#শুভ্র_স্পর্শ
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
#পর্বঃ৪
আরহার নাকফুলের ঠিক উপরে ছোট্ট একটা লাল তিল। সরবকে বারবার আহ্বান জানান দিচ্ছে।
আড্ডায় সবার সাথে বসলেও সরব আরহার নাকের তিলে আটকে আছে।
বিষয়টা প্রথমে খেয়াল হলো বৃন্তর স্বামীর। বৃন্তকে ঈশারা করে দেখালে বৃন্ত মুচকি হাসে। এদিকে সরবের এমন বোকামো কারো নজর এড়িয়ে যায়নি।
খানিকটা সাহস নিয়ে বৃন্তর স্বামী মনোয়ারা বেগমকে ডেকে একটু আড়ালে নিয়ে যান। আরো খানিকটা সাহস করে সরব-আরহার বিয়ের কথা বলে। যেহেতু পাত্রী খোজা হচ্ছে এদিকে আরহা যথেষ্ট ভালো, ভদ্র মেয়ে। মনোয়ারা বেগম মনে মনে যে চিন্তা করেনি এমন নয়, তবে এবার মেয়ের জামাইয়ের মতামত পেয়ে বেশ খুশি হয়েছেন উনি।
ওসমান সাহেবকে বললে সে সম্মতি জানায়।
কিন্তু আরহার পরিবার কিভাবে নেবে কথাটা এটাও চিন্তার বিষয়। বৃন্তর স্বামী সরবকে বলল,
আরহা কে নিয়ে ওদিকটা ঘুরে আসতে। ছোট্ট একটা বিল আছে ওদিকে।
সরব সায় দিয়ে আরহাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।
এদিকে মনোয়ারা বেগম সাহস করে দ্বিধা নিয়ে কথাটা বলেই ফেলে। আরহার মা এক কথায় রাজি হলেও আরহার বাবা বেশ দ্বিমত। কারণ আরহাকে না জিজ্ঞেস করে সে কোন মতামত দিতে চাচ্ছে না। এদিকে আরহার মা আরহার বাবাকে আশ্বস্ত করেন আরহা দ্বিমত করবে না। কারণ সে মেয়েকে ভালোভাবে চিনে।
“যদি আরহার মত বিরোধ না থাকে তাহলে আমার কোন আপত্তি নেই।”
অর্থাৎ বিয়েতে সম্মতি দেয় আরহার বাবা। ঘন্টাখানেকের মধ্যে বৃন্ত,বৃন্তর স্বামী সব কিছু গুছিয়ে নিয়েছে। আজ হবে বিয়ে। পাশেই মসজিদ আছে সেখানে সরব কবুল বলবে এবং আরহা এখানে।এভাবে হুটহাট মেয়ের বিয়ে দিতে কোন বাবা মায়ের ইচ্ছে করে?
তবুও সম্মতি জানায়। এদিকে সরবের বন্ধুরা মিষ্টি নিয়ে এসে হাজির। কিন্তু বর কনে কোথায়?
বিলের পাড়ে বসে আছে আরহা-সরব। এত বাঁচাল একটা মেয়ে এতটা চুপচাপ হতে পারে? কয়েক বছরের ব্যবধানে? অবাক বিষয়। আরহার মনোযোগ তখন সামনের বিলের কচুরিপানা ফুলের দিকে।
কচুরিপানা ফুল। অদ্ভুত এই ফুলের জীবন। ঠিক যেনো প্রতিটা নারীর ভিতরে থাকা এক একটা স্বত্বা। একটু জোরে, অসতর্কায় ধরবে, তো নিঃশেষ হয়ে যাবে।অথচ আলতো স্পর্শে ছুঁয়ে দেখো! অনেক সময় তোমায় সৌন্দর্য বাড়াবে।
নীরবতা ভেঙে সরব প্রথমে জিজ্ঞেস করে
“এখনো পছন্দ?”
“ভিষণ! ”
“আমি কিন্তু পানিতে নামতে পারবো না। ”
আরহা সরবের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।
হেসে বলল,
“মনে আছে তোমাকে আমি একবার জেদ করিয়ে ফুল আনিয়েছিলাম। আর তোমার জুতো কাঁদায় পরিপূর্ণ হয়েছিল? ”
“হুম আছে। ”
“তুমি আমাকে বকেছিলে।ভয় নেই সে বকুনি আমি ভুলিনি তাই আনতে বলবো না। আর এসব আবদার আমার স্বামীর জন্য তোলা আছে। সে সব পরিপূর্ণ করবে। ”
প্রতিউত্তরে সরব কিছু বলেনা। আরহা দৃষ্টি পুনরায় সেই কচুরিপানা ফুলের দিকে।
হঠাৎ আরহার সামনে একগুচ্ছ কচুরিপানার ফুল এগিয়ে দেয় কেউ একজন।
চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে সরব দিচ্ছে। মুচকি হেসে আরহা হাত বাড়িয়ে ফুল নিতেই সরবের ফোন বেজে উঠে। দ্রুত ফিরতে বলছে।
এদিকে ওসমান সাহেব অসুস্থ। উনার কিছু হয়েছে! প্রথমেই যা মস্তিষ্কে কড়া নেড়ে বলছে আরহা সরবের। দ্রুত ফিরে আসতেই সরব খেয়াল করে ওর বন্ধুরা দাড়িয়ে আছে। দ্রুত পাশ কাটিয়ে যেতে নিলে ওরা পথ আটকে দাঁড়ায়। আরহাকে বৃন্ত নিয়ে যায়। তারপর দুজনকে বিয়ের কথা বললে সরব সম্মতি দিলেও আরহা চুপচাপ ছিলো। মসজিদে বিয়ে পড়িয়ে এখানে এসে কবুল বলিয়ে নিয়ে যায় সরবের বন্ধুরা। সেদিন রিসোর্টে থাকা সবাইকে মিষ্টিমুখ করিয়েছিলেন ওসমান সাহেব।সব থেকে খুশি যেনো উনিই ছিলেন।
আরহার বাবা-মা কে বিদেয় দিয়ে আরহাকে সরবদের বাসায় নিয়ে আসা হয়। আরহাকে একদম চুপচাপ দেখে মনে মনে সরব বিশ্বাস করতে শুরু করেছে আরহার সম্মতি ছিলো না।
সরবের রুমে এসেই আরহা হাতের কচুরি পানার ফুলগুলো পাশের ড্রেসিং টেবিলে রাখে। সাদা পাপড়ির মধ্যে হালকা বেগুনীর ছোপের মাঝেও হলুদ রঙের এই ফুল কি আরহা-সরবকে এক সূত্রে বেধে দিলো?
সরব যখন রুমে এলো তখন রাত সাড়ে এগারোটা।
আরহা বারান্দায় দাঁড়ানো। আরহার পাশাপাশি দাঁড়িয়ে সরব জিজ্ঞেস করল,
“তুমি কি অন্য কাউকে ভালোবাসো? অন্য কেউ পছন্দের মানুষ আছে? বিয়েতে কি খুশি নও?”
প্রতি উত্তরে আরহা সরবের বুকে মাথা রেখে আকড়ে ধরে।
অভিমানী কন্ঠে উত্তর দিতে লাগল,
“আমি না হয় মেয়ে মানুষ। আমার যোগাযোগ সম্ভব হয়নি কিন্তু তুমি? তুমিও তো করোনি! কেনো বলবে? চাইলে কি আমার স্কুল থেকে খবর নিতে পারতে না? ঠিক পারতে। ”
শত মেট্রিকটন বোঝা নেমে হালকা হলো সরবের মস্তিষ্ক। দুহাতে আরহা কে আবদ্ধ করে হাজার খানেক ক্ষমাপ্রার্থী চুমুতে ভরিয়ে দিয়েছিলো আরহা কে।
বিয়ের কয়েকমাস পরেই শুরু হলো আরহার বায়না।
বাবু চাই, বাবু চাই। কারো বাচ্চা দেখলেই মুখ ফুলিয়ে বসে থাকবে তার নেই কেনো।? পেটের ভিতর কবে তারা ফুটবল খেলবে? এসব প্রশ্নে ব্যাকুল করে তুলতো সরব কে।
যখন বিয়ের তিন বছরেও আরহা কন্সিভ করছিলো না তাই বাধ্য হয়ে ডক্টরের কাছে যাওয়া।
রিপোর্টে কি এসেছে অবশ্যই কারো অজানা নয়। কিন্তু এখানে সরব উল্টো পথে চলছে। আরহাকে বলছে বিয়ে দিবে। কারণ আর যা হোক আরহা বাচ্চা না পেলে ভেঙে পড়বে আবার যদি জানে সমস্যা সরবের তাহলে তাকেও ছাড়বে না। তাইতো এ পথ বেছে নেওয়া।
স্মৃতির রোমন্থন শেষে সরব যখন বাস্তবিকতায় ফিরে এলো আরহা তখন সরবকে শক্ত করে জড়িয়ে ঘুমোচ্ছে।
আরহার জন্য, সরবের মায়ের জন্য এখন এসব প্রয়োজন। কারণ ভবিষ্যৎ কে জানে? আরহার কথা সরব ফেলতে পারবে না।একটা বাচ্চা যদি হয় আরহার কোন ক্ষতির কারণ? না! বরং সে সুখে থাকুক এটাই তো কাম্য।
না চাইতেও আরহার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বাহিরে চলে যায় সরব। ফিরে এসে দেখে বাসায় কিছুর আয়োজন চলছে। বৃন্ত এসেছে। সাত মাসের পেট নিয়ে চলতে ফিরতে একটু সমস্যাই হচ্ছে।
কান কথায় যা শুনলো তাতে মোটেও প্রস্তুত ছিলো না সরব।
আরহা সরবের বিয়ের জন্য মেয়ে দেখবে। কারণ দুর্বলতা যেহেতু আরহার তাই সরব বিয়ে করতেই পারে।
বুকের ভিতর চিনচিনে ব্যথা অনুভব হচ্ছে।
আচ্ছা? এরকম ব্যথা কি কাল আরহা অনুভব করেছিলো?
হয়তো, হয়তো না।
পুরোদিনে আরহা সরবের সাথে কোন কথা বলেনি। হঠাৎ বৃন্তর চিৎকারে মনোয়ারা বেগম, সরব দৌড়ে রুমে আসে।
পুরো রুমের ফ্লোর রক্তে মাখানো। ফ্লোরে পড়ে আছে আরহা।
কেনো যেনো আরহাকে না, বড় মামীকে দেখছিলো সরব।
তবে কি বড় মামীর মতো আরহা?
চলবে।
#ছবিয়ালঃআয়াত