#শুধু_তুই
#পর্বঃ১৯
#Rifat_Amin
-আচ্ছা প্রহরভাই আপনি এত পড়াশোনা করেন কেন? পড়তে পড়তে বইয়ের ভীতরে ঢুকে যেতে চান নাকি? (আমি)
প্রহরভাই ব্রেকফাস্ট করে এসে মাত্র পড়ার টেবিলে বসলেন, এদিকে আমি আবারো বিষ্ময়ে চোখ বড় বড় করে ওনার দিকে তাকালাম। কেউ বিয়ের পরদিন বউকে পাত্তা না দিয়ে পড়তে বসতে পারে তা এই জন্মে ভাবিনি। তাই মনে হাজারো কৌতুহল নিয়ে এই প্রশ্নটা করলাম। উনি বিরক্ত হয়ে পিছনে ঘুরে বললেন,
– চাকরি খুঁজছিরে পিচ্চি, চাকরি! ভালো একটা চাকরি পেতে হলে ভালো স্টাডি করতে হবে। তোর ভাগ্য ভালো যে আঙ্কেল আমার মতো বেকারের হাতে তোকে তুলে দিছে। এই জন্য মসজিদে আজকেই ১০ টাকা দিবি। তোর কাছে টাকা না থাকলে আমার মানিব্যাগ থেকে নিয়ে নিবি। তবুও দিবি। এখন মনোযোগ দিয়ে কাজ কর। (প্রহরভাই)
কথাটা বলেই প্রহরভাই ঘুরে বসলেন টেবিলে। আমি কৌতুহলী হয়ে প্রশ্ন ছুঁড়লাম,
– আমার লাক ভালো হতে যাবে কেনো হ্যাঁ? আপনার লাক ভালো যে আমার মতো শান্তশিষ্ট ভদ্র মেয়েকে নিজের বউ হিসেবে পেয়েছেন। এর জন্য আজ’ই মসজিদে আপনার ৫০ টাকা দোয়া উচিত। হু! নিজের কাছে টাকা না থাকলে আমার কাছে নিতে পারেন। মাইন্ড করবো না। (আমি)
প্রহরভাই আমার কথায় যেনো আকাশ থেকে পড়লেন। টেবিল থেকে উঠে বললেন,
– তুই যে কতটা ভদ্র সেটা ভালো করে জানা আছে। একটা কাজ কর। আমার কিছু শার্ট-প্যান্ট ধুয়ে দে। কাজের লোক কাজ করে খাবি। একদম হেয়ালি চলবে না। (প্রহরভাই)
কথাটা বলতে বলতেই উনি আমার হাতে কিছু শার্ট আর প্যান্ট এগিয়ে দিলেন। সবগুলা একদম নতুন। একটু ময়লাও হয়নি। এগুলা কোন আক্কেলে ধুবো আমি?ঠিক তখনি ছোট ছোট পা ফেলে রুমে প্রবেশ করলো প্রেয়সী। আমি সুযোগ পেয়েই প্রেয়সীর উদ্দেশ্যে বললাম,
– দেখ দেখ পিচ্চু, তোর দাভাই বিয়ের পরদিন’ই আমাকে দিয়ে কাজ করাচ্ছে। আন্টিকে ডাক দে প্লি..
কথাটা বলার আগেই প্রহরভাই আমার মুখ চেপে ধরলেন। প্রেয়সী সাথে সাথে ছুটে গেলো আন্টিকে এই খবর জানাতে। বর্তমানে এটাই ওর কাছে ব্রেকিং নিউজ। প্রেয়সী চলে যেতেই উনি মুখ থেকে হাত সারালেন। উনি বিরক্তকন্ঠে বললেন,
-কি করলি এটা? আম্মু আসলে কি হবে? (প্রহরভাই)
-কি আর হবে? আম্মি বকা দেবে। আমার কাছে এটাই পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর মহুর্ত। (আমি)
প্রহরভাই আমার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,
– বউ থাকা যে কি ঝামেলা তা এবার ভালো করে বুঝতে পারছি। একটু পড়তে বসতেও পারিনা। ধুর! থাক আমি ছাদে চললাম। যদি একটু শান্তি পাওয়া যায় সেখানে। আম্মি আসলে বলিস বাথরুমে। (প্রহর)
কথাটা বলেই চলে গেলেন প্রহরভাই। উনি চলে যেতেই আমি হাসতে হাসতে শেষ। আচ্ছা জব্দ করা গেছে। এতদিন আমায় জ্বালাইছে। এখন আমি জ্বালাবো। এটাকেই বলে রিভেঞ্জ অফ নেচার। উনার বস্তার মতো প্যান্টগুলোর কি ওজন মাইরি৷ এগ্লা পড়ে বাইরে যায় কেমনে! কিছুক্ষণ ঘর গুছানোর পর হঠাৎ প্রহরভাইয়ের ফোন বেজে উঠলো। আমি গিয়ে দেখলাম একটা আননোন নাম্বার থেকে ফোন এসেছে। প্রথমবার ধরলাম না। কিন্তু আবার যখন ফোন বাজলো তখন ভাবলাম, আমি তো প্রহরভাইয়ের স্ত্রী। আমার নিশ্চই অধিকার আছে ওনার ফোন টাচ করার। আমি ফোনটা ধরে সালাম দিতেই ফোনের ওপাশে একটা মেয়েলি কন্ঠস্বর ভেসে উঠলো।
– আসসালামু আলাইকুম। কে বলছেন? (আমি)
– আমি নাউমি। প্রহর কোথায়? আর আপনি’ই বা কে? (মেয়েটি)
-প্রহরভাই তো ছাদে গেছে। উনার সাথে কি প্রয়োজন আপনার? (আমি)
উনি আমার কথা শুনতেই বিরক্ত হয়ে উত্তরগুলা দিচ্ছেন। উনি বললেন,
– কি প্রয়োজন সেটা আপনাকে বলতে হবে নাকি? আমি ওর গার্লফ্রেন্ড। আমার কি কথা বলার অধিকার নেই নাকি? (নাউমি)
নাউমি নামের মেয়েটার কথা শোনা মাত্র আমার হৃদপিন্ড সেকেন্ড দুয়েকের জন্য অফ হয়ে গেলো। আর সাথে সাথে উচ্চগতিতে হৃৎপিণ্ড ছুটতে লাগলো। কপালে দিয়ে ঘাম ছুটলো। পায়ের নিচ থেকে মাটি সড়ে গেলো বোধহয়। আমি কথা বলতে পারলাম না। এতদিন মজার ছলে বলতাম প্রহরভাইয়ের জিএফ আছে। এটা যে বিয়ের পর সত্যি হবে সেটা কখনো ভাবিনি। আমি কষ্ট করে শুধু একটা কথাই বললাম,
– জি আপনার অধিকার আছে। দুমিনিট ওয়েট করেন ফোনটা দিচ্ছি। (আমি)
ফোনটা কেটে দিয়ে বিছানায় ধপ করে বসে পড়লাম। জীবনে প্রেম-ভালোবাসা কি জিনিস বুঝিনি। কারণ আমার সবকিছুতেই প্রহরভাই মাথা ঘামিয়েছেন। কোথায় পড়বো, কোন টিচারের কাছে প্রাইভেট পড়বো, কখন পড়বো, সবকিছুতেই উনার বাধ্যবাধকতা থাকতো। একমাত্র উনার জন্যই রাস্তাঘাটে কোনো ছেলে আমার দিকে তাকানোর সাহস পেতো না। এসবের জন্য উনার প্রতি আমি ছিলাম বিরক্ত। সাংঘাতিক লেভেলের বিরক্ত। উনাকে সহ্য করতে পারতাম না। কিন্তু একটা সময় উপলব্ধি করলাম এই অসহ্য মানুষটাই আমার ভালোলাগার কারণ হবে। আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন হবে৷ কে ভেবেছিলো এই বিয়েটা আদৌও সম্ভব? আমি ফোনটা হাতে নিয়ে দ্রুতপায়ে রুম ত্যাগ করলাম। চোখের পানিটা দ্রুত মুছে ছাদের দিকে পা বাড়ালাম। কিন্তু মাঝপথেই আন্টি বাধা হয়ে দাঁড়ালেন,
-কিরে? প্রেয়সী বললো, তোকে দিয়ে নাকি প্রহর কাজ করাচ্ছে। ঐ লম্পট কোথায়? (আন্টি)
আমি চোখদুটোকে আন্টির থেকে আড়াল করার চেষ্টা করে বললাম,
– ছাদে আছে আম্মি। মজা করছিলো তখন। আমি সেখানেই যাচ্ছি। (আমি)
-তোর চোখ লাল কেনো? কি হয়েছে বল? (আন্টি)
-কিছুনা। আচ্ছা আমি আসছি।
আমি দ্রুত ছাদে উঠে আসলাম। দেখলাম উনি ছাদের ফুলের গাছগুলোতে পানি দিচ্ছে। শরীরে সাদা সেন্টু গেন্জি আর নেভিব্লু থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট। রোদের তীক্ষ্ণ আলোয় উনার ফর্সা শরীর যেনো গোলাপী আকার ধারণ করছে। এই রুপ যে কি ভয়ংকর! প্রহরভাইয়ের রুপ একটা মেয়েকে ঘায়েল করতে সক্ষম। আমিও কি এভাবেই প্রেমে পড়েছি? নাহহ! এটা কখনই নয়৷ আমি উনার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললাম,
– এইযে আপনার ফোন। নাউমি আপি কল করেছে। আপনার জিএফ। (আমি)
প্রহরভাই সাথে সাথেই পিছনে ঘুরে তাকালেন। আমার চোখ জ্বলছে। ভয়ংকার কান্না পাচ্ছে। ইচ্ছে করছে হাত পা ছাড়িয়ে কাঁদতে। এই প্রখর রোদ আমার চোখকে যেনো আরো পুড়িয়ে দিচ্ছে। উনার হাতে ফোন দিয়েই দৌড়ে সেখান চলে যেতে ধরলাম। উনি হাতের পানির পাইপটা ফেলে দিয়ে কঠোর কন্ঠে বললেন,
– আর একপা এগোলে কিন্তু ছাদ থেকে নিচে ফেলে দেবো। কে তোকে কি বলেছে আর তুই সেটা শুনেই কান থাকতে চিলের পিছনে ছুটলি। (প্রহরভাই)
আমার কথা বলার ইচ্ছে হলো না। তবুও শক্তকন্ঠে জবাব দিলাম,
– ইট’স ইওর পার্সোনাল ম্যাটার। নট মাইন। (আমি)
কথাটা বলেই সেখান থেকে ছুটে রুমে চলে আসলাম। চারদিকটা অসহ্য লাগছে। পৃথিবীতে এত ছেলে থাকতে প্রহরকেই কেনো পছন্দ হতে হবে সবার। আমি কেনো এত সুন্দরী হলাম না। তবুও উনি বিয়ে করলেন। এখন কি আমাকে আর ভালো লাগছে না? বিয়ের পরদিন এটাই উপহার ছিলো আমার জন্য!
ঠিক তখনি দরজায় উপস্থিত হলেন প্রহরভাই। কঠোরস্বরে বললেন,
-আমার চোখে তুই মায়ের পর একমাত্র বিশ্বসুন্দরী। তোকে তো আমি কখন’ই সুন্দর অসুন্দর দিয়ে বিচার করতে চাইনা। নিজেকে কখনো ভালো করে আয়নায় দেখেছিস? প্রহর কখনো খারাপ কিছু নিজের জীবনের সাথে জড়ায় না। তুই জীবনে সবার থেকে হয়তো নিজের সৌন্দর্যের জন্য প্রসংশা পেয়েছিস। একমাত্র আমি’ই করিনি। আজ করলাম, এখন লক্ষী মেয়ের মতো কান্না বন্ধ করে এদিকে তাকা। তাকা বলছি। থাপ্পড় খাবি কিন্তু!
———-?
প্রেম মাত্র বাড়িতে ফিরেছে। রাস্তার সব ঝামেলা মিটিয়ে বাসায় ফিরতে ফিরতে সকাল ১১ টা বেজে গেলো। ফ্রেস হয়ে খাওয়ার টেবিলে আসবে এমন সময় প্রেমের আম্মু বললো,
– কোথায় ছিলি এতক্ষণ? সকাল থেকেই দেখলাম হাওয়া হয়েছিস! তোর জন্য আমার কতটা টেনশন হয় জানিস? (আম্মু)
প্রেম মুচকি হেসে বললো,
– মর্নিং ওয়াকে গিয়েছিলাম আম্মু। ইট’স সাউন্ড গুড ফর হেল্থ। এখন খিদা লাগছে, খাইতে দাও। (প্রেম)
আম্মু কথা বাড়ালেন না। ভাত বেড়ে দিতে দিতে বললেন,
– তোর আব্বুর সাথে আজ সব আত্মীয়দের বাসা যেতে হবে। লকডাউন শেষ হলেই পুলক আর ঐশীর বিয়ে হবে। ভাবছি তখন প্রহর আর রশ্নির বিয়ের অনুষ্ঠানটাও সেড়ে ফেলবো। সবাইকে দাওয়াত দিবি গিয়ে। পরে পালিয়ে যাস না আবার। (আম্মু)
প্রেম বিরক্ত কন্ঠে বললো,
-আহ! আম্মু। কারো বাসা যেতে ইচ্ছে করে না আমার। এটা বুঝো না কেনো? (প্রেম)
– খুব বড় হয়ে গেছিস তাইনা। সবাই ডাকে তোকে। নিজেকে কি ভাবিস তুই? বাপের মতে হয়েছিস একটা। (আম্মু)
প্রেম কথা বললো না। কথা বললেই কথা বাড়বে। খাওয়া শেষ করে বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিলো। সকাল থেকে প্রচুর ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। এবার একটু রেস্ট নেয়া দরকার। সোনিয়াকে থাপ্পড় মেরে শান্তি লাগছে। অদ্ভুত রকমের শান্তি। প্রেম ফোন চেক করে দেখলো সারার মিস কল। উফফ! মেয়েরা এত এগ্রেসিভ কেনো? নিশ্চই বলবে এখন নতুন প্রাইভেট ঠিক করেছি। চাইলে পড়তে পারো। মনে মনে কথাটা ভাবতেই প্রেম কল ব্যাক করলো। সারা ফোন ধরেই বললো,
– শোনো। দারুণ একটা নিউজ আছে। এখানকার বেষ্ট ফিজিক্স টিচার আমাকে পড়াবে। যদিও আমি নিজের বাসায় পড়বো না। উনার বাসায় গিয়ে পড়বো। আমি চাই তুমি আমার সাথে পড়বা। এবার না করবা না প্লিজ। পড়াশোনায় মনোযোগ দাও একটু। (সারা)
প্রেম মুচকি হাসলো। এই মেয়েটা চায় কি?
চলবে? Page: ® Rifat Amin
(গল্প খারাপ অথবা একঘেয়েমি লাগলে জানাবেন,মন্তব্য করবেন। তখন আমি বুঝবো ঠিক কেমন হচ্ছে গল্পটা। ভালোবাসা?)