#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_১২
#অধির_রায়
দেয়ালে হেলান দিয়ে পকেটে হাত গুঁজে নিয়তির দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে নির্বণ৷ নিয়তি নির্বণের তাকানি দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে যায়৷ ড্যাব ড্যাব করে শুধু তাকিয়েই থাকেনি চোখ রক্ত বর্ণ ধারণ করে রেখেছে৷
— ভয়ে ভয়ে বলে উঠে, ” স্যার কিছু বলবেন? এভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছেন কেন?”
— মুচকি হেঁসে, ” মিস নিয়তি তুমি নিজেকে ওভার স্মার্ট ভাবো। কিন্তু তুমি ততটাপ স্মার্ট নয়।”
— প্লিজ স্যার হেয়ালি না করে কি বলতে চান? ধাঁধা আকারে কিছু আমার দিকে ছুঁড়ে মারলে আমি তার সমাধান বের করতে পারি না৷
— আজ মাকে বাহিরে বের করার খুব দরকার ছিল। ডাক্তারের কাছে নেওয়া অব্ধি ঠিক আছে৷
— স্যার সেই সকালের বিষয় আপনি এখনো ভুলেননি। মাকে হাঁটানোর জন্য আমি বাহিরে নিয়ে গেছি৷
— হ্যাঁ আমি মানলাম তুমি মাকে হাঁটানোর জন্য বাহিরে নিয়ে গেছো। “তাহলে মাকে ফেলে দিচ্ছে কেন? বাড়িতে কি সার্ভেন্টের অভাব পড়েছে। তাদের ডাক দিলে তারা মনের সুখে কাজ করে দিত।” চোখ পাকিয়ে বলে উঠে।
— স্যার এখানে রাগের কি হলো? আমি ভেবেছিলাম মাকে আমি একাই নিয়ে যেতে পারব। কিন্তু সদর দরজায় কিছু একটার সাথে আটকে পড়ে যাচ্ছিলাম তার জন্য..
— ব্যাস৷ আমি তোমার মুখ থেকে কোন এক্সকিউজ শুনতে চাইনি৷ তোমাকে কেউ সাহায্য করতে চাইলেও তুমি তাদের কাছ থেকে সাহায্য নিতে চাও না৷ তুমি ভেবে নিয়েছো তুমি একাই সব করে মহান সাজবে৷
— নিয়তি মাথা নিচু করে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে উঠে, ” আসলে স্যার আমি এমনটা কখনো চাইনি৷ আমার নিজের মা নেই৷ আমি উনাকে নিজের মায়ের মতো ভালোবাসি৷”
— ন্যাকা কান্না বন্ধ কর৷ কথায় কথায় চোখে জল আসে কোথা থেকে? আবার কিনা নিজেই বলে উঠে, ” চোখের জল মানুষকে দুর্বল করে তুলে। ”
— স্যার আমি সত্যি বলছি আমি মার কোন ক্ষতি চাইনা৷ আমিও চাই মা আগের মতো সুস্থ হয়ে উঠুক। মা সকলের সাথে মিলেমিশে থাকতে ভালোবাসে৷
— নিয়তি আমি তোমাকে আবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, “আমার মা আমার কাছে সব৷ যদি মায়ের যদি কিছু হয় তাহলে আমি তোমাকে ছাড়বো না৷”
— স্যার মায়ের কিছু হবে না৷ ডাক্তার তো বলেছে মা এখন বিপদমুক্ত। মায়ের বিপি, হার্ট, সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রয়েছে৷
— হ্যাঁ আমিও সেটা জানি৷ আর হ্যাঁ তোমাকে কতবার বলেছি মা সামনে আমাকে স্যার ডাকবে না৷ আজ থেকে কোথাও আমাকে স্যার ডাকবে না৷
— “ওকে স্যার। ” মাথা নিচু করে বলে উঠে।
— আবার স্যার বলছো। তোমাকে প্রথম দিন বলা হয়েছে আমাকে স্যার বলা বন্ধ করবে৷
— হাত কাচুমাচু করে ঠিক আছে। আর স্যার বলবো না৷ এখন প্লিজ আমার উপর রেগে থাকবেন না৷
— মনে থাকে যেন৷ আমি মাকে দেখে আসি মা ঘুমিয়ে আছে কিনা৷
— ওকে স্যার৷
— আবার স্যার।
নির্বণ তেড়ে নিয়তির কাছে যেতেই পা স্লিপ করে নিয়তিকে নিয়ে বিছানায় পড়ে যায়। নিয়তি স্নান করার পর ভেজা চুল শুকিয়েছে সেখানে। ভেজা চুলের জল ফ্লোরে পড়ে ছিল৷ নির্বণ অস্বাভাবিকভাবে ফ্লোরে পড়ে থাকা জলে পা রাখতেই স্লিপ খায়৷
নির্বণ পড়ার সময় নিয়তি যেন ব্যথা না পায় সেজন্য নির্বণ হাত বাড়িয়ে দেয়৷ কিন্তু নির্বণের ঠোঁট জোড়া নিয়তির ঠোঁটে লেগে যায়৷
__________
— “মিস নিয়তি তুমি নিচে বিছানা করছো কেন?” ফাইল থেকে চোখ সরিয়ে
— আমি খেয়াল করেছি আপনি সোফায় ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না৷ সেজন্য আজ থেকে আমি মাটিতেই থাকব৷ আপনি বিছানায় থাকবেন৷
— এই মেয়ে পাগল হলে নাকি৷ মাটিতে শুয়ে নিজেকে কি প্রমাণ করতে চাও?
— কিছুই না স্যার৷ আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকব সারাজীবন। আপনার জন্য আজ আমার বাবা সুস্থ। এর থেকে বেশি কিছু চাইনা৷
— ওকে ফাইন। তুমি ফ্লোরে শুয়ে ঠান্ডা লাগাবে আর সেই দায় বইতে হবে আমায়৷ বলবে আমি কোন খেয়াল রাখি না৷
— স্যার আপনি ভুল ভাবছেন? আমার কিছু হবে না৷ বাংলায় একটা কথা আছে , ” ব্যাঙের আবার সর্দি।” ধরে নেন আমি একটা ব্যাঙ৷
— তোমায় ডায়লগ বন্ধ হলে তোমার যা ইচ্ছা তুমি তাই কর৷ তোমাকে তো বুঝানো কোনদিন সম্ভব হয়নি৷
নিয়তি আর কোন কথা না বাড়িয়ে ফ্লোরে বিছানা করতে শুরু করে দেয়৷ নির্বণ এদিকে রাগে ফুসফুস করছে। মনে মনে বলছে, ” কিছু মানুষের মমতা দেখলে নিজেরই করুণা হয়৷”
নিয়তি বিছানা করে বালিশ নিতে যাবে, ঠিক তখনই নির্বণ নিয়তির সুন্দর বিছানাটি ডাস্টবিনে পরিণত করে। নিয়তির বিছানায় ইচ্ছা করে জল ঢেলে দিয়ে বিছানা স্থানচ্যুত করে ফেলে।
— নিয়তি ক্ষেপে বলে উঠে, ” স্যার কি করলেন আপনি? আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে। আর আপনি আমার বিছানা ডাস্টবিনে পরিণত করলেন৷” এভাবে জল ঢেলে দেওয়ার মানে কি?”
— কিছু না মিস নিয়তি৷ তুমি তো নিজের মুখেই স্বীকার করলে “ব্যাঙের আবার সর্দি।” ব্যাঙ তো জলে বাস করে। সেজন্য তোমার জন্য জলের ব্যবস্থা করলাম৷
— নিয়তি চোখ পাকিয়ে, ” আমি একজন মানুষ৷ সারারাত আমি কি জলের মাঝে থাকব।”
— তুমি মানুষ আমার জানা ছিল না৷ একটি আগেই বললে ব্যাঙ তো জলে বাস করে৷ বাই দ্যা ওয়ে আমার ঘুম পাচ্ছে। তুমি চাইলে আমার সাথে বেড শেয়ার করতে পার৷
আপনার সাথে আমি কোনদিনও বেড শেয়ার করব না৷ আমিও দেখিয়ে দিব আমি জলে থাকতে পারি৷ আমি বজ এখানেই ঘুম আসব৷ দেখি আপনি কি করেন? আপনার জিত যদি আকাশ সমান তাহলে আমার জিত সপ্ত আকাশ পর্যন্ত।
নিয়তি বিছানা ঠিক করে সেই ভেজা বিছানায় ঘুমাতে যাবে৷ নিয়তি রাগে গজগজ করে বিছানায় শুয়ে পড়ে৷ নির্বণ দেখতে পাই এই মেয়ে ভাঙবে ঠিক মচকাবে না৷ নির্বণ নিয়তিকে পাঁজাকোলা করে নিয়ে বিছানায় শুয়ে দেয়৷
— ক্ষেপে বলে উঠে, ” এখানে উঠার চেষ্টা করলে পা ভেঙে দিব৷ আমি বলেছি আজ থেকে তুমি আমার সাথে বেড শেয়ার করবে৷ আমার কথায় শেষ কথা৷ ”
— আমি পারব না আপনার সাথে বেড শেয়ার করতে৷ আমি বরং সোফায় শুয়ে পড়ব৷
— এই মেয়ে তোমার প্রতি আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই৷ যার জন্য তোমার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ব৷ তুমি চাইলে আমাদের মাঝে বাংলাদেশ ভারত বর্ডার রেখা টানতে পার।
— হ্যাঁ আমি তাই করব৷ আমি বাংলাদেশ ভারত বর্ডার রেখা টানব। মাঝখানে বালিশ থাকবে৷ আপনি আমার দিকে আসবেন না। আমি আপনার দিকে যাব না৷
বিছানার মাঝে কোলবালিশ রেখে দুই জনে দুইদিকে মুখ করে শুয়ে পড়ে। কারো চোখে ঘুম নেই৷ দু,জনে ঘুমে ছটফট করছে তবুও ঘুমাতে পারছে না৷ কখন যে তারা ঘুমিয়ে পড়ে জানা নেই৷
___________
নির্মল অম্বরে নিজের দ্যুতি ছড়িয়ে দিনের সূচনা করলেন সূর্যদেব। পূর্বের স্বচ্ছ কাঁচের জানালা বেধ করে তার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন৷ পরো ঘর আলোয় আলোকিত হয়ে উঠে।
নিয়তিকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে নির্বণ৷ আজ নির্বণের আগে নিয়তির ঘুম ভেঙে যায়৷ নিয়তি চোখ মেলে দেখে নির্বণ তাকে বাহুজড়ো করে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে৷ নিয়তি নির্বণের বুকে ছোট বাচ্চা মেয়ের মতো শুয়ে আছে৷
নিয়তি নির্বণের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে৷ কিন্তু নির্বণ শক্ত করে চেপে ধরাতে নিয়তি ছাড়াতে ব্যর্থ হয়। নিয়তির নড়াচড়াতে নির্বণ জেগে উঠে৷ নিয়তি চোখ বন্ধ করে নেয়৷ নিয়তিকে এমন অবস্থায় মুখ গোমড়া নির্বণ দেখলে একশটা কথা শুনাবে৷
নির্বণ চোখ মেলে দেখে নিয়তি ছোট অবুঝ শিশুর মতো নির্বণের বুকের সাথে লেপ্টে শুয়ে আছে৷ নিয়তিকে ডাক দিতে নিয়েও ডাক দিল না৷ নির্বণ চাইনি নিয়তির ঘুম ভাঙাতে৷ নির্বণ ধীরে ধীরে নিয়তির মাথা বালিশের রাখে৷ নিয়তির মাথা বালিশের উপর রেখে সরে যেতে নিলেই নিয়তির চেইনের সাথে নির্বণের চেইনের টান পড়ে৷ নিয়তি ব্যথা পেয়ে “আউচ” করে উঠে।
— নিয়তি না জানার ভান করে বলে উঠে, ” আপনার লজ্জা শরম বলতে কিছু নেই৷ এভাবে আমার দিকে ঝুঁকে আছেন কেন?”
— নির্বণ আমতা আমতা করে বলে উঠে, ” প্লিজ নিয়তি আমাকে ভুল বুঝবে না৷ আমি ইচ্ছা করে এমন করিনি৷ আমার গলার চেইন তোমার গলায় চেইনের সাথে লেগে রয়েছে৷”
— হুংকার দিয়ে, ” কি! আপনি ইচ্ছা করে এমন কাজ করেছেন৷ আমার কাছে আসার জন্য৷ ”
— করুন স্বরে বলে উঠে, ” প্লিজ নিয়তি বুঝার চেষ্টা কর৷ তুমি যা ভাবছো তেমন কিছু না৷ আসলে ঘুমের মাঝে তুমি আর আমি৷”
— কি আপনি ঘুমের মাঝে আমাকে জড়িয়ে ধরেছেন! আপনার তো সাহস কম নয়৷
— এক সেকেন্ড তুমি কি করে জানলে আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে ছিলাম৷ তুমি নিশ্চয় জানতে তাহলে আমাকে স্মরণ করিয়ে দাওনি কেন? তোমার দোষের কারণে এমন হয়েছে৷
নিয়তি মনে মনে বলে, ” নিয়তি তোর মাথায় কোন বুদ্ধি নেই৷ কোন সময় কোন কথা বলতে হয় তোর জানা নেই৷ তোকে পিটিয়ে উগান্ডা পাঠাতে হবে৷”
— কি হলো মিস নিয়তি? তুমি ইচ্ছা করে এমন কাজ করেছো তাইতো৷
— আপনি পাগল হলেন নাকি৷ আমি ইচ্ছা করে এমন কাজ করব৷ আর আমি এমনি বললাম৷ কারণ বালিশ বিছানার নিচে পড়ে আছে৷ আমার তো মনে হয় আপনাকে রাচি থেকে ঘুরে আসতে হবে৷ না…. বাংলাদেশের পাবনা পাঠাব।
— এই মেয়ে কথা বন্ধ করে চেইনের বাঁধা খুলতে সাহায্য কর। এতেই আমাদের মঙ্গল হবে৷
_____________
— নিয়তি চা নিয়ে প্রবেশ করতে করতে বলে উঠে, ” গুড মর্নিং মা৷ ঘুম কেমন হলো? ”
— গুড মর্নিং। নির্বণ আজ এত সকালে অফিসে চলে গেল কেন? তুমি কিছু জানো।
— আজ অফিসের মিটিং আছে৷ সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তারা আজ সকল ডিজাইন দেখতে আসতে হবে৷ ক্লাইনরা তো শুধু উপস্থাপন দেখেছে। এখন দেখবে আমাদের উপস্থাপন কথাটা কার্যকর।
— আমার কাছে একটু বসে যা৷ আজ তোমাকে কোন কাজ করতে হবে না৷ নির্বণ বলে গিয়েছে তোমাকে যেন কোন কাজ করতে দেওয়া না হয়।
— নিয়তি অবাক হয়ে, ” কি বলছেন মা! স.. নির্বণ আমাকে কাজ করতে মানা করেছে। উনি বললেই হলো আমি কাজ করেই যাব৷”
— মাথা ঠান্ডা রাখ।এমন সময় কাজ না করাই ভালো।
— নিয়তি ব্রু কুঁচকে, ” এমন সময় মানে কি? আপনি কি বুঝাতে চেয়েছেন৷”
— মুচকি হেঁসে, ” তেমন কিছু না সোনা মা৷ তুমি পরে নিজে থেকেই জানতে পারবে৷ অপেক্ষা কর এবং দেখে যাও৷ ভবিষ্যতে কি হয়? ”
— আমার মাথায় কোন ধাঁধার সমাধান আসছে না৷ তবে আমি একটা কথা জানতে চাই?
— কি কথা জানতে চাও? আমার সোনা মা কিছু জানতে চায় আর আমি সেটা না বলে থাকতে পারি৷
— নির্বণ এখন সকলের সাথে এক টেবিলে বসে খাবার খায় না কেন?
নিয়তির কথা শুনে নির্বণের মায়ের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায়৷ হাসিমাখা মুখটা আষাঢ়ের ঘনঘটার মতো কালো হয়ে যায়৷ মুখে পড়ে চিন্তার ছাপ৷
চলবে….