্ছে না৷ নির্বণের চারদিকে অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে৷ অচেনা শহরে কিভাবে নিয়তিকে খুঁজে যাবে? যেভাবেই হোক নিয়তিকে খুঁজে বের করতে হবে৷ নির্বণ আবার রুমে ফিরে আসে৷
নির্বণ ফোন হাতে নিয়ে মনে মনে বলে উঠে, “না নিয়তিকে একটা ফোন করে দেখি৷ নিয়তি মেবি ফোন নিয়ে গেছে। পুলিশের কাছে ডায়েরি না করে আগে নিয়তির কাছে ফোন দেয়।”
যেই ভাবা সেই কাজ৷ নির্বণ নিয়তির নাম্বারে ফোন দেয়৷ সুইজারল্যান্ডে আসার আগে নির্বণ এন্ড নিয়তি দুইটা সুইজারল্যান্ডের সিম কিনে নেয়৷ হঠাৎ কোন বিপদ হলে যেন তারা যোগাযোগ করতে পারে খুব সহজেই।
— নির্বণ কাঁদো কাঁদো স্বরে, ” নিয়তি তুমি ঠিক আছো কি? নিয়তি তোমার কিছু হয়নি তো।”
— নিয়তি চকিত হয়ে, ” আমার আবার কি হবে! আমি তো ঠিক আছি৷ আপনার জন্য সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি৷”
— নির্বণ নিয়তির কথায় একটা ছোটখাটো ধাক্কা খায়। তার জন্য অপেক্ষা করছে মানে। আশ্চর্য হয়ে বলে উঠে, ” তুমি আমার জন্য কোথায় অপেক্ষা করছো? আর এই দিকে..(থেমে যায়) ”
না নিয়তিকে এই বিষয়ে না জানানোই ভালো।
— কি হলো? আমার প্রচুর ক্ষুধা লাগছে৷ আপনি হোটেলের সামনের ক্যাফেতে চলে আসেন৷ আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না৷
নির্বণ ফোন রেখে শার্টের হাতা হোল্ড করতে করতে লিফ্টের কাছে চলে আসে৷ নির্বণ এই কয়েক মিনিটের মাঝে প্রায় হ্যাফ মেন্টাল হয়ে গিয়েছিল।
।
।
— নির্বণ ক্ষেপে বলে উঠে, ” এভাবে না বলে চলে আসার মানে কি? কাউকে চিন্তায় না ফেললে তোমার পেটের ভাত হজম হয় না৷’
— এভাবে বলার কি আছে? আমি ওয়াসরুমে ছিলেন৷ আর আমি তো আপনাকে জানিয়েছি৷ আপনি মেবি শুনতে পারেন নি৷
— ওকে ফাইন৷ এর পর যেন এমন ভুল আর না হয়৷ আমাকে না বলে কোথাও যাবে না৷
— প্রমিজ করছি৷ আর কখনও এমন ভুল করব না৷
।
।
নির্বণ নিয়তি খাবার শেষ শেষ করে হোটেলে ফিরে আসে৷ একটু রেস্ট নিয়ে সন্ধ্যার দিকে বিচের সাগরসৈকতে আবার আসে। কিন্তু তাদের পথ আটকিয়ে দাঁড়ায়।
চলবে…