#শুধু_তুই
#পর্বঃ১০
#Rifat_Amin
ঘড়িতে রাত বারোটা বেজে নয় মিনিট। বদ্ধ রুমে টেবিল ল্যাম্প জ্বলছে। সেই ল্যাম্পের মোলায়েম আলোয় বইয়ের পাতায় নজর বুলিয়ে যাচ্ছে প্রেম। একটু ঘুমু ঘুমু ভাব। অবচেতন মন বিছানা টানছে। হটাৎ টেবিলের উপরে রাখা ফোনটা কেঁপে উঠায় চমকে উঠলো প্রেম। এতো রাতে কে কল করলো? একটা আননোন নাম্বার দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেললো প্রেম। ফোনটা ধরলো সে,
– আসসালামু আলাইকুম। কে বলছেন? (প্রেম)
ওপাশের মানুষটা কথা বললো না। প্রেম আবারো ধৈর্য্য ধারণ করে বললো,
– এত রাতে কল দিয়ে হয়তো ডিস্টার্ব করবেন না বোধহয়। কোনো দরকার থাকলে বলুন। (প্রেম)
– আমি সারা। আপনাকে ধন্যবাদ দেয়ার জন্য ফোন করেছিলাম। সেদিন আপনি না থাকলে হয়তো আমি শেষ হয়ে যেতাম৷ অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। (সারা)
– আপনাকেও ধন্যবাদ। সবসময় সব মানুষকে বিশ্বাস করতে নেই। আপনি শুরুতে আমার বাইকে না উঠে বোকামি করেছেন৷ কিন্তু আপনার দিক থেকে সঠিক কাজটাই করেছেন৷ আচ্ছা রাখি তাহলে। ঘুম পাচ্ছে। (প্রেম)
– আপনি কি এক্ষুনি ঘুমাবেন? না মানে একটু কথা ছিলো। সেদিন আপনার মানি ব্যাগটা ভুলবসত আমার কাছে রেখেছিলেন। পরে নিতে ভূলে গেছেন। ওটা কি কাল নিতে পারবেন? (সারা)
-ওহহ তাই তো বলি। নাম্বার পেলেন কই। (প্রেম)
প্রেম দুদিন থেকে তার মানিব্যাগ খুঁজছে। অথচ পাচ্ছে না। কোথায় রেখেছে সেটাও মনে করতে পারছে না। ভেবেছিল হয়তো পকেটমার নিয়ে গেছে। কিন্তু এখন মনে পরলো সেদিন দোকান থেকে বের হবার সময় ওনাকে মানিব্যাগটা ধরতে দিয়েছিলাম।
– কি হলো? আসবেন? (সারা)
-তেমন কড়াকড়ি লকডাউন তে দেয়নি। আমি একসময় আপনার থেকে নিয়ে নেবো৷ আপাতত মানিব্যাগে তেমন টাকাও নেই। তেমন দরকারও নেই। তাই যখন খুশি নেয়া যাবে। (প্রেম)
-বাব্বাহ। এত বিজি আপনি? এইযে আপনাকে মানিব্যাগ ফেরৎ দিয়ে একটা মহৎ কাজ করতে চাইলাম। এর জন্য একটু ট্রিট দিতেও তো পারেন। অথচ কেমন গম্ভীরভাবে চলাফেরা করেন। আপনি কি সবসময় এরকম? (সারা)
প্রেম হালকা হাসলো৷ ক্লান্ত কন্ঠে বললো,
– তেমন বিজি না। আচ্ছা আপনি বলুন কি ট্রিট চান? (প্রেম)
– আপনার কন্ঠটা অসাধারণ। আমাকে আরেকটা বিকেল আপনার সাথে নিন। নদীর কিনারে বসে দুটো গান শোনান৷ এটাই চাচ্ছি। (সারা)
-আপনি না আমায় সহ্য করতে পারেন না? তাহলে আমার উপস্থিতি চাইছেন যে৷ (প্রেম)
– আপনি কি ইনডিরেক্টলি আমায় ছ্যাঁচড়া ভাবছেন? শুনুন। আপনি যা ভাবছেন। ব্যাপারটা মোটেও তেমন নয়। আমি জাস্ট আপনার গান শুনতে চেয়েছি। দ্যাটস ইট। (সারা)
প্রেম হাসলো৷ ফোনটা কেটে দিয়ে বইয়ের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। মেয়েদের মন পড়া কঠিন, তার থেকে সামনের বইটা মুখস্থ করা অনেকটাই সোজা।
?️
মাঝরাত পর্যন্ত জেগে থাকা আমার সচারাচর অভ্যাস। কিন্তু আজ অন্য কোনো অদ্ভুত কারণে চোখে ঘুম আসছে না । শতচেষ্টা করেও দুচোখের পাতা এক করতে পারছি না। বারবার মনে পড়ছে সেই ডেয়ারের কথা। কি উদ্ভব একটা ডেয়ার দিয়েছিলেন উনি৷ সেটা আবার আমাকে ডান করতেও হয়েছে৷ আন্টির সামনে গিয়ে চোখ বন্ধ করে গড়গড় করে সব বলে দিয়েছি। আন্টিতো সব শোনার পর শক। পুরো বাড়ি মাথায় তুলেছি তিনি তার ছেলেকে বিয়ে দিবেন। বিয়ে দিবেন সেটা অতিশীঘ্রই, তাও পুলকভাইয়ের সাথে একসাথে বিয়ে দিবেন। তখনকার মহুর্তটা ভাবলেও আমার হাসিতে পেট ফেটে যাচ্ছে ।
তখন,
আমি রান্নাঘরের দেয়ালের পাশ থেকে আন্টির রান্না মনোযোগ সহকারে দেখছি। পেছনে প্রহরভাই বারবার ওখানে গিয়ে ডেয়ার ডান করার জন্য তারা দিচ্ছে। আর আমার বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে যাচ্ছে। আমি মনে মনে একবার দোয়া দরূদ যা পাই পরে নিলাম। আন্টি যেনো বিষয়টা আবার নেগেটিভলি না নেয়। ওখানে গিয়ে যা বলবো তা মনে মনে সেট করে নিলাম। অতঃপর সাতপাঁচ না ভেবে সামনে এগিয়ে গেলাম।
– আম্মি, আপনার কাছে নাকি প্রহরভাইয়ের দেয়া একটা নীল শাড়ি আছে। ওটা আমাকে পড়িয়ে দিন তো। (আমি)
আমি চোখ বন্ধ করে হরহর করে সবটা বলে দিলাম। আন্টি যেনো বিষয়টা মজা হিসেবেই নেয়, সেটাই প্রত্যাশা করতে থাকলাম। কিন্তু ঘটনা ঘটলো অন্যকিছু। তিনি স্বহাস্য কন্ঠে প্রহরভাইকে উচ্চশব্দে ডাকতে থাকলেন। আমি হতভম্ব দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে থাকলাম।
– বাবু, এই বাবু। (আন্টি)
প্রহরভাই ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে আন্টির সামনে এসে বললেন,
– কি হয়েছে আম্মু। রশ্নি এখানে কেনো? (প্রহর)
প্রহরভাইয়ের কথায় হা হয়ে গেলাম আমি। উনি তো দেখি সেই অভিনয় করতে পারেন। আমি দাঁতে দাঁত চেপে সবটা সহ্য করতে না পেরে বললাম,
– এটা ডেয়ার ছিলো আন্টি। আপনার এই অধম ছেলেটা আমায় এরকম উদ্ভদ ডেয়ার দিছিলো। (আমি)
– না না আম্মু। তুমি যা ভাবছো তা সম্পূর্ণ ভুল। তুমি যে আমার ছেলেকে পছন্দ করো তা সিওর হয়ে নিলাম। আমি আগে থেকেই চিন্তা করে এসেছি তোমার আর বাবুর বিয়েটা দেবো। কিন্তু তোমাদের সাপে নেউলে সম্পর্কে বিষয়টা তলানিতে পরে গিয়েছিলো। (আন্টি)
আন্টির কথার মাথামুন্ডু কিছু বুঝতে না পেরে স্তব্ধ হয়ে গেলাম। প্রহরভাই ভাব মেরে বললেন,
– অসম্ভব! এই মেয়েকে বিয়ে করা অসম্ভব। যাকে আমি দুচোখে সহ্য করতে পারি না। তাকে বিয়ে করবো সেটা ভাবলে কি করে। তোমার আরো কাজের লোক লাগবে আগে বলবে তো। যদিও রশ্নি কাজের মেয়ে হিসেবে পার্ফেক্ট। তবুও ওর তো একটা মানসম্মান আছে। (প্রহর)
-চুপ! তুই চুপ যা। রশ্নির মায়েরও একই ইচ্ছা। বাড়ির সকলের মতামত হয়ে গেছে। তোদের আবার কিসের মতামত। কি হবে আমি জানি না, আমার মেয়ে চাই, সেটা রশ্নিকেই চাই। আমার বাড়িতে একটা পাগলাটে মেয়ে সারাক্ষণ ঘুরে বেড়াবে সেই সুযোগটা পেয়েও হাতছাড়া করবো তুই ভাবলি কিভাবে?
আমি মা-ছেলের কান্ডে হতবাক, বাকরুদ্ধ হয়ে মুর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকলাম। প্রহরভাই অতি চালাকি চাল চেলেছে সেটা ভালোয় বুঝতে পারছি। উনার মস্তিষ্কে যে সবসময় শয়তানি বুদ্ধি ঘুরে এটা আরো একবার প্রমাণিত হলো। উনি যখন সেখান থেকে নিজের রুমে আসলেন। তখন আমি ওনাকে চেপে ধরে সব কথা বের করবো ভেবে নিলাম। ওনার রুমের ভীতর উইথআউট পারমিশনে ঢুকে গেলাম। দেখলাম উনি লালালালা গান গাইতে গাইতে ফোন টিপছেন। আমাকে দেখেই উনি ভিলেনমার্কা হাসি দিলেন।
– আমাকে তখন কি বললেন? কাজের মেয়ে? আমাকে কোন এঙ্গেলে আপনার কাজের মেয়ে মনে হয় বলেন তো। আর আপনারা মা-ছেলে কি করলেন ওখানে? তা আমার মাথার ১৪ কিমি উপর দিয়ে চলে গেলো। আপনাকে সব উত্তর দিতে হবে। (আমি)
প্রহর ভাই তার ফোন চাপা অফ করে আমার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,
– কি আর হবে? তোর আমার বিয়ে হবে। বুঝিস নি? (প্রহর)
-মানেএএএএ? আপনার মতো খাটাশ মানুষকে বিয়ে করবো ভাবলেন কি করে? (আমি)
প্রহরভাই তার মনমাতানো হাসিটা দিয়ে বললেন,
– তাহলে কি সোনিয়াকে বিয়ে করবো? আমার মনে হয় সে আমার জন্য পার্ফেক্ট। কি বলিস?
-হ্যাঁ করেন। আবার কিছুক্ষণ থেমে বললাম, না, সোনিয়াকে বাদ দিয়ে সবাইকে করেন। (আমি)
– তাহলে তোকে বিয়ে করি। তুই আমাকে দিয়ে অনেক কাজ করিয়েছিস। তার সব হিসেব তুলবো, বিয়েটা আগে হয়ে যাক। আমি আগে থেকে জানতাম আমার আর তোর বিয়ের প্লানিং হচ্ছে। নেহাত তোর আর আমার এমন সম্পর্কে তাঁদের মনে ভয় জেঁকে যায় যে আমাদের বিয়েটা আদৌ হবে কি না। আমি আম্মুর সাথে বাজি নিয়ে বললাম, “যদি দুদিনের ভীতর রশ্নি তোমাকে আম্মি ডাকে, তাহলে বুঝবা যে বিয়েটা হচ্ছে। আর যদি না ডাকে তাহলে হবে না। “এই কথা শোনার পর তো আম্মু তোর মুখ থেকে আম্মি ডাক শোনার জন্য নানা চিন্তা ভাবনা করছে। কিন্তু তার পরদিনেই যে এমন সারপ্রাইজ পাবে। ভাবতে পারেনি আমম্মু। আম্মুতো এখনো আসল সত্যিটা জানেই না। এখন দেখ, আম্মু তোদের বাসায় গিয়ে খবরটা পৌঁছে দিয়েও ফেলেছে। ”
দুপুরের কথাগুলো ভাবতেই হাসিতে পেট ফেটে যাচ্ছে আমার। প্রহর ভাই নাকি আমাকে বিয়ে করবে? এটা ভাবা যায়! আমার হঠাৎ মনে পরলো। প্রহরভাইয়ের দেয়া চিঠিটা খুলে দেখা হয়নি। এখন প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে। থাক! কালকে দেখবো।
চলবে?
( আমার নিজেরো ঘুম পাচ্ছে। ঘুমের ঘোরে কি লেখলাম জানি না। গল্পটায় গ্যাপ দিতে চাইনি বলেই দেয়া। ??)